কঙ্কাবতী/দ্বিতীয় ভাগ/দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

উইকিসংকলন থেকে


দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

ব্যাঙ-সাহেব

বনের মাঝে কঙ্কাবতী একেবারে নির্জ্জীব হইয়া পড়িলেন। বারবার উঠিয়া-পড়িয়া শরীর তাঁহার ক্ষতবিক্ষত হইয়া গিয়াছিল। শরীরের নানা স্থান হইতে শোণিতধারা বহিতেছিল। কঙ্কাবতীর এখন আর উঠিবার শক্তি নাই। উঠিয়াইবা কি করিবেন? স্বামীর নিকট যাইতে গেলেই নাকেশ্বরী আবার তাঁহাকে নিশ্বাসের দ্বারা দূরীকৃত করবে। বনের মাঝে পড়িয়া কঙ্কাবতী অবিরাম কাঁদিতে লাগিলেন। স্বামীর পদপ্রান্তে পড়িয়া তিনি যে প্রাণ পরিত্যাগ করিতে পাইলেন না, এখন কেবল এই দুঃখ তাঁহার মনে অত্যন্ত প্রবল হইল। কাঁদিয়া কাদিয়া শরীর তাঁহার অবসান হইয়া পড়িল। তখন তিনি মনে মনে স্থির করিলেন,— আচ্ছা! তাই ভাল। স্বামী ভিতরে থাকুন, আমি এই বাহিরে পড়িয়া থাকি। তাঁহার পদযুগল ধ্যান করিতে করিতে এই বাহিরেই আমি প্রাণ পরিত্যাগ করিব। করুণাময় জগদীশ্বর আমার প্রতি কৃপা করিবেন। মরিয়া আমি তাঁহাকে পাইব।”

 এইরূপ চিন্তা করিয়া, কঙ্কাবতী স্বামীর পা দুটি মনে মনে প্রত্যক্ষ দেখিতে লাগিলেন,— উজ্জ্বল শুভ্রবর্ণ অল্প-আয়তন, চম্পককলিসদৃশ অঙ্গুলিবিশিষ্ট সেই পা দুখানি মনে মনে ধ্যান করিতে লাগিলেন। একাবিষ্টচিত্তে এইরূপ ধ্যান করিতেছেন, এমন সময় কঙ্কাবতীর মনে একটি নূতন ভাবের উদয় হইল। তিনি ভাবিলেন,— “ভূতিনী, প্রেতিনী, ডাকিনীতে মনুষ্যের মন্দ করিলে তাহার তো উপায় আছে! পৃথিবীতে অনেক গুণী মনুষ্য আছেন, তাহারা মন্ত্র জানেন, তাহারা তো ইহার চিকিৎসা করিতে পারেন। কেন বা আমার স্বামীকে তাহারা রক্ষা করিতে না পারিবেন? আর, যদি একান্তই আমার স্বামীর প্রাণরক্ষা না হয়, তাঁহার মৃতদেহ তো আমি পাইব। তাহা লইয়া পুড়িয়া মরিতে পারিলেও আমি কথঞ্চিৎ শান্তিলাভ করিব। যাহা হউক, আমি আমার

স্বামীকে নাকেশ্বরীর হাত হইতে রক্ষা করিতে যত্ন করিব,— নিশ্চিন্ত হইয়া থাকিব না। হই না কেন স্ত্রীলোক? আমি কি মানুষ নই? পতির হিতকামনায়, আমি সমুদয় জগৎকে তৃণজ্ঞান করি,— কাহাকেও আমি ভয় করি না।”

 মনে মনে এইরূপ কল্পনা করিয়া কঙ্কাবতী চক্ষু মুছিলেন, উঠিয়া বসিলেন। এখন লোকালয়ে যাইতে হইবে, এই উদেশে উঠিয়া দাঁড়াইলেন।

 কিন্তু লোকালয় কোন দিকে, তাহা তো তিনি জানেন না! উত্তরমুখে যাইতে খেতু বলিয়াছিলেন, কিন্তু উত্তর কোন দিক? বিস্তীর্ণ তমোময় সেই বনকান্তারে দিক নির্ণয় করা তো সহজ কথা নহে! রাত্রি এখনও প্রভাত হয় নাই, সূর্য এখনও উদয় হন নাই; তবে কোন দিক উত্তর, কোন দিক দক্ষিণ, কিরূপে তিনি জানিবেন?

 তাই তিনি ভাবিলেন— “যেদিকে হয় যাই। একটা না একটা গ্রামে গিয়া উপস্থিত হইব। লোকালয়ে গিয়া সুচিকিৎসকের অনুসন্ধান করিব। কালবিলম্ব করা উচিত নয়। কালবিলম্ব করিলে আমার আশা হয়তো ফলবতী হইবে না।”

 বন-জঙ্গল, গিরি-গুহা অতিক্রম করিয়া উন্মাদিনীর ন্যায় কঙ্কাবতী চলিলেন। কত পথ যাইলেন, কতদূর চলিয়া গেলেন, কিন্তু গ্রাম দেখিতে পাইলেন না। রাত্রি প্রভাত হইল, সূর্য্য উদয় হইলেন, দিন বাড়িতে লাগিল, তবুও জনমানবের সহিত তাঁহার সাক্ষাৎ হইল না।

 “কি করি, কোন দিকে যাই, কাহাকে জিজ্ঞাসা করি” কঙ্কাবতী এইরূপ চিন্তা করিতেছেন, এমন সময় সম্মুখে একটি ব্যাঙ দেখিতে পাইলেন। ব্যাঙের অপূর্ব্ব মূর্ত্তি। সেই অপূর্ব্ব মূর্ত্তি দেখিয়া কঙ্কাবতী বিস্মিত হইলেন। ব্যাঙের মাথায় হ্যাট, গায়ে কোট, কোমরে পেণ্টুলেন, ব্যাঙ সাহেবের পোষাক পরিয়াছেন। ব্যাঙকে আর চেনা যায় না। রংটি কেবল ব্যাঙের মত আছে, সাবাং মাখিয়াও রংটি সাহেবের মত হয় নাই। আর পায়ে জুতা এখনও কেনা হয় নাই। ইহার পর তখন কিনিয়া পরিবেন। আপাততঃ সাহেবের সাজ সাজিয়া দুই পকেটে হাত রাখিয়া, সদৰ্পে ব্যাঙ চলিয়া যাইতেছেন।

 এই অপূর্ব্ব মূর্ত্তি দেখিয়া, এই ঘোঁর দুঃখের সময়ও কঙ্কাবতীর মুখে ঈষৎ একটু হাসি দেখা দিল। কঙ্কাবতী মনে করিলেন,— ইঁহাকে আমি পথ জিজ্ঞাসা করি।

 কঙ্কাবতী জিজ্ঞাসা করিলেন,— “ব্যাঙ মহাশয়! গ্রাম কোন দিকে? কোন দিক দিয়া যাইলে লোকালয়ে পৌঁছিব?”

 ব্যাঙ উত্তর করিলেন,— “হিট্‌ মিট্‌ ফ্যাট্‌।”

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “ব্যাঙ মহাশয়! আপনি কি বলিলেন, তাহা আমি বুঝিতে পারিলাম না। ভাল করিয়া বলুন। আমি জিজ্ঞাসা করিতেছি— কোন দিক দিয়া যাইলে গ্রামে গিয়া উপস্থিত হইতে পারা যায়?”

 ব্যাঙ বলিলেন,— “হিশ ফিশ ড্যাম।”

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “ব্যাঙ মহাশয়! আমি দেখিতেছি,— আপনি ইংরেজী কথা কহিতেছেন। আমি ইংরেজী পড়ি নাই, আপনি কি বলিতেছেন, তাহা আমি বুঝিতে পারিতেছি না, অনুগ্রহ করিয়া যদি বাঙ্গালা করিয়া বলেন, তাহা হইলে আমি বুঝিতে পারি।”

 ব্যাঙ এদিক-ওদিক চাহিয়া দেখিলেন। দেখিলেন যে, কেহ কোথাও নাই। কারণ, লোকে যদি শুনে যে, তিনি বাঙ্গালা কথা কহিয়াছেন, তাহা হইলে তাহার জাতি যাইবে, সকলে তাহাকে “নেটিভ” মনে করিবে। যখন দেখিলেন,— কেহ কোথাও নাই, তখন বাঙ্গালা কথা বলিতে তাহার সাহসী হইল।


 কঙ্কাবতীর দিকে কোপদৃষ্টিতে চাহিয়া, অতিশয় ক্রুদ্ধভাবে ব্যাঙ বলিলেন,— “কোথাকার ছুড়ি রে তুই! আ গেল যা! দেখিতেছিস, আমি সাহেব! তবু বলে, ব্যাঙ মশাই, ব্যাঙ মশাই! কেন? সাহেব বলিতে তোর কি হয়?”

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “ব্যাঙ সাহেব! আমার অপরাধ হইয়াছে, আমাকে ক্ষমা করুন। এক্ষণে গ্রামে যাইব কোন দিক দিয়া, অনুগ্রহ করিয়া আমাকে বলিয়া দিন।”

 এই কথা শুনিয়া ব্যাঙ আরও জ্বলিয়া উঠিলেন, আরও ক্রোধাবিষ্ট হইয়া বলিলেন,— “মোলো যা! এ হতভাগা ছুঁড়ির রকম দেখ! মানা করিলেও শুনে না। কথা গ্রাহ্য হয় না। কেবল বলিবে, ব্যাঙ, ব্যাঙ, ব্যাঙ! কেন? আমার নাম ধরিয়া ডাকিতে কি মুখে ব্যথা হয় না কি? আমার নাম, মিষ্টার গামিশ।”

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “মহাশয়! আমার অপরাধ হইয়াছে। না জানিয়া অপরাধ করিয়াছি, আমাকে ক্ষমা করুন। এক্ষণে, মিষ্টার গামিশ! আমি লোকালয়ে যাইব কোন দিক দিয়া, তাহা আমাকে বলিয়া দিন। আমার নাম কঙ্কাবতী। বড় বিপদে আমি পড়িয়াছি। প্রাণের পতিকে আমি হারাইয়াছি। পতির চিকিৎসার নিমিত্ত আমি গ্রাম অনুসন্ধান করিতেছি। রতিমাত্র বিলম্ব আর করিতে পারি না। এই হতভাগিনীর প্রতি দয়া করিয়া বলিয়া দিন— কোন দিক দিয়া আমি গ্রামে যাই!”

 কঙ্কাবতী তাঁহাকে ‘সাহেব' বলিলেন, কঙ্কাবতী তাহাকে মিষ্টার গামিশ’ বলিয়া ডাকিলেন, সেজন্য ব্যাঙের শরীর শীতল হইল, রাগ একেবারে পড়িয়া গেল।

 কঙ্কাবতীর প্রতি হৃষ্ট হইয়া ব্যাঙ জিজ্ঞাসা করিলেন,— “আমি সাহেব হইয়াছি কেন তা জান?

 কঙ্কাবতী উত্তর করিলেন,— “আজ্ঞা না! তা আমি জানি না। মহাশয়! গ্রামে কোন দিক দিয়া যাইতে হয়? গ্রাম এখান হইতে কতদূর?”

 ব্যাঙ বলিলেন,— “দেখ লঙ্কাবতী! তোমার নাম লঙ্কাবতী বলিলে বুঝি? দেখ লঙ্কাবতী! একদিন আমি এই বনের ভিতর বসিয়াছিলাম। হাতী সেই পথ দিয়া আসিতেছিল। আমি মনে করিলাম আমার মান-মর্য্যাদা রাখিয়া, অনেক ভয় করিয়া, হাতী অবশ্যই পাশ দিয়া যাইবে। একবার আম্পর্দ্ধার কথা শুন! দুই হাতী পাশ দিয়া না গিয়া আমাকে ডিঙাইয়া গেল। রাগে আমার সর্ব্বশরীর কাপিতে লাগিল। রাগ হইলে আমার আর জ্ঞান থাকে না। আমার ভয়ে তাই সবাই সদাই সশঙ্কিত। আমি ভাবিলাম, হাতীকে একবার উত্তমরূপে শিক্ষা দিতে হইবে। তাই আমি হাতীকে বলিলাম,— ‘উটকপালী চিরুণ-দাঁতী বড় যে ডিঙুলি মোরে?” কেমন, বেশ ভাল বলি নাই, লঙ্কাবতী?

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “আমার নাম কঙ্কাবতী; ‘লঙ্কাবতী’ নয়। আপনি উত্তম বলিয়াছেন। গ্রামে যাইবার পথ আপনি বলিয়া দিলেন না? তবে আমি যাই, আর আমি এখানে অপেক্ষা করিতে পারি না।”

 ব্যাঙ বলিলেন,— “শুন না। অত তাড়াতাড়ি কর কেন? দুষ্ট হাতীর একবার কথা শুন। আমি রাগিয়াছি দেখিয়া তাহার প্রাণে ভয় হইল না। হাতীটি উত্তর করিল,— ‘থাক থাক থাক থ্যাবড়ানাকী ধর্ম্মে রেখেছে তোরে! হাঁ কঙ্কাবতী! আমার কি থ্যাবড়া নাক?”

 কঙ্কাবতী ভাবিলেন যে, এই নাক লইয়া কাঁকড়ার অভিমান হইয়াছিল, আবার দেখিতেছি এই ভেকটিরও সেই অভিমান।

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “না, না। কে বলে আপনার থ্যাবড়া নাক? আপনার চমৎকার নাক! মহাশয়! এই দিক্‌ দিয়া কি গ্রামে যাইতে হয়?

 কিছুক্ষণের নিমিত্ত ব্যাঙ একটু চিন্তায় মগ্ন হইলেন। কঙ্কাবতী মনে করিলেন, ভাবিয়া-চিত্তিয়া ইনি আমাকে পথ বলিয়া দিবেন। কখন পথ বলিয়া দেন, সেই প্রতীক্ষায় একাগ্রচিত্তে কঙ্কাবতী ব্যাঙের মুখপানে চাহিয়া রহিলেন।

 স্থির-গম্ভীরভাবে অনেকক্ষণ চিন্তা করিয়া অবশেষে ব্যাঙ বলিলেন,— “তবে বোধ হয় কথার মিল করিবার নিমিত্ত হাতী আমাকে 'থ্যাবড়ানাকী' বলিয়াছে। কারণ, এই দেখ না? আমার কথায় আর হাতী কথায় মিল হয়,—

 উটকপালী চিরুণ-দাতী বড় যে ডিভুলি মোরে!
 থাক থাক থাক থ্যাবড়ানাকী ধর্ম্মে রেখেছে তোরে?

 কঙ্কাবতী! কবিতাটি খবরের কাগজে ছাপাইলে হয় না? কিন্তু ইহাতে আমার নিন্দা আছে থ্যাবড়া নাকের কথা আছে। তাই খবরের কাগজে ছাপাইব।

 শুনলে তো এখন? হাতীর একবার আস্পর্দ্ধার কথাতাই আমি ভাবিলাম, সাহেব না হইলে লোকে মান্য করে না। সেইজন্য এই সাহেবের পোষাক পরিয়াছি। কেমন? আমাকে ঠিক সাহেবের মত দেখাইতেছে তো? এখন হইতে আমাকে সকলে সেলাম করিবে, সকলে ভয় করিবে। যখন রেলগাড়ীর তৃতীয় শ্রেণীতে গিয়া চড়িব, তখন সে গাড়ীতে অন্য লোক উঠিবে না। টুপি মাথায় দিয়া আমি দ্বারের নিকট গিয়া দাঁড়াইব। সকলে উঁকি মারিয়া দেখিবে, আর ফিরিয়া যাইবে,— আর বলিবে,— 'ও গাড়ীতে সাহেব রহিয়াছে।' কেমন কঙ্কাবতী? এ পরামর্শ ভাল নয়?”

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “উত্তম পরামর্শ! এক্ষণে অনুগ্রহ করিয়া পথ বলিয়া দিন! আর যদি না দেন, তো বলুন আমি চলিয়া যাই!”

 কানে হাত দিয়া ব্যাঙ জিজ্ঞাসা করিলেন,— “কি বলিলে?”

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, কোন পথ দিয়া গ্রামে যাইব? গ্রাম এখান হইতে কতদূর কতক্ষণে সেখানে গিয়া পৌঁছিব?”

 ব্যাঙ বলিলেন,— “আমার একটা হিসাব করিয়া দাও। পথ দেখাইয়া দিব কি, আমি এখন ঘোর বিপদে পড়িয়াছি। আমার একটি আধুলি ছিল; একজনকে তাহা আমি ধার দিয়াছি। তাহার সহিত নিয়ত হইয়াছে যে, যাহা বাকী থাকিবে, প্রতিদিন তাহার অৰ্দ্ধেক দিয়া সে ঋণ পরিশোধ করিবে। প্রথম দিন সে আমাকে চারি আনা দিবে, দ্বিতীয় দিন দুই আনা দিবে, তৃতীয় দিন এক আনা, চতুর্থ দিন দুই পয়সা, পঞ্চম দিন সে একপয়সা দিবে। একপয়সায় হয় পাঁচ গণ্ডা, অর্থাৎ কুড়ি কড়া। ষষ্ঠ দিনে সে আমাকে দশ কড়া দিবে। তার পরদিন সে আমাকে পাঁচ কড়া দিবে। তার পরদিন আড়াই কড়া, তার পরদিন স-কড়া, তার পরদিন তার অর্দ্ধেক, পরদিন তার অর্দ্ধেক, পরদিন তার অর্দ্ধেক—"

 অতি চমৎকার সুমিষ্ট কান্না-সুরে ব্যাঙ এইবার গলা ছাড়িয়া কাঁদিতে লাগিলেন,— “ওগো! মা গো! এ যে আর কখনও শোধ হবে না গো, আমার আধুলিটি যে, আর কখনও পূরাপূরি হবে না গো! ওগো আমি কোথায় যাব গো! জুয়াচোরের হাতে পড়িয়া আমার যে সর্ব্বস্ব গেল গো! ওগো আমার যে ঐ আধুলিটি বৈ পৃথিবীতে আর কিছু নাই গো! ওগো তা লইয়া মানুষে যে ঠাট্টা করে গো! 'ব্যাঙের আধুলি', 'ব্যাঙের আধুলি' বলিয়া মানুষে যে হিংসায় ফাটিয়া মরে গো! ওগো মা গো! আমার কি হ’ল গো!”

 ব্যাঙ পুনরায় আধ-কান্না সুরে ফুপিয়া-ফুপিয়া বলিলেন,— “ওগো! আমি যে মনে করিয়াছিলাম,— দুই দণ্ড বসিয়া তোমার সঙ্গে গল্পগাছা করিব গো! ওগো তা যে আর হইল না গো! ওগো আমার যে শোকসিন্ধু উথলিয়া উঠিল গো! ওগো তুমি ঔ দিক দিয়া যাও গো? তাহা হইলে লোকালয়ে পৌঁছিতে পারিবে গো! ওগো সে যে অনেক দূর গো! ওগো আজ সেখানে যাইতে পারিবে না গো! ওগো তোমরা যে আমাদের মত লাফাইতে পার না গো! ওগো তোমরা যে গুটি-গুটি চলিয়া যাও গো। ওগো তোমাদের চলন দেখিয়া, আমার যে হাসি পায় গো। ওগো তোমাদের চলন দেখিয়া, আমার যে কান্না পায় না গো! ওগো তুমি যে লোক ভাল গো; ওগো লেখাপড়া শিখিয়া তুমি যে মন্দ মেয়েমানুষ হওনি গো! ওগো তুমি যে ধীর, শান্ত, লজ্জাশীলা পতি-পরায়ণা গো! ওগো! তুমি যে মেয়েজ্যাটা নও গো! ওগো! আমার যে আধুলিটি এইবার জন্মের মত গেল গো! ওগো! আমার কি হইল গো!