বিষয়বস্তুতে চলুন

কথামালা (১৮৮৫)/অশ্ব ও গর্দ্দভ

উইকিসংকলন থেকে

অশ্ব ও গর্দ্দভ

এক ব্যক্তির একটি অশ্ব ও একটি গর্দ্দভ ছিল। সে, কোনও স্থানে যাইবার সময়, সমুদয় দ্রব্য সামগ্রী গর্দ্দভের পৃষ্ঠে চাপাইয়া দিত, অশ্ব বহু মূল্যের বস্তু বলিয়া, তাহার উপর কোনও ভার চাপাইত না। এক দিবস, সমুদয় ভার বহিয়া যাইতে যাইতে, গর্দ্দভের পীড়া উপস্থিত হইল।পীড়ার যাতনা ও ভারের আধিক্য বশতঃ, গর্দ্দভ, অতিশয় কাতর হইয়া, অশ্বকে কহিল, দেখ, ভাই! আমি আর এত ভার বহিতে পারিতেছি না; যদি তুমি, দয়া করিয়া, কিয়ৎ অংশ লও, তাহা হইলে, আমার অনেক পরিত্রাণ হয়, নতুবা আমি মারা পড়ি। অশ্ব কহিল, তুমি ভার বহিতে পার না পার, আমার কি; আমায় তুমি বিরক্ত করিও না; আমি, কখনও, তোমার ভারের অংশ লইব না।

 গর্দ্দভ আর কিছুই বলিল না; কিন্তু, খানিক দূর গিয়া, যেমন মুখ থুবড়িয়া পড়িল, অমনি তাহার প্রাণত্যাগ হইল। তখন ঐ ব্যক্তি সেই সমুদয় ভার অশ্বের পৃষ্ঠে চাপাইল, এবং, ঐ ভারের সঙ্গে, মরা গর্দ্দভটিও চাপাইয়া দিল। তখন অশ্ব, সমুদয় ভার ও মরা গর্দ্দভ, উভয়ই বহিতে হইল দেখিয়া, আক্ষেপ করিয়া, মনে মনে কহিতে লাগিল, আমার যেমন দুষ্ট স্বভাব, তাহার উপযুক্ত ফল পাইলাম। তখন যদি এই ভারের অংশ লইতাম, তাহা হইলে, এখন আমায় সমুদায় ভার ও মরা গর্দভ বহিতে হইত না।