কবিতাকুসুমাঞ্জলি/প্রভাত
প্রভাত।
অবসাদে অঙ্গ ঢালি রজনী এখন,
দেখ ধীরে ধীরে করে পশ্চিমে গমন।
পূর্ব্বদিকে আলো আর পশ্চিমে আঁধার,
জ্ঞান হয়, যেন যোগ গঙ্গা যমুনার।
নিশা গেল, কুমুদিনী মুদিল নয়ন,
ক্রমে ক্রমে অস্ত যায় যত তারাগণ,
সেই দুখে নিশানাথ যেন শোভাহীন,
দেখিতে দেখিতে দেখ হতেছে মলিন।
ডাকিছে কুক্কুটকুল, কাকা করে কাক,
আহরিতে মধু, মধুমাছি ছাড়ে চাক।
ফেউ ফেউরবে রবে ফেরুপাল বনে,
তা শুনে শ্বগণ ডাকে মিলিয়া স্বগণে।
কাকভয়ে দিবাভীত পলায়ন করে,
তরুর কোটরে কিম্বা গিরির গহ্বরে।
শাখীর শাখায় বসি যত পাখীগণ,
মধুস্বরে করে রব শ্রুতিরসায়ন।
ধ্বনিত দামামা প্রাতে ধনেশ ভবনে,
নিশার হইল শেষ, বলে সব জনে।
শুনিয়া প্রমাদ গণি উঠিতে লাগিল,
প্রবাস-গমনোদ্যত, যত জন ছিল।
দ্বিজাতি কুসুম আশে হইয়া আকুল,
দেবে বলি দেবে বলি তোলে নানা ফুল।
যত পান্থ পান্থশালা ত্যজিয়া তখন,
কল কল রবে সবে করিছে গমন।
নিদ্রাভঙ্গে রাজগণ আর কবিকুল,
অর্থচিন্তা করিতেছে হয়ে অনাকুল।
অবিকল তাল, বেণুবীণায় মিলিত,
ললিত ললিত গান শুনি জাগরিত,
হয়ে যত ধনিগণ সুখালসকায়,
না ছাড়ে ঘুমের ঘোর, পুনঃ নিদ্রা যায়।
জগতের কোন কায নাহি করে যারা,
কেনই না নিদ্রা যাবে হেনকালে তার।
কুসুমকোরকচয় বিকাশে তখন,
গুণ গুণ রবে তায় ধায় ভৃঙ্গগণ।
ঘাসের উপরি হেরি নিশার তুষার,
মুক্তাজাল বলি ভ্রম হয় সবাকার।
নীহারকণিকাবাহী শীতল পবন,
কুমুমসৌরভ হরি করে সঞ্চরণ।
পরশিলে সে সমীর শরীর জুড়ায়,
নূতন জীবন পায় যত জীব তায়।
লোহিত অরুণ নীল গগনে উঠিল,
জবা যেন যমুনার সলিলে ভাসিল।
দেখিতে দেখিতে ধরা পূর্ণ কলরবে,
নিজ নিজ কাযে যায় ত্বরা করি সবে।