ইন্দুমতী/বন্ধু গৃহে

উইকিসংকলন থেকে
পঞ্চম সর্গ।
বন্ধু গৃহে।

দেবব্রত এবে এক সাধু মহাজন।
পরিশ্রম, সত্যবাক্য, প্রতিভা বিনয়,
মধুর স্বভাব,আর চরিত্র নির্ম্মল,
বিখ্যাত করেছে নাম রাজধানীময়।

ব্যবসার হইয়াছে যথেষ্ট প্রসার,
হইতেছে বহু তাঁ’র ধন উপার্জ্জন;
আর সেই পল্লীবাসী? এখন তা’দের
অবস্থা উন্নত কত তাঁহার কারণ।

কর্ম্মক্ষেত্রে হ’ল তাঁ’র কত পরিচয়
বিবিধ লোকের সাথে,সংখ্যার অতীত;
নবীন আচার্য্য নামে এক মহাশয়,
তাঁহারে বাসিত ভাল প্রাণের সহিত।

নবীনের বয়ক্রম পঞ্চাশ বৎসর,
স্বনাম পুরুষ ধন্য,মহা ধনবান;
নানাবিধ গুণ তাঁ’র,শুধু নাস্তিকতা
চন্দ্রের কলঙ্ক মত ছিল বিদ্যমান।

সংসারে তাঁহার বহু পরিজন মাঝে
আপনার জন কিন্তু কেহ নাহি ছিল;
পুত্র কন্যা নাহি তাঁ’র, প্রথম বনিতা
বহু দিন পূর্ব্বে তিনি স্বর্গে চলি গেল।

পুত্রের আশায় তিনি পরের আগ্রহে,
করিলেন সত্য বটে দ্বিতীয় সংসার;
পুত্র কন্যা নাহি হ’ল,যদিও বনিতা
দ্বাবিংশ বৎসর হ’ল বয়স তাহার।

পরমা সুন্দরী জায়া প্রগল্ভ-যৌবনা,
রূপের ধনের গর্ব্বে সদা গরবিনী;
নবীনের কিন্তু তাহা লাগিত না ভাল,
যেহেতু প্রথমা ছিল লক্ষী স্বরূপিণী।

নবীন বুঝিল এবে আপনার ভ্রম,
বুঝিল যা’যায় তাহা আসেনা'ক আর;
অনল-স্ফুলিঙ্গ সমা এই যে সুন্দরী
পারিবেনা দিতে শান্তি জীবনে তাঁহার।

তিনি যাহা চা’ন তাহা নাহিক ইহাতে,
বয়সে উভয় মধ্যে বহু ব্যবধান;
একের জীবন-নদে পড়িতেছে ভাঁটা
অপরের হইতেছে জোয়ারের টান।

উভয় জীবন এবে বিপরীত পথে,
অনুকুল স্রোতবেগে চলেছে ভাসিয়া
উভয়ে বুঝিল তাহা পুনঃ এক সাথে,
মিলিতে পারেনা কভু একত্রে আসিয়া।

নবীন থাকেন ব্যস্ত সমস্ত সময়
বিষয় কর্ম্মেতে তাঁ’র, নাহি অবসর;
কর্ত্তব্যের অনুরোধে দুই চারি কথা
কহেন পত্নীর সাথে সময় অন্তর।

নবীনের জায়া সেই রাধিকা সুন্দরী,
পুস্তক,সীবনী,আর লইয়া বিলাস,
কাটাইয়া দেন তাঁ’র সুদীর্ঘ সময়,
তাঁহার নাহিক স্বামী সোহাগের আশ।

দেবব্রত গুণে মুগ্ধ হইল নবীন,
প্রতিভা দেখিয়া তাঁ’র হ’ল চমৎকৃত;
শুনিয়া তাঁহার সব জীবন কাহিনী
তাঁহার দুঃখেতে হ’ল বড়ই দুঃখিত।

গুণগ্রাহী পরস্পরে পরস্পর গুণে
উভয়ের মধ্যে হ’ল সুদৃঢ় প্রণয়;
একত্রে লাগিল কাজ করিতে উভয়ে,
এরূপে কাটিল দুই বৎসর সময়।

নবীনের গৃহে সদা যাতায়াত হেতু
দেবব্রত পরিচিত তাঁহার সংসারে;
অবারিত গতি তাঁ’র,সব পৌরজন,
বাড়ীর ছেলের মত দেখিত তাঁহারে।

স্বামীর আদেশে রাধা আসিত সম্মুখে
দেবব্রত সাথে কথা কহিতেন আর;
পরম আত্মীয় বোধে বাসিতেন ভাল
সরল শিশুর মত স্বভাবে তাঁহার।

একদা সংবাদ পেয়ে পীড়িত নবীন
দেবব্রত ত্বরা গেল দেখিতে তাঁহারে;
দেখিল হঠাৎ তিনি জ্বর বাত রোগে
পঙ্গুর মতন শুয়ে শয্যার উপরে।

দারুণ যন্ত্রণা তাঁ’রে করেছে অস্থির,
শরীরের গ্রন্থিগুলি হইয়াছে স্ফীত;
একটা নিশিথে হায়,করিয়াছে রোগে
তাঁহাকে দেখিতে যেন চিরা রোগী মত।

দেবব্রতে কহিলেন নবীন তখন,
বলা নাহি যায় কিছু কখন কি হয়;
দেবব্রত যেন তাঁ’র নিকটে সতত,
থাকেন তাঁহার এই অন্তিম সময়।

কর্ত্তব্যের অনুরোধে বিনা বাক্যব্যয়ে,
দেবব্রত হইলেন সম্মত তাহাতে;
ব্যবসা বাণিজ্য আর রোগীর শুশ্রূষা
নবীনের গৃহে থাকি লাগিল করিতে।

এইরূপে কত দিন হইল অতীত,
নবীন হ’লেন মুক্ত জ্বর হ’তে তাঁ’র;
বাতরোগ কিন্তু তাঁ’রে করিল আশ্রয়,
আরোগ্যের সম্ভাবনা রহিল না আর।

আবৃত রহিল তাঁ’র হস্ত আর পদ
রাশি রাশি তুলা দিয়া সুদৃঢ় বন্ধনে;
চিকিৎসক আসে যায় দেয় আশা কত,
সমর্থ হ’লনা কেহ রোগ নিবারণে।

দেবব্রত যথাসাধ্য থাকেন নিকটে,
করেন শুশ্রূষা নিজে করি প্রাণপণ;
নবীন ও রাধিকার বহু অনুরোধে
নবীনের গৃহে তিনি থাকেন এখন।

বহু দাস দাসী সত্ত্বে রাধিকা আপনি
পরিচর্য্যা করিতেন সতত তাঁহার;
কে জানে কেমনে তা’র দেবব্রত প্রতি
ধীরে ধীরে হ’ল এক চিত্তের বিকার।

প্রথমে ভাবিল রাধা ইহাতে কি দোষ?
পরম সুহৃদ ইনি সর্ব্ব গুণময়;
সরল শিশুর মত হৃদয় যাহার,
তাহারে বাসিলে ভাল কিবা দোষ হয়?

সতর্ক হ’লনা রাধা রোগের অঙ্কুরে,
বাড়িতে লাগিল তা’র চিত্তের বিকার;
চিত্তের বিকারে এই পূত ভালবাসা
পরিণত হ’ল ঘোর অনুরাগে তা’র।

জগৎ হইল ক্রমে দেবব্রতময়,
দেবব্রতময় হ’ল রাধার জীবন;
লালসা করিল তা’র আকুল হৃদয়,
করিল রূপের মোহ কলুষিত মন।

তখন ভাবিল রাধা পুড়িব আপনি
কখন দিবনা ইহা হইতে প্রকাশ;
নয়ন ভরিয়া শুধু দেখিব তাঁহারে,
দেখিয়া মিটা’ব এই প্রাণের পিয়াস।

কে কোথায় পারিয়াছে জ্বলন্ত অঙ্গার
চাপিয়া রাখিতে শুষ্ক তৃণ রাশি দিয়া?
অচিরে রাধিকা হৃদে জ্বলিল অনল
পুড়া'তে লাগিল তা'র মন,প্রাণ,হিয়া।

তখন ভাবিল রাধা যা থাকে কপালে
বলিব তাঁহারে আমি হৃদয়ের কথা;
উৎসর্গ করিব প্রাণ চরণে তাঁহার,
পারিনা সহিতে তার এ দারুণ ব্যথা।

কেমনে বলেন তিনি এই সব কথা
নির্ম্মল চরিত্র এই সরল যুবাকে?
বলি বলি করি গেল কিছু দিন চ’লে
হৃদয়ে রহিল কথা ফুটিল না মুখে।

একদা নিশীথে যবে সুপ্ত চরাচর
পুরজন সবে ঘোর নিদ্রায় মগন;
সাহসে করিয়া ভর ধীরে,অতি ধীরে,
দেবব্রত কক্ষে রাধা করিল গমন।

সূচিভেদ্য অন্ধকার নীরব সকল,
বুঝিয়া নিদ্রিত তিনি, রুদ্ধ করি দ্বাব
অনুভবে গেল রাধা অন্ধকার দিয়া
গৃহ-গাত্রে ছিল যেথা তড়িত আধার।

খুলিল বিজলী আলো উজলিল ঘর,
দেখিল তাঁহাকে সুখে পালঙ্কে নিদ্রিত;
কি সুন্দর মুখ আহা কি সুঠাম দেহ,
সুবর্ণ নিম্মিত মূর্ত্তি রয়েছে শায়িত।

দাঁড়াইয়া শয্যা পার্শ্বে রাধা কতক্ষণ
মদালস নেত্রে তাঁরে লাগিল দেখিতে;
যতই দেখেন তত দেখিবার সাধ
বাড়িতে লাগিল ক্রমে রাধিকার চিতে।

স্ফটিক বিশেষে যথা রবির কিরণ
ভিন্ন ভিন্ন হ’য়ে যায় সাতটী বরণে,
দেবব্রত রূপ দেখি আসক্তি রাধার
লাগিল বহুধা হ’তে হৃদয় দর্পণে।

কভু বা সুখের আশে নাচে তা’র প্রাণ,
কভু বা বিষাদে তা’র আঁধার হৃদয়;
বাধিল কুমতি সাথে সুমতির রণ,
সুমতির হ’ল শেষে পুনঃ পরাজয়।

সাহসে বাঁধিয়া বুক, দৃঢ় করি মন
এক্ষণে করিল স্থির সঙ্কল্প তাহার;
মুক্তকণ্ঠে বলিবে সে দেবব্রতে আজ,
প্রাণের সমস্ত কথা করি পরিষ্কার।

তড়িত আলোকে জাগি দেবব্রত এবে,
তখনো ঘুমের ঘোর রহিয়াছে তা’র;
দেখিল ত্রিদিব হ’তে দেববালা এক
আসিয়াছে যেন সেই কক্ষের ভিতর।

রূপের ছটায় যেন কক্ষ আলোকিত,
মন্দার কুসুম গন্ধ সারা অঙ্গময়;
তারকা-মণ্ডিত পরি বহু আভরণ
দেখা দিতে এসেছেন নিশীথ সময়।

ভাঙ্গিল ঘুমের ঘোর, মেলিয়া নয়ন
স্থির দৃষ্টি করি তিনি দেখেন চাহিয়া
এ নহে ত দেববালা নীল ত্রিদিবের
রাধিকা সুন্দরী এ যে নবীনের জায়া।

মহার্ঘ ভূষণে রাধা হইয়া ভূষিতা,
পরিয়া ফিরোজা শাটী নেত্র মুগ্ধকর,
সুন্দরী-ললামভূতা এই পৃথিবীর
বসিয়া রয়েছে রাধা শয্যার উপর।

শিহরিয়া উঠে যথা পথিক যখন
সম্মুখে দেখিতে পায় সর্প বিষধর;
শিহরিল দেবব্রত, দেখি রাধিকাকে
নির্জ্জন নিশীথে সেই শয্যার উপর।

সম্ভ্রমে কহিল তা’রে “আপনি এখানে?
এ সময়ে কেন একা,সংবাদ দাদার?”
ঈষৎ হাসিয়া রাধা কহিল তখন
“প্রয়োজনে আসিয়াছি,মঙ্গল তাঁহার।”

প্রয়োজন বটে, কিন্তু বলেন কেমনে,
ভাবিতে লাগিল রাধা নত করি মুখ,
বস্ত্রাঞ্চল’লয়ে হাতে লাগিল খুঁটিতে,
প্রবল উচ্ছ্বাসে তা’র উথলিল বুক।

সন্ধ্যার আঁধার পূর্ব্বে শেষ রবিকর,
উজলিত করে যথা পশ্চিম গগন,
জীবন তিমির-নীরে ডুবিবার আগে
সরম রঞ্জিল রাগে রাধার বদন।

অর্গল-আবদ্ধ দ্বার দেখি দেবব্রত,
রাধার অবস্থা দেখি বুঝিল অন্তরে,
ছলনা করিতে তাঁ’রে আসিয়াছে রাধা,
ডুবা’তে তাঁহারে আজি অনন্ত আঁধারে।

ব্যস্ত হ’য়ে শয্যা হ’তে উঠিয়া তখন,
স্বতন্ত্র আসনে এক বসি দেবব্রত,
মধুর কোমল কণ্ঠে কহিল তাহার,
কিবা প্রয়োজনে তিনি তথা উপস্থিত।

সেই কণ্ঠস্বরে যেন মাখা সমব্যথা,
বাজিল রাধার তাহে হৃদয়ের তার;
সাহস আসিল ফিরে, জাগিল বাসনা,
শুনিল তাহাতে রাধা হৃদয় ঝঙ্কার।

ফুটিল রাধার কথা অতি ধীরে ধীরে
সরমে জড়িত কণ্ঠ,অস্পষ্ট ভাষায়;
বীণায় হইল যেন প্রথম মুর্চ্ছনা,
বলিতে লাগিল রাধা তখন তাঁহায়।

প্রথম সাক্ষাৎ হ’তে কেমনে রাধিকা
পক্ষপাতী হইলেন দেবব্রত প্রতি;
প্রথমে বন্ধুতা,পরে চিত্তের বিকার,
চিত্তের বিকারে হ’ল প্রবলা আসক্তি।

আসক্তি হইল ক্রমে গাঢ় অনুরাগ,
রাধার করিল প্রাণ আকুলতা ময়;
তিনি ধ্যান, তিনি জ্ঞান, জীবন ঈশ্বর
রাধিকা হইল শেষে তাঁহাতে তন্ময়।

বলিল গর্জ্জিয়া রাধা প্রাণের আবেগে,
“চাহিনা রাখিতে আর এ ছার পরাণ;
যদি নাহি পাই তোমা,গরল সেবনে
করিব সকল জ্বালা শীঘ্র অবসান।

“চাহিনা থাকিতে আর এই পুর মাঝে,
এখানে থাকিতে মম নাহি অধিকার
মনে মনে পাপী আমি,পতির অযোগ্যা,
ধরম করম সব গিয়াছে আমার।

“একমাত্র তুমি এবে উপাস্য আমার,
জীবনে মরণে মম তুমি সর্ব্বময়;
ত্যজিব সংসার আমি লইয়া তোমাকে,
তোমার বিরহে আমি মরিব নিশ্চয়।

“এক লক্ষ মুদ্রা আছে স্ত্রীধন আমার,
বিংশতি সহস্র মুদ্রা মূল্যের ভূষণ;
স্নেহময় পিতা যাহা দিয়াছে আমায়,
সকলি করিব আমি তোমাকে অর্পণ।

“পতির ল’বনা কিছু, তাঁহার সংসার
লইয়া থাকুন তিনি সুখেতে এখন;
আমি শুধু একমাত্র তোমাকে লইয়া
করিব সংসার কাছে বিদায় গ্রহণ।

“লোক মতে বিবাহিতা পত্নী বটে তাঁ’র—
অনিচ্ছায় নিবেদিতা বিবাহ বেদীতে;
স্বেচ্ছায় দিয়াছি কিন্তু তোমাকে পরাণ,
প্রকৃত বিবাহ ইহা তোমাতে আমাতে।

“এখন তোমার বল কিবা অভিপ্রায়,
হৃদয়ের দাবানল কেমনে সহিব?
জীবন মরণ মম নিকটে তোমার,
রাখিলে থাকিব আমি, মারিলে মরিব।”

দেবব্রত স্থিরভাবে শুনিল সকল
বিস্মিত হইল কথা শুনিয়া রাধার;
নত মুখে কিছুক্ষণ চিন্তা করি তিনি
ধীরে ধীরে বলিলেন মন্তব্য তাহার।

“আমার বিশ্বাস ছিল তুমি যে আমারে
দেখিতে স্নেহের চক্ষে বাসিতে যে ভাল;
এ নহে ত ভালবাসা – নির্ম্মল, পবিত্র,
মানবের মুক্তি পথ,জীবনের আলো।

“এ যে ঘোর লালসার জ্বলন্ত অনল,
যাহাতে পুড়া’য়ে সব করে ছারখার;
মানবের দেব ভাব করিয়া বিনাশ
আলোময় প্রাণ করে চির অন্ধকার।

“সুখ দুঃখ মোহপূর্ণ এই যে সংসার
প্রলোভনময়, ইহা পরীক্ষার স্থান;
এখানে সূচিত হয় জীবাত্মার গতি,
স্থূল দেহ যবে তা’র হয় অবসান।

“মানব জীবন এক মহা অপূর্ণতা,
কখন মিলেনা পূর্ণ সুখ শান্তি সাধ;
কিছুতেই তৃপ্তি কভু হয় না কাহার,
অশান্তি শান্তির সাথে,সুখেতে বিষাদ।

“সংযমে মানব হয় দেবে পরিণত,
সকল শক্তির শ্রেষ্ঠ চরিত্রের বল
অনুশীলনেতে হয় চরিত্র গঠিত,
সুচিন্তা করিলে হয় অনন্ত মঙ্গল।

“এই যে দেখিছ দেহ ইহার বিনাশ
মুহূর্ত্তে হইতে পারে,নাহিক সময়;
এই যে দেখিছ রূপ,পূর্ণ মাদকতা,
বীভৎস হইতে পারে একটী পীড়ায়।

“আজি নহে কাল এই জীবন প্রদীপ
একটী ফুৎকারে তাহা যাইবে নিবিয়া;
কুসুম-কোমল দেহ, কুসুমের মত,
কালের নিশ্বাসে তাহা পড়িবে ঝরিয়া।

“এই যে দেখিছ নিশা হ’বে ইহা শেষ
আবার আসিবে দিন,হ’বে অবসান;
এই যে দেখিছ ফুল পড়িবে ঝরিয়া,
এই যে দেখিছ আলো হইবে নির্ব্বাণ।

“কে জানে কোথায় আত্মা যাইবে চলিয়া
কে জানে আঁধার কিম্বা উজ্জল সে দেশ;
করিব যেমন কর্ম্ম,সেই কর্ম্ম ফল
লইয়া যাইবে সেথা হ’লে আয়ু শেষ।

“সকলি অনিত্য, তবে কিসের কারণ,
ক্ষণ উত্তেজনা হেতু, নয়ন মুদিয়া,
আপাতমধুর শেষে তীব্র বিষময়
অনন্ত পাপের নদে পড় ঝাঁপ দিয়া?

“দু দিনের তরে আসা,আছে কত কাজ,
এস সবে ত্বরা করি কাজ রাখি সারি;
যখনি পড়িবে ডাক,বাজিবে বিষাণ
তখনি যাইব চলি’ সমস্ত পাশরি।

“পতিসেবা একমাত্র ধর্ম্ম রমণীর,
পতিরে সেবিলে তুষ্ট জগত-ঈশ্বর;
পতি ধ্যান,পতি জ্ঞান,পতিপদ পূজা
পতি উপাসনা ব্রত হিন্দু ললনার।”

দেবব্রত এইরূপে লাগিল কহিতে
বুঝাতে রাধারে কত মধুর কথায়;
সরমের বাঁধ আজ ভেঙ্গেছে রাধার
কত কথা বলিল সে পাগলিনী প্রায়।

অনেক কথার পর হ’ল ইহা স্থির
দেবব্রত কথামত,শুধু দুই মাস,
শিখিবে রাধিকা চিত্ত করিতে সংযম,
বিফলে,করিবে বিষে নিজ প্রাণ নাশ।

তখন উঠিয়া রাধা গজেন্দ্র গমনে
ধীরে ধীরে চলে গেল কক্ষে আপনার;
নতমুখে দেবব্রত শিরে দিয়া হাত
ভাবিতে লাগিল এবে কর্ত্তব্য তাহার।