উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/মহাভারতের কথা/তিন মাছের কথা

উইকিসংকলন থেকে

লুয়া ত্রুটি মডিউল:Header_template এর 348 নং লাইনে: bad argument #1 to 'next' (table expected, got nil)।

তিন মাছের কথা

 কোন এক পুকুরে তিনটি শোল মাছ ছিল। তাহাদের একটির নাম ছিল অনাগত বিধাতা', সে কোন বিপদ হইবার আগেই তাহার উপায় করিয়া রাখিত। আর একটির নাম ছিল ‘প্রত্যুৎপন্নমতি। তাহার খুব বুদ্ধি ছিল, কোন বিপদ উপস্থিত হইলে সে ঢের বুদ্ধি খাটাইয়া তাহা দূর করিত। আর একটির নাম দীর্ঘসূত্র। সে কোন বিপদের কথা জানিতে পারিলেও আজ নয় কাল, করিয়া সময় কাটাইত, কাজেই বিপদ আসিয়া উপস্থিত হইলে আর তাহার বিপত্তির সীমা থাকিত না।

 একদিন একদল জেলে আসিয়া মাছ ধরিবার জন্য সেই পুকুরের জল সিঁচিতে আরম্ভ করিল। তাহা দেখিয়া অনাগত বিধাতা’, ‘প্রত্যুৎপন্নমতি আর দীর্ঘসূত্র’কে ডাকিয়া বলিল, ‘ভাই, বড়ই ত বিপদ উপস্থিত দেখিতেছি। ঐ দেখ, বিকটাকার জেলেরা আসিয়া পুকুরের জল সিঁচিতে আরম্ভ করিয়াছে। দুদিনের ভিতরেই এই পুকুর শুকাইয়া যাইবে, তারপর জেলেরা আমাদিগকে ধরিয়া লইয়া যাইবে। চল, আমরা এই বেলা এখান হইতে পলাই। এখনো পলাইবার একটি পথ আছে জল শুকাইয়া গেলে আর সেটি থাকিবে না।

 এ কথা শুনিয়া দীর্ঘসূত্র’ বলিল, “আমি ভাই অত তাড়াহুড়ো করিতে পারিব না। এখনই হইয়াছে কি? একটু দেখা যাউক না।

 প্রত্যুৎপন্নমতিও বলিল, এত আগেই ভয় পাইবার দরকার কি? যখন বিপদ আসিবে, তখন যা হয় করা যাইবে।

 কাজেই ‘অনাগত বিধাতা’, বুঝিল যে, ইহাদের এখন যাইবার মত নাই। তখন সে আর তাহাদের জন্য অপেক্ষা না করিয়া, সেই পথটি দিয়া অন্য একটা জলাশয়ে চলিয়া গেল।

 এদিকে জেলেরা এমনি উৎসাহের সহিত জল সিঁচিতে আরম্ভ করিল যে, পুকুর শুকাইতে আর বেশি বিলম্ব হইল না। তখন তাহারা দড়ি আনিয়া এক-একটি করিয়া মাছ ধরিয়া তাহাতে গাঁথিতে লাগিল। শুকনো পুকুরের মাছ আর কোথায় পলাইবে? কাজেই বেচারারা বুঝিতে পারিল যে, এ যাত্রা আর কাহারো রক্ষা নাই।

 কিন্তু ‘প্রত্যুৎপন্নমতি তখনো জীবনের আশা একেবারে ছাড়িল না। সে ভাবিল, যাহা হয় হইবে, একবার ত প্রাণ বাঁচাইবার চেষ্টা করিয়া দেখি।’ এই মনে করিয়া সে চুপিচুপি জেলেদের সেই দড়িতে গাঁথা মাছগুলির মধ্যে ঢুকিয়া এমনভাবে দড়িটা কামড়াইয়া রহিল যে, দেখিলে মনে হয়, ঠিক যেন সে তাহাতে গাঁথা রহিয়াছে। কাজেই জেলেরা আর তাহাকে গাঁথিবার চেষ্টা করিল না। অন্য যত মাছ সেই পুকুরে ছিল, তাহাদের সবগুলিকেই —এবং তাহাদের সঙ্গে বেচারা দীর্ঘসূত্রকেও—তাহারা দড়িতে গাঁথিয়া লইল।

 যখন জেলেরা মনে করিল যে, সকল মাছ গাঁথা হইয়াছে, তখন সেই কাদা মাখা মাছগুলিকে ধুইয়া পরিষ্কার করিবার জন্য তাহারা আর একটা পুকুরে লইয়া গেল। সেই পুকুরটা ছিল খুব বড়, আর তাহাতে জলও ছিল ঢের। সেই বড় পুকুরের গভীর জলে, জেলেরা মাছ সুদ্ধ তাহাদের দড়ি ডুবাইবামাত্র, প্রত্যুৎপন্নমতি সেই দড়ি ছাড়িয়া ছুট দিল।

 এক বাঁচে সাবধান, আর বাঁচে বুদ্ধিমান। এ সংসারে অসতর্ক বোকার বড়ই বিপদ।