কথামালা (১৮৮৫)/পীড়িত সিংহ

উইকিসংকলন থেকে

পীড়িত সিংহ

এক সিংহ, বৃদ্ধ ও দুর্বল হইয়া, আর শিকার করিতে পারিত না; সুতরাং, তাহার আহারবন্ধ হইয়া আসিল। তখন সে, পর্বতের গুহার মধ্যে থাকিয়া, এই কথা রটাইয়া দিল, সিংহ অতিশয় পীড়িত হইয়াছে; চলিতে পারে না, উঠিতে পারে না, কথা কহিতে পারে না। এই সংবাদ, নিকটস্থ পশুদের মধ্যে, প্রচারিত হইলে, তাহারা, একে একে, সিংহকে দেখিতে যাইতে লাগিল। সিংহ নিতান্ত নিস্তেজ হইয়াছে ভাবিয়া, যেমন কোনও পশু নিকটে যায়, অমনি সিংহ, তাহার ঘাড় ভাঙ্গিয়া, সচ্ছন্দে আহার করে।

 এই রূপে কয়েক দিন গত হইলে, এক শৃগাল, সিংহকে দেখিবার নিমিত্ত, গুহার দ্বারে উপস্থিত হইল। সিংহ যথার্থই পীড়িত হইয়াছে, অথবা ছল করিয়া, নিকটে পাইয়া, পশুগণের প্রাণবধ করিতেছে, এ বিষয়ে শৃগালের সম্পূর্ণ সন্দেহ ছিল। এজন্য, সে গুহায় প্রবেশ করিয়া, সিংহের নিতান্ত নিকটে না গিয়া, কিঞ্চিৎ দূরে থাকিয়া,জিজ্ঞাসা করিল, মহারাজ! আপনি কেমন আছেন? সিংহ, শৃগালকে দেখিয়া, অতিশয় আহলাদপ্রকাশ করিয়া, কহিল, কে ও, আমারি পরম বন্ধু শৃগাল! আইস, ভাই! আইস; আমি ভাবিতেছিলাম, ক্রমে ক্রমে, সকল বন্ধুই আমায় দেখিতে আসিল, পরম বন্ধু শৃগাল আসিল না কেন? যাহা হউক, ভাই! তুমি যে আসিয়াছ, ইহাতে, যার পর নাই, আহলাদিত হইলাম। যদি, ভাই! আসিয়াছ, দূরে দাঁড়াইয়া রহিলে কেন? নিকটে আইস, দুটা মিষ্ট কথা বল, আমার কর্ণ শীতল হউক। দেখ, ভাই! আমার শেষ দশা উপস্থিত; আর অধিক দিন বাঁচিব না।

 শুনিয়া, শৃগাল কহিল, মহারাজ! প্রার্থনা করি, শীঘ্র সুস্থ হউন। কিন্তু আমায় ক্ষমা করিবেন, আমি আর অধিক নিকটে যাইতে, অথবা অধিক ক্ষণ এখানে থাকিতে, পারিব না। বলিতে কি, মহারাজ! পদচিহ্ন দেখিয়া, স্পষ্ট বোধ হইতেছে, অনেক পশু এই গুহার মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল; কিন্তু, প্রবেশ করিয়া, কেহ পুনরায় বহির্গত হইয়াছে, কোনও ক্রমে, সেরূপ প্রতীতি হইতেছে না। ইহাতে, আমার অন্তঃকরণে, অতিশয় আশঙ্কা উপস্থিত হইয়াছে। আর আমার এখানে থাকিতে সাহস হইতেছে না; আমি চলিলাম। এই বলিয়া, শৃগাল পলায়ন করিল।