বিষয়বস্তুতে চলুন

গল্পের বই/নেক্‌ড়ে ও ছাগলছানা

উইকিসংকলন থেকে

নেক্‌ড়ে ও ছাগলছানা।

 এক বনে একটা বুড়ো ছাগল থাকে, তার সাতটা ছানা। ছাগল রােজ ছানাগুলােকে বাড়ীতে রেখে তাদের জন্য খাবার আন্‌তে বনের ভিতর যায়। একদিন সে তাদের বল্‌ল, “দেখ, এই বনে একটা ভারি দুষ্ট নেক্‌ড়ে বাঘ এসেছে তার পা গুলো কালো কালো, আর সে খুব মােটা গলায় কথা বলে। আমি তোমাদের জন্য খাবার আন্‌তে যাচ্ছি। যতক্ষণ না আমি ফিরে আসি, ততক্ষণ তােমরা খুব ভাল করে দরজা বন্ধ করে রেখো। কাউকে দরজা খুলে দিওনা। আর তােমরা খুব লক্ষ্মী ছেলে হয়ে থেকো, দুষ্টুমি করো না, কেউ কাউকে গুঁতিয়ে দিও না, লাথি মেরো না।” এই ব’লে ছাগল বনে চলে গেল, আর ছানাগুলি বেশ করে দরজা এঁটে ঘরের ভিতর ব’সে রইল।

 খানিক বাদে কে যেন এসে দরজা ঠেলে খুব মােটা গলায় বল্ল, ‘দরজা খােল। আমি তােমাদের মা। দেখ, তােমাদের জন্য কত জিনিষ এনেছি।” ছানারা তার গলা শুনেই বুঝতে পেরেছে যে এটা নিশ্চয় নেকড়ে বাঘ। তাই তারা বল্‌ল, “না আমরা দরজা, খুল্‌ব না। তুমি কখনো আমাদের মা নও। আমাদের মার বুঝি অমন বিচ্ছিরি মােটা গলা!” কাজেই নেকড়ে বাঘ আর ঘরে ঢুক্‌তে পারল না; তাকে ফিরে যেতে হল।

 ফিরে গিয়েই সে খুব কতগুলো খড়ি খেয়ে ফেল্‌ল; সে শুনেছিল যে খড়ি খেলে গলা সরু হয়! খড়ি খেয়ে আবার ছাগলছানাদের ঘরের দরজায় এসে খুব সরু গলায় আস্তে আস্তে বল্ল, “বাছারা, দরজা খােল, দরজা খােল। তােমাদের মা এসেছে। তােমাদের জন্য কত খাবার এনেছে দেখ।”

 বাছারা বল্‌ল, “হুঁ, তােমার গলাত মার মতনই বটে, কিন্তু তােমার পা দেখি।”

 নেকড়ে বাঘ জানালার ফাঁক দিয়ে তার কালো পা ঢুকিয়ে দিল। অমনি বাচ্ছারা বলে উঠ্‌ল, “না না, তুমি ত মা নও। মার পা কেমন সুন্দর শাদা।” কাজেই বাঘকে আবার ফিরে যেতে হল। কিন্তু ছাগল ছানা খাবার লােভ সে কিছুতেই ছাড়তে পাছেনা। তাই সে এক মুদির দোকানে গিয়ে মুদিকে বল্ল, “আমার পায় খানিকটা ময়দা মাখিয়ে দাও ত।” মুদি ত বাঘ দেখে ভয়ে তাড়াতাড়ি তার পায়ে ময়দা মাখিয়ে দিল।

 তখন দুষ্টু নেকড়ে বাঘ আবার গিয়ে ছাগলের বাড়ীর দরজায় ঠেলে সরুগলায় বল্ল “তোমাদের মা এসেছে। দরজা খােল।” বাচ্ছারা যখন পা দেখ্‌তে চাইল, তখন সে জানালা দিয়ে তার ময়দা মাখান শাদা পা ঢুকিয়ে দিল।

 তখন ছাগল ছানারা, তাদের মা এসেছে মনে ক’রে দরজা যাই খুলেছে, অমনি দেখে যে, ও বাবা! নেকড়ে বাঘ! ভয়েতে কেউ খাটের নীচে, লেপের তলায়, কেউ বাক্সের পিছনে, কেউ উনুনের ভিতরে, যে যেখানে পার্‌ল লুকিয়ে পড়্‌ল। কিন্তু লুকোলে আর কি হবে? নেকড়ে বাঘ সকলকে খুঁজে বার করে একেবারে আস্ত আস্ত গিল্‌তে লাগল। তার বড় ক্ষিদে পেয়েছিল কিনা, তাই আর চিবিয়ে খাবার সময় হ’ল না। কেবল সকলের ছোট্ট ছানাটি যে উনুনের ভিতর লুকিয়ে ছিল, তাকে বাঘ খুঁজে পেল না।

 বুড়ী ছাগল বাড়ী এসে দেখে, কি সর্ব্বনাশ! দরজা খোলা, খাট, আলমারী, বাক্স, সব উল্টো পাল্টা হয়ে আছে, বিছানা বালিশ ঘরময় ছড়ান রয়েছে, আর ছানারা কেউ নাই। তাদের নাম ধরে সে কত ডাক্‌ল, কেউ সাড়া দিল না; তার পর যখন ছোট ছানার নাম ধরে ডাক্‌তে লাগ্‌ল তখন উনুনের ভিতর থেকে সে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে এলো। তার কাছে সব কথা শুনে বুড়ী ছাগল চীৎকার করে কাঁদতে লাগ্‌ল। তারপর ছোটছানাকে নিয়ে বনের ভিতর চলে গেল।

 বনের ভিতর গিয়ে তারা দেখ্‌ল যে নেকড়ে বাঘ ছয়টি ছাগলছানা গিলে, পেট ঢাককরে, খুব নাকডাকিয়ে ঘুমচ্ছে। তাকে দেখে বুড়ী ছাগলের মনে হল যেন তার পেটের ভেতর কি নড়ছে। বুড়ী অমনি ছুটে গিয়ে বাড়ী থেকে ছুঁচ সুতো আর কাঁচি নিয়ে এলো, আর আস্তে আস্তে কাঁচি দিয়ে নেকড়ে বাঘের পেট কাট্‌তে লাগ্‌ল! পেট কাটতেই ছয়টা ছাগলছানা লাফিয়ে লাফিয়ে তার ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো। তাদের কিনা আস্ত গিলে ফেলেছিল। তাই তারা তখনও মরেনি।

 তখন তারা সব ইঁট পাথর এনে নেকড়ে বাঘের পেটের ভিতর পূরে পেট সেলাই করে দিল। তারপর তারা নাচ্‌তে নাচ্‌তে বাড়ি চ’লে গেল।

 আর নেকড়ে বাঘের হয়েছে কি,—তার পেটের ভিতর সেলাই ইঁটপাথর, তাতে পেটের জল সব শুষে নিয়েছে, আর তার বড্ড জল তেষ্টা পেয়েছে। সে তখন ঘুম থেকে উঠে পুকুরে জল খেতে গেল। পেট এমনি ভারি হয়েছে যে তা’ নিয়ে ভাল করে চল্‌তেই পারছে না; তবু সে অনেক কষ্টে জলে গিয়ে নাম্‌ল। তারপর যেই মাথা নীচু করে জল খেতে যাবে, অমনি পেটের ভারে উল্টে জলে পড়ে গেল, আর উঠ্‌তে পারল না।