উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/বিবিধ প্রবন্ধ/প্রাচীনকালের জন্তু

উইকিসংকলন থেকে

লুয়া ত্রুটি মডিউল:Header_template এর 348 নং লাইনে: bad argument #1 to 'next' (table expected, got nil)।

প্রাচীনকালের জন্তু

 শ্রীযুক্ত এইচ্‌, এন, হচিন্‌সন্‌ কৃত “Extinct Monsters” নামক পুস্তক হইতে ইণ্ডয়ানোডোনের আবিষ্কারের নিম্নলিখিত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা সংগ্রহ করা গেল।

 ১৮২২ সালে ডাক্তার জি, এ, ম্যাণ্টেলের সহধর্মিনী ইংলণ্ডের অন্তঃপাতি টিল্‌গেট্‌ ফরেষ্ট্‌ নামক স্থানের প্রস্তরে এই জন্তুর একটি দন্ত প্রাপ্ত হন। তৎপর তাঁহারা স্বামী-স্ত্রীতে অনুসন্ধান করিয়া ঐরূপ আরো অনেকগুলি দন্ত বাহির করেন। এ সকল দন্তের অনেকগুলিরই অগ্রভাগ পুনঃ পুনঃ চর্বণজনিত ঘর্ষণে মসৃণ হইয়া গিয়াছে। গো মহিষাদি শষ্পাহারী স্তন্যপায়ী জন্তুদিগেরই কেবল ঐ রূপ দন্ত দেখা যায়; সুতরাং ঐ দন্ত যে জাতীয় জন্তুর, তাহারা যে শষ্পাহারী ছিল, এবং খাদ্য দ্রব্যকে চর্বণ করিত, তাহাতে কোন সন্দেহ রহিল না। কিন্তু এই সন্দেহের অভাবই আর এক গুরুতর সন্দেহের কারণ হইয়া উঠিল। যে প্রস্তরে ঐ সকল দন্ত পাওয়া গিয়াছিল, তাহা সরীসৃপ যুগের প্রস্তর। অর্থাৎ ঐ সময়ের প্রস্তরে সরীসৃপ জাতীয় জন্তুর চিহ্নই পাওয়া যায়; পৃথিবীতে তখনও স্তন্যপায়ী জন্তুর সৃষ্টি হয় নাই। সরীসৃপেরা কখনও তাহাদের খাদ্য চর্বণ করিয়া আহার করে না, তাহদের আহার কেবল গলাধঃকরণ। সুতরাং ডাক্তার ম্যাণ্টেল ঐ দাঁতগুলিকে লইয়া বিষম সমস্যায় পতিত হইলেন। উহাদিগকে সরীসৃপের দন্ত বলিতে ভরসা হইতেছে না, কারণ সরীসৃপদিগকে কখনও চর্বণ করিতে দেখেন নাই। দাঁতগুলি দেখিতে কোন বৃহৎকায় স্থূলচর্মী চর্বণকারী জন্তুর দাঁতের মতন। কিন্তু ঐরূপ চর্বণকারী জন্তুরা আজকাল সকলেই স্তন্যপায়ী অথচ সে সময়ে স্তন্যপায়ী ছিল না।

 এরূপ অবস্থায় ডাক্তার ম্যাণ্টেল অদ্বিতীয় পণ্ডিত কুভিয়ের শরণাপন্ন হইলেন। কুভিয়ে ঐ দন্ত দেখিয়াই বলিলেন যে উহা গণ্ডারের দাঁত! ইহার কিছুদিন পরে ঐ সকল প্রস্তরে জন্তুবিশেষের পায়ের হাড় কয়েকখানা পাওয়া গেল। ঐ হাড় দেখিয়া কুভিয়ে বলিলেন যে উহা গণ্ডারের খড়গ। যে প্রস্তরে কোনদিন কোনরূপ স্তন্যপায়ী জন্তুর চিহ্ন পাওয়ার কথা শোনেন নাই, তাহাতে হঠাৎ এতগুলি স্তন্যপায়ীর সমাবেশ ডাক্তার ম্যাণ্টেলের মনে স্বভাবতঃই কিঞ্চিৎ সন্দেহজনক বলিয়া বোধ হইল। সুতরাং তিনি শ্রমজীবীদিগকে পুরস্কার দানে উৎসাহিত করিয়া বিশেষভাবে অনুসন্ধানে নিযুক্ত করিলেন। ইহার ফলস্বরূপ অনেকগুলি নিখুঁত দন্ত আবিষ্কৃত হইল। তখন দেখা গেল যে ঐ সকল দন্তের আকৃতি বর্তমান সময়ের ইণ্ডয়ানা নামক গোধিকার দন্তের ন্যায়।

 ডাক্তার ম্যাণ্টেলের প্রথমাবধিই বিশ্বাস জন্মিয়াছিল যে প্রাচীনকালে চর্বণকারী শষ্পাহারী সরীসৃপ ছিল, এ সকল দন্ত তাহাদেরই। সুতরাং ইণ্ডয়ানার দন্তের সহিত ঐ সকল দন্তের উক্তরূপ সাদৃশ্য দেখিয়া তাঁহার সে বিশ্বাস দৃঢ়তর হইল। (ইণ্ডয়ানা কীট এবং বৃক্ষপত্রাদি ভক্ষণ করে। কিন্তু তাহা সে কেবল গলাধঃকরণই করিয়া থাকে, চর্বণ করে না।) কিন্তু দেশীয় অন্যান্য পণ্ডিতেরা কেহই ডাক্তার ম্যাণ্টেলের মতের সমর্থন করিলেন না।

 যাহা হউক, ঐ নূতন দন্তগুলি দেখিয়া কুভিয়ে তাঁহার ভ্রম বুঝিতে পারলেন, এবং মহাজনোচিত সরলতা সহকারে তাহা স্বীকার করিলেন। ডাক্তার ম্যাণ্টেল্‌কে তিনি লিখিলেন যে ঐরূপ দাঁত তিনি পূর্বে কখনও দেখেন নাই। তিনি ইহারও বলিলেন যে “এতদ্দ্বারা একটি নূতন জন্তুর আবিষ্কার হইল—শষ্পাহারী সরীসৃপ।”

 বন্ধুদিগের পরামর্শে ডাক্তার ম্যাণ্টেল এই নূতন জন্তুর “ইণ্ডয়ানোডন” নামকরণ করিলেন অর্থাৎ ইণ্ডয়ানার মতন দন্তবিশিষ্ট জন্তু। এইরূপ দন্তের লক্ষণানুসারে জন্তুর নামকরণ প্রত্নপ্রাণীবিদ্যা শাস্ত্রে বিরল নহে। প্রাচীনকালের অনেক জন্তুর নামকরণ এইরূপে হইয়াছে। যে জন্তুর ইণ্ডয়ানার ন্যায় দন্ত, তাহার নাম ইণ্ডয়ানোডন। যাহার স্তনের ন্যায় দন্ত, তাহার নাম ম্যাস্টোডন (ম্যাস্টস্‌ শব্দে গ্রীক ভাষায় স্তন বুঝায়)। যাহার যাঁতার ন্যায় দন্ত, তাহার নাম মাইলোডন্‌ (মাইলস্ = যাঁতা)। যাহার দন্তের গঠন অত্যন্ত জটিল, তাহার নাম ল্যাবিরিন্থোডন (ল্যাবিরিন্থস = গোলোক ধাঁধা) যাহার দন্তের আকৃতি ঘরের চালের ন্যায, তাহার নাম স্টিগোডন (স্টিগস্‌ = চাল) ইত্যাদি।

 যাহা হউক, আমরা ইণ্ডয়ানোডনের বিবরণ এখনও শেষ করি নাই। এই জন্তুর আবিষ্কারের ইতিবৃত্ত পাঠ করিলে একদিকে যেমন এই কথা জানা যায় যে পণ্ডিতেরাও অনেক সময় ভুল করেন, অপরদিকে তেমনি ইহাও প্রমাণ হয় যে সদ্‌যুক্তির সাহায্যে অতি সামান্য পদার্থ হইতেও মূল্যবান্‌ সত্য সংগ্রহ করা যায়।

 ঐ দাঁতগুলির সহিত অনেক হাড় পাওয়া গিয়াছিল। সুতরাং ইহা স্বভাবতঃই অনুমিত হইল যে দাঁত যাহার, হাড়ও তাহারই। এক এক-খানি উরুর হাড় একগজেরও অধিক দীর্ঘ। বর্তমান সময়ের কুম্ভীর গুলির দেহের ঐ হাড় এক ফুটের অধিক লম্বা হয় না। সুতরাং জন্তুটি যে অতিশয় বৃহৎ ছিল, তাহা সহজেই বুঝা গেল। ইহার কয়েক বৎসর পরে জর্মনি দেশে অন্য এক জাতীয় অনেকগুলি ইণ্ডয়ানোডনের কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়। এই জাতীয় ইণ্ডয়ানোডন প্রথমোক্ত ইণ্ডয়ানোডন অপেক্ষাও বৃহৎ। প্রথমোক্ত ইণ্ডয়ানোডনগুলি প্রায় ২৪ ফুট লম্বা হইত কিন্তু শেষোক্তগুলি ৩০ ফুটের কম হইত না।

 ডাক্তার ম্যাণ্টেল যে স্থানে সেই দাঁত এবং হাড়গুলি পাইয়াছিলেন, সে স্থানে একপ্রকার বৃহৎ জন্তুর পদচিহ্নও দৃষ্ট হয়। ঐ পদচিহ্নও যে ইণ্ডয়ানোডনের তাহাতে সন্দেহ করিবার বিশেষ কারণ ছিল না। এবং কিছুদিন পরে যখন ঐ জন্তুর আরও অস্থি পাওয়া গেল, তখন দেখা গেল যে উহা যথার্থই ইণ্ডয়ানোডনের পদচিহ্ন।

 এই পদচিহ্ন দেখিলে স্পষ্টই বুঝা যায় যে ইণ্ডয়ানোডন্‌ পক্ষীর ন্যায় পশ্চাতের পদদ্বয়ে ভর করিয়া চলিয়া বেড়াইত। সম্মুখের পা দুখানিকে সে মৃত্তিকা স্পর্শ করিতে দিত না। দিলে, তাহাদেরও চিহ্ন অবশ্য দেখা যাইত; কিন্তু ওরূপ চিহ্ন কেহ দেখিতে পায় নাই। পশ্চাতের পদদ্বয় এবং কটিদেশের গঠন অনেকাংশে পক্ষীর ঐ সকল অঙ্গের গঠনের অনুরূপ ছিল।

 এইরূপে ক্রমে এই অদ্ভুত জন্তুর সম্বন্ধে সকল কথাই পরিষ্কার হইয়া আসিল। বাকি রহিল কেবল সেই শৃঙ্গাকৃতি অস্থিখণ্ড, যাহাকে কুভিয়ে প্রথমতঃ গণ্ডারের খড়গ বলিয়া নির্দেশ করিয়াছিলেন। ডাক্তার ম্যাণ্টেল বলিলেন যে উহা ইণ্ডয়ানোডনের শৃঙ্গ। কিন্তু পণ্ডিত ওয়েন নানা কারণে উহাকে শৃঙ্গ বলিয়া স্বীকার করিতে প্রস্তুত হইলেন না। তিনি বলিলেন যে উহা তাহার হাতের কিছু হইবে। বাস্তবিককালে এই জন্তুর অক্ষুন্ন কঙ্কাল আবিষ্কৃত হইলে দেখা গেল যে ওয়েনের কথাই ঠিক। ঐ জিনিসটা ইণ্ডয়ানোডনের হস্তের অঙ্গুষ্ঠের অগ্রভাগ।

 এরূপ সৃষ্টিছাড়া অঙ্গুষ্ঠ দিয়া উহার বিশেষ কি কাজ হইত, তাহা জানিতে কৌতুহল হয়। ইচ্ছা করিলে উহা যে সাংঘাতিক অস্ত্ররূপে ব্যবহৃত হইতে পারিত তাহাতে সন্দেহ নাই। যুদ্ধকালে শত্রুর শরীরে মূলাদি অন্বেষণ কালে মৃত্তিকায়, আহারের সময় নারিকেলাদি ফলের কঠিন আবরণে, ইত্যাদি নানা অবস্থায় ইহার নানারূপ ব্যবহার সম্ভব দেখা যায়।

 ইণ্ডয়ানোডনের অস্থির সঙ্গে নানারূপ উদ্ভিদের চিহ্ন পাওয়া যায়। তাহা দেখিয়া বোধহয় যে ঐ সময় তাল, নারিকেল প্রভৃতি জাতীয় বৃক্ষাদির প্রাদুর্ভাব ছিল।

 সরীসৃপ জাতীয় জন্তু। সে পক্ষীর ন্যায় দুইপদে ভর করিয়া চলিত, আর গো মহিষাদির ন্যায় চর্বণ করিয়া শাকসব্‌জি ভক্ষণ করিত। সুতরাং ইহার রীতিনীতি কিয়ৎ পরিমাণে শাস্ত্র বহির্ভূত হইবারই কথা।

 চলনের ভঙ্গী এবং পদাদির অস্থির গঠনের সহিত পক্ষীর মিল এরূপ জন্তু আবিষ্কৃত হইতে লাগিল। এই সকল জন্তুকে পণ্ডিতেরা সরীসৃপের শ্রেণী হইতে পৃথক করিয়া “ডাইনোসর” নামক এক নুতন শ্রেণীর সৃষ্টি করিলেন। “ডাইনোসর” শব্দের অর্থ ভীষণ সরীসৃপ। ইহাদের সকলেই ইণ্ডয়ানোডনের ন্যায় নিরামিশাষী ছিল না; অনেকেই ব্যাঘ্র ভল্লুকাদির বৃত্তি অবলম্বনপূর্বক মাংস খাইয়া জীবনধারণ করিত। ইঁদুরের মত ছোট হইতে আরম্ভ করিয়া তিমির মত বড় পর্যন্ত সকল আকারেরই ডাইনোসর ছিল। হস্তী অপেক্ষা বৃহৎ, অশ্ব অপেক্ষা বেগবান, ব্যাঘ্র অপেক্ষা হিংস্র ডাইনোসর অনেক ছিল। জল স্থল ব্যোম সর্বত্রই ইহারা বিচরণ করিত। চেহারার কথা আর কি বলিব! কাহারও শরীর বর্মাবৃত কাহারও কলেবর কণ্টকাকীর্ণ। এক ব্যক্তির ২৫ ফুট দীর্ঘ বিশাল দেহে এবম্বিধ সজ্জার উপরেও আবার গলায় একটি হাঁসুলী কপালে দুটি শৃঙ্গ, নাকের উপর একটি খড়গ এবং মুখের চঞ্চুর আভাস। রীতিমতন চঞ্চুবিশিষ্ট ডাইনোসরেরও অভাব ছিল না।

 সর্বশেষে পক্ষবিশিষ্ট ডাইনোসর। ইহাদের চঞ্চুও ছিল, পক্ষও ছিল। পাখা দুটি পক্ষীর পাখার মতন নয়, কতকটা বাদুড়ের পাখার মতন।

 এইরূপে দেখা যায় যে ডাইনোসরদিগের সহিত পাখীর সম্বন্ধ ক্রমেই ঘনীভূত হইয়া আসিতেছে। বাস্তবিক পণ্ডিতদিগের সাধারণ মত এই যে পাখীরা হয় ডাইনোসরদের বংশধর, না হয় অতি নিকট আত্মীয়।

 ইহার প্রমাণ স্বরূপ প্রাচীনকালের একটি পাখীর দৃষ্টান্ত দেওয়া হইতেছে। ইহা অপেক্ষা পুরাতন কোন পক্ষীর চিহ্ন অদ্যাপি পাওয়া যায় নাই। পণ্ডিতেরা ইহার নাম রাখিয়াছেন “আর্কি অপ্টোরিক্‌স্‌” (পুরাতন পক্ষী)।

 ইহার চঞ্চুও আছে, দন্তও আছে। পক্ষীর ন্যায় ডানা অথচ তাহাতে তীক্ষ্ন নখযুক্ত অঙ্গুলি। সরীসৃপের ন্যায় দীর্ঘ লাঙ্গুল, কিন্তু সেই লাঙ্গুলের প্রত্যেক গ্রন্থির দুই পার্শ্বে দুটি পালক। মেরুদণ্ডের অস্থি সরীসৃপের ন্যায়।

 প্রাচীনকালের অনেক পক্ষীর মুখে দাঁত এবং হাড়ে সরীসৃপ অথবা মাছের লক্ষণ দেখা যায়। কেবল পক্ষীতেই যে এইরূপ নানা শ্রেণীর জন্তুর লক্ষণ মিশ্রিত দেখা যায় তাহা নহে, অন্যান্য অনেক জন্তুই সরীসৃপ স্তন্যপায়ী প্রভৃতি নানাবিধ প্রাণীর লক্ষণ এক শরীরে ধারণ করিত।

 বলিতে গেলে ইহার মধ্যে তেমন বিস্ময়ের কথা কিছুই নাই। প্রাচীনকালের রীতি এখনকার রীতি অপেক্ষা কিঞ্চিৎ বিভিন্ন ছিল, এই মাত্র। আর বর্তমান সময়েও যে এরূপ মিশ্রণের দৃষ্টান্ত একেবারেই নাই, তাহাই বা কি করিয়া বলি। অস্ট্রেলিয়ায় “ডাক মোল”(duck mole)নামক একটি ক্ষুদ্র চতুষ্পদ জন্তু অদ্যপি জীবিত আছে। উহা স্তন্যপায়ী শ্রেণীভুক্ত; কিন্তু পক্ষী সরীসৃপাদির ন্যায় ডিম্ব প্রসব করিয়া থাকে, এবং উহার মুখে হংসের চঞ্চর ন্যায় চঞ্চু।

 পৃথিবীতে প্রথমে যে সকল জীবের জন্ম হইয়াছিল, তাহারা নিতান্তই নিকৃষ্ট জাতীয় ছিল। নানারূপ কীট এবং শম্বুকাদি পৃথিবীর প্রথম প্রাণী তৎপর চিংড়ি কর্কটাদি তৎপর মৎস্য, তৎপর সরীসৃপ। এক সময়ে এই সরীসৃপেরা পৃথিবীতে অপ্রতিরথ প্রভুত্ব করিয়া গিয়াছে। সংখ্যায়, বলে, বিশালতায় কোন বিষয়েই ইহাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। ডাইনোসরেরা ইহাদেরই দলভুক্ত ছিল। ইহার পরে পৃথিবীতে পক্ষী আসিয়াছিল। সর্বশেষে স্তন্যপায়ী জন্তুর সৃষ্টি হইয়াছে, এবং তাহার মধ্যে আবার মানুষ সকলের কনিষ্ঠ।

 স্তন্যপায়ীদিগের মধ্যে হস্তি, গণ্ডার প্রভৃতি স্থলচর্মী জন্তুর এক সময়ে পৃথিবীতে বিশেষ প্রাদুর্ভাব ছিল। পৃথিবীর নানা স্থানে নানা আকারে ইহারা বিরাজ করিত। এইরূপে অতিশয় বিচিত্র গতিতে পৃথিবীতে জীবপ্রবাহ বহিয়া চলিয়াছে। এই এই বিচিত্রতার মধ্যে এক বিষয়ে লক্ষ্যের বিশেষ স্থিরতা দেখা যায়। জীবপ্রবাহের গতি ক্রমিক উন্নতির দিকে। পৃথিবীতে ক্রমেই উন্নত হইতে উন্নততর জীব জন্মগ্রহণ করিতেছে।