কল্কিপুরাণ (ভুবনচন্দ্র বসাক)/বিষকন্যার কথা
বিষকন্যার কথা।
শ্বশুরে বিদায় কোরে নৃপগণ সনে।
এলেন কাঞ্চনী পুরে হরষিত মনে॥
বিষধরে রক্ষা করে পুরী মনোহরে।
শত শত নাগকন্যা বিচরণ করে॥
বর্ণ হারে বর্ণিবারে রূপ অতুলনা।
সেনা নৃপ সনে স্তব্ধ কল্কির ভাবনা॥
বেষ্টিত চন্দন বৃক্ষে মণিতে খচিত।
অপূর্ব্ব রচিত পুরী দেবের রমিত॥
কত শত রাজা এসে গেছে রসাতল।
হইল আকাশ-বাণী “একা কল্কি চল”॥
শুনে কল্কি শুরু সনে অশ্ব আরোহণে।
গিয়ে দেখে বিষকন্যা ভাবে মনে মনে॥
হেরিলে সে রূপ ছটা মুখি-মন টলে।
হাঁসিতে ফাঁসিতে কন্যা রমানাথে বলে॥
এত দিনে প্রভো! বুঝি বিধি অনুকুল।
সুরাসুর নরে নাহি তব সমতুল॥
কল্কি বলে কও কন্যা কাহার ললনা।
কি কারণে বন্দী হেন প্রকাশে বল না॥
বিষময় আঁখি দ্বয় রূপের মাধুরী।
হেরি নাই হেন রূপ কোরো না চাতুরী॥
বিষকন্যা বলে প্রভো! কর অবধান।
চিত্রগ্রীব-ভার্য্যা আমি সুলোচনা নাম॥
বড় ভালবাসে পতি প্রাণের সমান।
আমোদ করিতে লয়ে রম্য স্থানে যান॥
এক দিন দিব্য রথে বসি দুই জন।
গন্ধমাদনের কুঞ্জে, করিনু গমন॥
কত যে রসের কথা হচ্চে দুই জনে।
হেনকালে দেখা হলো যক্ষ মুনি সনে॥
লম্বাখাঁদা মোটা কটা অতি কদাকার।
তরুণ যৌবনে আমি নিন্দা করি তাঁর॥
মোর ঠাট্টা শুনে মুনি মোরে দিল শাপ।
বিষনেত্রে কাঞ্চনীতে ভোগো গিয়ে পাপ॥
তদবধি পতিহীনা নাগিনীর সনে।
বিষনেত্রা হয়ে থাকি সদা চিন্তি মনে॥
কোন্ তপস্যার বলে হেরি আপনায়।
হইল অমৃত চক্ষু ধরি তব পায়॥
চলিই আনন্দে প্রভো! পতির সদন।
ঋষি-শাপ মন্দ নয়, প্রভু দরশন॥
এত বলি আলো করি চড়ি দিব্য যান ॥
চলিল বৈকুণ্ঠ ধামে পেয়ে পরিত্রাণ॥
সেই রাজে দিয়ে রাজ্য কল্কি ভগবান্।
মরুকে অযোধ্যা দিয়ে মথুরায় যান॥
দেবাপিরে পঞ্চ স্থান সূর্য্যেরে মথুরা।
ভায়েরে মগধ, পায় বঙ্গাদি জ্ঞাতিরা॥
বিশাখযূপেরে কল্কি দিল কঙ্কদেশ।
পুত্ত্রগণে কর্ব্ব চোল দ্বারকা প্রদেশ॥
বাপে দিয়ে ধন রত্ন শম্ভলেতে যান।
পদ্মা রমা সনে সুখে সময় কাটান॥
শস্য পূর্ণা বসুমতি সত্যযুগময়।
বার ব্রত যাগ যজ্ঞ বেদ পাঠ হয়॥
ইতি বিষকন্যার কথা।