বিষয়বস্তুতে চলুন

কবিতাকুসুমাঞ্জলি/বক্ষ

উইকিসংকলন থেকে

বক্ষ।

বল বল ওহে তরু সুধাই তোমার,
কি সাধে বসতি কর পাপ জনপদে?
কেন বা যাতনা এত সহ পদে পদে?
কেন এত অনুরাগ তোমার হেথায়?

লোকালয়ে থাকি সদা কর উপকার,
সে গুণ মানিয়া মনে তোমায় কে মানে?
জাননা কি নরে নাহি কৃতজ্ঞতা জানে?
তথাচ সতত তোষ মন সবাকার।

নয়নের সুখ দাও হরিত বরণে,
কুসুম সৌরভে তুমি তোষ নাসিকায়,
সুমধুর ফলে দাও তৃপ্তি রসনায়,
শরীর শীতল কর পল্লবপবনে।

শ্রবণের সুখদানে তব শক্তি নাই,
তাই বুঝি ডাকি আন বিহঙ্গমগণে,
বসায়ে সেসবে নিজ পল্লব আসনে,
করাও সুরব,—যাহে শ্রবণ জুড়াই।


যখন পথিকগণ ভানুর কিরণে
ক্লান্তকায় হয়ে লয় তোমার আশ্রয়,
কতমতে তার সেবা করি সে সময়,
অতিথিসেবায় শিক্ষা দাও এ ভুবনে।

বসায়ে তাহারে তুমি শীতল ছায়ায়,
পল্লবীজনে কর শ্রম নিবারণ,
ফল উপহার দাও করিতে ভোজন,
নানা মতে তোষ তারে বিবিধ সেবায়।

কত কব, তরুবর! গুণস্তব তব,
যখন মানব হয় পীড়ায় আকুল,
দিয়া তায় নিজ অঙ্গ-ত্বক্‌পত্র মূল,
তখনি আরাম কর তার রোগ সব।

কাঠুরিয়া কাটে-যবে তরু! তব মূল,
ক্ষীরপাতছলে বৃথা করহ রোদন,
তথাচ আপন ভাব ছাড় না তখন,
ছায়াদান কর তারে হয়ে অনুকুল।


অরে অকৃতজ্ঞ নর পাষাণহৃদয়!
এ হেন তরুর মূল কাট অনায়াসে,
উপকার একবার মনে নাহি আসে,
বুঝেছি মানব সম নাহিক নির্দয়।