কবিতাকুসুমাঞ্জলি/কহিনুর

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

কহিনুর।

সুধাই হে কহিনুর! কহিবে স্বরূপ,
কি বিষাদে ভারতের বসতি ত্যজিলে?
কেন হলে নিজ দেশে নিদয় এরূপ?
কেন বা সাগর পারে গমন করিলে?
ভারতের অতিধন, মণিশিরোমণি!
স্বদেশের নৃপগণে যতনে তোমায়,
রাখিত সতত করি নিজশিরোমণি,
তবে তুমি কেন নাহি রহিলে হেতায়।
অনুমানি মনে আমি ওহে মণিবর!
নিগূঢ় প্রণয় তব স্বাধীনতা সহ;
তাই সদা থাক হয়ে তার সহচর,
কদাচ না সহে তব তাহার বিরহ।

আজন্ম বসতি করি, হিন্দু রাজঘরে,
দুর্ব্বল দেখিয়া হয় ত্যজিলে তাহায়,
স্বাধীন যবনগেহে গেলে তুমি পরে,
অধীনে কি পারে মণি! পুষিতে তোমায়।
না লাগিল ভাল তব যবন আলয়,
তাই বুঝি ত্যজিলে হে তার সহবাস,
সাহসিক সিকরাজে হইলে সদয়,
কিছু কাল পরে তার ছাড়িলে নিবাস।
যদিও তোমার মণি! ভারতের সনে,
সম্বন্ধবন্ধন আছে পূর্ব্বের মতন,
তবু তব স্বদেশের এই খেদ মনে,
আর কভু নাহি পাবে তব দরশন।
ভারতনিবাসী যদি রাজ্য দেশ পায়,
তথাচ স্বদেশমায়া ছাড়ে না কখন,
নিদয়! ত্যজিয়া তুমি এ সুখনিকায়,
দেখালে পাষাণধর্ম্ম, বুঝেছি এখন।
যবে তুমি হে পাষাণ! জাহাজে উঠিলে,
চেয়েছিল দীনভাবে দুর্ব্বল ভারত;
তুমি তাহে মনে কিছু খেদ না করিলে,
উচ্চপদ পেয়ে গেলে করি গর্ব্ব কত।



ভয়াকুল ভারতের (জানিরে নিশ্চয়),
হবে না শকতি কভু আনিতে তোমায়;
তাই বলি, স্বদেশের রেখ অনুনয়,
ছাড়িয়া ভারতরাজে বেওমা কোথায়।
মণি হে! সাগরপারে করেছ বসতি,
ভাবি ইহা, খেদ হয় আমাদের মনে;
সুখী হই, শুনি যবে, ভারতের পতি,
আদরে তোমারে রাখে মুকুটভূষণে।