বিষয়বস্তুতে চলুন

কবিতাকুসুমাঞ্জলি/অস্তোন্মুখ সূর্য্য

উইকিসংকলন থেকে

অস্তোন্মুখ সূর্য্য।

হে তপন! কোথা বল সে তেজ তোমার?
প্রকাশিত কর যাহে অখিল সংসার।
সে তাপ নাহিক তব সে উদয় নাই,
ক্ষণে ক্ষণে তেজঃ ক্ষয় দেখিবারে পাই।
কেন হলে ওহে তানু! শান্ত-দরশন?
কেন হে কিরণজাল জড়ালে এখন?
কেন অধোভাগে ক্রমে করিছ গমন?
কেন বা হইলে তুমি লোহিতবরণ?
রঞ্জিত হইল সব রাঙ্গারূপে তব,
আবিরে লোহিত যেন হইয়াছে ভব।
সহসা পশ্চিমে যদি করি নিরীক্ষণ,
বোধ হয়, দাবানলে জ্বলিছে কানন।
চেয়ে দেখ দিবাকর! তব রিপু তমঃ,
ভয়ঙ্করবেশে আসে করিতে আক্রম।
পূর্ব্বরাজ্য অধিকার করিতেছে ক্রমে,
রাখিবে কেমনে তুমি এ হীন বিক্রমে।
উপকারী মিত্র বলে মন্ত্রণা দিতেছি,
রাখ বা না রাখ কথা, তবু বলিতেছি

তমোপহ নাম যদি রাখিবারে চাও,
ত্বরায় যাইয়া তবে বিধুরে পাঠাও।
এখনি আসিয়া শশী নাশিবে তিমির,
ঘুষিবে সকলে যশ তোমার মিহির!
যদি বল, একি কথা! হয় কি এমন,
একে কর্ম্ম করে ফল পায় অন্য জন।
দ্বিজরাজ জয়ী হবে হরি অন্ধকার,
তাহাতে আমার হবে কি পুরুষকার।
এ আশঙ্কা নাই তব, জানে সবলোকে,
কলানিধি আলো করে তোমার আলোকে।
কেনা জানে করে রণ অনুচরচয়,
তাহাতে রাজার হয় জয় পরাজয়।
কিম্বা যায় যাক্‌ রাজ্য ক্ষতি নাই তায়,
ফেলিয়া স্বজনগণে বল কে পলায়।
ছাড়ি নিজ দেশ যদি যাবে দেশান্তরে,
ভাব দেখি কি ভাবিবে নলিনী অন্তরে।
তোমার বিরহে দেখ, মুদিছে নয়ন,
নাই সে সরস মুখ বিরস এখন।
বাসরে বাসরমণি! প্রমোদ যাহার,
সে কি পারে সহিবারে পাপ অন্ধকার!

কমল মুদিত হেরি, যতেক ষট্‌পদ,
নিরাশ্রয় হয়ে নিল বিষ্ণুপদে পদ।
বুঝহ মানব! ঘটে যাহার আপদ,
কি আছে আশ্রয় তার বিন বিষ্ণুপদ।
অথবা বুঝেছি ও ত ভৃঙ্গচয় নয়,
করেছি করেছি আমি করেছি নির্ণয়।
তোমার বিরহবহ্নি পদ্মিনীর মনে
জ্বলিছে তাহারি ধূম উঠেছে গগনে।
এ বড় আশ্চর্য্য কথা, ওহে প্রভাকর,
থাকিতে সহস্র কর ছলে হীনকর।
দ্ধিকরে মনুজ নিজ নিবারে পতন,
থাকিতে সহস্রকর পার না তপন!
বুঝিলাম, বিধি হয় প্রতিকুল যার,
সাধন থাকিতে হয় নিধন তাহার।
মিহিরে হেরিয়া শিক্ষা কর মর্ত্ত্যগণ!
সুসময়ে অহঙ্কার করোনা কখন।
চিরদিন সুসময় কারু নাহি রয়,
সলিল-লেখার ন্যায় ক্ষণে পায় লয়।
অতএব বাড়াবাড়ি কভু ভাল নয়,
নিতান্ত পতন তাহে জানিবে নিশ্চয়।