একেই কি বলে সভ্যতা?/প্রথমাঙ্ক

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
একেই কি বলে সভ্যতা?

একেই কি বলে সভ্যতা?

(প্রহসন)।


প্রথমাঙ্ক।


প্রথম গর্ভাঙ্ক

নবকুমার বাবুর গৃহ।

নবকুমার এবং কালীনাথ বাবু—আসীন।

 কালী। বল কি?

 নব। আর ভাই বল্‌বো কি। কর্ত্তা এত দিনের পর বৃন্দাবন হতে ফিরে এসেছেন। এখন আমার আর বাড়ী থেকে বেরনো ভার।

 কালী। কি সর্ব্বনাশ; তবে এখন এর উপায় কি?

 নব। আর উপায় কি? সভাটা দেখচি এবলিশ্‌ কত্ত্যে হলো।

 কালী। বাঃ, তুমি পাগল হলে না কি? এমন সভা কি কেউ কখন এবলিশ্‌ কর‍্যে থাকে? এত তুফানে নৌকা বাঁচিয়ে এনে, ঘাটে এসে কি হাল্‌ ছেড়ে দেওয়া উচিত? যখন আমাদের সবস্ক্রিপ্‌সন্‌ লিস্ট অতি পুয়র ছিল, তখন আমরা নিজে থেকে টাকা দিয়ে সভাটি সেভ্‌ করেছিলেম্‌, এখন—

 নব। আরে ও সব্‌ কি আমি আর জানিনে, যে তুমি আমাকে আবার নতুন করে বল্‌তে এলে? তা আমি কি ভাই সাধ করে সভা উঠয়ে দিতে চাচ্চি? কিন্তু করি কি? কর্ত্ত এখন কেমন হয়েচেন যে দশ মিনিট্‌ যদি আমি বাড়ী ছাড়া হই তা হলে তখনি তত্ত্ব করেন। তা ভাই, আমার কি এখন সেথায় এটেণ্ড দেবার উপায় আছে। (দীর্ঘ নিশ্বাস)

 কালী। কি উৎপাৎ! তোমার কথা শুনে, ভাই, গলাটা একবারে যেন শুখিয়ে উঠ্‌লো। ওহে নব, বলি কিছু আছে?

 নব। হষ্‌! অত চেঁচিয়ে কথা কয়ো না, বোধ করি একটা ব্রাণ্ডি আছে।

 কালি (সহর্ষে) জষ্ট দি থিং। তা আনো না দেখি।

 নব। রসে দেখ্‌চি। (চতুর্দ্দিগ অবলোকন করিয়া) কর্ত্তা বোধ করি এখনো বাড়ীর ভিতর থেকে বেরোন্‌ নি। (উচ্চস্বরে) ওরে বোদে।

 নেপথ্যে। আজ্ঞে যাই।

 কালী। আজ রাত্রে কিন্তু, ভাই, একবার তোমাকে যেতেই হবে। (স্বগত) হাঃ, এ বুড়ো বেটা কি অকালের বাদল হয়ে আমাদের প্লেজর নষ্ট কত্ত্যে এলো? এই নব আমাদের সদ্দার, আর মনি ম্যাটারে এই বিশেষ সাহায্য করে; এ ছাড়্‌লে যে আমাদের সর্ব্বনাশ হবে, তার সন্দেহ নাই।

(বোদের প্রবেশ।)

 নব। কর্ত্তা কোথায় রে?

 বৈদ্য। আজ্ঞে দাদাবাবু, তিনি এখন বাড়ীর ভিতর থেকে বেরোন্‌ নি।

 নব। তবে সেই বোতল্‌টা আর একটা গ্লাশ্‌ শীঘ্র করে আন্‌ তো।

[বোদের প্রস্থান।

 কালী ভাল নব, তোমাদের কর্ত্তা কি খুব বৈষ্ণব হে?

 নব। (দীর্ঘ নিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া) ও দুঃখের কথা ভাই আর কেন জিজ্ঞাস কর? বোধ করি কল্‌কাতায় আর এমন ভক্ত দুটী নাই।

(বোতল ইত্যাদি লইয়া বোদের পুনঃপ্রবেশ)।

 কালী। এদিকে দে।

 নব। শীঘ্র নেও ভাই, এখন আর সে রাবণও নাই, সে সোণার লঙ্কাও নাই।

 কালী। না থাক্‌লে তো বোয়ে গেল কি! এ তে আছে? (বোতল প্রদর্শন)। হা, হা, হা! (মদ্যপান)।

 নব। আরে করো কি, আবার?

 কালী। রসো ভাই, আরো একটুখানি খেয়ে নি। দেখ, যে গুড্‌ জেনেরেল হয়, সে কি সুযোগ পেলে তার গ্যেরিসনে প্রোবিজন্‌ জমাতে কশুর করে? হা, হা, হা। (পুনর্ম্মদ্যপান)।

 নব। (বোদের প্রতি) বোতল্‌ আর গ্লাশটা নিয়ে যা, আর শীগ্‌গীর গোটকতক্‌ পান নিয়ে আয়।

[বোদের প্রস্থান।

 কালী! এখন চল ভাই, তোমাদের কর্ত্তার সঙ্গে একবার দেখা করা যাগ্‌গে। আজ কিন্তু তোমাকে যেতেই হবে, আজ্‌ তোমাকে কোন্‌ শালা ছেড়ে যাবে।

 নব। তোমার পায়ে পড়ি, ভাই, একটু আস্তে আস্তে কথা কও।

(পান লইয়া বোদের পুনঃ প্রবেশ)।

 কালী। দে, এ দিকে দে।

 নেপথ্যে। ও বৈদ্যনাথ।

[বোদের প্রস্থান।

 নব। এই যে কর্ত্তা বাইরে আস্‌চেন। নেও আর একটা পান নেও।

 কালী। আমি ভাই পান তো খেতে চাইনে, আমি পান কত্ত্যে চাই। সে যাহউক তবে চল মা, কর্ত্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি গিয়ে।

 নব। (সহাস্য বদনে) তোমার, ভাই, আর অতো ক্লেশ স্বীকার কত্তে হবে না। কর্ত্তা তোমার গাড়ী দরোজায় দেখ্‌লেই আপনি এখানে এসে উপস্থিত হবেন এখন।

 কালী। বল কি? আই সে, তোমার চাকর বেটাকে, ভাই, আর একটু ব্রাণ্ডি দিতে বলো তো; আমার গলাটা আবার যেন শুখয়ে উঠ্‌ছে।

 নর। কি সর্ব্বনাশ! এমনিই দেখছি তোমার একটু যেন নেশা হয়েছে; আবার খাবে?

 কালী। আচ্ছা, তবে থাকুক্‌। ভাল, কর্ত্তা এখানে এলে কি বল্‌বো বল দেখি?

 নব। আর বল্‌বে কি? একট প্রণাম করে আপনার পরিচয় দিও।

 কালী। কি পরিচয় দেবো বলে দেখি, ভাই? তোমাদের কর্ত্তাকে কি বলবো যে আমি বিএরের—মুখটি—স্বকৃতভঙ্গ—সোণাগাছিতে আমার শত শ্বশুর—না না শ্বশুর নয়—শত শাশুড়ির আলয়, আর উইল্‌সনের আখড়ায় নিত্য মহাপ্রসাদ পাই—হা, হা, হা!

 নব। আঃ, মিছে তামাসা ছেড়ে দেও, এখন সত্তি কি বল্‌বে বল দেখি? এক কর্ম্ম কর, কোন একটা মস্ত বৈষ্ণব ফ্যামিলির নাম ঠাওরাতে পার? তা হলে আর কথাটি কইতে হয় না।

 কালী। তা পার্‌বো না কেন? তবে একটু মাটি দেও, উড়ে বেয়ারাদের মতন নাকে তিলক কেটে আগে সাধু হয়ে বসি।

 নব। না হে না। (চিন্তা করিয়া) গরাণহাটার কোন্‌ ঘোষ না পরম বৈষ্ণর ছিল?—তার নাম তোমার মনে আছে?—ঐ যে যার ছেলে আমাদের সঙ্গে এক ক্লাশে পড়্‌তো?

 কালী। আমি ভাই গরাণহাটার প্যারী আর তার ছুকরি বিন্দি ছাড় আর কাকেও চিনি না।

 নব। কোন্‌ প্যারী হে?

 কালী। আরে, গোদা প্যারী। সে কি? তুমি কি গোদা প্যারীকে চেন না? ভাই, একদিন আমি আর মদন যে তার বাড়ীতে যেয়ে কত মজা করেছিলেম তার আর কি বল্‌বো। সে যাক্‌, এখন কি বল্‌বো তাই ঠাওরাও।

 নব। (চিন্তা করিয়া) হাঁ—হয়েছে। দেখ, কালী, তোমার কে একজন খুড়ো পরম বৈষ্ণব ছিলেন্‌ না? যিনি বৃন্দাবনে গিয়ে মরেন্‌।

 কালী। হাঁ, একটা ওল্ড ফুল ছিল বটে, তার নাম কৃষ্ণপ্রসাদ ঘোষ।

 নব। তবে বেশ হয়েছে। তুমি তাঁরি পরিচয় দিও, বাপের নামটা চেপে যাও।

 কালী। হা, হা, হা!

 নব। দুর পাগল, হাসিস্ কেন?

 কালী। হা, হা, হা! ভাল ত যেন হলো, এখন বৈঞ্চব বেটাদের দুই এক খানা পুঁথির নাম তো না শিখলে নয়।

 নব। তবেই যে সার্‌লে। আমি তো সে বিষয়ে পরম পণ্ডিত। রসো দেখি। (চিন্তা করিয়া) শ্রীমদ্ভগব্দগীতা—গীত গোবিন্দ—

 কালী! গীত কি?

 নব! জয়দেবের গীত গোবিন্দ।

 কালী। ধর—শ্রীমতী ভগবতীর গীত, আর-বিন্দাদূতীর গীত—

 নব। হা, হা, হা! ভায়ার কি চমৎকার মেমরি।

 কালী। কেন, কেন?

 নব। হষ্‌! কর্ত্তা আস্‌ছেন। দেখ, ভাই, যেন একটা বেস করে প্রণাম করো।

(কর্ত্তা মহাশয়ের প্রবেশ।)

 কালী। (প্রণাম)

 কর্ত্তা। চিরজীবী হও বাপু, তোমার নাম কি?

 কালী। আজ্ঞে, আমার নাম শ্রীকালীনাথ দাস ঘোষ। মহাশয়, আপনি—৺কষ্ণপ্রসাদ ঘোষ মহাশয়কে বোধ করি জান্‌তেন। আমি তারি ভ্রাতুষ্পুত্র—

 কর্ত্তা। কোন্‌ কৃষ্ণপ্রসাদ ঘোষ?

 কালী। আজ্ঞে, বাঁশবেড়ের—

 কর্ত্তা। হাঁ, হাঁ, হাঁ। তুমি স্বর্গীয় কষ্ণপ্রসাদ ঘোষজ মহাশয়ের ভ্রাতুষ্পুত্র, যিনি শ্রীবৃন্দাবনধাম প্রাপ্ত হন্‌।

 কালী। আজ্ঞে হাঁ।

 কর্ত্তা। বেঁচে থাক, বাপু। বসো। (সকলের উপবেশন)। তুমি এখন কি কর, বাপু?

 কালী। অজ্ঞে, কলেজে নবকুমার বাবুর সঙ্গে এক ক্লাশে পড়া হয়েছিল, এক্ষণে কর্ম্ম কাজের চেষ্টা করা হচ্যে।

 কর্ত্তা। বেশ বাপু! তোমার স্বর্গীয় খুড়া মহাশয় আমার পরম মিত্র চিলেন্‌। বাবা, আমি তোমার সম্পর্কে জ্যেঠা হই, তা জান?

 কালী। আজ্ঞে।

 কর্ত্তা। (স্বগত) আহা, ছেলেটি দেখতে শুনতে ও যেমন, আর তেমনি সুশীল। আর না হবেই বা কেন? কৃষ্ণপ্রসাদের ভ্রাতুষ্পুত্র কি না?

 কালী। জ্যেঠা মহাশয়, আজ্‌ নবকুমার দাদাকে আমার সঙ্গে একবার যেতে আজ্ঞা করুন্‌—

 কর্ত্তা। কেন বাপু, তোমরা কোথায় যাবে?

 কালী। আজ্ঞে আমাদের জ্ঞানতরঙ্গিণী নামে একটা সভা আছে সেখানে আজ্‌ মিটীং হবে।

 কর্ত্তা। কি সভা বল্‌লে বাপু?

 কালী। আজ্ঞে জ্ঞানতরঙ্গিণী সভা।

 কর্ত্তা। সে সভায় কি হয়?

 কালী। আজ্ঞে, আমাদের কলেজে থেকে কেবল ইংরাজী চর্চ্চা হয়েছিল, তা আমাদের জাতীয় ভাষা তো কিঞ্চিৎ জানা চাই তাই এই সভাটি সংস্কৃতবিদ্যা আলোচনাব জন্যে সংস্থাপন করেছি। আমরা প্রতি শনিবার এই সভায় একত্র হয়ে ধর্ম্মশাস্ত্রের আন্দোলন করি।

 কর্ত্তা। তা বেশ কর। (স্বগত) আহা, কষ্ণপ্রসাদের ভ্রাতুষ্পুত্র কি না! আর এ নবকুমারেরও তো আমার ঔরসে জন্ম। (প্রকাশে) তোমাদের শিক্ষক কে বাপু?

 কালী। আজ্ঞে, কেন রাম রণচম্পতি মহাশয়, যিনি সংস্কুত কালেজের প্রধান অধ্যাপক—

 কর্ত্তা। ভাল, বাপু, তোমরা কোন্‌ সকল পুস্তক অধ্যয়ন কর, বল দেখি?

 কালী। (স্বগত) আ মলো! এতক্ষণের পর দেখ্‌ছি সাল্লে। (প্রকাশে) আজ্ঞে—শ্রীমতী ভগবতীর গীত আর—বোপ্‌দেবের বিন্দাদূতী।

 কর্ত্তা! কি বল্লে, বাপু?

 নব। আজ্ঞে, উনি বল্‌ছেন শ্রীমদ্ভগবদীতা আর জয়দেবের গীতগোবিন্দ।

 কর্ত্তা। জয়দেব? আহা, হা, কবিকুল-তিলক, ভক্তিরস-সাগর।

 কালী। জ্যেঠা মহাশয়, যদি আজ্ঞে হয় তবে এক্ষণে আমরা বিদায় হই।

 কর্ত্তা। কেন, বেলা দেখ্‌ছি এখনো পাঁচটা বাজে নি, ত। তোমরা বাপু, এত সকালে যাবে কেন?

 কালী। আজ্ঞে, আমরা সকাল সকাল কর্ম্ম নির্ব্বাহ করবো বলে সকালে যেতে চাই, অধিক রাত্রি জাগ্‌লে পাছে বেমো টেমো হয়, এই ভয়ে সকালে মীট্‌ করি।

 কর্ত্তা। তোমাদের সভাটা কোথায়, বাপু?

 কালী। আজ্ঞে, সীক্‌দার পাড়ার গলিতে।

 কর্ত্তা। আচ্ছা বাপু, তবে এসো গে। দেখো যেন অধিক রাত্রি করো না।

 নব এবং কালী। আজ্ঞে না।

[উভয়ের প্রস্থান।

 কর্ত্তা। (স্বগত) এই কলিকাতা সহর বিষম ঠাঁই, তাতে করে ছেলেটিকে কি এক্‌লা পাঠ্‌য়ে ভাল কল্যেম্? (চিন্তা করিয়া) একবার বাবাজীকে পাঠ্‌য়ে দি না কেন, দেখে আসুক ব্যাপারটাই কি? আমার মনে যেন কেমন সন্দেহ হচ্ছে যে নবকে যেতে দিয়ে ভাল করি নাই।

[প্রস্থান।

দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক।
সিক্‌দার পাড়া ষ্ট্রীট। (বাবাজীর প্রবেশ।)

 বাবাজী। (স্বগত) এই তো সিক্‌দার পাড়ার গলি, তা কই? নব বাবুর সভাভবন কই? রাধেকৃষ্ণ। (পরিক্রমণ)। তা, দেখি, এই বাড়ীটাই বুঝি হবে। (দ্বারে আঘাত)

 নেপথ্যে। তুমি কে গা? কাকে খুঁজ্‌চো গা?”

 বাবাজী! ওগো, এই কি জ্ঞানতরঙ্গিণীসভার বাড়ী?

 নেপথ্যে। ও পুঁটী দেক্‌তো লা, কোন্‌ বেটা মাতাল এসে বুঝি দরজায় ঘা মাচ্চে? ওর মাথায় খানিক জল ঢেলে দে তো।

 বাবাজী। (স্বগত) প্রভো, তোমারি ইচ্ছে। হায়, এত দিনের পর কি মাতাল হলেম্‌!

 নেপথ্যে। তুই বেটা কে রে? পালা, নইলে এখনি চৌকীদার ডেকে দেবো।

 বাবাজী। (বেগে পরিক্রমণ করিয়া সরোষে) কি আপদ। রাধেকৃষ্ণ! কর্ত্ত মহাশয়ের কি আর লোক ছিল না, যে তিনি আমাকেই এ কর্ম্মে পাঠালেন? (পরিক্রমণ)। এই দেখ্‌চি একজন ভদ্রলোক এ দিকে আস্‌চে, তা একেই কেন জিজ্ঞাসা করিনে।

(একজন মাতালের প্রবেশ।)

 মাতাল। (বাবাজীকে অবলোকন করিয়া) ওগো, এখানে কোথা যাত্রা হচ্চে গা?

 বাবাজী। তা বাবু, আমি কেমন করে বল্‌বো?

 মাতাল। সে কি গো? তুমি না সং সেজেচ?

 বাবাজী। রাধেকৃষ্ণ!

 মাতাল। তবে, শালা, তুই এখানে কচ্চিস্‌ কি? হাঃ শালা।

[প্রস্থান।

 বাবাজী। কি সর্ব্বনাশ! বেটা কি পাষণ্ড গা? রাধেকৃষ্ণ! এ গলিতে কি কোন ভদ্রলোক বসতি করে গা?—এ আবার কি? (অবলোকন করিয়া) আহাহা, স্ত্রীলোক দুটি যে দেখ্‌তে নিতান্ত কদাকার তা নয়। এঁরা কে?—হরেকৃষ্ণ, হরেকৃষ্ণ। (একদৃষ্টে অবলোকন)।

(দুইজন বারবিলাসিনীর পশ্চাতে দৃষ্টি করিতে করিতে প্রবেশ।)

 প্রথম। ওলো বামা, গুরো পোড়ারমুখের আক্কেল দেখ্‌লি? আমাদের সঙ্গে যাচ্চি বলে আবার কোথায় গেল?

 দ্বিতীয়। তবে বুঝি আস্ত্যে আস্ত্যে পদার বাড়ীতে ঢুকেচে। ভোর যেমন পোড়া কপাল, তাই ও হতোভাগাকে রেখেচিস। আমি হলে এতদিনে কুলোর বাতাস দিয়ে বিদায় কর্ত্তুম।

 প্রথম। দাঁড়া না, বাড়ী যাই আগে। আজ মুড়ো খেঙ্গরা দে বিষ ঝাড়্‌বো। আমি তেমন বান্দা নই, বাবা। এই বয়েসে কত শত বেটার নাকের জলে, চক্ষের জলে করে ছেড়েচি। চল্‌না, আগে মদনমোহন দেখে আসি; এসে ওর শ্রাদ্ধ করবো এখন।

 দ্বিতীয়। তুই যদি তাই পারবি তা হলে আর ভাবনা কি—ও থাকি, ঐ মোল্লার মতন কাচা খোলা কে একটা দড়িয়ে রয়েছে, দেখ্‌?

 প্রথম। হ্যাঁ তো, হ্যাঁ তো। এই ষে আমাদের দিকে আসচে। ওলো বামা, ওটা মোল্লা নয় ভাই, রসের বৈরিগী ঠাকুর। ঐ খে কুঁড়োজালি হাতে আছে। (হাস্য করিয়া) আহাহা, মিনষের রকম দেখ্‌ না—যেন তুলসীবনের বাঘ।

 বাবাজী। (নিকটে আসিয়া) ওগো, তোমরা বলতে পার, এখানে জ্ঞানতরঙ্গিনী সভা কোথা?

 দ্বিতীয়। তরঙ্গিণী আবার কে? (থাকি ধারণ করা হাস্য)। বাবাজী, তরঙ্গিণী তোমার বষ্টুমীর নাম বুঝি?

 প্রথম। আহা, বাবাজী, তোমার কি বষ্ট্‌মী হারয়েচে? তা পথে পথে কেঁদে বেড়ালে কি হবে? যা হবার তা হয়েচে, কি করবে ভাই? এখন আমাদের সঙ্গে আসবে তো বল?—কেমন বামা, ভেক নিতে পারবি?

 দ্বিতীয়। কেন পারব না? পাঁচসিকে পেলিই পারি। কি বল, বাবাজী।

 প্রথম। বাবাজী আর বলবেন কি? চল্‌ আমরা বাবাজীকে হরিবোল দিয়ে নিয়ে যাই। বল হরি, হরিবোল।

 বাবাজী। (স্বগত) কি বিপদ্‌! রাধেকৃষ্ণ। (প্রকাশে) না বাছা, তোমরা যাও, আমার ঘাট্‌ হয়েছে।

 দ্বিতীয়। হ্যেঁ, আমরা যাব বই কি? তোমার তো সেই তরঙ্গিণী বই আর মন উঠবে না? তা, আমরা যাই, আর তুমি এইখানে দাঁড়্‌য়ে দাঁড়য়ে কাঁদ। (বাবাজীর মুখের নিকট হস্ত নাড়িয়া) “সাধের বষ্টুমী প্রাণ হারয়েছে আমার”।

[দুইজন বারবিলাসিনীর প্রস্থান।

 বাবাজী। আঃ, কি উৎপাৎ! এত যন্ত্রণাও জাজ কপালে ছিল!—কোথাই বা সভা আর কোথাই বা কি? লাভের মধ্যে কেবল আমারি যন্ত্রণ সার। (পরিক্রমণ করিয়া) যদি আবার ফিরে যাই তা হলে কর্ত্তাটী রাগ করবেন আমি যে ঘোর দায়ে পড়লেম্‌! এখন করি কি? (চিন্তাভাবে অবস্থিতি, পরে সম্মুখে অবলোকর করিয়া) হ্যেঁ, ভাল হয়েচে, এই একটা মুস্কিলআসান আস্‌চে, ওর পিছনের আলোয় আলোয় এই বেলা প্রস্থান করি—না— ওমা, এজে সারজন সাহেব, রোঁদ ফিরতে বেরয়েচে দেখচি, এখানে চুপ করে দাঁড়য়ে থাকলে কি জানি যদি চোর বল্যে ধরে? কিন্তু এখন যাই কোথা? (চিন্তা) তাই ভাল, এই আড়ালে দাঁড়াই—ওমা, এই যে এসে পড়লো। (বেগে পলায়ন)।

(সারজন ও চৌকীদারের আলোক লইয়া প্রবেশ।)

 সার। হাল্লো! চওকীডার! এক আডমী ওঢার ডৌড়কে গিয়া নেই?

 চৌকী। নেই ছাব, হামতো কুচ নেহি দেখা।

 সার। আলবট্‌ গিয়া, হাম্‌ ডেকা। টোম্ জলডী ডওড়কে যাও, উষ্টরফ ডেকো, যাও—যাও—জলডী যাও, ইউ সুওর।

 চৌকী। (বেগে অন্যদিকে গমন করিতে করিতে) কোন হেয় রে, খাড়া রও।

 সার। ড্যাম ইওর আইজ—ইঢার, ইউ ফুল।

 চৌকী। হাঁ ছাব, ইধর্‌। (বেগে প্রস্থান)।

 সার। (ক্রোধে) আ! ইফ আই ক্যেন ক্যেচ হিম—

 নেপথ্যে। (উচ্চৈঃস্বরে) পাকড়ো। পাকড়ো—উহুহুহুহু—

 নেপথ্যে। আমি যাচ্চি বাবা, আর মারিস নে বাবা, দোহাই বাবা, তোর পায়ে পড়ি বাবা।

 নেপথ্যে। শালা চোট্টা, তোমারা ওয়াস্তে দৌউড়কে হামারা জন গীয়া।

 নেপথ্যে। উহুঁহুঁহুঁহুঁ—বাবা, আমি চোর নই বাবা, আমি ভেকধারী বৈষ্ণব, বাবা।

(বারাজীকে লইয়া চৌকীদারের প্রবেশ।)

 সার। আ ইউ, টোম্‌ চোট্টা হেয়।

 বাবাজী। (সত্রাসে) না সাহেব বাবা, আমি কিছু জানি নে, আমি—গ্যে, গ্যে, গ্যে—

 সার। হ্যেং ইওর গ্যে, গ্যে, গ্যে,—চুপরাও, ইউ ব্লডী নিগর্‌, ডেকলাও টোমারা ব্যেগ মে কিয়া হেয়। (বলপূর্ব্ববক মালা গ্রহণ করিয়া আপনার গলায় পরিধান) হা, হা, হা, হা! বাপ রে বাপ,—হাম বড়া হিণ্ডু হুয়া-রাঢ়ে কিস্‌ ডে। হা, হা, হা!

 বাবাজী। (সত্রাসে) দোহাই সাহেব মহাশয়, আমি গরিব বৈষ্ণব, আমি কিছু জানি নে, দোহাই বাবা, আমাকে ছেড়ে দেও।—(গমনোদ্যত)।

 চৌকী। খাড়া রও, শালা।

 বাবাজী। দোহাই কোম্পানির—দোহাই কোম্পানির।

 সার। হোল্‌ড ইউর টং, ইউ ব্ল্যাক্‌রূট্‌। ইয়েহ্‌ ব্যেগমে আওর কিয়া হেয় ডেকে গা। (ঝুলি বলপূর্ব্বক গ্রহণ এবং চারি টাকা ভূতলে পতন)।

 সার। দেট্‌স্ রাইট্‌! ইউ সুটি ডেভল্‌। কেঙ্কা চোরি কিয়া? (চৌকীদারের প্রতি) ওস্কো ঠানে মে লে চলো।

 বাবাজী। দোহাই সাহেবের, আমি চুরি করি নি, আমাকে ছেড়ে দেও—দোহাই ধর্ম্মঅবতার, আমি ও টাকা চাই নে।

 সার। সে নেই হোগা, টোম্‌ ঠানেমে চলো—কিয়া? টোম্‌ যাগে নেই? আল্‌বট যানে হোগা।

 চৌকী। চল্‌বে, থানে মে চল্‌।

 বাবাজী। দোহাই কোম্পানির—আমি টাকা কড়ি কিছুই চাই নে; তুমি বরঞ্চ টাকা নিয়ে যা ইচ্ছে হয় কর বাবা, কিন্তু আমাকে ছেড়ে দেও, বাবা।

 সার। (হাস্য মুখে) কিয়া? টোম্‌ নেই মাংটা! আপন জেবে টাকা রাখিয়া চৌকীদারের প্রতি) ওয়েল্‌ দেন্‌, হাম্‌ ডেক্‌টা ওস্কা কুচ্‌ কসুর নেই, ওস্কো ছোড় ডেও।

 বাবাজী। (সোল্লাসে) জয় মহাপ্রভু।

 চৌকী। (বাবাজীর প্রতি জনান্তিকে) তোম্‌ হামকো তো কুচ্‌ দিয়া নেহি—আচ্ছা যাও, চলা যাও।

 বাবাজী। না দাদা, আমি একবার জ্ঞানতরঙ্গিণী সভায় যাব।

 চৌকী। হাঁ হাঁ, ঐ বাড়ীমে—ও বড়া মজাকি জাগ্‌গা হেয়।

 সার। ডেকো চোকীডার, রোপেয়াকা বাট্‌—(ওষ্ঠে অঙ্গুলি প্রদান)।

 চোকী। যো হুকুম, খাবিন্‌।

 সার। মম্! ইজ দি ওয়ার্ড, মাই বয়। আবি চলো।

[সারজন ও চৌকীদারের প্রস্থান।

 বাবাজী। রাধেকষ্ণ! আঃ বাঁচলেম্‌, আজ্‌ কি কুলগ্নেই বাড়ী থেকে বের্‌য়েছিলেম। ভাগ্যে টাকা কটা সঙ্গে ছিল, আর সারজন্‌ বেটারও হাতপাতা রোগ আছে, তাই রক্ষে—নইলে আজ্‌কে কি হাজতেই থাক্‌তে হতো, না কি হতো, কিছু বলা যায়না।

(হোটেল্‌ বাক্‌স লইয়া দুই জন মুটীয়ার প্রবেশ।)

 এ আবার কি? রাধেকৃষ্ণ—কি দুর্গন্ধ! এ বেটারা এখানে কি আন্‌ছে? (অন্তে অবস্থিতি।)

 প্রথম। ইঃ, আজ্‌ যে কত চিজ্‌ পেটিয়েচে তার হিসাব নাই, মোর গর্‌দান্‌টা যেন বেঁকে যাচ্চে।

 দ্বিতীয়। দেখ্‌ মামু, এই হেঁদু বেটারাই দুনিয়াদারির মজা করে ন্যেলে। বেটারগো কি আরামের দীন, ভাই।

 প্রথম। মর বেকুফ্‌ ও হারাম্‌খোর বেটারগো কি আর দীন আছে? ওরা না মানে আল্লা, না মানে দ্যেবতা।

 দ্বিতীয়। লেকীন্‌ ক্যেবল এই গৰুখেগো বেটারগো দৌলতেই মোগর পোচঘর এত ফেঁপে ওট্‌তেচে; সাম হলেই বেটারা বাদুড়ের মাফিক ঝাঁকে ঝাঁকে আসে পড়ে; আর কত যে খায়, কত যে পিয়ে যায়, তা কে বল্‌তি পারে।

 প্রথম। ও কাদের মেঁয়া, মোদের কি সরিারাত এহানে দেঁড়য়ে থাক্তি হবে? দরয়ানজীকে ডাক না। ও দরওয়ানজী। এ মাড়ুয়াবাদি শালা গেল কোহানে?—ও দরওয়ানজী; দরওয়ানজী।

 নেপথ্যে। কোন হেয় রে।

 প্রথম। মোরা পোচঘরের মুটে গো।

 নেপথ্যে। আও, ভিতর চলে আও।

[মুটিয়া গণের প্রস্থান।

 বাবাজী। (অগ্রসর হইয়া স্বগত) কি আশ্চর্য্য! এসব কিসের বাক্‌স? উঃ, থু, থু, রাধেকৃষ্ণ! আমি তো এ জ্ঞানতরঙ্গিণী সভার বিষয় কিছুই বুঝ্‌তে পাচ্চি না।

 নেপথ্যে। বেল ফুল।

 নেপথ্যে। চাই বরোফ্‌।

(মালি এবং বরোফ্‌ওয়ালার প্রবেশ)।

 মালী। বেলফুল,—ও দরওয়ানজী, বাবুরো এসেচে।

 নেপথ্যে। না, আবি আয়া নেহি, থোড়া বাদ আও।

 বরফ। চাই বরফ—কি গো দরওয়ানজী।

 নেপথ্যে। তোম্বি থোড়া বাদ আও।

[মালি এবং বরফওয়ালার প্রস্থান।

 বাবাজী। (স্বগত) কি সর্ব্বনাশ, আমি তো এর কিছুই বুঝতে পাচ্চি না।

 নেপথ্যে দূরে। বেল ফুল—চাই বরোফ।

(যন্ত্রীগণ সহিত নিতম্বিনী আর পয়োধরীর প্রবেশ)।

 নিত। কাল্‌ যে ভাই কালীবাবু আমাকে ব্র্যেণ্ডি খাইয়েছিল—উঃ, আমার মাথাটা যেন এখনো ঘুচ্চে। আজ যে ভাই আমি কেমন করে নাচ্‌বো তাই ভাব্‌চি।

 পয়ো। আমার ওখানেও সদানন্দ বাবু কাল ভারি ধুম লাগিয়েছিল। আজ্‌ কাল্‌ সদানন্দ ভাই খুব্‌ তোয়ের হয়ে উঠেছে। এমন ইয়ার মানুষ আর দুটী পাওয়া ভার।

 যন্ত্রী। চল, ভিতরে যাওয়া যাউক্‌। ও দরওয়ানজী।

 নেপথ্যে। কোন্‌ হ্যায়?

 পয়ো। বলি আগে দুয়র খোলো, তার পরে কোন্‌ হ্যায় দেখ্‌তে পাবে এখন।

 নেপথ্যে। ওঃ, আপলোক হ্যায়, আইয়ে।

[যন্ত্রীগণ ইত্যাদির প্রস্থান।

 বাবাজী। (অগ্রসর হইয়া স্বগত) একি চমৎকার ব্যাপার? এরা তে কশ্‌বী দেখ্‌তে পাচ্চি। কি সর্ব্বনাশ; আমি এতক্ষণে বুঝতে পাচ্চি কাণ্ডটা কি! নবকুমারটা দেখ্‌চি একবারে বয়ে গেছে। কর্ত্তা মহাশয় এসব কথা শুন্‌লে কি আর রক্ষে থাক্‌বে?

(নববাবু এবং কালীবাবুর প্রবেশ)।

 নব। হা, হা, হা—শ্রীমতী ভগবতীর গীত! তোমার ভাই কি চমৎকার মেমরি। হা, হা, হা।

 কালী। আরে ও সব লক্ষীছাড়া বই কি আমি কখন খুলি না পড়ি, যে মনে থাক্‌বে।

 নব। (বাবাজীকে অবলোকন করিয়া) একি, এজে বাবাজী হে। কেমন্‌ ভাই কালী, আমি বলেছিলাম কি না যে কর্ত্তা একজন না একজনকে অবশ্যই আমার পেছনে পেছনে পাঠাবেন; যা হৌক, একে যে আমরা দেখ্‌তে পেলেম এই আমাদের পরমভাগ্য বলতে হবে।

 কালী। বল তো ও বৈষ্ণব শালাকে ধরে এনে একটু ফাউল কট্‌লেট্‌ কি মটন চপ খাইয়ে দি—শালার জন্মটা সার্থক হউক।

 নব। চুপকর হে, চুপকর। এ ভাই ঠাট্টার কথা নয়। (অগ্রসর হইয়া) কি গো, বাবাজী যে? তা আপ্‌নি এখানে কি মনে করে?

 বাবা। না, এমন কিছু না, তবে কি না একটা কর্ম্ম বশতঃ এই দিগ দিয়ে যাচ্‌ছিলেম, তাই ভাবলেম যে নববাবুদের সভা ভবনটি একবার দেখে যাই।

 নব। বটে বটে; চলুন, তবে ভিতরে চলুন।

 কালী। (জনান্তিকে নবকুমারের প্রতি) আরে করিস্‌ কি, পাগল? এটাকে এর ভিতরে নেগেলে কি হবে? আমরা তো আর হরিবাসর কত্যে যাচ্চি নে।

 নব। (জনান্তিকে কালীর প্রতি) আঃ, চুপ করনা। (প্রকাশে বাবাজীর প্রতি) বাবাজী, একবার ভিতরে পদার্পণ কল্যে ভাল হয় না।

 বাবা। না বাবু, আমার অন্যত্তরে কর্ম্ম আছে, তোমরা যাও।

[প্রস্থান।

 কালী। বল তো শালাকে ধাঁ করে ধরে এনে না হয় ঘা দুই লাগিয়ে দি!

 নব। দরওয়ান।

(দৌবারিকের প্রবেশ)।

 দৌবা। মহারাজ।

 নব। ও লোগ সব আয়া?

 দৌবা। জী, মহারাজ।

 নব। আচ্ছা, তোম যাও।

 দৌবা। জো হুকুম, মহারাজ।

[প্রস্থান।

 নব! আজ ভাই দেখচি এই বাবাজী বেটা একটা ভারি হেঙ্গাম করে বস্‌বে এখন। বোধ করি ও ঐ মাগীদের ভিতরে ঢুক্‌তে দেখেছে।

 কালী। পুঃ, তুমি তো ভারি কাউয়ার্ড হে! তোমার যে কিছু মরাল করেজ নেই। ও বেটাকে আবার ভয়?—চল।

 নব। না হে না, তুমি ভাই এ সব বোঝ না। চল দেখি গে বেটার হাতে কিছু ও কর্ম্ম করে দিয়া যদি মুখ্‌ বন্দ কত্ত্যে পারি।

 কালী। নন্‌সেন্‌স! তার চেয়ে শালাকে গোটকত কিক্‌ দিয়ে একেবারে বৈকুণ্ঠে পাঠাও না কেন। ড্যাম্‌ দি ব্রুট্‌! ও শালাকে এ পৃথিবীতে কে চায়? ওর কি আর কোন মিসন্‌ আছে?

 নব। দূর পাগল, এ সব ছেলেমানুষের কর্ম্ম নয়। চল, আমরা দুজনেই ওর কাছে যাই।

[উভয়ের প্রস্থান।

ইতি প্রথমাঙ্ক।