উৎসর্গ/৩৪
আমি যারে ভালোবাসি সে ছিল এই গাঁয়ে ,
বাঁকা পথের ডাহিন পাশে , ভাঙা ঘাটের বাঁয়ে ।
কে জানে এই গ্রাম ,
কে জানে এর নাম ,
খেতের ধারে মাঠের পারে বনের ঘন ছায়ে —
শুধু আমার হৃদয় জানে সে ছিল এই গাঁয়ে ।
বেণুশাখার আড়াল দিয়ে চেয়ে আকাশ - পানে
কত সাঁঝের চাঁদ - ওঠা সে দেখেছে এইখানে ।
কত আষাঢ় মাসে
ভিজে মাটির বাসে
বাদলা হাওয়া বয়ে গেছে তাদের কাঁচা ধানে ।
সে - সব ঘনঘটার দিনে সে ছিল এইখানে ।
এই দিঘি , ওই আমের বাগান , ওই - যে শিবালয় ,
এই আঙিনা ডাক - নামে তার জানে পরিচয় ।
এই পুকুরে তারি ,
সাঁতার - কাটা বারি ,
ঘাটের পথরেখা তারি চরণ - লেখা - ময় ।
এই গাঁয়ে সে ছিল কে সেই জানে পরিচয় ।
এই যাহারা কলস নিয়ে দাঁড়ায় ঘাটে আসি
এরা সবাই দেখেছিল তারি মুখের হাসি ।
কুশল পুছি তারে
দাঁড়াত তার দ্বারে
লাঙল কাঁধে চলছে মাঠে ওই - যে প্রাচীন চাষি ।
সে ছিল এই গাঁয়ে আমি যারে ভালোবাসি ।
পালের তরী কত - যে যায় বহি দখিনবায়ে ,
দূর প্রবাসের পথিক এসে বসে বকুলছায়ে ।
পারের যাত্রিদলে
খেয়ার ঘাটে চলে ,
কেউ গো চেয়ে দেখে না ওই ভাঙা ঘাটের বাঁয়ে ।
আমি যারে ভালোবাসি সে ছিল এই গাঁয়ে ।