কর্ম্মফল/পঞ্চম পরিচ্ছেদ

উইকিসংকলন থেকে

পঞ্চম পরিচ্ছেদ।

 সতীশ। মা, এমন করে ত চলে না!

 বিধু। কেন কি হয়েচে?

 সতীশ। চাঁদনির কোটট্রাউজার পরে আমার বা’র হতে লজ্জা করে। সেদিন ভাদুড়ি সাহেবের বাড়ি ইভ্‌নিংপার্টি ছিল, কয়েকজন বাবু ছাড়া আর সকলেই ড্রেসসুট পরে গিয়েছিল, আমি সেখানে এই কাপড়ে গিয়ে ভারি অপ্রস্তুতে পড়েছিলাম। বাবা কাপড়ের জন্য যে সামান্য টাকা দিতে চান তাতে ভদ্রতা রক্ষা হয় না।

 বিধু। জান ত সতীশ তিনি যা ধরেন ত। কিছুতেই ছাড়েন না! কত টাকা হলে তোমার মনের মত পোষাক হয়, শুনি।

 সতীশ। একটা মর্ণিংসুট আর একট লাউঞ্জসুটে একশে টাকার কাছাকাছি লাগবে। একটা চলনসই ইভনিংড্রেস দেড়শো টাকার কমে কিছুতেই হবে না!  বিধু। বল কি সতীশ! এ ত তিনশো টাকার ধাক্কা। এত টাকা—

 সতীশ। মা, ঐ তোমাদের দোষ। এক ফকিরি করতে চাও সে ভাল, আর যদি ভদ্রসমাজে মিশ্‌তে হয় তবে অমন টানাটানি করে চলে না। ভদ্রতা রাখতে গেলে ত খরচ করতে হবে, তার ত কোন উপায় নেই। সুন্দর বনে পাঠিয়ে দাও না কেন সেখানে ড্রেস কোটের দরকার হবে না।

 বিধু। তা ত জানি, কিন্তু—আচ্ছা তোমার মেসো ত তোমাকে জন্মদিনের উপহার দিয়ে থাকেন এবারকার জন্য একটা নিমন্ত্রণের পোশাক তাঁর কাছ হতে জোগাড় করে নাওনা। কথায় কথায় তোমার মাসীর কাছে একটু আভাস দিলেই হয়।

 সতীশ। সে ত অনায়াসেই পারি কিন্তু বাবা যদি টের পান আমি মেসোর কাছ হতে কাপড় আদায় করেছি তা হলে রক্ষা থাকবে না।

 বিধু। আচ্ছা সে আমি সামলাতে পারব। (সতীশের প্রস্থান) ভাদুড়ি সাহেবের মেয়ের সঙ্গে যদি সতীশের কোন মতে বিবাহের যোগাড় হয় তাহলেও আমি সতীশের জন্য অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি। ভাদুড়ি সাহেব ব্যারিষ্টার মানুষ বেশ দু দশ টাকা রোজগার করে। ছেলেবেলা হতেই সতীশ ত ওদের বাড়ী আনাগোনা করে, মেয়েটি ত আর পাষাণ নয়, নিশ্চয় আমার সতীশকে পছন্দ করবে! সতীশের বাপ ত এ সব কথা একবার চিন্তাও করেন না, বলতে গেলে আগুণ হ’য়ে ওঠেন, ছেলের ভবিষ্যতের কথা আমাকেই সমস্ত ভাবতে হয়।