ক্ষণিকা/মাতাল

উইকিসংকলন থেকে

মাতাল

ওরে মাতাল, দুয়ার ভেঙে দিয়ে
পথেই যদি করিস মাতামাতি,
থলিঝুলি উজাড় করে ফেলে
যা আছে তোর ফুরাস রাতারাতি,
অশ্লেষাতে যাত্রা করে শুরু
পাঁজিপুঁথি করিস পরিহাস,
অকারণে অকাজ লয়ে ঘাড়ে
অসময়ে অপথ দিয়ে যাস,
হালের দড়ি নিজের হাতে কেটে
পালের ’পরে লাগাস ঝোড়ো হাওয়া,
আমিও, ভাই, তোদের ব্রত লব-
মাতাল হয়ে পাতাল-পানে ধাওয়া॥

পাড়ার যত জ্ঞানীগুণীর সাথে
নষ্ট হল দিনের পরে দিন,
অনেক শিখে পক্ক হল মাথা;
অনেক দেখে দৃষ্টি হল ক্ষীণ।

কত কালের কত মন্দ ভালো
বসে বসে কেবল জমা করি,
ফেলা-ছড়া ভাঙা-ছেঁড়ার বোঝ
বুকের মাঝে উঠছে ভরি ভরি—
গুঁড়িয়ে সে-সব উড়িয়ে ফেলে দিক
দিক্-বিদিকে তোদের ঝোড়ো হাওয়া।
বুঝেছি, ভাই, সুখের মধ্যে সুখ
মাতাল হয়ে পাতাল-পানে ধাওয়া॥

হোক রে সিধা কুটিল দ্বিধা যত,
নেশায় মোরে করুক দিশাহারা,
দানোয় এসে হঠাৎ কেশে ধরে
এক দমকে করুক লক্ষ্মীছাড়া!
সংসারেতে সংসারী তো ঢের,
কাজের হাটে অনেক আছে কেজো,
মেলাই আছে মস্তবড়ো লোক-
সঙ্গে তাঁদের অনেক সেজো মেজো,
থাকুন তাঁরা ভবের কাজে লেগে-
লাগুক মোরে সৃষ্টিছাড়া হাওয়া!
বুঝেছি, ভাই, কাজের মধ্যে কাজ
মাতাল হয়ে পাতাল-পানে ধাওয়া।

শপথ করে দিলাম ছেড়ে আজই
যা আছে মোর বুদ্ধি বিবেচনা,
বিদ্যা যত ফেলব ঝেড়ে-ঝুড়ে
ছেড়ে-ছুড়ে তত্ত্ব-আলোচনা!
স্মৃতির ঝারি উপুড় করে ফেলে
নয়নবারি শূন্য করি দিব,
উচ্ছ্বসিত মদের ফেনা দিয়ে
অট্টহাসি শোধন করি নিব।
ভদ্রলোকের তক্‌মা-তাবিজ ছিঁড়ে
উড়িয়ে দেবে মদোন্মত্ত হাওয়া!
শপথ করে বিপথ-ব্রত নেব-
মাতাল হয়ে পাতাল-পানে ধাওয়া