ছাড়পত্র/ঐতিহাসিক

উইকিসংকলন থেকে

ঐতিহাসিক

অজি এসেছি তোমাদের ঘরে ঘরে—
পৃথিবীর আদালতের পরােয়ানা নিয়ে
তােমরা কি দেবে আমার প্রশ্নের কৈফিয়ৎ:
কেন মৃত্যুকীর্ণ শবে ভ’রলাে পঞ্চাশ সাল?
আজ বাহান্ন সালের সূচনায় কি তার উত্তর দেবে?
জানি! স্তব্ধ হয়ে গেছে তােমাদের অগ্রগতির স্রোত,
তাই দীর্ঘশ্বাসের ধোঁয়ায় কালাে করছে ভবিষ্যৎ
আর অনুশােচনার আগুনে ছাই হচ্ছে উৎসাহের কয়লা।
কিন্তু ভেবে দেখেছাে কি?
দেরি হয়ে গেছে অনেক, অনেক দেরি!
লাইনে দাড়ানাে অভ্যেস করােনি কোনােদিন,
একটি মাত্র লক্ষ্যের মুখখামুখি দাড়িয়ে
মারামারি করেছে পরস্পর,
তােমাদের ঐক্যহীন বিশৃঙ্খলা দেখে
বন্ধ হয়ে গেছে মুক্তির দোকানের ঝাপ।
কেবল বঞ্চিত বিহ্বল বিমূঢ় জিজ্ঞাসা-ভরা চোখে
প্রত্যেকে চেয়েছে প্রত্যেকের দিকে;
—কেন এমন হ’লাে?

একদা দুর্ভিক্ষ এলাে
ক্ষুধার ক্ষমাহীন তাড়নায়
পাশাপাশি ঘেঁষাঘেঁষি সবাই দাড়ালে একই লাইনে
ইতর-ভদ্র, হিন্দু আর মুসলমান
একই বাতাসে নিলে নিঃশ্বাস।
চাল, চিনি, কয়লা, কেরােসিন?
এ সব দুষ্প্রাপ্য জিনিসের জন্য চাই লাইন।

কিন্তু বুঝলে না মুক্তিও দুর্লভ আর দুমূল্য,
ভাররা জন্যে চাই চল্লিশ কোটির দীর্ঘ, অবিচ্ছিন্ন এক লাইন।

মূর্খ তােমরা
লাইন দিলেঃ কিন্তু মুক্তির বদলে কিনলে মৃত্যু,
রক্তক্ষয়ের বদলে পেলে প্রবঞ্চনা।
ইতিমধ্যে তােমাদের বিবদমান বিশৃঙ্খল ভিড়ে
মুক্তি উকি দিয়ে গেছে বহুবার।
লাইনে দাঁড়ানাে আয়ত্ত করেছে যারা,
সােভিয়েট, পােল্যাণ্ড, ফ্রান্স
রক্তমূল্যে তারা কিনে নিয়ে গেল তাদের মুক্তি
সব প্রথম এই পৃথিবীর দোকান থেকে।
এখনও এই লাইনে অনেকে প্রতীক্ষমান,
প্রার্থী অনেক; কিন্তু পরিমিত মুক্তি।
হয়তো এই বিশ্বব্যাপী লাইনের শেষে
এখনাে তােমাদের স্থান হ’তে পারে—
একথা ঘােষণা করে দাও তােমাদের দেশময় প্রতিবেশীর কাছে।
তারপর নিঃশব্দে দাড়াও এ লাইনে প্রতিজ্ঞা আর প্রতীক্ষা নিয়ে
হাতের মুঠোয় তৈরী রেখে প্রত্যেকের প্রাণ।
আমি ইতিহাস, আমার কথাটা একবার ভেবে দেখাে,
মনে রেখাে, দেরি হয়ে গেছে, অনেক অনেক দেরি।
আর মনে করাে আকাশে আছে এক ধ্রুব নক্ষত্র,
নদীর ধারায় আছে গতির নির্দেশ,
অরণ্যের মর্মরধ্বনিতে আছে আন্দোলনের ভাষা,
আর আছে পৃথিবীর চিরকালের আবর্তন॥