উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/মহাভারতের কথা/রাহুর কথা

উইকিসংকলন থেকে

লুয়া ত্রুটি মডিউল:Header_template এর 348 নং লাইনে: bad argument #1 to 'next' (table expected, got nil)।

রাহুর কথা

 তারপর দেবগণ অপার আনন্দের সহিত সেই অমৃত আহার করিতে লাগিলেন। এই সময়ে রাহু নামক একটা ধূর্ত দানব দেবতার সাজ ধরিয়া তাঁহাদের সঙ্গে অমৃত খাইতে বসিয়া গিয়াছিল। কিন্তু চন্দ্র আর সূর্য তাহাকে চিনিয়া ফেলাতে, তাহার সেই চাতুরীতে কোন ফল হইল না। সে সবে মাত্র অমৃত মুখে দিয়াছে, এমন সময় চন্দ্র সূর্য নারায়ণকে তাহার কথা বলিয়া দিলেন। আর সেই মুহূর্তেই নারায়ণের সুদর্শন নামক অস্ত্র আসিয়া তাহার গলা কাটিয়া ফেলিল।

 কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে রাহুর গলা কাটা গেলেও, তাহার মাথাটা আকাশে উঠিয়া ভীষণ ভ্রূকুটির সহিত দাঁত খিঁচাইয়া গর্জন করিতে লাগিল। অমৃত তাহার গলা পর্যন্ত গিয়াছিল, এইজন্যই তাহার মাথাটার মৃত্যু হইল না। সেই মাথাটা এখনো আকাশের কোণে গুঁড়ি মারিয়া বসিয়া থাকে, আর চন্দ্র বা সূর্য সেই পথে গেলেই, তাঁহাকে ধরিয়া গিলিবার চেষ্টা করে! ইহাতেই না কি গ্রহণ হয়! যাহা হউক, কেবল মাথাটি মাত্র থাকাতে, সে চন্দ্র সূর্যকে গিলিয়াও তাঁহাদিগকে রাখিতে পারে না, তাঁহারা তাহার গলার ছিদ্র দিয়া বাহির হইয়া আসেন। যদি তাহার পেট থাকিত তবে বড় বিপদের কথাই হইত!

 তারপর লবণ সমুদ্রের তীরে, দেবতা আর অসুরগণের ঘোরতর যুদ্ধ আরম্ভ হইল। অস্ত্রে আকাশ ছাইয়া গেল। দানবদিগের কাঁচা সোনার রঙের মাথাগুলি এমাগত কাটিয়া পড়িতে লাগিল। এবারে দেবতারা অমৃত খাইয়া অমর হইয়াছেন, সুতরাং দানবেরা আর তাঁহাদিগকে মারিতে পারিল না। উহারা পাহাড় পর্বত এবং অস্ত্রশস্ত্র লইয়া ভয়ানক যুদ্ধ করিয়াছিল। কিন্তু নারায়ণের সুদর্শন চক্র এবং দেবতাদের বাণের সম্মুখে তাহারা টিকিয়া থাকিতে পারিল না। কাজেই শেষে তাহদের কেহ মাটির নীচে, কেহ বা সমুদ্রের ভিতরে পলায়ন করিয়া প্রাণরক্ষা করিল।

 যুদ্ধে জয়লাভ করিয়া দেবতাগণের আনন্দের সীমা রহিল না। তখন তাঁহারা মন্দর পর্বতকে যত্নের সহিত তাহার স্থানে রাখিয়া, এবং অবশিষ্ট অমৃত নারায়ণের হাতে দিয়া নিজ নিজ গৃহে প্রস্থান করিলেন।