চিত্রা/চিত্রা
জগতের মাঝে কত বিচিত্র তুমি হে
তুমি বিচিত্র রূপিণী!
অযুত আলোকে ঝলসিছ নীল গগনে,
আকুল পুলকে উলসিছ ফুল-কাননে,
দ্যুলোকে ভূলোকে বিলসিছ চল-চরণে,
তুমি চঞ্চল-গামিনী।
মুখর নূপুর বাজিছে সুদূর আকাশে,
অলকগন্ধ উড়িছে মন্দ বাতাসে,
মধুর নৃত্যে নিখিল চিত্তে বিকাশে
কত মঞ্জুল রাগিণী।
কত না বর্ণে কত না স্বর্ণে গঠিত,
কত যে ছন্দে কত সঙ্গীতে রটিত,
কত না গ্রন্থে কত না কণ্ঠে পঠিত,
তব অসংখ্য কাহিনী!
জগতের মাঝে কত বিচিত্র তুমি হে
তুমি বিচিত্র রূপিণী!
অন্তর মাঝে শুধু তুমি একা একাকী
তুমি অন্তর ব্যাপিনী!
একটি স্বপ্ন মুগ্ধ সজল নয়নে,
একটি পদ্ম হৃদয় বৃন্ত-শয়নে,
একটি চন্দ্র অসীম হৃদয়-গগনে,
চারিদিকে চির-যামিনী।
অকুল শান্তি, সেথায় বিপুল বিরতি,
একটি ভক্ত করিছে নিত্য আরতি,
নাহি কাল দেশ, তুমি অনিমেষ মুরতি,
তুমি অচপল দামিনী।
ধীর গম্ভীর গভীর মৌন-মহিমা,
স্বচ্ছ অতল মিগ্ধ নয়ন-নীলিমা,
স্থির হাসিখানি উষালোক সম অসীমা,
অয়ি প্রশান্ত হাসিনী!
অন্তর মাঝে তুমি শুধু একা একাকী
তুমি অন্তরবাসিনী।
১৮ই অগ্রহায়ণ,
১৩০২।