বিষয়বস্তুতে চলুন

চাঁদের পাহাড়/দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

উইকিসংকলন থেকে

 গুহার মধ্যে ঢুকে শঙ্কর টর্চ্চ জ্বেলে (নতুন ব্যাটারি তার কাছে ডজন দুই ছিল) দেখলে গুহাটা ছোট, মেজেটাতে ছোট ছোট পাথর ছড়ানো, বেশ একটা ছোটখাটো ঘরের মত। গুহার এক কোণে ওর চোখ পড়তেই অবাক হয়ে রইল। একটা ছোট্ট কাঠের পিপে! এখানে কি করে এল কাঠের পিপে!

 এগিয়ে দুপা গিয়েই সে চমকে উঠল। গুহার দেওয়ালের ধার ঘেসে শায়িত অবস্থায় একটা সাদা নরকঙ্কাল, তার মুণ্ডটা দেওয়ালের দিকে ফেরানো। কঙ্কালের আশে পাশে কালো কালো থলে ছেড়ার মত জিনিষ, বোধ হয় সেগুলো পশমের কোটের অংশ। দুখানা বুট জুতো কঙ্কালের গায়ে এখনও লাগানো। একপেশে একটা মরচে-পড়া বন্দুক।

 পিপেটার পাশে একটা ছিপি-আঁটা বোতল। বোতলের মধ্যে একখানা কাগজ। ছিপিটা খুলে কাগজখানা বার করে দেখলে, তাতে ইংরিজিতে কি লেখা আছে।

 পিপেটাতে কি আছে দেখবার জন্যে যেমন সে সেটা নাড়াতে গিয়েচে, অমনি পিপের নীচে থেকে একটা ফোঁস ফোঁস শব্দ শুনে ওর শরীরের রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে গেল। নিমেষের মধ্যে একটা প্রকাণ্ড সাপ মাটী থেকে হাত তিনেক উঁচু হয়ে ঠেলে উঠল। বোধ হয়, ছোবল মারবার আগে সাপটা এক সেকেণ্ড দেরী করেছিল। সেই এক সেকেণ্ডের দেরী করার জন্যে শঙ্করের প্রাণ রক্ষা হোল। পরমুহূর্ত্তেই শঙ্করের .৪৫ অটোমেটিক কোল্ট গর্জ্জন করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ বিষধর 'স্যাণ্ড ভাইপার' এর মাথাটা ছিন্নভিন্ন হয়ে, রক্ত-মাংস খানিকটা পিপের গায়, খানিকটা পাথরের দেওয়ালে ছিটকে লাগলো। আলভারেজ ওকে শিখিয়েছিল, পথে সর্ব্বদা হাতিয়ার তৈরী রাখবে। এ উপদেশ অনেকবার তার প্রাণ বাঁচিয়েচে।

 অদ্ভূত পরিত্রাণ! সব দিক থেকেই। পিপেটা পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেল, সেটাতে অল্প একটু জল তখনও আছে। খুব কালো শিউ গোলার মত রং বটে, তবুও জল। ছোট পিপেটা উঁচু করে তুলে ধরে, পিপের ছিপি খুলে ঢক ঢক করে শঙ্কর সেই দুর্গন্ধ কালো কালির মত জল আকণ্ঠ পান করলে। তারপর সে টর্চ্চের আলোতে সাপটা পরীক্ষা করলে। পুরো পাঁচ হাত লম্বা সাপটা, মোটাও বেশ। এ ধরণের সাপ মরুভূমির বালির মধ্যে শরীর লুকিয়ে শুধু মুণ্ডটা ওপরে তুলে থাকে- অতি মারাত্মক রকমের বিষাক্ত সর্প।

 এইবার বোতলের মধ্যের কাগজখানা খুলে মন দিয়ে পড়লে। যে ছোট্ট পেন্সিল দিয়ে এটা লেখা হয়েচে- বোতলের মধ্যে সেটাও পাওয়া গেল। কাগজখানাতে লেখা আছে... “আমার মৃত্যু নিকট। আজিই আমার শেষ রাত্রি। যদি আমার মরণের পরে, কেঊ এই ভয়ঙ্কর মরুভূমির পথে যেতে যেতে এই গুহাতে আশ্রয় গ্রহণ করেন, তবে সম্ভবতঃ এই কাগজ তাঁর হাতে পড়বে।  আমার গাধাটা দিন দুই আগে মরুভূমির মধ্যে মারা গিয়েচে। এক পিপে জল তার পিঠে ছিল, সেটা আমি এই গুহার মধ্যে নিয়ে এসে রেখে দিয়েচি, যদিও জ্বরে আমার শরীর অবসন্ন। মাথা তুলবার শক্তি নেই। তার ওপর অনাহারে শরীর আগে থেকেই দুর্ব্বল।

 আমার বয়স ২৬ বৎসর। আমার নাম আত্তিলিও গাত্তি। ফ্লোরেন্সের গাত্তি বংশে আমার জন্ম। বিখ্যাত নাবিক রিওলিনো কাভালকান্তি গাত্তি- যিনি লেপাণ্টোর যুদ্ধে তুর্কীদের সঙ্গে লড়েছিলেন, তিনি আমার একজন পূর্ব্বপুরুষ।

 রোম ও পিসা বিশব্বিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছিলাম, কিন্তু শেষ পর্য্যন্ত ভবঘুরে হয়ে গেলাম সমুদ্রের নেশায়,— যা আমাদের বংশগত নেশা। ডাচ ইণ্ডিজ যাবার পথে পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে জাহাজ ডুবি হোল।

 আমরা সাতজন লোক অতিকষ্টে ডাঙা পেলাম। ঘোর জঙ্গলময় অঞ্চল আফ্রিকার এই পশ্চিম উপকূল। জঙ্গলের মধ্যে শেফুজাতির একগ্রামে আমরা আশ্রয় নিই এবং প্রায় দুমাস সেখানে থাকি। এখানেই দৈবাৎ এক অদ্ভূত হীরার খনির গল্প শুনলাম। পূর্ব্বদিকে এক প্রকাণ্ড পর্ব্বত ও ভীষণ আরণ্য অঞ্চলে নাকি এই হীরার খনি অবস্থিত।

 আমরা সাতজন ঠিক করলাম এই হীরার খনি যে করে হোক, বার করতে হবেই। আমাকে ওরা দলের অধিনায়ক করলে- তারপর আমরা দুর্গম জঙ্গল ঠেলে চললাম সেই সম্পূর্ণ অজ্ঞাত পার্ব্বত্য অঞ্চলে। সে গ্রামের কোন লোক পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে রাজী হোল না। তারা বলে, তারা কখনও সে জায়গায় যায় নি, কোথায় তা জানে না, বিশেষতঃ এক উপদেবতা নাকি সে বনের রক্ষক। সেখান থেকে হীরা নিয়ে কেউ আসতে পারবে না।

 আমরা দমবার পাত্র নই। পথে যেতে যেতে ঘোর কষ্টে বেঘোরে দু'জন সঙ্গী মারা গেল। বাকী চারজন আর অগ্রসর হতে চায় না। আমি দলের অধ্যক্ষ, গাত্তি বংশে আমার জন্ম, পিছু হটতে জানি না। যতক্ষণ প্রাণ আছে, এগিয়ে যেতে হবে এই জানি। আমি ফিরতে চাইলাম না।

 শরীর ভেঙ্গে পড়তে চাইচে। আজ রাত্রেই আসবে সে নিরবয়ব মৃত্যুদূত! বড় সুন্দর আমাদের ছোট্ট হ্রদ সেরিনো লাগ্রানো, ওরই তীরে আমার পৈতৃক প্রাসাদ, কাষ্টোলি রিওলিনি। এতদূর থেকেও আমি সেরিনো লাগ্রানোর তীরবর্ত্তী কমলালেবুর বাগানের লেবুফুলের সুগন্ধ পাচ্ছি। ছোট্ট যে গির্জ্জাটী পাহাড়ের নীচেই, তার রূপোর ঘণ্টার মিষ্টি আওয়াজ পাচ্ছি।

 না, এসব কি আবোল তাবোল লিখচি জ্বরের ঘোরে। আসল কথাটা বলি। কতক্ষণই বা আর লিখবো?

 আমরা সে পর্ব্বতমালা, সে মহাদুর্গম অরণ্যে গিয়েছিলাম। সে খনি বার করেছিলাম। যে নদীর তীরে হীরা পাওয়া যায়, এক বিশাল ও অতি ভয়ানক গুহার মধ্যে সে নদীর উৎপত্তি স্থান। আমিই সেই গুহার মধ্যে ঢুকে এবং নদীর জলের তীরে ও জলের মধ্যে পাথরের নুড়ির মত অজস্র হীরা ছড়ানো দেখতে পাই। প্রত্যেক নুড়িটী টেট্রাহেড্রন ক্রিষ্ট্যাল, স্বচ্ছ ও হরিদ্রাভ; লণ্ডন ও আমষ্টার্ডামের বাজারে এমন হীরা নেই।

 এই অরণ্য ও পর্ব্বতের সে উপদেবতাকে আমি এই গুহার মধ্যে দেখেচি- ধূনোর কাঠের মশালের আলোয়, দূর থেকে আবছায়া ভাবে। সত্যি ভীষণ তার চেহারা! জ্বলন্ত মশাল হাতে ছিল বলেই সেদিন আমার কাছে সে ঘেসেনি। এই গুহাতেই সে সম্ভবতঃ বাস করে। হীরার খনির সে রক্ষক, এই প্রবাদের সৃষ্টি সেই জন্যেই বোধ হয় হয়েচে।

 কিন্তু কি কুক্ষণেই হীরার সন্ধান পেয়েছিলাম এবং কি কুক্ষণেই সঙ্গীদের কাছে তা প্রকাশ করেছিলাম। ওদের নিয়ে আবার যখন সে গুহায় ঢুকি, হীরার খনি খুঁজে পেলাম না। একে ঘোর অন্ধকার, মশালের আলোয় সে অন্ধকার দূর হয় না, তার ওপরে বহুমুখী নদী, কোন স্রোতটার ধারা হীরার রাশির ওপর দিয়ে বইচে, কিছুতেই বার করতে পারলাম না আর।

 আমার সঙ্গীরা বব্বর, জাহাজের খালাসী। ভাবলে, ওদের ফাঁকি দিলাম বুঝি। আমি একা নেবো এই বুঝি আমার মতলব। ওরা কি ষড়যন্ত্র আঁটলে জানিনে, পরদিন সন্ধ্যাবেলা চারজনা মিলে অতর্কিতে ছুরি খুলে আমায় আক্রমণ করলে। কিন্তু তারা জানতো না আমাকে, আত্তিলিও গাত্তিকে। আমার ধমনীতে উষ্ণ রক্ত বইচে, আমার পূর্ব্বপুরুষ রিওলিনি কাভাল কান্তি গাত্তির, যিনি লেপাণ্টোর যুদ্ধে ওরকম বহু বর্ব্বরকে নরকে পাঠিয়েছিলেন। সাণ্টা কাটালিনার সামরিক বিদ্যালয়ে যখন আমি ছাত্র, আমাদের অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ Fencer এণ্টোনিও ড্রেফুসকে ছোরার ডুয়েলে জখম করি। আমার ছোরার আঘাতে ওরা দু'জন মরে গেল, দু'জন সাংঘাতিক ঘায়েল হোল, নিজেও আমি চোট পেলাম ওদের হাতে। আহত বদমাইস দুটোও সেই রাত্রে ভবলীলা শেষ করল। ভেবে দেখলাম এখন এই গুহার গোলক ধাঁধাঁর ভেতর থেকে খনি খুঁজে হয়তো বার করতে পারব না। তাছাড়া আমি সাংঘাতিক আহত, আমার সভ্যজগতে পৌঁছুতেই হবে। পূর্ব্বদিকের পথে ডাচ্ উপনিবেশে পৌঁছুবো বলে রওনা হয়েছিলুম। কিন্তু এ পর্য্যন্ত এসে আর অগ্রসর হতে পারলুম না। ওরা তলপেটে ছুরি মেরেছে, সেই ক্ষতস্থান উঠল বিষিয়ে। সেই সঙ্গে জ্বর। মানুষের কি লোভ তাই ভাবি। কেন ওরা আমাকে মারলে? ওরা আমার সঙ্গী, একবারও তো ওদের ফাঁকি দেওয়ার কথা আমার মনে আসে নি।

 জগতের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ হীরক খনির মালিক আমি, কারণ নিজের প্রাণ-বিপন্ন করে তা আমি আবিষ্কার করেচি। যিনি আমার এ লেখা পড়ে বুঝতে পারবেন, তিনি নিশ্চয়ই সভ্য মানুষ ও খৃষ্টান। তাঁর প্রতি আমার অনুরোধ, আমাকে তিনি যেন খৃষ্টানের উপযুক্ত কবর দেন। এই অনুগ্রহের বদলে ঐ খনির স্বত্ব আমি তাঁকে দিলাম। রাণী শেবার ধণভাণ্ডারও এ খনির কাছে কিছু নয়!

 প্রাণ গেল, যাক্, কি করবো? কিন্তু কি ভয়ানক মরুভূমি এ! একটা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক পর্য্যন্ত নেই কোনোদিকে! এমন সব জায়গাও থাকে পৃথিবীতে! আমার আজ কেবলই মনে হচ্চে, পপলার ঘেরা সেরিনো লাগ্রানো হ্রদ আর দেখবো না, তার ধারে যে চতুর্দ্দশ শতাব্দির গির্জ্জাটা, তার সেই বড় রূপোর ঘণ্টার পবিত্র ধ্বনি, পাহাড়ের ওপরে আমাদের যে প্রাচীন প্রাসাদ কাষ্টেলি রিওলিনি, মূরদের দুর্গের মত দেখায়...দূরে আমব্রিয়ার সবুজ মাঠ ও দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মধ্যে দিয়ে ছোট্ট ডোরা নদী বয়ে যাচ্ছে...যাক্, আবার কি প্রলাপ বকচি।

 গুহার দুয়ারে বসে আকাশের অগণিত তারা প্রাণভরে দেখচি শেষ বারের জন্যে।...সাধু ফ্রাঙ্কোর সেই সৌর স্তোত্র মনে পড়চেঃ- স্তুত হোন্ প্রভু মোর, পবন সঞ্চার তরে, স্থির বায়ু তরে, ভগিনী মেদিনী তরে, নীল মেঘ তরে, আকাশের তরে, সুদিন কুদিন তরে, দেহের মরণ তরে।

 আর একটা কথা। আমার দুই পায়ে জুতার মধ্যে পাঁচখানা বড় হীরা লুকানো আছে, তোমায় তা দিলাম হে অজানা পথিক বন্ধু। আমার শেষ অনুরোধটি ভুলো না। জননী মেরী তোমার মঙ্গল করুন।

কম্যাণ্ডার আত্তিলিও গাত্তি
১৮৮০ সাল। সম্ভবতঃ মার্চ্চ মাস।
* * * *
* * *

 হতভাগ্য যুবক!

 তার মৃত্যুর পরে সুদীর্ঘ ত্রিশ বৎসর চলে গিয়েচে, এই ত্রিশ বৎসরের মধ্যে এ পথে হয়তো কেই যায় নি, গেলেও গুহাটার মধ্যে ঢোকেনি। এতকাল পরে তার চিঠিখানা মানুষের হাতে পড়লো।

 আশ্চর্য্য এই যে কাঠের পিপেটাতে ত্রিশবছর পরেও জল ছিল কি করে?

 কিন্তু কাগজখানা পড়েই শঙ্করের মনে হোল, এই লেখায় বর্ণিত ঐটেই সেই গুহা- সে নিজে যেখানে পথ হারিয়ে মারা যেতে বসেছিল! তারপরে সে কৌতূহলের সঙ্গে কঙ্কালের পায়ের জুতো টান দিয়ে খসাতেই পাঁচখানা বড় বড় পাথর বেরিয়ে পড়লো। এ অবিকল সেই পাথরের নুড়ির মত, যা এক পকেট কুড়িয়ে অন্ধকারে গুহার মধ্যে সে পথে চিহ্ন করেছিল এবং যার একখানা তার কাছে রয়েচে। এ পাথরের নুড়ি তো রাশি রাশি সে দেখেচে গুহার মধ্যের সেই অন্ধকারময়ী নদীর জলস্রোতের নীচে, তার দুই তীরে! কে জানতো যে হীরার খনি খুঁজতে সে ও আলভারেজ সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে এসে, ছ’মাস ধরে রিখটারসভেল্ড পার্ব্বত্য অঞ্চলে ঘুরে-ঘুরে হয়রাণ হয়ে গিয়েচে— এমন সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে সে সেখানে গিয়ে পড়বে! হীরা যে এমন রাশি রাশি পড়ে থাকে পাথরের নুড়ির মতো— তাই বা কে ভেবেছিল! আগে এ সব জানা থাকলে, পাথরের নুড়ি সে দু-পকেট ভরে কুড়িয়ে বাইরে নিয়ে আসতো!

 কিন্তু তার চেয়েও খারাপ কাজ হয়ে গিয়েচে যে, সে রত্নখনির গুহা যে কোথায়, কোন্ দিকে তার কোনো নক্সা করে আনে নি বা সেখানে কোনো চিহ্ন রেখে আসে নি, যাতে আবার তাকে খুঁজে নেওয়া যেতে পারে। সেই সুবিস্তীর্ণ পর্ব্বত ও অরণ্য অঞ্চলের কোন্ জায়গায় সেই গুহাটা দৈবাৎ সে দেখেছিল, তাকি তার ঠিক আছে, না ভবিষ্যতে সে আবার সে জায়গা বার করতে পারবে? এ যুবকও তো কোনো নক্সা করেনি, কিন্তু সাংঘাতিক আহত হয়েছিল রত্নখনি আবিষ্কার করার পরেই, এর ভুল হওয়া খুব স্বাভাবিক। হয়তো এ যা বার করতে পারতো নক্সা না দেখে— সে তা পারবে না।

 হঠাৎ আলভারেজের মৃত্যুর পূর্ব্বের কথা শঙ্করের মনে পড়ল। সে বলেছিল— চল যাই, শঙ্কর, গুহার মধ্যে রাজার ভাণ্ডার লুকোনো আছে! তুমি দেখতে পাচ্চ না, আমি দেখতে পাচ্চি।  শঙ্কর গুহার মধ্যেই সেই নরকঙ্কালটা সমাধিস্থ করলে। পিঁপেটা ভেঙে ফেলে তারই দু’খানা কাঠে মরচে পড়া পেরেক ঠুকে ক্রুশ তৈরি করলে ও সমাধির ওপর সেই ক্রুশটা পুঁতলে। এ ছাড়া খৃস্টধর্মাচারীকে সমাধিস্থ করবার অন্য কোনো রীতি তার জানা নেই। তারপরে সে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলে, এই মৃত যুবকের আত্মার শান্তির জন্য।

 এসব শেষ করতে সারাদিনটা কেটে গেল। রাত্রে বিশ্রাম করে পরদিন আবার সে রওনা হল। কঙ্কালের চিঠিখানা ও হীরেগুলি যত্ন করে সঙ্গে নিল।

 তবে তার মনে হল, এই অভিশপ্ত হীরের খনির সন্ধানে যে গিয়েছে, সে আর ফেরেনি। আত্তিলিও গাত্তি ও তার সঙ্গীরা মরেছে, জিম কার্টার মরেছে, আলভারেজ মরেছে। এর আগেই বা কত লোক মরেছে তার ঠিক কি? এইবার তার পালা। এই মরুভূমিতেই তার শেষ, এই বীর ইটালিয়ান যুবকের মতো।