এপিক্টেটসের উপদেশ/মহাপ্রস্থান
মহাপ্রস্থান।
১। কেহ যদি আমার নিকট আসিয়া বলে:—এপিক্টেটাস! আমার শরীরের সহিত আমি আর বদ্ধ হইয়া থাকিতে পারি না,আর আমার সহ্য হয় না; এই শরীরকে খাদ্য পানীয় যোগাইতে হইবে, বিশ্রাম দিতে হইবে, পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন রাখিতে হইবে; এই পোড়া শরীরের জন্যই কত লোকের দ্বারস্থ হইতে হইবে। এ সমস্ত কি আমাদের উপেক্ষার বিষয় নহে? এ সমস্ত কি আমাদের নিকট অতি তুচ্ছ জিনিস নহে? আর মৃত্যুও ত অমঙ্গল নহে। এক হিসাবে আমরা কি ঈশ্বরের আত্মীয় নহি? আমরা কি তাঁহার নিকট হইতে আসি নাই? অতএব যেখান হইতে আসিয়াছি এস আমরা সেইখানেই প্রস্থান করি। যে সকল বন্ধনে এখানে আবদ্ধ ও ভারাক্রান্ত হইয়া আছি, এস আমরা সেই সকল বন্ধন হইতে মুক্ত হই! এখানে দস্যু আছে, চোর আছে, আইন আদালত আছে, আর আমাদের সেই সব প্রভু আছেন, যাঁহাদের কতকটা কর্ত্তৃত্ব আমাদের শরীরের উপর—আমাদের বিষয়- সম্পত্তির উপর আছে বলিয়া আমরা মনে করি। অতএব এস আমরা তাঁহাদের দেখাই যে, কোন মনুষ্যের উপর তাঁহাদের লেশমাত্র ক্ষমতা নাই।” এই কথার উত্তরে তাঁহাকে আমি এইরূপ বলি:—
বন্ধুগণ! ঈশ্বরের আদেশ প্রতীক্ষা করিয়া থাক। তিনি যখন স্বয়ং ইঙ্গিত করিবেন,—তোমার কর্ম্ম হইতে তোমাকে অবসর দিবেন, তখনই তুমি মুক্ত হইয়া তাঁহার নিকট গমন করিবে। কিন্তু, আপাতত, যেখানে তিনি তোমাকে রাখিয়াছেন সেইখানেই ধৈর্য্যসহকারে অবস্থিতি কর। বস্তুতঃ অল্পদিনের জন্যই এই প্রবাসে তোমাকে থাকিতে হইবে;—যাহারা এইরূপ ভাবে দেখে তাহারা সহজেই এখানকার সমস্ত কষ্ট সহ্য করিতে পারে। কেননা, যাহার নিকট শরীর কিছুই নহে, বিষয়-সম্পত্তি কিছুই নহে, কোন রাজা, কোন দস্যু, কোন আইনআদালত কি তাহাকে ভয় দেখাইতে পারে? অতএব, এইখানেই থাক, বিনা-হেতু এখান হইতে প্রস্থান করিও না।”
২। “আচ্ছা, কত দিন এই আদেশ পালন করিতে হইবে?”—যত দিন তোমার পক্ষে হিতজনক ততদিন; অর্থাৎ যতদিন তোমার উপযুক্ত কর্ম্ম তুমি করিতে সমর্থ হইবে।
৩। কিন্তু কোন অনুচিত কারণে, কিম্বা ভীরুর ন্যায়, কিম্বা কোন তুচ্ছ বিষয়ের ছুতা করিয়া, এলোক হইতে প্রস্থান করিও না। আবার বলিতেছি, ইহা ঈশ্বরের ইচ্ছা নহে; কেন না পৃথিবীর বর্ত্তমান ব্যবস্থাপ্রণালী ও বর্ত্তমান মানবজাতির বংশপ্রবাহ রক্ষা করা ঈশ্বরের অভিপ্রায়; ইহার দ্বারা ঈশ্বরের কোন গূঢ় প্রয়োজন সিদ্ধ হইতেছে জানিবে।