ইস্তাহার/বিকল্প

উইকিসংকলন থেকে
বিকল্প

সুর্যের পারদে নগ্ন রুগ্ন আকৃতির সত্য স্পষ্ট ছায়া পড়ে,
ধূলিমাখা পুরাতন পঞ্জিকার পাতায় যেমন বিজ্ঞাপনে
ম্যালেরিয়া ব্যাধিগ্রস্ত কঙ্কালের বীভৎস চিত্র নড়ে চড়ে।

ক্ষুধায় তৃষ্ণায় ছিন্ন মলিন বস্ত্রে ঘুরি দ্বার থেকে দ্বারে,
অন্নের অন্বেষণে। রুক্ষ্ম কেশ, ক্লান্ত দৃষ্টি, পায়ে কেম্বিসের জুতো,
ঘর্মসিক্ত ললাটে কুঞ্চিত রেখা, ন্যুজ দেহ হতাশায় লাঞ্ছনার ভারে।

সংগ্রামে বিধ্বস্ত। দারিদ্র্যের কশাঘাত পেশীর শক্তি কেড়ে নেয়,
আজন্ম দুঃখের পুরস্কার সম্বল। অভিশাপে জর্জরিত বুক।
জন্মের ঠিকুজীতে ভুল করে বিধাতা সৌভাগ্যের ছাপ নাহি দেয়।

জগতের হাটে ঘাটে ইতস্তত বিচরণ বিকল্প ছদ্মবেশ ধরে,
বহুরূপী কলেবর রঙিন বন্ধলে ঢেকে মুহুর্মুহু সত্তা অপদস্থ,
সূক্ষ্মদেহী আত্মা তবু নতুন আধার লভে ক্রমে জন্মান্তরে।

কার হীন ষড়যন্ত্রে অসংলগ্ন এই জন্ম দুঃস্বপ্ন গহবরে?
আমি আজ প্রতিহিংসাপরায়ণ সেই দুশমনের রাজ্যে স্বর্ণ সিংহদ্বারে
প্রধান দ্বারীর বেশে গুপ্তচর ভূমিকায় রত রব নির্জন প্রহরে।

মিথ্যা নীচ কলঙ্কের অপমানে অত্যাচারে তীব্র যন্ত্রণায়
তার রত্ন সিংহাসনে নির্মম আক্রোশে মোর বজ্রসম অসি
দ্রুতগামী হৃদ্‌পিণ্ডের বিকৃত চিত্র আঁকে ক্রুর মন্ত্রণায়।

বর্ষার নির্মল জলে রক্তসিক্ত কালো হাত তারপর ধুয়ে নিতে হবে,
হৃদয়ের বাসি ফুল ফেলে দিয়ে সমুদ্রের মৌসুমী বাতাসে,
অন্য নামে পরিচয়ে অন্য কোনখানে জন্ম নিতে হবে গোপন গৌরবে।

স্কুল ধনী অপদার্থ ধনীর প্রাসাদে যদি পঙ্গু দালাল হয়ে যাই,
সুরা নারী ব্যভিচারে জঘন্য নরক গুলজারে জীবন্মৃতের মতন
তস্করের পদক্ষেপে বোরখায় দেহ ঢেকে অন্ধ গুহায় লুকাই।

তার চেয়ে হিমাচলে দুর্গম অঞ্চলে কোন মহর্ষির বেশে
ঈশ্বরের ধ্যানে মগ্ন, জীবনের বেদগাঁথা আবৃত্তি আনন্দে
সার্থক অমরত্ব জাগতিক অভিজ্ঞতাহীন ঐশী আকাঙ্ক্ষায় মেশে।

তবু তৃপ্তিহীন যাত্রা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে,
রথচক্র উদ্দাম গতিতে ঘোরে সার্থকতা অন্বেষণের নেশায়;
তারপর অকস্মাৎ ক্ষান্ত হয় পথ চলা আমারই অজান্তে।