কবিতাকুসুমাঞ্জলি/নদী

উইকিসংকলন থেকে

নদী।

অবিদিত গিরিকুলে জনম তোমার,
নদি! তব নীচপথে নিয়ত প্রচার।
নক্র মীন হীন জাতি সহ কর বাস,
আকারে বক্রতা তর পাইছে প্রকাশ।
থাকিয়া তোমার কূলে যত তরুগণ,
নিরন্তর তর শোভা করয়ে সাধন।

দুকূলনাশিনি! তব গুণ কত কব,
অনায়াসে নাশ কর সেই তরু সব।
এইরূপে কতলোক তব নিন্দা করে,
কদাচ না সহে নদি! আমার অন্তরে।
—শুনরে অবোধ নর? আমার বচন,
বিধাতার থাত নদী সুখের কারণ।
দেখাইলে যত দোষ সে সকল গুণ,
সহজে বুঝিতে যদি হইতে নিপুণ।
সর্ব্বোপরি উচ্চ কুলে জনম নদীর,
করিতে উর্ব্বরা ভূমি ভাঙ্গে নিজ তীর।
যে লয় শরণ, তারে করে স্থান দান,
ছোট বড় বিচার না করয়ে মহান।
শুনরে নিন্দক! সেই জল জন্তুগণে
করে কত উপকার, ভাব দেখি মনে।
নিজ বেগ মন্দ করি সুখের কারণ,
তটিনী বঙ্কিমভাবে করয়ে গমন।
যবে সতী পতিপাশে করে অভিসার,
তখন কি করে মূঢ়! পথের বিচার।
যে পথে যাইলে হয় মহতের সঙ্গ,
তারে বল নীচ পথ, একি জব রঙ্গ।

সুখ হেতু বিধাতার সৃষ্টি সমুদয়,
পরম গহন তাহা, কে করে নিশ্চয়।
অতএব হিত কথা করহ শ্রবণ,
না বুঝে করোনা কারু দোষ দরশন।—
অয়ি নদি! তবগুণ কত কব আর,
পর-উপকার হেতু জনম তোমার।
যে দেশ ভূষিত নয় তোমার প্রবাহে,
সে দেশে করিতে বাস মন নাহি চাহে।
তোমার সলিল পানে জীবন জুড়ায়,
অবগাহে তব জলে তাপ দূরে যায়।
তোমার শীকরহর মারুত নিয়ত
উপকূলবাসিজনে সুখী করে কত।
আহা মরি তরঙ্গিণি! দিবসের শেষে,
কত শোভা হেরি বসি তব তীরদেশে।
বিমল সলিল বহে কুল ফুল স্বরে,
সুরঙ্গে তরঙ্গমালা তায় খেলা করে।
দুধারে হরিত বর্ণ ভূমি তৃণময়,
ধবল প্রবাহ মাঝে সুশোভিত হয়।
আহা মারি কি সুষমা অতি মনোলোভা,
নীলাকাশে হয় যেন ছায়াপথশোভা।

মিশরাদি দেশ তব নিতান্ত আশ্রিত,
বিধিমতে কর তুমি তাহাদের হিত।
তব করে তাহাদের জীবন মরণ,
তাই মা বলিয়া তারা করে সম্বোধন।