উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/বিবিধ প্রবন্ধ/জানোয়ারের বয়স
জানোয়ারের বয়স
জানোয়ারের মধ্যে তিমি মাছ নাকি সবচেয়ে বেশি দিন বাঁচে। অনেকের মতে তিমি মাছ হাজার বৎসর বাঁচে—কিন্তু কথাটা কতদূর সত্য বলা যায় না। হাতি সাধারণত একশো বৎসর বেশ বাঁচতে পারে। গ্রীক রাজা আলেক্জাণ্ডার যখন এসেছিলেন তখন তিনি একটা
হাতি এখান থেকে নিয়ে যান। সেটা নাকি সাড়ে তিনশো বৎসর বেঁচেছিল। কচ্ছপ আর কুমির খুব অনেক দিন বাঁচে, তার অনেক প্রমাণ আছে। আমেরিকার এক চিড়িয়াখানায় এক পোষা কুমির আছে তার বয়স দু-তিনশো বৎসরের কম নয়। সে এখনো বেশ মজবুত আছে।
প্রায় একশো বছর আগে একটা বড় কচ্ছপকে ধরে তার গায়ে তারিখ ইত্যাদি লিখে দেওয়া হয়েছিল—সেই কচ্ছপ এখনোও বেঁচে আছে। ঘোড়া তিরিশ-চল্লিশ বৎসরের বেশি বড় বাঁচে না কিন্তু উট প্রায় একশো বৎসর বেশ বেঁচে থাকতে পারে। শেয়াল, ভালুক, নেকড়ে প্রভৃতি পনেরো-কুড়ি বৎসরের বেশি সাধারণত বাঁচে না। বেড়ালেরও প্রায় ঐরকমই।
পাখিদের মধ্যে রাজহাঁস খুব দীর্ঘজীবী—একশো বৎসর বয়সের রাজহাঁস তো দেখা গেছেই—কোনো কোনোটা নাকি তিনশো বৎসর পর্যন্ত বাঁচে! কাক, বিশেষত দাঁড়-কাক, অনেকদিন পর্যন্ত বাঁচে—আশি নব্বই একশো পর্যন্ত পার হয়ে যায়। কাক যে অনেকদিন বাঁচে এই বিশ্বাস লোকের মনে বরাবরই আছে। আমরা ছেলেবেলায় ভূষণ্ডি কাকের কথা শুনেছি— সে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ দেখে বলেছিল “এর চাইতে রামায়ণের যুদ্ধ আর দেবতা অসুরের যুদ্ধটা ভালো হয়েছিল। তখন আমি হাঁ করে কাছে বসে থাকতাম আর আপনা থেকে রক্ত এসে মুখে পড়ত!” ঈগল পাখিও প্রায় একশো বছর পর্যন্ত বাঁচে। আমরা একটা টিয়া পাখির কথা জানি সেটা প্রায় পাঁচশো বছর বেঁচেছিল।