বিষয়বস্তুতে চলুন

কবিতাকুসুমাঞ্জলি/প্রাসাদ ও কুটীর

উইকিসংকলন থেকে

প্রাসাদ ও কুটীর।

ওরে নীচাশয়, তৃণ-পর্ণ-ময়,
কুটীর! তোমারে কই,
আমার বচন, শুন দিয়া মন,
হিতকারী তব হই।
আমারে শরণ, কররে এখন,
ঘুচে যাবে তব দুখ,
মম উপাসনা, বিন এ যাতনা,
যাবে না, হবে না সুখ।
প্রবল অনিল, করকা সলিল,
হলে, ঘটে ঘোর দায়,
তৃণ পর্ণ যত, উড়ে অবিরত,
জলে গলে তব কায়।

তোমার ভিতরে, চীর-বাস পরে,
নীচ নরে করে বাস,
মর সদা দুখে, দেখে পরসুখে,
সহ কত উপহাস।
মম যে বিভব, তোমারে কি কব,
স্বপনের অগোচর,
যত ভাগ্য ধরে, মোরে সেবা করে,
আমি সর্ব্ব সুখাকর।
কুটীর! নিয়ত, হয়ে অনুগত,
থাক মম পদানত,
তাহাতে তোমার, যাবে দুখ ভার,
হবে মুখ নানামত।
কহিছে কুটীর, নত করি শির
শুনি প্রাসাদের বাণী,
সত্য বটে তব, অনেক বিভব
আছে, তাহা আমি জানি।
কিন্তু হর্ম্ম্যবর, বিস্তর অন্তর,
তোমায় আমায় আছে,
আমার সুষমা, অতি অনুপমা,
ও শোভা কি তার কাছে।

তোমার ভিতরে, সদা বাস করে,
কলুষ পিশাচ যত,
তাহাদের কাজ, হেরে হয় লাজ,
হয়ে থাকি জ্ঞান হত।
তাড়না গঞ্জনা, চাতুরী বঞ্চনা,
কত যে দেখহ তুমি,
সত্য দয়া ধর্ম্ম, আর হিত কর্ম্ম,
পরশে না তব ভূমি।
সদা কদাচারী, গুপ্ত বেশধারী,
নরে তব সেবা করে,
কিন্তু শান্ত মন, যত সুধী জন,
তোমারে না সমাদরে।
পুণ্যপথগামী, যদি তব স্বামী,
কভু কোন জন হয়,
নাহি ভাল বাসে, প্রাসাদ নিবাসে,
শেষে আসে মমাশ্রয়।
একি হে প্রাসাদ! তোমার প্রমাদ,
বিশদ করিয়া বল,
কেন অহঙ্কার, কর বার বার,
কি আছে তাহাতে ফল।

উচ্চশির ধর, যেন শৃঙ্গধর,
সুধা-সিত তব কায়—
দগ্ধমৃত্তিকার গঠন যাহার,
নানা সাজে শোভা পায়।
এইত তোমার, গর্ব্ব-মূলাধার,
ইহাতেই এত জাঁক,
সমদ বচন, করিলে শ্রবণ,
কারু নাহি সরে বাক্‌।
কোথা রবে তব, এ বৃথা বিভব,
কালে সব লয় হবে,
আর কত দিন দেখে মোরে দীন,
সগর্ব্ব বচন কবে।
তোমার আমার, হবে একাকার,
কোন ভেদ নাহি রবে,
কোথা রবে তুমি, হবে বনভূমি,
কেন বৃথা মদ তরে।