এপিক্‌টেটসের উপদেশ/জ্ঞানী ও অজ্ঞানের ভয়

উইকিসংকলন থেকে

জ্ঞানী ও অজ্ঞানের ভয়।

 ১। কোন পদার্থ যখন আমাদের চিত্তে প্রতিভাত হয়, তখন প্রথমেই তাহার প্রতীয়মান রূপটিতেই আমরা অভিভূত অথবা বিমুগ্ধ হইয়া পড়ি। তাহাতে আমাদের ইচ্ছাশক্তির কোন হাত থাকে না। উহা আমাদের আয়ত্তের বাহিরে। ঐ পদার্থ-সমূহের এমনি একটি নিজস্ব শক্তি আছে যে উহা আমাদের অন্তরে বলপূর্ব্বক প্রথমেই একটা অযথা প্রতীতি জন্মাইয়া দেয়। কিন্তু এই প্রতীতিগুলির সত্যতা সম্বন্ধে বুদ্ধির অনুমোদন চাই—এই অনুমোদন দেওয়া না দেওয়া মানুষের ইচ্ছা-শক্তিসাপেক্ষ। আকাশে একটা ঘোরতর শব্দ হইল, সহসা কোন বস্তুর পতন হইল, কোন বিপদের পূর্ব্বসূচনা হইল, অথবা এই প্রকার আর কোন কিছু হইল—তখন তত্ত্বজ্ঞানীরও চিত্ত কিঞ্চিৎ বিচলিত না হইয়া যায় না; তিনি শিহরিয়া উঠিবেন, তাঁহার মুখ বিবর্ণ হইয়া যাইবে। উহার দ্বারা তাঁহার কোন অমঙ্গল হইবে এরূপ ধারণা-বশে তিনি বিচলিত হয়েন না পরন্তু বুদ্ধি জ্ঞানের কার্য্য আরম্ভ না হইতে হইতেই, এক প্রকার অচিন্তিত দ্রুত-উৎপন্ন স্বাভাবিক চাঞ্চল্য আসিয়া তাঁহাকে বিচলিত করে। কিন্তু একটু পরেই যখন বিবেচনা করিয়া দেখেন, তখন ঐ প্রতীয়মান পদার্থ-সকল তাঁহার অন্তরাত্মার বাস্তবিক ভয়ের বিষয় বলিয়া মনে হয় না, তৎসম্বন্ধীয় প্রতীতিতে তিনি সায় দেন না, অথবা অনুমোদন করেন না, তিনি উহা অগ্রাহ্য করেন, পরিত্যাগ করেন, তাহাতে এমন কিছুই দেখেন না যাহাতে তাঁহার ভয় হইতে পারে। তত্ত্বজ্ঞানীরা বলেন, জ্ঞানী ও অজ্ঞানের মধ্যে এইটুকুই প্রভেদ। অজ্ঞানেরা মনে করে, পদার্থ-সমূহের প্রথম প্রতীতিতে উহাদিগকে যেরূপ ভীষণ ও কঠোর বলিয়া মনে হয়, উহারা আসলেও তাই। উহাদের বুদ্ধিও এই প্রতীতিতে সায় দেয়, অনুমোদন করে। কিন্তু যদিও তত্ত্বজ্ঞানীর মুখ কিছুকালের জন্য বিবর্ণ হইয়া যায়, কিন্তু তিনি ইহাতে সায় দেন না, অনুমোদন করেন না। এই প্রতীতি সম্বন্ধে তাঁহার মতের কোন পরিবর্ত্তন হয় না। অর্থাৎ পূর্ব্বের ন্যায় এখনও তিনি মনে করেন,—উহার মধ্যে বাস্তবিক কোন ভয়ের কারণ নাই, উহারা ভীষণ আকার ধারণ করিয়া ফাঁকা ভয় প্রদর্শন করিতেছে মাত্র।

 ২। আমাদের আত্মা একটি জলপূর্ণ পাত্রের মত। পাত্রস্থ জলের উপর যেরূপ আলোক-কিরণ পতিত হয়, সেইরূপ পদার্থ-সমূহ-জাত প্রতীতিও আত্মার উপর প্রতিভাত হয়। জল চঞ্চল হইলে, কিরণও যেরূপ চঞ্চল বলিয়া মনে হয়, কিন্তু আসলে চঞ্চল নহে, সেইরূপ মানুযের মন যখন তমসাবৃত হয়, ঘূর্ণমান হয়, তখনই বিকৃত রূপ-সকল উপলব্ধি হয়, আসল সত্যের কোন বিকার হয় না; যে মনের উপর উহা প্রকটিত হয়, সেই মনেরই বিকৃত অবস্থা প্রযুক্ত উহা বিকৃত ভাবে প্রতীয়মান হয়। সেই বিকৃত অবস্থা ঘুচিয়া গেলেই তাহার নিকট বাস্তবিক সত্য আবার স্বাভাবিক ভাবে প্রকাশ পায়।