কথামালা (১৮৭৭)/লাঙ্গূলহীন শৃগাল
লাঙ্গূলহীন শৃগাল
কোনও সময়ে, এক শৃগাল ফাঁদে পড়িয়াছিল। যাহারা ফাঁদ পাতিয়াছিল, তাহারা তাহার প্রাণবধের উদ্যম করিল; কিন্তু, তাহার কাতরতা দেখিয়া, প্রাণে না মারিয়া, লাঙ্গূল কাটিয়া ছাড়িয়া দিল। শৃগাল এই রূপে লাঙ্গূল দিয়া প্রাণ বাঁচাইল বটে, কিন্তু লাঙ্গূল না থাকাতে, স্বজাতির নিকট যে অপমান বোধ হইবেক, তাহা ভাবিয়া, মনে মনে কহিতে লাগিল, লাঙ্গূল যাওয়া অপেক্ষা আমার প্রাণ যাওয়া ভাল ছিল।
পরিশেষে, এই অপমান শুধরিয়া লইবার জন্য, সকল শৃগালকে একত্র করিয়া, সে কহিতে লাগিল, দেখ ভাই সকল! আমার ইচ্ছা যে, তোমরা সকলে আমার মত লাঙ্গূল কাটিয়া ফেল; লাঙ্গূল না থাকাতে, আমি যে এক্ষণে কেমন সচ্ছন্দ শরীরে বেড়িয়া বেড়াই, তোমরা কেহই তাহা অনুভব করিতেছ না। যদি পরীক্ষা করিয়া না দেখিতাম, বোধ করি, আমিও কখনও বিশ্বাস করিতাম না। বিবেচনা করিয়া দেখিলে, লাঙ্গূল থাকিলে অতি কদর্য্য দেখায়, অত্যন্ত অসুবিধা, এবং অনর্থক ভার বহিয়া বেড়ান মাত্র লাভ। আমার আশ্চর্য্য বোধ হইতেছে যে, আমরা এত দিন লাঙ্গূল রাখিয়াছি কেন। হে বন্ধুগণ! আমি স্বয়ং যার পর নাই উপকার বোধ করিয়াছি, এজন্য তোমাদিগকে পরামর্শ দিতেছি যে, তোমরাও, আমার মত, আপন আপন লাঙ্গূল কাটিয়া ফেল। লাঙ্গূল না থাকায় কত আরাম, এখনই বুঝিতে পারিবে।
এই প্রস্তাব শুনিয়া, এক বৃদ্ধ শৃগাল, অগ্রসর হইয়া, লাঙ্গূলহীন শৃগালকে সম্বোধন করিয়া কহিল, ভাই হে! যদি তোমার লাঙ্গূল ফিরিয়া পাইবার সম্ভাবনা থাকিত, তাহা হইলে, তুমি কদাচ আমাদিগকে আপন আপন লাঙ্গূল কাটিয়া ফেলিতে পরামর্শ দিতে না।