গ্রহ-নক্ষত্র/চাঁদে মানুষ আছে কি?

উইকিসংকলন থেকে

চাঁদে মানুষ আছে কি?

একে-একে চাঁদের অনেক কথাই বলা গেল। ইহাতেই কিন্তু সব কথা শেষ হইল না। যাহা বাকি রহিল সে সব খুব জটিল কথা, তোমরা যখন বড় হইবে তখন সেগুলি জানিবে। এখন তোমাদের হয় ত মনে হইতেছে, চাঁদে পাহাড়-পর্ব্বত আছে, মাটি আছে, সূর্য্যের আলো আছে, জ্যোৎস্না আছে, রৌদ্রের তাপও আছে, তাহা হইলে কি সেখানে মানুষ নাই? তোমাদের মত অনেক ছোট ছেলে আমাকে এই কথাই বার বার জিজ্ঞাসা করিয়াছে। তাই মনে হইতেছে, তোমরাও বুঝি জানিতে চাও, চাঁদে মানুষ আছে কি না।

 চাঁদে যে মানুষ নাই, এমন কি পৃথিবীর ছোট জীবজন্তু, গাছপালাও নাই, তাহা বড় বড় পণ্ডিতেরা স্থির করিয়া ফেলিয়াছেন। কাজেই দেখ, কোনো দিন আমরা যে চাঁদের খবর চাঁদের রাজ্যের লোকের মুখে শুনিব তাহার আশা নাই। সেখানে হিমালয়ের মত উঁচু উঁচু পাহাড় আছে, এখানকার মত সূর্য্যের আলো আছে, অনেক আগ্নেয় পর্ব্বত আছে, কিন্তু সেখানে জীবজন্তু বা গাছপালা বাঁচিয়া থাকিতে পারে না। কাজেই সেখানে এখানকার মত বড় সহর, বড় ইস্কুল-কলেজ, বড় বন-জঙ্গল কিছুই নাই। জনমানবশূন্য একটা মরুভূমির মত চাঁদ দিবারাত্রি আকাশপানে তাকাইয়া আছে। চাঁদে বাতাস নাই, এবং জল নাই, তাহা আগেই তোমাদিগকে বলিয়াছি। কাজেই সেখানে মেঘ হয় না এবং বৃষ্টি পড়ে না। এ অবস্থায় কেমন করিয়া সেখানে গাছপালা থাকিতে পারে, তোমরাই একটু ভাবিয়া দেখ। এমন সোনার চাঁদে যদি জল ও বাতাস থাকিত, তাহা হইলে হয় ত আমাদের মত মানুষ সেখানে বাস করিত এবং হয় ত এতদিনে চাঁদের মানুষদের সঙ্গে বিনা-তারের টেলিগ্রাফে বা অন্য কোনো উপায়ে কথাবার্ত্তাও চালাচালি হইত। চাঁদের মাটি-পাথর পৃথিবীর মাটি-পাথরের মত হইলেও সেখানে জীব-জানোয়ারের থাকিবার উপায় নাই। যদি কেহ জোর করিয়া আমাদিগকে চাঁদে লইয়া যায়, তাহা হইলে দম আটকাইয়া আমাদের প্রাণ বাহির হইয়া পড়িবে; ইহাতেও যদি কোনো গতিকে বাঁচা যায়, তাহা হইলে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় নিশ্চয় মৃত্যু হইবে। জল নাই—তরি-তরকারী ধান চাল গম কিছুই নাই, তবে কি থাইয়া বাঁচা যাইবে বল দেখি? তাহার উপরে আবার আগুন জ্বালিবার কোনো উপায় নাই। কারণ একটুও বাতাস নাই; বাতাস না থাকিলে ত আগুন জ্বলে না।

 তার পর দেখ, আমরা দু-চার জন যে চাঁদে গিয়া কথাবার্ত্তা গল্পগুজব করিব তাহারো উপায় নাই; কারণ চাঁদে বাতাস নাই, কাজেই শব্দও হইতে পারে না। তুমি চাঁদে গিয়া খুব করিয়া চীৎকার কর, একটুও শব্দ হইবে না; হাজারটা কামান এক সঙ্গে ছুঁড়িলেও একটু শব্দ হইবে না। ভাবিয়া দেখ, চাঁদের রাজ্যটা কি ভয়ানক স্থান! যুগযুগান্তর ধরিয়া চাঁদের উপরকার সকলি স্তব্ধ ও নিশ্চল। কি ভয়ানক অবস্থা! এই জন্যই জ্যোতিষীরা চাঁদকে মৃত উপগ্রহ বলিয়াছেন। এমন সুন্দর চাঁদের এমন দুরবস্থার কথা শুনিলে বাস্তবিকই দুঃখ হয়।