বিষয়বস্তুতে চলুন

গ্রাম্য উপাখ্যান/রামনিধি ঘোষ

উইকিসংকলন থেকে

রামনিধি ঘোষ।

 বৈদ্যেরা বলেন উনপঞ্চাশ প্রকার বায়ু আছে, কিন্তু আমরা বলি উনপঞ্চাশকে বর্গ করিলে যত হয় অর্থাৎ দুই হাজার চারি শত এক প্রকার বায়ু আছে। কোন খোনার সঙ্গীতের প্রতি প্রবলানুরাগ ছিল কিন্তু তাহাকে সঙ্গীত তত আসিত না। সে একদিন এক মাঠে নির্জ্জনে গান গাহিতে গাহিতে সানুনাসিক স্বরে বলিল “আমারই ভাল লাগ্‌ছে না ত অন্য লোকের ভাল লাগ্‌বে কি।” এই ব্যক্তি আপনার গাওনা এত নিকৃষ্ট জ্ঞান করিয়াও সর্ব্বদা সঙ্গীতবিরত হইত না। এরূপ সঙ্গীতানুরাগ একপ্রকার বায়ু। বীণাপাণির পায়ে ক্রমিক মাথা খোঁড়া হইতেছে, কিন্তু বীণাপাণি অনুগ্রহ করিতেছেন না, তথাপি কবিতা লিখিতে হইবে; ইহা এক প্রকার বায়ু। সংবাদ-পত্র লিখিয়া কোন আয় হইতেছে না অথচ ঘরের খেয়ে বনের মহিষ তাড়াইতে হইবে ইহা আর একপ্রকার বায়ু। কেহ কেহ বৃহৎ পুস্তক লিখিতে পারেন না, কিন্তু অসংখ্য পুস্তিকা প্রকাশ করিতেছেন, চটীর পর চটী উড়াইতেছেন; কেন উড়াইতেছেন, তাহার কারণ বুঝা যায় না; ইহা আর এক প্রকার বায়ু। এইরূপ বায়ু ধরিতে গেলে বায়ুর সংখ্যা দুই হাজার চারি শত একের বরং অধিক হইবে, কম হইবে না। এই সকল দৃষ্টান্ত একবিষয়ী বায়ুর (Monomania) দৃষ্টান্ত। এই এক বিষয়ী বায়ুর অনেক আশ্চর্য্য আশ্চর্য্য উদাহরণ শুনা গিয়াছে। বিলাতে নিয়ম আছে কোন ব্যক্তি উন্মাদগ্রস্ত হইলে তাঁহার উত্তরাধিকারী রাজসন্নিধানে তাঁহার মনের অবস্থা বিষয়ে তত্ত্বানুসন্ধান প্রার্থনা করিয়া বিচারক সমীপে যদি তাঁহার মনের অসুস্থতা প্রমাণ করিতে পারেন তাহা হইলে তাঁহার বিষয় সম্পত্তি প্রাপ্ত হয়েন। ইংলণ্ডে এইরূপ কোন বিকলমানস সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির সম্বন্ধে এইরূপ বিচারক নিযুক্ত হইয়াছিল। বিচারকেরা তাঁহাকে এক সহস্র প্রশ্ন করিলেন, তিনি সহজ লোকের ন্যায় সকল প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন তথাপি উহাঁর মনোবিকার প্রমাণিত হইল না। বিচারকেরা তাঁহার উত্তরাধিকারী মিথ্যা অভিযোগ আনিয়াছে বলিয়া তাহাকে ভর্ৎসনা করিতে লাগিলেন। কিন্তু উক্ত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি আদালতের রীত্যনুসারে প্রশ্নোত্তর পত্রে সহি করিবার সময় আপনার নাম না লিখিয়া জিসাস্ ক্রাইষ্ট বলিয়া সই করিলেন। তিনি মনে করিয়াছিলেন যে তিনি যীশুখৃষ্ট হইয়াছেন। কোন ব্যক্তির ভৃত্য নিজে গাড়ু, হইয়াছে মনে করিয়া তাহার প্রভু কুঠী হইতে ফিরিবার সময়ে আপনার মস্তকের উপর একখানি গামছা রাখিয়া এবং গাড়ুর নলের মত ডান হাত আপনার নাকে সংলগ্ন করিয়া প্রভুর প্রতীক্ষায় বসিয়া থাকিতে দৃষ্ট হইয়াছিল। সে এইরূপ মধ্যে মধ্যে করিত। কোন ব্যক্তি হঠাৎ একবিষয়ী বায়ু দ্বারা আক্রান্ত হইয়াছিলেন। তিনি প্রত্যুষে উঠিয়া দেখিলেন তাঁহার মাথা নাই। সকল বিষয়ে সজ্ঞান ব্যক্তির মত আচরণ করিতেছেন। কিন্তু মাথা কোথা গেল মাথা কোথা গেল এই বলিয়া ব্যতিব্যস্ত হইলেন। আমরা এইরূপ উচ্চ বায়ুর অনেক দৃষ্টান্ত দিতে পারি, কিন্তু আমাদের বর্ত্তমান প্রস্তাবের সে উদ্দেশ্য নহে। সামান্য বায়ুরোগ যাহাকে বলে বর্ত্তমান প্রস্তাবে তাহা বিবৃত করা আমাদিগের উদ্দেশ্য। সে বায়ু রোগের অন্য নাম স্নায়ুদৌর্ব্বল্য। তাহার প্রধান লক্ষণ অমূলক উদ্বেগ, অমূলক আশঙ্কা ও অমূলক সন্দেহ। ইহার সহিত শিরোভ্রমণ বা মাথা ঘোরা ও বুক দুর দুর সংযুক্ত থাকে। যদি কেহ দরজা ঝনাৎ করিয়া বন্ধ করিল এই রোগগ্রস্ত ব্যক্তি তাহাতে ভয়ে আকুল হয়েন। যদি তিনি অপর কোন ব্যক্তিকে রাস্তায় দৌড়িয়া যাইতে দেখেন তাহা হইলে তাহার বুক্ গুর গুর করে। এই রোগগ্রস্ত কোন ব্যক্তি এক তেতলার ছাদের উপর বসিয়া আমাদিগকে বলিয়াছিলেন, “আমার ভয় হইতেছে এট তেতলার বাটী পাছে হঠাৎ পড়িয়া যায়।” এইরূপ রোগগ্রস্ত আর এক ব্যক্তি সর্ব্বদা আশঙ্কা করিতেন যে ছাদের নিম্নভাগ হইতে একটা ইট তাঁহার মাথার উপর খসিয়া পড়িবে। আহারের সঙ্গে কোন অনিষ্টকর দ্রব্য মিশ্রিত হইবার কোন সম্ভাবনা না থাকিলেও এরূপ রোগগ্রস্ত ব্যক্তিরা মনে করেন যে তাহার সঙ্গে তাহা মিশাইয়া পড়িয়াছে। এই রোগগ্রস্ত ব্যক্তিদিগের সর্বদা অকারণ ভয় ও অকারণ সন্দেহ। এই রোগের অবস্থার পর অবস্থা আছে। ইহার চরম অবস্থা শূন্যে অসংখ্য বিকট মূর্ত্তি দেখা। কিন্তু এই পীড়ার সকল অবস্থাতে জ্ঞান থাকে। রোগী কখন জ্ঞান হারায় না। ইহা আরও যন্ত্রণার কারণ হইয়া উঠে। স্পষ্ট উন্মাদাবস্থায় লোকে জ্ঞান হারায়, যাতনা অধিক অনুভব করিতে পারে না, কিন্তু এই পীড়াতে জ্ঞান থাকাতে রোগী অতিশয় যন্ত্রণা অনুভব করে। এই পীড়া নিরাকার পীড়া। অন্য পীড়া ইহার সহিত সংযুক্ত না থাকিলে লোকে কখন মনে করিতে পারিত না যে উক্ত রোগগ্রস্ত ব্যক্তির কোন পীড়া আছে। বেশ খাচ্চে, দাচ্চে, বেড়াচ্চে, পুষ্ট হইতেছে কিন্তু রোগ আছে। অতএব এপ্রকার পীড়ার সহিত লোকের সহজে সহানুভূতি হয় না, কিন্তু তজ্জন্য যন্ত্রণা কম হয় না। এইরূপ পীড়াগ্রস্ত কোন ব্যক্তির বন্ধু তাঁহাকে বলিয়াছিলেন তোমার পীড়া কল্পনা-মূলক, বাস্তব পীড়া নহে। তাহাতে তিনি উত্তর করিয়াছিলেন যে, দার্শনিক বিচার দ্বারা প্রমাণ করা যাইতে পারে যে কেবল এরোগ কেন সমস্ত জগৎই কল্পনা-মূলক। আমরা উপরে বলিয়াছি যে, এ রোগের বিলক্ষণ যন্ত্রণা আছে। এই রোগাক্রান্ত আমাদিগের কোন গুরুজন বলিতেন, যে অতি বড় শত্রুর যেন এ পীড়া না হয়। কোন কোন অপ্রকৃত কবি যে পদ্য লিখেন, তাহা প্রকৃত পদ্য নহে, তাহা পাগলাগদ্য(Prose run mad) কিন্তু কোন কোন ব্যক্তি আদৌ পদ্য লিখেন না, কেবল গদ্য লিখেন। কিন্তু তাঁহারা প্রকৃত কবি। গদ্যে প্রকৃত কবিতার একটা দৃষ্টান্ত ফরাসিস ভাষায় ফেনেল রচিত টেলিমেকস। বাদল গ্রামে একটী কবি জন্মিয়াছেন। তাঁহার নিজের মতে না হউক অন্য অনেকের মতে তিনি পদ্য না লিখিয়াও প্রকৃত কবি। তিনি নিজে এই রোগগ্রস্ত। তিনি এই রোগের যন্ত্রণা বিষয়ে একটী সুন্দর আখ্যায়িকা বানাইয়াছেন সে আখ্যায়িকাটী এই,—ব্রহ্মা ”যখন সকল রোগের সৃষ্টি করিলেন, তখন বায়ু রোগেরও সৃষ্টি করিলেন, কিন্তু রায়ুরোগকে প্রবল পরাক্রান্ত অর্থাৎ মারাত্মক করিলেন না, তাহাতে বায়ুরোগ ক্ষুব্ধ হইয়া করযোড়ে ব্রহ্মার নিকট বলিলেন, “ঠাকুর! আমার কি দুষ্কৃতি যে সকল রোগকে আপনি প্রবল পরাক্রান্ত করিলেন কিন্তু আমাকে করিলেন না। অন্য রোগে মানুষ মারিয়া ফেলিতে পারে, কিন্তু আমি তাহা পারি না। ব্রহ্মা উত্তর করিলেন, “বা! হে! তুমি যে শরীরে প্রবেশ করিবে: সে সর্ব্বদাই মরিয়া থাকিবে। তাহার আর মৃত্যুর আবশ্যক করে না।” যতই জগতে সভ্যতা বৃদ্ধি হইতেছে ততই মানসিক পরিশ্রমের আতিশয্যজনিত এই রোগের বৃদ্ধি হইতেছে। আমরা “ইংরাজিতে Recreations of a Country Parson নামক একখানি পুস্তক পড়িয়াছি। ঐ গ্রন্থের রচয়িতা এক জন পাদ্রি। তাহাতে লেখক বলিয়াছেন যে ইংলণ্ডে এই রোগ বিলক্ষণ বৃদ্ধি হইতেছে। তিনি লিখিয়াছেন যে এই রোগগ্রস্ত তাঁহার কোন বন্ধু পাছে কোন মন্দ খবর পান বলিয়া ডাকের চিঠি খুলিতে ভয় করিতেন। এই রোগগ্রস্ত তাঁহার আর এক বন্ধু একবার রেলের গাড়িতে যাইবার সময় ঠিকানায় গাড়ী পৌঁছিলে টিকিটকালেক্টর তাঁহার নিকট টিকিট চান, জামার পকেটে শীঘ্র টিকিট না পাওয়াতে বেচারা কাঁপিতে আরম্ভ করিল। ঐ পাদ্রি সাহেব বলেন যে ইংলণ্ডের ভূতপূর্ব্ব প্রধান মন্ত্রী (Sir Robert Peel) সার রবার্ট পীলের এই রোগ ছিল। তিনি এক দিন লণ্ডনের পশুশালা দেখিতে গিয়াছিলেন; হঠাৎ একটা বানর তাহার কাঁদের উপর লাফাইয়া পড়াতে তিনি মূর্চ্ছিত হইয়া পড়িয়াছিলেন। পাদ্রি সাহেব বলেন যে এরূপ সভ্য লোক অপেক্ষা অক্ষুন্ন-স্নায়ু কঠিনচিত্ত জুলুরা ভাল। তাহারা কোন বিপদকে বিপদ জ্ঞান করে না।

 উন্মাদ রোগ মস্তিষ্ক সম্বন্ধীয়। ইহা অজীর্ণ (Dyspepsia) জনিত। অজীর্ণ দুই প্রকার; এক প্রকার অজীর্ণ অধোগামী, আর এক প্রকার অজীর্ণ উর্দ্ধগামী। অধোগামী অজীর্ণে উদরাময় পীড়া জন্মে, আর উর্দ্ধগামী অজার্ণে মাথা গরম করিয়া এই রোগ উৎপাদন করে। ইংলণ্ডের সুরসিক পাদ্রী সিড্‌নি স্মিথ (Sydney Smith) বলেন যে পৃথিবীর অর্দ্ধেক দুঃখ অজীর্ণ রোগ হইতে উৎপন্ন। তিনি বলেন—“আমার কোন বন্ধু অনেক রাত্রিতে আহার করেন। তিনি বিলক্ষণ মসলাওয়ালা ঝোল খান, তাহার পর একটা বৃহৎ গল্লা চিঙ্‌ড়ি খান এবং তাহার পর অম্বল খান। পরিশেষে এই সকল অত্যুৎকৃষ্ট বিচিত্র দ্রব্য কয়েকটীকে আপনার উদর মধ্যে মদ্য দ্বারা গুলিয়া ফেলেন। তাহার পর দিন প্রাতে গিয়া দেখি তিনি তাঁহার বসতবাটী বিক্রয় করিয়া পল্লীগ্রামে বসতি করিতে সংকল্প করিতেছেন; তাঁহার জ্যেষ্ঠা কন্যার শরীরের অবস্থা জন্য অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হইয়াছেন তাহার বায় ক্রমশঃ বৃদ্ধি হইতেছে, সময়ে পল্লীগ্রামে না পলাইলে তাঁহার আর নিস্তার নাই। এই সমস্ত উদ্বেগের কারণ সেই বৃহৎ গল্লা চিঙ্গড়িটী। যখন ভারাক্রান্ত প্রকৃতি সময়ে ঐ দাড়াওয়ালা জিনিষ হজম করিয়া ফেলিয়াছে, তখন গিয়া দেখি সে তাঁহার কন্যা সুস্থ হইয়াছে এবং তাঁহার অবস্থা ভাল হইয়াছে, এবং সকল পল্লিগ্রামীয় ভাব তাঁহার মন হইতে চলিয়া গিয়াছে। এইরূপে অগ্নিদগ্ধ পনির আহার জন্য কত পুরাতন বন্ধুতা বিনষ্ট হয় এবং অনেক দিন ধরিয়া নুণ দিয়া জারানো কঠিন মাংসাহার কত লোকের মনে আত্মহত্যা- প্রবৃত্তি জন্মায়। শরীরের অসুখ মনের অসুখ উৎপাদন করে এবং এক গ্রাস দুষ্পাচ্য আহার বৃহদাকার দুঃখ উৎপাদন করে। মানবীয় সুখ মানবীয় শরীর-তত্ব-বিজ্ঞানের প্রতি এতদূর নির্ভর করে।” যতই সভ্যতা বৃদ্ধি হইয়া মানসিক পরিশ্রম বৃদ্ধি করে তত স্নায়ু দুর্ব্বল হইয়া অজীর্ণ উৎপাদন করে। সেই অজীর্ণ হইতে উক্ত প্রকার বায়ু রোগের উৎপত্তি হয়। সে কালের ভট্টাচার্য্য মহাশয়েরা সকাল বিকাল পরিশ্রম করিতেন মধ্যাহ্নে আহার করিয়া বিশ্রাম করিতেন, অষ্টমী প্রতিপদে পাঠ দিতেন না, সমস্ত বর্ষাকাল মেঘ গর্জ্জন জন্য পড়াইতেন না, কুড়ি পঁচিশ বৎসরে “ত্রৈলোক্য চিন্তামণি”[] নামক ন্যায়ের এক খানি টীকা লিখিতেন। কিন্তু এক্ষণে বাঙ্গালীদিগের মধ্যে যেরূপ মানসিক পরিশ্রম বৃদ্ধি হইয়াছে তাহাতে বিলক্ষণ উদ্বেগের কারণ হইয়াছে। এইরূপ মানসিক পরিশ্রম শীতদেশবাসী, আর্য্যজাতির প্রধান আহার গোমাংসভোজী, শক্ত হাড় লোক দিগেরই পোষায়। পাঠক অবশ্য গ্রীষ্মকালে কোন কোন দিনে অসংখ্য পিপীলিকাকে পালকবিশিষ্ট হইয়া উড়িতে দেখিয়াছেন। সেইরূপ এক্ষণে অসংখ্য গ্রন্থ অসংখ্য সম্বাদপত্র ও অসংখ্য সাময়িক পত্রিকা চতুর্দ্দিকে উড়িতেছে। এই সকল গ্রন্থ ও পত্রিকা লেখকদিগকে আমরা বলি, “এখন এইরূপ করিতেছেন, কিন্তু ‘এক রোজ মজা মালুম হোগা।’ একদিন এইরূপ প্রভূত মানসিক পরিশ্রম জন্য আপনাদিগকে কষ্ট পাইতে হইবে।” “পিপীড়ার পালক উঠে মরিবার তরে।” পাঠক এইস্থল পাঠ করিয়া বলিতে পারেন “আপনারাও ত সংবাদপত্র সম্পাদক।” তাহার উত্তর এই যে পালক উঠা সংক্রামক রোগ। আমাদিগের দুর্ভাগ্যবশতঃ আপনাদিগের রোগের দ্বারা আমরা সংক্রামিত হইয়াছি। এক্ষণে আমাদিগের একমাত্র প্রবোধের কারণ এই যে দশ জনের ভাগ্যে যাহা আছে আমাদেরও ভাগ্যে তাহাই হইবে।

 বায়ূরোগের ঔষধ কি? আয়ুর্ব্বেদ কর্ত্তারা বলেন, “নচ তৈলাৎ পরং নাস্তি ঔষধং মারুতাপহঃ” “বায়ূ রোগের তৈল অপেক্ষা ঔষধ আর নাই” “মধুরৈঃ শীতলৈঃ পথ্যৈঃ জামাতৃবৎ সেবয়েৎ” “মিষ্টি ও শীতল দ্রব্য দ্বারা এই রোগকে জামাতার ন্যায় সেবা করিবে” কিন্তু আমাদিগের মতে এই রোগ নিবারণের প্রধান উপায় পরিমিত আহার করা, কোন দুষ্পাচ্য দ্রব্য ভক্ষণ না করা এবং রোগের প্রতি আত্মার বল নিয়োগ করা। এ রোগ যেমন আত্মার বলের অধীন এমন অন্য কোন রোগ নহে। একটা ইংরাজী-অধ্যায়ী চালাক বাঙ্গালী বালক এই রোগগ্রস্ত আমাদিগের কোন বন্ধুকে এই রোগের এমন একটী ঔষধ বলিয়া দিয়াছেন যে সে ঔষধের মত আর কোন ঔষধ নাই। সে তাঁহাকে বলিল “You should be angry with the disease” এই রোগের প্রতি বিলক্ষণ ক্রোধ করিবেন তাহা হইলে তাহা নিবারিত হইবে।” “কোন মতে আমার মনকে এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হইতে দিব না,’ এইরূপ দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ইহার প্রধান ঔষধ।” Recreations of a Country Parson বলেন যে এ রোগের প্রধান ঔষধ মানসিক পরিশ্রম যাহাতে না হয় এবং উৎকট শারীরিক পরিশ্রমও না হয় এরূপ কোন কার্য্যে সর্ব্বদা নিযুক্ত থাকা। এই রোগগ্রস্ত ব্যক্তিগণ শারীরিক পরিশ্রম করিতে অত্যন্ত পরাঙ্মুখ, কিন্তু  ইহাদিগের পক্ষে শারীরিক পরিশ্রম বিশেষ আবশ্যক। ইংরাজী কবি গ্রীন (Green,) এই রোগ সম্বন্ধে বলিয়াছেন— Fling but a stone, the giant dies.” “একটী মাত্র ঢিল ছোড়, অসুর মরিবে।” তিনি একটী সামান্য প্রস্তর দ্বারা বাইবেলে উল্লিখিত সামসন নামক দৈত্য বধের প্রতি ইঙ্গিত করিয়া এই কথা বলিয়াছেন। এই রোগগ্রস্ত কোন কোন ব্যক্তি একেবারে জীবনের কার্য্য পরিবর্ত্তন করাতে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করিয়াছেন। গ্রন্থ রচনা অথবা পত্রিকা সম্পাদন কার্য্য একেবারে ছাড়িয়া কোদাল ধরাতে অনেকে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করিয়াছেন। আমরা এক্ষণকার গ্রন্থকর্ত্তা ও পত্রিকা সম্পাদকদিগকে ইহা করিতে পরামর্শ দিই। তাঁহারা “অগ্রে আপনি ধরুন তাহার পর আমরা ধরিব।” এই কথা বলিতে পারেন তাহা আমরা স্বীকার করি। আমরা এ বিষয়ে কত বলিতে পারি তাহার সীমা নাই।

  1. “ত্রৈলোক্য চিন্তামণি” বায়ূরোগের একটী ঔষধ। আমরা এই নামটী আয়ুর্ব্বেদ হইতে ধার করিয়া ন্যায়ে খাটাইলাম।