কড়ি ও কোমল/বিরহ

উইকিসংকলন থেকে

বিরহ।

ভৈরবী। একতালা।

আমি নিশি নিশি কত রচিব শয়ন
আকুল নয়নরে!
কত নিতি নিতি বনে করিব যতনে
কুসুম চরন রে!
কত শরদ যামিনী হইবে বিফল,
বসন্ত যাবে চলিয়া!
কত উদিবে তপন আশার স্বপন
প্রভাতে যাইবে ছলিয়া!
এই যৌবন কত রাখিব বাঁধিয়া,
মরিব কাদিয়া রে!
সেই চরণ পাইলে মরণ মাগিব
সাধিয়া সাধিয়া রে!
আমি কার পথ চাহি এ জনম বাহি
কার দরশন যাচিরে!

যেন আসিবে বলিয়া কে গেছে চলিয়া
তাই আমি বসে আছিরে!
তাই মালাটি গাঁথিয়া পরেছি মাথায়
নীলবাসে তনু ঢাকিয়া,
তাই বিজন-আলয়ে প্রদীপ জ্বালায়ে
একেলা রয়েছি জাগিয়া!
ওগাে তাই কত নিশি চাঁদ ওঠে হাসি,
তাই কেঁদে যায় প্রভাতে।
ওগাে তাই ফুল-বনে মধু-সমীরণে
ফুটে ফুল কত শােভাতে!
ওই বাঁশি স্বর তার আসে বারবার
সেই শুধু কেন আসে না!
এই হৃদয়-আসন শূন্য পড়ে থাকে
কেঁদে মরে শুধু বাসনা!
মিছে পরশিয়া কায় বায়ু বহে যায়
বহে যমুনার লহরী,
কেন কুহু কুহ পিক কুহরিয়া ওঠে
যামিনী যে ওঠে শিহরি!

ওগাে যদি নিশি-শেষে আসে হেসে হেসে,
মাের হাসি আর রবে কি!
এই জাগরণে ক্ষীণ বদন মলিন
আমারে হেরিয়া কবে কি!
আমি সারা রজনীর গাঁথা ফুল মালা
প্রভাতে চরণে ঝরিব,
ওগাে আছে সুশীতল যমুনার জল
দেখে তারে আমি মরিব।