কল্কিপুরাণ (ভুবনচন্দ্র বসাক)/বিষ্ণুপূজা পদ্ধতি
বিষ্ণুপূজা পদ্ধতি।
শুক বলে কমলে শিবের চেলানী।
ধরাধামে পুণ্যবতী তুমি ধন্যা জানি॥
যা শুনিলে পাব মুক্তি ভক্তির আধার।
আনন্দে ভাসিবে মন তারিবে সংসার॥
নিজে শিব বলে সেই বিষ্ণুপূজা বিধি।
পাইতে বাসনা বড় এ অমূল্য নিধি॥
এইখানে শুনি যদি তোমার বদনে।
জানিব সৌভাগ্য বড় তরিব শ্রবণে॥
বিষ্ণুপূজা বিধি সেই শুকে পদ্মা কয়।
গরু গুরু ব্রহ্মহত্যা পাপে মুক্ত হয়॥
সারিয়ে আহ্নিক স্নান প্রাতে শুচি হয়ে।
পূর্ব্বদিকে বসিবেক হস্ত পদ ধুয়ে॥
অঙ্গন্যাস ভূতশুদ্ধি বিধি অনুসারে।
দিয়ে অর্ঘ্য তন্ময় হইবে তার পরে॥
বিষ্ণুরে ডাকিয়া মনে রাখি হৃদাসনে।
মূল মন্ত্রে কোরো পূজা অর্ঘ্য আচমনে॥
রসন ভূষণ আদি দিয়ে উপচার।
বিষ্ণুর চরণে ধ্যান কোরো বার বার॥
এই মন্ত্রে স্তুতি পাঠ করিবেক পরে।
রোগ শোক ভয় ভ্রান্তি সমুদায় হরে॥
রক্তবর্ণ নখ যাঁর সেই গঙ্গাজল।
রয়েছে আঙ ল পত্রে করে বলমল॥
লক্ষ্মীর আধার যিনি ভক্তে ঘেরে রয়।
সেই বিষ্ণু-পাদপদ্মে লইনু আশ্রয়॥
মণিতে শোভিত যাঁর চরণ দুখানি।
নূপুর বাজিছে গতি রাজহংস জিনি॥
পরিধান পীতাম্বর লম্বা কোঁচা তায়।
উড়েছে নিশান যেন কিবা শোভা পায়॥
ত্রিবক্ত্র সোণার বালা কি সাজে চরণ।
সেই হরি-পাদ-পদ্মে লতেছি শরণ॥
শোভে ছিল যেই পান্না গরুড়ের গলে।
তাই শোভে শ্রীহরির জঘন যুগলে॥
গরুড়ের ঠোঁটে যেই রক্তবর্ণ মণি।
কি শোভা পেতেছে রাঙ্গা চরণ দুখানি॥
আনন্দে ভাসায় যাহা ভক্তের নয়ন।
স্মরিতেছি নেই আমি দুইটি জঘন॥
উৎসবে উজ্জ্বল বড় কাঁধের বসন।
সেই মোটা জানু দুটো করিনু স্মরণ॥
যেখানে জীবের ঘর দোছটেতে ঘেরা।
বিধি যম কাম পাত্র যেথা পত্র পড়া॥
খগপৃষ্ঠে যান সদা সেই নারায়ণ।
বাহ্য কটিদেশ সদা করিছি চিন্তন॥
কি শোভা ত্রিবলী যাতে নাভি সরোবরে।
ফুটে ব্রহ্মা জন্ম পদ্ম কিবা মনোহরে॥
নাঁড়ী নদী রস দ্বারে অন্ত্র সিন্ধু ঝরে।
বিপুল ব্রহ্মাণ্ডাধারে সূক্ষ্ম রোম ধরে॥
কে জানে ডাগর কত কি রূপ কেমন।
উদর আমি করিনু স্মরণ॥
বিরাজে কৌস্তুভরাজি শ্রীবৎস লাঞ্ছিত।
কমলা কুচ কুঙ্কুম হারে বিভূষিত॥
এমন যে হৃদ্পদ্ম শোভিত মালায়।
করিনু স্মরণ আমি একচিত্তে তাঁয়॥
যেই হাতে দৈত্যকুল কর বিনাশন।
সে দক্ষিণ বাহু দুটি করিহ স্মরণ॥
পদ্ম শঙ্খ বিভূষিত বাম ভুজ দ্বয়।
মনেতে স্মরণ করি লক্ষ্মী মনোময়॥
সুশোভিত বনমালা পরম সুন্দর।
সদা ধ্যান করি সেই কণ্ঠ মনোহর॥
রাঙা পদ্ম সম ওষ্ঠ চঞ্চল নয়ন।
দিবা নিশি স্মরি সেই কমল বদন॥
মদনের সৃষ্টি যাতে দেখে হৃদি ফাটে।
সদা স্মরি আমি সেই ভ্রুপত্র ললাটে॥
মকর কুণ্ডল কানে কিবা মনোহরে।
স্মরি সেই কর্ণ দুটি সতত অন্তরে॥
সুচিত্র তিলক শোভে প্রশস্ত ললাটে।
ব্রহ্মের আশ্রয় সেই স্মার অকপটে॥
রুচির চিকুর জাল কাল মেঘ সম।
হৃদ্পদ্ম হেরে স্মরি সেই অনুপম॥
মোহন মূরতি শোভিত পীত বসনে।
রবি শশি জ্বলে যেন রইনু শরণে॥
সেবিতে না জানি দীন দেহ পাপময়।
শোক মোহে পূর্ণ, ত্রাণ কর দয়াময়॥
বিষ্ণুর এ আদ্য মূর্ত্তি যেবা ধ্যান করে।
শুদ্ধ মুক্ত হয়ে সেই ব্রহ্মানন্দে হরে॥
শিবপ্রোক্ত এই স্তব পদ্মাবতি বলে।
ইহ পরলোকে এতে চতুর্ব্বৰ্গ ফলে ॥
এই স্তব পড়ে যেবা পাপ নাশ হয়।
মহামোহে মুক্তি পায় জানিবে নিশ্চয়॥