বিষয়বস্তুতে চলুন

উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/ছেলেদের রামায়ণ/অরণ্যকাণ্ড

উইকিসংকলন থেকে

অরণ্যকাণ্ড

 শুক বনে অনেক মুনির আশ্রম ছিল। সেই সকল আশ্রমের মধ্যে এক রাত্রি থাকিয়া রাম সেখান হইতে আরও গভীর বনে প্রবেশ করিলেন। বনবাসে আসিয়া অবধি এতদিনে তাঁহারা কোন রাক্ষস দেখিতে পান নাই। এইবার বেশ জমকালো রকমের একটা রাক্ষস তাঁহাদের সামনে পড়িল। বনের ভিতর সে দাঁড়াইয়া আছে, যেন একটা পাহাড়! চেহারার কথা আর কী বলিব। যেমন বিষম ভুঁড়ি, তেমনি বিদঘুটে হাঁ! তাহার উপর আবার গর্তপানা দুটো চোখ, গণ্ডারের চামড়ার মত চামড়া, আর পরনে রক্ত-চর্বি-মাখা বাঘছাল।

রাক্ষস মহাশয়ের তখন জলখাবার খাওয়া হইতেছিল। খাওয়ার আয়োজন বেশি নয়—গোটা তিনেক সিংহ, চারিটা বাঘ, দুটা গণ্ডার, দশটা হরিণ, আর একটা হাতির মাথা!

সে জলযোগে কাহারও কোন আপত্তি ছিল না, যদি হতভাগা সীতাকে লইয়া ছুট না দিত। সীতাকে লইয়া যাইতে দেখিয়া রাম ‘হায় হায়!’ করিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। কিন্তু লক্ষ্মণ বলিলেন, ‘দাদা, তুমি এত বড় বীর, তুমি কেন এমন করিয়া কাঁদিতেছ? এই দেখ, আমি রাক্ষস মারিয়া দিতেছি।’

তাহা শুনিয়া রাক্ষস বলিল, ‘তোরা কে রে?’ রাম বলিলেন, ‘আমরা ক্ষত্রিয়। তুই কে?’ রাক্ষস বলিল, ‘আমার নাম বিরাধ; ব্রহ্মা বলিয়াছেন যে, অস্ত্র দিয়া কেহই আমাকে মারিতে পারিবে না। তোরা শীঘ্র পালা!’

একথা শুনিয়া রাম বিরাধের গায়ে সাত বাণ মারিলেন। তখন সে সীতাকে ফেলিয়া, শূল হাতে বিকট শব্দে, হাঁ করিয়া রাম লক্ষ্মণকে খাইতে আসিল। রাম লক্ষ্মণ যত বাণ মারেন, ব্রহ্মার বরে, তাহাতে তাহার কিছুই হয় না; সে গা-ঝাড়া দিয়া সব ফেলিয়া দেয়। এমন সময় রামের দুই বাণে তাহার শূলটা কাটা গেল। তারপরে দুই জনে খড়্গ লইয়া যেই তাহাকে আক্রমণ করিয়াছেন, অমনি সে দুজনকে কাঁধে ফেলিয়া দে ছুট।

তখন সীতা ভয়ানক কাঁদিতে কাঁদিতে বলিলেন, ‘ওগো রাক্ষস, তুমি ইহাদিগকে ছাড়িয়া আমাকে খাও!’ যাহা হউক, রাক্ষসের কাহাকেও খাইবার দরকার হইল না। কারণ, রাম লক্ষ্মণ তখনই তাহার দুই হাত ভাঙিয়া দিলেন, আর তাহাতে সে ‘ভেউ ভেউ’ করিতে করিতে অজ্ঞান হইয়া পড়িয়া গেল।

কিন্তু কী মুস্কিল! আপদ কিছুতেই মরিতে চায় না। দুইজনে তাহাকে কিল, লাথি, আছাড়, কত মারিলেন, মাটিতে ফেলিয়া থেতলা করিয়া দিলেন, খড়্গ গিয়া কাটিতে গেলেন, কিছুতেই তাহার মরণ নাই। তখন রাম বলিলেন, ‘দেখ লক্ষ্মণ, এটা অস্ত্রে মরিবে না; চল এটাকে মাটিতে

 পুঁতিয়া ফেলি।’ এ কথা বলিয়া রাম সেই রাক্ষসের গলাটা পায়ে চাপিয়া ধরিলেন।

 তখন রাক্ষস বলিতে লাগিল, বুঝিয়াছি, আপনারা রাম লক্ষ্মণ। আমি তম্বরু নামে গন্ধর্ব ছিলাম, কুবেরের শাপে রাক্ষস হইয়াছি। কুবের আমাকে শাপ দিবার সময় বলিয়াছিলেন যে, দশরথের পুত্র রাম যুদ্ধ করিয়া আমাকে মারিলে, আমি আবার গন্ধর্ব হইয়া স্বর্গে যাইব।’ এইরূপে নিজের পরিচয় দিয়া রাক্ষস বলিল, এখান হইতে দেড় যোজন দূরে শরভঙ্গ মুনি থাকেন। সেখানে গেলে আপনাদের ভাল হইবে। এরপর একটা গর্ত খুঁড়িয়া বিরাধকে পুঁতিলেই হয়। গর্ত খুঁড়িতে লক্ষ্মণের অধিক কষ্ট হইল না, কিন্তু পুঁতিবার সময় বিরাধ বড়ই চ্যাঁচাইয়াছিল।

 তারপর তিনজনে শরভঙ্গ মুনির আশ্রমে গেলেন। রামকে দেখিতে শরভঙ্গের বড়ই ইচ্ছা। ইন্দ্র তাঁহাকে ব্রহ্মলোকে লইয়া যাইতে আসেন, কিন্তু রামকে না দেখিয়া তিনি সেখানে যাইতে চাহেন নাই। রাম যে আসিবেন তাহা তিনি আগেই জানিতেন, আর শুধু তাঁহাকে দেখিবার জন্যই অপেক্ষা করিতেছিলেন।

 রামকে দেখা যখন হইয়া গেল, তখন আর এই পৃথিবীতে তাঁহার প্রয়োজন রহিল না। সুতরাং তিনি তখন রামের সম্মুখে নিজ হাতে আগুন জ্বালিয়া, তাহার ভিতরে গিয়া বসিলেন। তারপর দেখিতে তাঁহার সেই পুরাতন রোগ পাকা-চুল-দাড়িওয়ালা শরীর পুড়িয়া গিয়া, তাহার বদলে অতি সুন্দর আর উজ্জল একটি বালকের মত চেহারা হইল। তখন তিনি রাম লক্ষ্মণকে বলিলন, ‘এখান হইতে তোমরা সুতীক্ষ্ন মুনির আশ্রমে যাইও, তাহাতে তোমাদের উপকার হইবে।” এই বলিয়া তিনি ব্রহ্মলোকে চলিয়া গেলেন।

 শরভঙ্গ মুনি স্বর্গে চলিয়া গেলে পর অন্য অনেক মুনি রামকে দেখিতে আসিলেন। তাঁহাদের নিকট রাম জানিতে পারিলেন যে, রাক্ষসেরা তাঁহাদের উপর বড়ই অত্যাচার করে। তাহা শুনিয়া রাম বলিলেন, ‘আপনাদের ভয় নাই, আমি রাক্ষস দূর করিয়া দিব।’

 তারপর রাম লক্ষ্মণ আর সীতা সুতীক্ষ্নের আশ্রমে গেলেন। সুতীক্ষ্নের ইচ্ছা ছিল যে, রাম আর অন্য কোথাও না গিয়া তাহার আশ্রমেই থাকেন। কিন্তু দণ্ডক বনের অন্যান্য মুনিদের সহিত দেখা করিতে রামের নিতান্ত ইচ্ছা দেখিয়া তিনি বলিলেন, ‘আচ্ছা তবে যাও, কিন্তু দেখা হইয়া গেলে আবার আমার এখানে আসিবে।’ রাম লক্ষ্মণ তাহাতে সম্মত হইয়া, তাঁহাকে প্রণাম করিয়া সেখান হইতে চলিয়া গেলেন।

 ইহার পর দশ বৎসর ধরিয়া রাম লক্ষ্মণ দণ্ডকারণ্যের তপোবন সকল দেখিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। তাঁহারা যে মুনির নিকটেই যান তিনিই তাঁহাদিগকে কিছুদিন না রাখিয়া ছাড়েন না। কোথাও মাসেক, কোথাও চার পাঁচ মাস, কোথাও এক বৎসর, এইরূপে দশ বৎসর মুনিদের আশ্রমে আশ্রমে কাটাইয়া, শেষে তাঁহারা আবার সুতীক্ষ্নের নিকটে আসিয়া কিছুদিন রহিলেন।

 সকল মুনির সহিতই দেখা হইল, কিন্তু অগস্ত্য মুনির সহিত দেখা এখনও হয় নাই। রাম ভাবিলেন যে, এখন একবার তাঁহার সহিত দেখা করিলে বড় ভাল হয়। তাই তাঁহারা সুতীক্ষ্নের নিকট বিদায় লইয়া অগস্ত্যের আশ্রমে গেলেন।

 মুনিদের মধ্যে অগস্ত্য একজন অতিশয় বড় লোক। তাঁহার এক একটা কাজ বড়ই আশ্চর্য। একবার তিনি চুমুক দিয়া সমুদ্রটাকে খাইয়া ফেলেন। ইল্বল আর বাতাপি নামক দুইটা দৈত্যকে তিনি যেমন করিয়া মারেন, তাহা অতি চমৎকার।

 ইল্বল আর বাতপি দুই ভাইছিল। ইহাদের কাজ ছিল কেবল ব্রাহ্মণ মারিয়া খাওয়া। ইল্বল ব্রাহ্মণ সাজিয়া, সংস্কৃত কথা আওড়াইতে আওড়াইতে ব্রাহ্মণদিগকে নিমন্ত্রণ করিতে যাইত।

কোন ব্রাহ্মণকে দেখিতে পাইলেই বলিত, ‘আমার বাড়িতে শ্রাদ্ধ, আপনার নিমন্ত্রণ।’ শ্রাদ্ধের কথা একেবারেই মিথ্যা; আসলে ফাঁকি দিয়া ব্রাহ্মণ বেচারাকে নিজের বাড়িতে আনা চাই।

 দুরাত্মা, সেই ব্রাহ্মণকে ফাঁকি দিয়া আনিয়া ভেড়া খাইতে দিত। সে আবার যে-সে ভেড়াও নয়, তাহার ভাই বাতাপি সেই ভেড়া সাজিত। সেই ভেড়ার মাংস রাঁধিয়া সে ব্রাহ্মণকে খাইতে দিত, আর খাওয়া হইলে ডাকিত, ‘বাতাপি, বাতাপি’! বাতাপি তখন ভেড়ার মত ‘ভ্যা ভ্যা’ করিতে করিতে বেচারা ব্রাহ্মণের পেট চিরিয়া বাহির হইত। এইরূপে তাহারা অনেক ব্রাহ্মণ মারিয়াছিল।

 এই দুই দৈত্যকে শাস্তি দিবার জন্য অগস্ত্য মুনি একবার তাহাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খাইতে গেলেন। ইল্বল তাঁহাকেও সেইরকম করিয়া ভেড়া রাঁধিয়া খাওয়াইল। সে জানিত না যে, এই সর্বনেশে মুনি তাহার ভাইকে একেবারে হজম করিয়া ফেলিবেন! খাওয়া শেষে ইল্বল ডাকিল, ‘বাতাপি, বাতাপি!’ অগস্ত্য বলিলেন, ‘বাতাপি কোথা হইতে আসিবে? তাহাকে যে হজম করিয়া ফেলিয়াছি।’ তাহা শুনিয়া ইল্বল অগস্ত্যকে মারিতে গেল, কিন্তু অগস্ত্য কেবল তাহার দিকে রাগের ভরে তাকাইয়াই তাহাকে ভস্ম করিয়া ফেলিলেন।

 অগস্ত্য রামকে বিশ্বকর্মার তৈয়ারি একখানি ধনুক, ব্রহ্মদত্ত নামে একটা ভয়ঙ্কর বাণ, অক্ষয় তৃণ নামক একটি তুণ, আর একখানি আশ্চর্য খড়গ দিলেন। তৃণটির এমন আশ্চর্য গুণ ছিল যে, তাহার ভিতরকার তীর কিছুতেই ফুরাইত না;এইজন্য তাহার নাম অক্ষয় তুণ। রাম সেই জিনিসগুলি লইয়া অগস্ত্যকে বলিলেন, ‘মুনিঠাকুর, আমাদিগকে একটি সুন্দর জায়গা দেখাইয়া দিন, আমরা সেখানে ঘর বাঁধিয়া থাকিব।’ অগস্ত্য একটু চিন্তা করিয়া বলিলেন, ‘এখান হইতে দুই যোজন দূরে পঞ্চবটী নামে একটি অতি সুন্দর বন আছে। সেখানে সুন্দর ফলমূল, মিষ্ট জল, হরিণ, ময়ূর ইত্যাদি সকলই পাওয়া যায়। তোমরা সেইখানে গিয়া সুখে বাস কর।’ এ কথায় রাম অগস্ত্যকে প্রণাম করিয়া পঞ্চবটী যাত্রা করিলেন।

 খানিক দূরে গিয়া তাহারা দেখিলেন যে, পথের ধারে বিশাল এক পাখি বসিয়া আছে। তাহাকে রাক্ষস ভাবিয়া রাম লক্ষ্মণ জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘তুমি কে হে?’ সে বলিল, ‘বাবা, আমি তোমাদের পিতার বন্ধু। আমার নাম জটায়ু। আমার দাদার নাম সম্পাতি, আমার পিতার নাম অরুণ। গরুড় আমাদিগের জ্যেঠামহাশয়।’

 পাখি আরও বলিল, ‘তোমরা আমার সঙ্গে এইখানে থাক, তাহা হইলে, তোমরা যখন ফল আনিতে যাইবে তখন আমি সীতাকে দেখিতে পারিব।’ রাম লক্ষ্মণ তাঁহাকে নমস্কার করিলেন। তাঁহার কথাবার্তা তাঁহাদের বড়ই মিষ্ট লাগিল।

 সে স্থানটি বাস্তবিকই খুব সুন্দর। কাছেই গোদাবরী নদী; তাহাতে হাঁস, সারস প্রভৃতি নানারকমের পাখি খেলা করিতেছে। দুইধারে সুন্দর পাহাড়গুলি ফুলে ফলে বোঝাই হইয়া আছে। নদীতে হরিণ জল খাইতে আসে, আর বনের ভিতর ময়ূর ডাকে। ঘর বাঁধিয়া থাকিবার পক্ষে স্থানটি চমৎকার। এই সুন্দর স্থানে লক্ষ্মণ একটি সুন্দর ঘর বাঁধিলেন।

 সেই ঘরটিতে তিনজনের বেশ সুখেই সময় কাটিতেছিল। কিন্তু সুখ কি চিরদিন থাকে? একদিন সূর্পণখা নামে একটা রাক্ষসী সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইল। সে বলিল, ‘আমি রাবণ রাজার বোন, রামকে বিবাহ করিতে আসিয়াছি।’ রাম তাহাকে বিবাহ করিতে রাজি হইলেন না। তখন সে লক্ষ্মণকে বলিল, ‘তুমি আমাকে বিবাহ কর।’ লক্ষ্মণও রাজি হইলেন না। তাহাতে

ছেলেদের রামায়ণ )\రి সে হতভাগী হা করিয়া সীতাকে খাইতে গেল। এত বাড়াবাড়ি করিলে কে সহ্য করিতে পারে? কাজেই তখন লক্ষ্মণ খড়গ দিয়া তাহার নাক আর কান কাটিয়া দিলেন। সেই রক্তমাখা নাক কান লইয়া, রাক্ষসী হাত তুলিয়া চাঁচাইতে চ্যাচাইতে বনের ভিতর ঢুকিয়া গেল। কাছেই জনস্থান বলিয়া একটা জায়গা। সেখানে সূৰ্পণখার আর এক ভাই থাকে, নাহার নাম খর। সূৰ্পণখা কাটা নাক কান লইয়া, সেই খরের সম্মুখে গিয়া আছড়াইয়া পড়িল। ভগ্নীর নাক কান কাটা দেখিয়া খর রাগে কাপিতে কঁাপিতে বলিল, “একি সর্বনাশ! হায় হায়! কিসে তোমার এইরূপ হইল ? তুমি কেমন লেন- -o-, -- fo সুন্দর ছিলে! যমের মত তোমার “A roo ভয়ানক চেহারা, আর গর্তপানা চোখ ছিল! কোন দুষ্ট তোমার এমন দশা করিল, শীঘ্ৰ বল! তাহাকে এখনি উচিত সাজা দিতেছি!’ সূপণখা কাদিতে কাদিতে বলিল, দশরথ রাজার দুটা ছেলে আসিয়াছে, তাহদের নাম রাম আব লক্ষ্মণ। তাহাবাই আমার এই দশা করিযাছে। আমার কোন দোষ নাই দাদা! আজ আমাকে তাহদের রক্ত আনিয়া খাইতে দিতে হইবে।” এই কথা শুনিয়া খর তখনই চৌদ্দটা রাক্ষসকে হুকুম দিল, ‘তোমরা এখনই সেই তিনটা মানুষকে মারিয়া নিয়া আইস, সূৰ্পণখা তাহদের রক্ত খাইবেন। সেই হুকুম পাওয়ামাত্রই চৌদ্দটা রাক্ষস অস্ত্রশস্ত্র লইয়া ছুটিল। সুপণখা তাহদের সঙ্গে গিয়া রাম লক্ষ্মণকে দেখাইয়া দিল। এদিকে রামও সীতাকে লক্ষ্মণের নিকট রাখিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। চৌদ্দটা রাক্ষস বিষম রাগে তাহার উপর চৌদ্দটা শূল ছুড়য়া মারিল। রাম চৌদ্দ বাণে সেই চৌদ্দটা শূলকে কাটিয়া, নারাচ অস্ত্রে একেবারে রাক্ষসদিগেব বুক ফুটা করিয়া দিলেন। সে অস্ত্র তাহদের পিঠ দিয়া বাহির হইয়া, মাটির ভিতরে অবধি চুকিয়া গেল। তাহা দেখিয়া সূৰ্পণখাও তাড়াতাড়ি ছুটিয়া পালাইল। সূৰ্পণখাকে আবার ছুটয়া আসিতে দেখিয়া খন বলিল, আবার কি হইয়াছে? তোমার সঙ্গে যাহারা গিয়াছিল, তাহারা কি সেই মানুষ তিনটাকে মারিতে পারে নাই? সূৰ্পণখা বলিল, না, রামই তাহাদিগকে মারিয়া ফেলিয়াছে। তুমি নিজে চল। এই বলিয়া সে পেট চাপড়াইয়া, চুল ছিড়িয়া, ঘোরতর শব্দে কঁদিতে লাগিল। তখন খর নিজেই তাহার ভাই দূষণকে লইয়া রথে চড়িয়া যুদ্ধ করিতে চলিল। চৌদ্দ উপেন্দ্ৰ—১৫

  • খড়গ প্রভৃতি অস্ত্র লইয়া গর্জন করিতে করিতে তাহাদের সঙ্গে চলিল। আকাশে দেবতারা ছুটিয়া দেখিতে আসিলেন, এবারে কী ভয়ানক যুদ্ধ হয়!

 এদিকে রামও সীতাকে লক্ষ্মণের সঙ্গে একটা পর্বতের গুহায় লুকাইয়া রাখিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছেন। রাক্ষসেরা গর্জন করিতে করিতে আসিয়া রামের উপর প্রাণপণে অস্ত্র ছুঁড়িতে লাগিল। কিন্তু রাম এমনই ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করিলেন যে, তাঁহার সম্মুখে তাহারা কিছুতেই টিকিতে পারিল না। রামের বাণে তাহাদের হাতি, ঘোড়া, লোকজন যত ছিল সকলই একেবারে খণ্ড-খণ্ড হইয়া গেল।

 কখন খরের ভাই দূষণ বড়ই রাগের সহিত যুদ্ধ করিতে আসিল। কিন্তু সে যে কেমন যুদ্ধ করিয়াছিল, তাহা আর বলিয়া কী হইবে। প্রথমেই তো রামের বাণে তাহার ঘোড়া গেল, সারথি গেল, ধনুক গেল। তখন সে লইল একটা পরিঘ। অমনি সেই পরিঘ-শুদ্ধ তাহার হাত দুটা কাটা গেল। তখন বেচারা মরিয়া গেল। তারপর আর তিনটা রাক্ষস আসিয়া ভালমতে যুদ্ধ আরম্ভ করিতে না করিতেই মরিয়া গেল।

 একলা রাম যুদ্ধ করিয়া চৌদ্দ হাজার রাক্ষসকে মারিলেন। অবশিষ্ট রহিল কেবল খর আর তাহার পুত্র ত্রিশিরা; ত্রিশিরা অতি অল্পক্ষণই যুদ্ধ করিয়াছিল; শেষে রহিল শুধু খর।

 খর ভয়ানক যুদ্ধ জানিত। সে প্রথমে খুব তেজের সহিত যুদ্ধ করিয়া রামের ধনুক আর বর্ম কাটিয়া ফেলিল। কিন্তু রাম তখনই সেই অগস্ত্য মুনির ধনুকখানি লইয়া, ক্রমে তাহার রথ,সারথি, ঘোড়া, ধনুক সব চুরমার করিয়া দিলেন। তখন খরের এক গদা মাত্র বাকি, তাহাও কাটিতে রামের অধিক সময় লাগিল না। গদা কাটা গেলে খরের হাতে আর একখানিও অস্ত্র রহিল না। কিন্তু তাই বলিয়া তাহার তেজ যে কিছুমাত্র কমিল, তাহা নহে। অস্ত্র ফুরাইলে সে শালগাছ লইয়া যুদ্ধ করিল। শালকাছ কাটা গেলে, শুধু হাতেই মারিতে আসিল। শেষে রাম তাহার বুকে এক বাণ মারিয়া তাহার প্রাণ বাহির করিয়া দিলেন।

 জনস্থানের যত রাক্ষস প্রায় সকলকেই রাম মারিয়া শেষ করিলেন। বাকি রহিল খালি অকম্পন নামে একটা। অকম্পন পলাইয়া লঙ্কায় গিয়া রাবণকে বলিল, ‘মহারাজ, জনস্থানের যত রাক্ষস ছিল সকলই মরিয়া গিয়াছে। কেবল আমিই অনেক কষ্টে পলাইয়া আসিয়াছি।’ তাহা শুনিয়া রাবণ আশ্চর্য হইয়া বলিল, ‘সে কী কথা অকম্পন! তাহারা কী করিয়া মরিল?’

 অকম্পন বলিল, ‘মহারাজ, অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র রাম তাহাদিগকে মারিয়াছে। রাম যে কত বড় বীর তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না। সে একাই জনস্থান নষ্ট করিয়াছে। তাহার সঙ্গে আবার তাহার এক ভাই আছে, সেটার নাম লক্ষ্মণ।’

 এ কথা শুনিয়া রাবণের রাগের আর সীমা রহিল না। সে তখনই রাম লক্ষ্মণকে মারিবার জন্য জনস্থানে যাইতে চাহিল। কিন্তু অকম্পন তাহাতে বাধা দিয়া বলিল, ‘মহারাজ কি রামকে যেমন-তেমন বীর ভাবিয়াছেন? আপনার সমস্ত রাক্ষস লইয়া গেলেও তাহার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া পারবেন না। তবে, তাহাকে মারিবার একটা উপায় আছে। রাম তাহার স্ত্রী সীতাকে আনিয়াছে। সীতা এতই সুন্দর যে, তেমন আর কেহ দেখে নাই। আপনি যদি রামকে ফাঁকি দিয়া এই সীতাকে ধরিয়া আনিতে পারেন, তবে সেই দুঃখে রাম আপনিই মরিয়া যাইবে।’ তাহা শুনিয়া রাবণ বলিল, ‘আমি আজই যাইতেছি।’

 এই বলিয়া সে, তাহার গাধায় টানা ঝকঝকে রথখানিতে চড়িয়া, সেই তাড়কার পুত্র

মারীচের নিকট গিয়া উপস্থিত হইল। মারীচ তাহাকে দেখিয়া বলিল, ‘মহারাজ যে এমন তাড়াতাড়ি করিয়া একলাটি আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন। ব্যাপারখানা কী?’

 রাবণ বলিল, ‘দশরথের ছেলে রাম জনস্থানের রাক্ষসদিগকে মারিয়া ফেলিয়াছে। তাই আমি তাহার স্ত্রী সীতাকে ধরিয়া আনিতে যাইতেছি।’ মারীচ বলিল, ‘মহারাজ, এরূপ বুদ্ধি আপনাকে কে দিয়াছে? আপনি এইবেলা লঙ্কায় ফিরিয়া যাউন। রামের হাতে পড়িলে আপনার আর রক্ষা থাকিবে না!’

 তাহা শুনিয়া রাবণ লঙ্কায় ফিরিয়া আসিল। আসিয়াই দেখিল, সূর্পণখা, তাহার নাক কান কাটা। জনস্থানে রাক্ষসেরা মারা গেলে পর হতভাগী চ্যাঁচাইতে চ্যাঁচাইতে লঙ্কায় চলিয়া আসিয়াছে।

 সূর্পণখার কথা শুনিয়া রাবণ আবার মারীচের কাছে ফিরিয়া গেল। এবারে আর সে তাহার কোন কথাই শুনিল না। সে বলিল, ‘মারীচ, আমার এ কাজটি করিয়া না দিলেই নয়। তুমি রামের আশ্রমে গিয়া, সোনার হরিণ সাজিয়া সীতার সম্মুখে নাচিয়া বেড়াইবে। তোমাকে দেখিলে নিশ্চয় সীতা তোমাকে ধরিবার জন্য রাম লক্ষ্মণকে পাঠাইয়া দিবে। রাম লক্ষ্মণ আশ্রমের বাহিরে চলিয়া গেলে আর সীতাকে ধরিয়া আনিতে কিসের ভয়!’

 মারীচ ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে জোড়হাতে বলিল, ‘মহারাজ, এক সময় আমার গায় হাজার হাতির জোর ছিল। আমি মনের সুখে দণ্ডকবনের মুনিদিগকে ধরিয়া খাইতাম, আর তাহাদের যজ্ঞ নষ্ট করিয়া বেড়াইতাম। আমি বিশ্বামিত্রের যজ্ঞ নষ্ট করিতে গেলাম, আর এই রাম ধনুক লইয়া আমাকে আটকাইতে আসিল। তখন সে ছোট্ট ছেলেমানুষ ছিল। আমি মনে করিলাম, ঐটুকু মানুষ আমার কী করিবে! কিন্তু সেই ঐটুকু মানুষই এমন এক বাণ আমাকে মারিল যে, আমি তাহার চোটে অজ্ঞান হইয়া এক সমুদ্রের জলে আসিয়া পড়িলাম। এমন লোকের সঙ্গে কি ঝগড়া করিতে যাইতে হয়? তাহার তো কিছু করিতে পারিবেনই না, মাঝখান হইতে আপনার প্রাণটি যাইবে।’

 ঔষধ তিক্ত হইলে যেমন তাহা খাইতে ভাল লাগে না, মারীচের কথাও রাবণের কাছে সেইরূপ ভাল লাগিল না। সে বলল, ‘একাজ তোমায় করিতেই হইবে। সোনার হরিণ, তাহার গায়ে রূপার চক্র, এমনি সাজ ধরিয়া তুমি সীতার সামনে গিয়া খেলা করিতে থাক। এমন হরিণটি দেখিলেই সীতা ভুলিয়া যাইবে, আর তোমাকে ধরিবার জন্য রামকে না পাঠাইয়া থাকিতে পরিবে না। রাম তোমার পিছনে পিছনে অনেক দূর আসিলে পর, তুমি রামের মতন গলায় চ্যাঁচাইবে, “হায় সীতা! হায় লক্ষ্মণ!” সে শব্দ শুনিলে, লক্ষ্মণ কি আর ঘরে বসিয়া থাকিতে পারিবে? তাহাকে আশ্রম ছাড়িয়া রামের কাছে আসিতেই হইবে। তখন আর সীতাকে কে রাখে? মারীচ, এ কাজটি করিয়া দিলে আমার অর্ধেক রাজ্য তোমার। আর যদি না কর, তবে এখনি তোমার মরণ!’

 কাজেই তখন আর বেচারা কী করে? রাবণের সঙ্গে সেই রথে চড়িয়া তাহাকে আসিতে হইল। সীতা তখন সাজি হাতে করিয়া ফুল তুলিতেছিলেন। এমন সময় সেই দুষ্ট রাক্ষস সোনার হরিণ সাজিয়া তাঁহার সামনে আসিয়া খেলা করিতে লাগিল। তাহা দেখিয়া সীতা রাম লক্ষ্মণকে ডাকিলেন!

 সোনার হরিণ দেখিয়াই লক্ষ্মণ বলিলেন, ‘দাদা, হরিণ কি কখনও সোনার হয়? এটা নিশ্চয় সেই তাড়কার ছেলে মারীচের ফাঁকি। ঐ দুষ্ট অনেক সময় হরিণের সাজ ধরিয়া মুনিদিগকে মারিতে আসে।’

 কিন্তু সীতা সেই হরিণ দেখিয়া এতই ভুলিয়া গেলেন যে লক্ষ্মণের কথা তাঁহার কানেই গেল না। তিনি রামকে বলিলেন, কী সুন্দর হরিণ! ওটি আমাকে ধরিয়া দিতেই হইবে! জীবন্ত ধরিতে পারিলে আমরা উহাকে পুষিব, আর দেশে যাইবার সময় সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইব। আর জীবন্ত ধরিতে না পারিলেও, উহার চামড়ায় সুন্দর আসন হইবে।’

 লক্ষ্মণকে সাবধানে পাহারা দিতে বলিয়া রাম হরিণ ধরিতে চলিলেন। দুষ্ট রাক্ষস কতই ছল জানে! এক এক বার কাছে আসে, আবার বনের ভিতরে লুকায়, আবার খানিক দূর গিয়া গাছের আড়াল হতে উঁকি মারে। এরূপ করিয়া সে তাঁহাকে অনেক দূর হইয়া গেল। রাম যতক্ষণ মনে করিয়াছিলেন যে তাহাকে ধরিতে পারিবেন, ততক্ষণ ক্রমাগত তাহার পিছু-পিছু ছুটিয়াছিলেন। যখন দেখিলেন যে আশ্রম হইতে অনেক দূরে চলিয়া আসিয়াছেন, তবুও তাহাকে ধরিতে পারিতেছেন না, তখন তিনি একটা তীর ছুঁড়িয়া মারিলেন।

 সেই তীরের ঘায় রাক্ষসের হরিণের সাজ ঘুচিয়া গেল। এখন তাহার প্রাণ যায়-যায়। মরিবার সময় সে বিকট রাক্ষস হইয়া ঠিক রামেরই মতন স্বরে ‘হায় সীতা! হায় লক্ষ্মণ!’ বলিয়া চিৎকার করিতে লাগিল। তাহা শুনিয়া রাম বুঝিতে পারিলেন যে সর্বনাশ হইয়াছে। এ শব্দ সীতার কানে গেলে কি আর রক্ষা থাকিবে? এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে তিনি ব্যস্ত হইয়া আশ্রমের দিকে ফিরিলেন।

 এদিকে সীতা আশ্রম হইতে সেই দুষ্ট রাক্ষসের কান্না শুনিতে পাইয়া রামের জন্য অস্থির হইয়া উঠিলেন। তিনি লক্ষ্মণকে বলিলেন, ‘হায় হায়! না জানি কী সর্বনাশ হইল! লক্ষ্মণ শীঘ্র যাও! নিশ্চয় তিনি রাক্ষসের হাতে পড়িয়াছেন!’

 কিন্তু লক্ষ্মণকে রাম সীতার নিকট থাকিতে বলিয়া গিয়াছেন, কাজেই তিনি সীতাকে ছড়িয়া যাইতে চাহিলেন না। তখন সীতা লক্ষ্মণকে এই বলিয়া গালি দিতে লাগিলেন ‘বুঝিয়াছি, তাঁহাকে রাক্ষসে মারিয়া ফেলে ইহাই তুমি চাও। এমন ভাই তুমি!

 তাহা শুনিয়া লক্ষ্মণ বলিলেন, “দাদাকে মারিতে পারে, ত্রিভুবনে এমন কেহ নাই। আপনি কেন আমাকে এইরূপ করিয়া বলিতেছেন? আপনাকে একলা ফেলিয়া যাওয়া কি আমার উচিত? আপনার কোন ভয় নাই। যে শব্দ শুনিয়াছেন উহা রাক্ষসের ফাঁকি। রাক্ষসদিগের সঙ্গে আমাদের এখন শত্রুতা; সুতরাং তাহারা আমাদের অনিষ্ট করিবার জন্য কতই চেষ্টা করিবেন। আপনি দুঃখ করিবেন না, স্থির হউন।’

 কিন্তু সীতা আরও রাগিয়া বলিলেন, ‘তবে রে নিষ্ঠুর দুষ্ট লক্ষ্মণ, রামের বিপদ হইলেই বুঝি তোর সুখ হয়? তোর মতন পাপী তো আর নাই! তোকে বুঝি ভরত পাঠাইয়াছে? না তুই নিজেই দুষ্ট বুদ্ধি আঁটিয়া রামের সঙ্গে আসিয়াছিস?’

 এ কথা শুনিয়া লক্ষ্মণের মনে যে কী কষ্ট হইল তাহা কী বলিব। তিনি বলিলেন, ‘আপনাকে আমি মায়ের মতন ভক্তি করি। কিন্তু আপনি এমন শক্ত কথা আমাকে বলিতেছেন যে, আমার তাহা কিছুতেই সহ্য হইতেছে না। যাহা হউক, এই আমি চলিলাম, বনের দেবতারা আপনাকে রক্ষা করুন। সাবধান হইয়া ঘরে বসিয়া থাকুন, যেন দাদার সঙ্গে ফিরিয়া আসিয়া আবার আপনাকে দেখিতে পাই।’ এই বলিয়া লক্ষ্মণ সেখান হইতে চলিয়া গেলেন। যাইবার সময় বার বার ফিরিয়া তাকাইতে লাগিলেন, পাছে সীতার কোন অনিষ্ট হয়।

 লক্ষ্মণ চলিয়া যাওয়া-মাত্রই সন্ন্যাসীর বেশে রাবণ সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইল। হাতে ছাতা লাঠি আর কমণ্ডলু, মাথায় টিকি, পায়ে জুতা, কপালে লম্বা ফোঁটা, মুখে ঘন-ঘন হরিনাম। দুষ্ট ক্রমে ঘরের দরজায় আসিয়া সীতার সহিত কথাবার্তা জুড়িয়া দিল; সীতা মনে করিলেন, বুঝি সে যথার্থই ব্রাহ্মণ সন্ন্যাসী। কাজেই তিনি তাহাকে নমস্কার করিয়া, বসিবার জন্য কুশাসন আর পা ধুইবার জন্য জল আনিয়া দিলেন। তারপর তিনি হাত জোড় করিয়া বলিলেন, ‘ঠাকুর, ফলমূল আনিয়া দিই দয়া করিয়া কিছু আহার করুন।’

 রাবণ এইরূপ সীতার সহিত কথাবার্তা আরম্ভ করিয়া শেষে বলিল, ‘আমি লঙ্কার রাজা রাবণ। তুমি বনে থাকিয়া, এই তপস্বীটার সঙ্গে মিছামিছি এত কষ্ট কেন করিতেছ? আমার সঙ্গে লঙ্কায় চল। সেখানে তুমি যার-পর নাই সুখে থাকিবে।’

 এই কথা শুনিয়া সীতা ভয়ানক রাগের সহিত বলিলেন, ‘বটে রে দুষ্ট, তোর এত বড় কথা! এর উচিত সাজা তুই এখনি পাইবি!’

 তখন রাবণ সন্ন্যাসীর সাজ ফেলিয়া তাহার নিজের চেহারায় দাঁড়াইল। সে যে কী বিকট মূর্তি, তাহা কী বলিব! দশটা মাথা, কুড়িটা হাত, কুড়িটা চোখ—দেখিলেই ভয়ে প্রাণ উড়িয়া যায়! এইরূপ চেহারা করিয়া সে সীতাকে বলিল ‘তুমি বুঝি পাগল, তাই আমাকে চিনিতে পারিতেছ না? রামের মায়া ছাড়িয়া দাও। সেটা হতভাগা, তাহাকে ভালবাসা কি তোমার উচিত?’

 এই কথা বলিতে বলিতেই রাবণের রথ সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইল। রাবণও সীতার চুল ধরিয়া তাঁহাকে সেই রথে নিয়া তুলিতে আর বিলম্ব করিল না। সীতা রামের নাম ধরিয়া চিৎকার করিয়া কতই কাঁদিলেন, তাঁহার শরীরে যেটুকু জোর ছিল, তাহা লইয়াই প্রাণপণে ছুটিয়া পালাইবার জন্য কতই চেষ্টা করিলেন, কিন্তু সেই ভয়ানক রাক্ষসের সঙ্গে তিনি পারিবেন কেন? রথ তাঁহাকে লইয়া আকাশে উড়িয়া চলিল। সীতা পশুপক্ষীকে, বনদেবতাদিগকে, গোদাবরী নদীকে ডাকিয়া কাঁদিয়া বলিতে লাগিলেন, ‘ওগো, তোমরা দয়া করিয়া রামকে সংবাদ দাও। তাঁহার সীতাকে দুষ্ট রাবণ চুরি করিয়া লইয়া যাইতেছে!’

 সে সময়ে বুড়া জটায়ু পক্ষী গাছে বসিয়া ঘুমাইতেছিল। সীতার কান্নার শব্দে সে জাগিয়া দেখিল যে, রাবণ তাহাকে লইয়া পালাইতেছে! তাহা দেখিয়া জটায়ু বলিল, ‘বটে রে দুষ্ট রাক্ষস, আমি এখানে থাকিতেই তুই সীতাকে লইয়া পলাইবি? এখনই নখ দিয়া তোর মাথা ছিঁড়িয়া দিতেছি!’

 তখন জটায়ু আর রাবণে বিষম যুদ্ধ বাধিয়া গেল। রাবণ জটায়ুকে ভয়ানক ভয়ানক বাণ মারে, আর জটায়ু নখের আঁচড়ে তাহার মাংস ছিঁড়িয়া নিতে ছাড়ে না। রাবণ জটায়ুর বুকে দশ বাণ মারিয়া মনে করিল এইবার পাখি মারবে। কিন্তু পাখি মরা দূরে থাকুক, বরং সে রাবণের ধনুকটা কাড়িয়া লইল, তাহার উপর আবার তাহাকে একটা প্রকাণ্ড লাথিও মারিল। তারপর রাবণ আবার নূতন ধনুক লইয়া আগের চেয়ে অনেক বেশী বাণ মারিল বটে, কিন্তু জটায়ু কি তাহাতে ডরায়? বাণ তো তাহার ডানার বাতাসেই উড়িয়া গেল। তারপর ধনুকখানি কাড়িয়া লইয়া তাহা মাড়াইয়া গুঁড়া করিতে কতক্ষণ লাগে!

এমনিতর ভয়ানক যুদ্ধ করিয়া জটায়ু রাবণের রথ, ছাতা, সারথি, সহিস কিছুই আস্ত রাখিল না। কিন্তু সেই বুড়া বয়সে বেচারা আর কত যুদ্ধ করিবে? সে শীঘ্রই কাহিল হইয়া পড়িল।

 রাবণ দেখিল যে এইবেলা পালাইবার উত্তম সময়। সুতরাং সে হাতে একখানি খড়গ আর বগলে সীতাকে লইয়া চুপি-চুপি চলিয়া যাইতে লাগিল। তাহা দেখিয়া জটায়ু অমনি তাহাকে ধমক দিয়া বলিল, ‘দাঁড়া পাপী, যাইতেছিস কোথায়?” এই বলিয়া, হাতির পিঠে যেমন মাহুত চড়ে, সেইরূপ জটায়ু গিয়া রাবণের পিঠে চড়িল। তারপর তাহাকে ঠোকরাইয়া, আঁচড়াইয়া, চুল ছিড়িয়া এমনি নাকাল করিল যে নাকাল যাহাকে বলে!

 কিন্তু রাবণ সহজে মরিবার লোক ছিল না। ব্রহ্মা তাহাকে বর দিয়াছিলেন যে, তাহার শরীরের কোন জায়গা ছিঁড়িয়া গেলে তাহা তখনই জোড়া লাগিবে। জটায়ু তাহার বাম দিকের দশটা হাত ছিঁড়িয়া ফেলিতে না ফেলিতেই দেখিল যে, তাহার আর দশটা হাত বাহির হইয়াছে। এরূপ লোকের সঙ্গে কতক্ষণ যুদ্ধ করা যায়? কাজেই শেষটা জটায়ু আর পারিল না। তখন সেই দুষ্ট রাক্ষস খড়গ দিয়া বেচারার পা আর ডানা দুখানি কাটিয়া ফেলিল। জটায়ুর তখন প্রাণ যায়-যায়। এরপর আর সীতাকে কে রক্ষা করিবে? কাজেই তখন রাবণ তাঁহাকে লইয়া শূন্যে চলিয়া গেল।

 সীতার দুঃখের কথা আর কী বলিব! হায় হায়! তাহার সেই কান্না কেহই শুনিতে পাইল না। সেই শূন্যের উপর হইতে সীতা এমন একটি লোক দেখিতে পাইলেন না যাহাকে ডাকিয়া বলিতে পারেন, ‘আমাকে রক্ষা কর’। তিনি কেবল দেখিলেন যে, একটা পর্বতের উপর পাঁচটি বানর রহিয়াছে। তাহা দেখিয়া তিনি তাঁহার সোনালী রঙের চাদরখানি আর গায়ের গহনাগুলি ফেলিয়া দিলেন। মনে করিলেন, হয়ত তাহা দেখিতে পাইয়া তাহারা রামকে বলিবে। রাবণ ইহার কিছুই টের পাইল না, কিন্তু বানরেরা তাহা চাহিয়া দেখিল।

 এদিকে রাম সেই হরিণের-সাজ ধরা রাক্ষসটাকে মারিয়া তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরিতেছেন, তাঁহার মনে ভয়ের আর সীমা নাই। এমন সময় দেখিলেন, লক্ষ্মণ অতিশয় দুঃখিতভাবে সেই দিকে দিয়া আসিতেছেন। লক্ষ্মণকে দেখিয়া তিনি বলিলেন, ‘সেকি লক্ষ্মণ, তুমি সীতাকে ফেলিয়া আসিয়াছ? না জানি কী সর্বনাশ হইয়াছে! সীতাকে হয়ত আর দেখিতে পাইব না।’

 এই বলিয়া তিনি তাড়াতাড়ি আশ্রমে আসিয়া দেখিলেন, সীতা নাই, খালি ঘর পড়িয়া রহিয়াছে। সীতা যে-সকল জায়গায় বেড়াইতেন, তাহার কোথাও তাঁহাকে খুঁজিয়া পাইলেন না।

 হায় হায়! সীতা কোথায় গেলেন? তিনি কি কোথাও লুকাইয়া আছেন? না বনে ফুল তুলিতে গিয়াছেন? না নদীতে স্নান করিতে গিয়াছেন? কোথায় তিনি? গাছতলায়, নদীর ধারে, পাহাড়ের উপরে, কত জায়গায় রাম সীতাকে খুঁজিলেন, কোথাও তাঁহাকে দেখিতে পাইলেন না। গাছকে জিজ্ঞাসা করিলেন, কেহই সীতার সংবাদ বলিতে পারিল না।

 তখন তিনি হাত পা ছুড়িয়া কাঁদিতে কাঁদিতে বলিলেন, ‘হায় রে, লক্ষ্মণ, কে আমাদের সীতাকে লইয়া গেল? সীতা তুমি বুঝি লুকাইয়া থাকিয়া তামাসা দেখিতেছ? শীঘ্র আইস, আমার বড়ই কষ্ট হইতেছে। তুমি চলিয়া গেলে যে আমি আর বাঁচিব না।’

 লক্ষ্মণ তাহাকে বুঝাইয়া বলিলেন, ‘দাদা, চল আরও ভাল করিয়া খুঁজি, তাহা হইলে হয়ত তাঁহাকে পাইব।’ কিন্তু রাম তবুও ‘সীতা, সীতা!’ বলিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। রামও কাঁদেন, লক্ষ্মণও কাঁদেন, আর চারিদিকে সীতাকে খোঁজেন।

 এমন সময় তাঁহারা দেখিলেন, মাটিতে রাক্ষসের পায়ের দাগ রহিয়াছে, মাঝে মাঝে সীতারও পায়ের দাগ পাওয়া যায়। একটা ভাঙা রথ আর একটা ধনুক বাণের টুকরাও সেখানে পড়িয়া আছে।

 এ-সকল পায়ের চিহ্ন কাহার? এত বড় পা রাক্ষস ভিন্ন আর কাহার হইবে? নিশ্চয় সীতাকে রাক্ষসে লইয়া গিয়াছে, না হয় মারিয়া খাইয়াছে!

 এইরূপ ভাবিয়া রাম বলিলেন, ‘আমার সীতাকে রাক্ষসে লইয়া গেল, আর দেবতারা বারণ করিলেন না। আজ যদি আমার সীতাকে তাঁহারা না আনিয়া দেন, তবে আমি সকল সৃষ্টি নষ্ট করিব!’ লক্ষ্মণ তখন তাহাকে বুঝাইয়া বলিলেন, ‘দাদা, রাগ করিও না। চল এখন ভাবিয়া দেখি এ কাজ কে করিয়াছে। সেই দুষ্টকে শাস্তি দিতেই হইবে।”

 লক্ষ্মণের কথায় রাম একটু শান্ত হইলেন। তারপর তাহারা বনের ভিতর খুঁজিতে খুঁজিতে এক স্থানে দেখিতে পাইলেন, জটায়ু রক্তমাখা শরীরে পড়িয়া আছে। তাহা দেখিয়া রাম বলিলেন, ‘এই দুষ্টই সীতাকে খাইয়াছে। এটা পাখি নয়, নিশ্চয় রাক্ষস! ঐ দেখ উহার বুকে রক্ত লাগিয়া রহিয়াছে!’ এই বলিয়া রাম জটায়ুকে মারিতে গেলেন। তখন জটায়ু বলিল, ‘বাবা, রাবণই আমাকে মারিয়া রাখিয়াছে, তুমি আর আমাকে মারিও না। সীতাকে লইয়া যাইতে দেখিয়া আমি তাহার সহিত অনেক যুদ্ধ করিলাম, কিন্তু দুষ্ট আমার পাখা কাটিয়া সীতাকে লইয়া গেল।’

 এই কথা শুনিয়া রাম তীর ধনুক ছুঁড়িয়া ফেলিয়া, জটায়ুকে জড়াইয়া কাঁদিতে লাগিলেন। জটায়ুর তখন মৃত্যুর আর বিলম্ব নাই; কথা কহিতেও কষ্ট হয়। তথাপি সে রামকে শাস্ত করিবার জন্য ব্যস্ত হইল। প্রাণ যায় যায়, তবুও অনেক চেষ্টা করিল যাহাতে তাঁহাকে সীতার খবর দিয়া যাইতে পারে। কিন্তু হায়! বেচারা কথা শেষ করিবার সময় পাইল না। সবে বলিয়াছিল; ‘রাবণ বিশ্বশ্রবার পুত্র, কুবেরের ভাই’, ইহার মধ্যেই তাহার কথা আটকাইয়া গেল।

 রাম তাহাকে ধরিয়া দেখেন, প্রাণ বাহির হইয়া গিয়াছে। তখন তাঁহার মনে হইতে লাগিল, যেন রাজা দশরথের মতন কোনও একজন গুরুলোকের মৃত্যু হইল। আপনার লোক মরিলে লোকে যেমন করিয়া তাহাকে পোড়ায়, আর তাহার জন্য কাঁদে, জটায়ুকেও সেইরূপ করিয়া পোড়াইয়া রাম তাঁহার জন্য কাঁদিলেন। তারপর দুই ভাই বনে বনে গুহায় গুহায়, সীতাকে খুঁজিয়া বেড়াইতে লাগিলেন।

 এমন সময় ভয়ানক শব্দে বন কাঁপিয়া উঠিল। রাম লক্ষ্মণ খড়গ হাতে সেই শব্দের দিকে অনেক দূর গিয়া দেখিলেন, বিষম বিকটাকার একটা রাক্ষস বসিয়া আছে। সে-রকম রাক্ষসের নাম কবন্ধ; তাহার মাথা থাকে না। কী ভয়ঙ্কর জানোয়ার! যেন একটা হাত-পা-ওয়ালা কালো পর্বত! মাথা নাই, তাহার বদলে পেটটাই দাঁত খিচাইয়া হাঁ করিয়া আছে, আর তাহার ভিতর হইতে প্রকাণ্ড একটা জিহ্বা লক্‌লক্‌ করিয়া বাহির হইতেছে! চোখ একটি বৈ নাই, কিন্তু সেই একটা চোখ আগুনের মত উজ্জল। একটা একটা হাত প্রায় দুই ক্রোশ লম্বা! সেই লম্বা হাত দিয়া সে সিংহ, হরিণ, হাতি যাহা পাইতেছে তাহাই ধরিয়া মুখে দিতেছে!

 রাম লক্ষ্মণকে দেখিতে পাইয়া তাঁহাদিগকেও সে ধরিয়া ফেলিল। লক্ষ্মণ ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে বলিলেন, ‘দাদা, এইবার বুঝি প্রাণটা যায়।’ কিন্তু রাম তাঁহাকে সাহস দিয়া বলিলেন, ‘ভয় কী? ব্যস্ত হইতেছ কেন?

 তখন সেই রাক্ষসটা বলিল, ‘তোমরা কে হে? এখানে কী করিতে আসিয়াছ? হাতে ধনুক, বাণ, খড়গ দেখিতেছি; গায়ে জোর আছে বলিয়া বোধ হয়। আর আমারও ক্ষুধা হইয়াছে। সুতরাং তোমাদিগকে খাইব।’ কিন্তু সে তাহার প্রকাণ্ড মুখ অথবা পেট, যাহাঁই বল হাঁ করিয়া যেইরাম লক্ষ্মণকে খাইতে যাইবে, অমনি লক্ষ্মণ খড়গ দিয়া তাহারা তাহার হাত দুইটা কাটিয়া ফেলিলেন। তখন সে বেদনায় অস্থির হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘তোমরা কে?’ লক্ষ্মণ তাঁহাদের নিজের পরিচয় দিয়া বলিলেন, ‘তুমি কে?’ কবন্ধ হইলে কী করিয়া?

 রাম লক্ষ্মণের পরিচয় পাইয়া কবন্ধ বলিল, ‘আমার বড়ই সৌভাগ্য যে আজ তোমাদিগকে দেখিতে পাইলাম, আর তোমরা আমার হাত কাটিলে। আমার নাম দনু। এক সময়ে আমি বড় সুন্দর ছিলাম, আর ব্রহ্মার নিকট বর পাইয়াছিলাম যে অনেকদিন বাঁচিয়া থাকিব। ইহার মধ্যে একদিন আমি রাক্ষসের সাজ ধরিয়া স্থূলশিরা নামক এক মুনিকে ভয় দেখাইতে গেলাম। তাহাতে মুনি আমাকে শাপ দিলেন, “তুই ঐরূপ হইয়াই থাক্‌!” শাপ দূর করিয়া দিবার জন্য আমি অনেক মিনতি করিলে, তিনি বলিলেন, “রাম যখন তোর হাত কাটিয়া তোকে পোড়াইবেন, তখন আবার তোর সুন্দর চেহারা হইবে।”

 ‘এইরূপ করিয়া আমি রাক্ষস হইলাম। তারপর আবার একদিন আমি ইন্দ্রের সহিত যুদ্ধ করিতে গেলাম। তাহাতে ইন্দ্র তাঁহার বজ্র দিয়া আমাকে এমন শাস্তি দিলেন যে, আমার মাথা আর পা একেবারে পেটের ভিতর ঢুকিয়া গেল। কিন্তু তবুও আমি মরিলাম না। তখন আমি এই বলিয়া দুঃখ করিতে লাগিলাম, “হায় হায়! ব্রহ্মার বরে যে আমাকে অনেক দিন বাঁচিয়া থাকিতে হইবে! এখন আমি খাইব কী করিয়া?” ইহাতে ইন্দ্র দয়া করিয়া আমাকে এই লম্বা হাতদুটা দিলেন। ইহা দিয়াই আমি এতদিন জীবজন্তু ধরিয়া খাইতেছি। রাম, তুমি আমাকে পোড়াইয়া ফেল। তাহা হইলে আমার আবার সুন্দর শরীর হইবে।”

 তারপর রাম লক্ষ্মণ প্রকাণ্ড চিতা জ্বালিয়া কবন্ধ কে তাহাতে পোড়াইলেন। সেই চিতার ভিতর হইতে সুন্দর চেহারা লইয়া কবন্ধ উঠিয়া আসিল; আর ঠিক সেই সময়ে একখানা হাঁসের টানা রথও সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইল। সেই রথে চড়িয়া কবন্ধ রামকে বলিল, ‘সুগ্রীব নামে এক বানর আছে। তাহার বড় ভাই বালী তাহাকে রাজ্য হইতে তাড়াইয়া দেওয়াতে সে এখন আর চারিটি বানর সঙ্গে করিয়া পম্পা নদীর ধারে ঋষ্যমূক পর্বতে ভয়ে ভয়ে বাস করে। সুগ্রীব যেমন বীর, তেমনি বুদ্ধিমান। তুমি তাহার সহিত বন্ধুতা কর। সে সীতার সন্ধানও করিতে পারিবে, তাঁহাকে পাইবার উপায়ও করিয়া দিবে।’

 এ কথায় কবন্ধের নিকট বিদায় লইয়া রাম লক্ষ্মণ সুগ্রীবকে খুঁজিবার জন্য পম্পা নদী ও ঋষ্যমূক পর্বতের দিকে যাত্রা করিলেন।

 পম্পার ধারে শবরী নামে একজন অতিশয় বুড়া তপস্বিনী বাস করিতেন। তিনি কেবল রামকে দেখিবার জন্যই এতদিন বাঁচিয়া ছিলেন। রামের সহিত দেখা হইলে তিনি বলিলেন, ‘রাম, তোমাকে যখন দেখিতে পাইয়াছি, তখন নিশ্চয়ই আমি স্বর্গে যাইতে পারিব। তোমার জন্য এই ফলমূল আনিয়া রাখিয়াছি, তুমি দয়া করিয়া তাহা লও।'

 এইরূপে রামকে আদর করিয়া, তাঁহার সম্মুখেই তিনি নিজের শরীর আগুনে পোড়াইয়া ফেলিলেন। তারপর সেই আগুনের ভিতর হইতে অতি সুন্দর বেশে বাহির হইয়া স্বর্গে চলিয়া গেলেন।