জীবনী কোষ/ভারতীয়-পৌরাণিক/শতাক্ষী
শতাক্ষী—
(১) দেবী দুর্গার এক নাম। দেবীপু-১২৭।
(২) দেবী আদ্যাশক্তির এক নাম। কোনও সময়ে শতবর্ষব্যাপী অনাবৃষ্টি নিবন্ধন জগৎ জলশূন্য হইলে, মুনিগণের প্রার্থনায় দেবী আদ্যাশক্তি অযোনিজারূপে উৎপন্না হন। তখন তিনি শতনেত্রদ্বারা মুনিগণকে অবলোকন করেন। সেইজন্য মানবগণ দেবীকে শতাক্ষী নামে অভিহিত করেন। মার্ক-৯১।
(৩) দুর্গম নামক অসুর দেবগণকে বশীভূত করিবার উদ্দেশ্যে, ব্রহ্মার আরাধনায় নিযুক্ত হন। ব্রহ্মা বর দিতে উপস্থিত হইলে, দুর্গম ব্রহ্মার নিকট হইতে সমুদয় বেদ যাঞ্ছা করেন এবং যাহাতে তিনি সকল দেবতাদিগকেই পরাজয় করিতে পারেন, সেইরূপ বর প্রার্থা করেন। ব্রহ্মা তাঁহার উভয় প্রার্থনাই পূরণ করেন। দুর্গম অসুর বেদ সকলের অধীশ্বর হওয়াতে, পৃথিবীতে বেদ বিলুপ্ত হইল এবং বেদাচার মূলক সমুদয় ক্রিয়াকর্ম্মাদিও লোপ পাইল। যাগযজ্ঞ সব বন্ধ হওয়াতে এবং তৎফলে অগ্নিতে ঘৃতাহুতির অভাব বশতঃ, বৃষ্টিরও অভাব হইল। শতবর্ষব্যাপী এইরূপ অনাবৃষ্টি হইলে, প্রাণীগণ সকলে মৃত্যুমুখে পতিত হইতে লাগিল। তাহা দেখিয়া ব্রাহ্মণগণ হিমালয়ের পার্শ্বদেশে গমনপূর্ব্বক, দেবী শিবানীর স্তব করিতে লাগিলেন। তাঁহাদের স্তবে সন্তুষ্ট হইয়া দেবী নিজ অদ্ভুতরূপে তাঁহাদের নিকট উপস্থিত হইলেন। সেই চতুর্হস্তা দেবী দক্ষিণ ভুজদ্বয়ে শরমুষ্টি ও কমল এবং বাম ভুজদ্বয়ে ক্ষুধা-তৃষ্ণাদি-নাশক-পুষ্পপল্লব-ফলমূলাদি ও মহা-শরাসন ধারণ করিয়াছিলেন। তাঁহার অনন্ত নেত্র সমুদয় হইতে, নয় দিবস নিরন্তর বৃষ্টি হইতে লাগিল এবং নদনদী সমূহ পুনরায় প্রবাহিত হইতে লাগিল। পূর্ব্বে দেবগণ দুর্গম অসুরের ভয়ে গিরিগুহাদিতে লুক্কায়িত ছিলেন। তাঁহারা পুনরায় বহির্গত হইয়া, তাঁহার স্তব করিতে লাগিলেন এবং তাঁহাকে শতাক্ষী বলিয়া অভিবাদন করিলেন।
হইয়া তাঁহাকে “রায়” উপাধি প্রদান পূর্ব্বক তাঁহাকে শ্রীহট্টের কাননগু ও দস্তিদার পদে নিযুক্ত করেন। কবিবল্লভের সুবিদ রায় ও শ্যাম দাস রায় নামে দুই পুত্র জন্মে। তন্মধ্যে সুবিদ রায় পিতৃপদ প্রাপ্ত হন। সুবিদ রায়ের পুত্র সম্পদ রায়, সম্পদ রায়ের পুত্র যাদব রায়। ইহাঁরা উভয়েই শ্রীহট্টের কাননগু ও দস্তিদার ছিলেন। নিঃসন্তান যাদব রায়ের পরে, শ্যাম দাস রায়ের পৌত্র, লক্ষ্মী নারায়ের পুত্র হরকৃষ্ণ রায় শ্রীহট্টের শাসনকর্ত্তা হইয়াছিলেন। হরকৃষ্ণ রায়ের কৃষ্ণ রায় নামে এক জ্যেষ্ঠ সহোদরও ছিলেন।
কবিরত্ন সরস্বতী—তাঁহার পিতা চক্রপাণি কায়স্থ এবং আসামের কামরূপের রাজা দুর্লভ নারায়ণের একজন রাজস্ব আদায়কারী ছিলেন। কবিরঞ্জন সরস্বতী তাঁহার পুত্র রাজ ইন্দ্রনারায়ণের সমসাময়িক ছিলেন। তিনি আসামী ভাষায় ‘জয়দ্রথ বধ’ কাব্য রচনা করেন।
কবিরাজ—একজন অসমীয়া কবি। তিনি জয়ন্তিয়া-রাজ কামদেবের সভাপণ্ডিত ছিলেন। তৎরচিত গ্রন্থের নাম ‘রাঘব পাণ্ডবীয়’। তিনি খ্রীঃ একাদশ শতাব্দীতে বর্ত্তমান ছিলেন।
কবিরাজ চক্রবর্ত্তী—তিনি আসামের অন্তর্গত কামরূপের অধিবাসী। তাঁহার রচিত জ্যোতীষ সম্বন্ধীয় ‘ভাস্বতী’ নামে একখানা গ্রন্থ আছে।
কবিশূর—রাঢ়দেশের একজন রাজা। তিনি খুব সম্ভব খ্রীঃ সপ্তম শতাব্দীর শেষভাগে দক্ষিণাঞ্চল হইতে আসিয়া রাঢ়দেশে একটি রাজ্য স্থাপন করেন। কবিশূরের পুত্র মাধবশূর। তৎপুত্র আদিশূর। (ইনি বাঙ্গালার অন্যতম প্রসিদ্ধ নরপতি আদিশূর নহেন।) এই গ্রন্থের শ্লোক সমূহ দ্ব্যর্থ বোধক। এক অর্থে রাঘববংশীয়দিগের এবং অপর অর্থে পাণ্ডবদিগের গৌরব গৃহীত হয়।
কবীন্দ্র—‘গোরক্ষবিজয়’ অথবা ‘মীনকেতন’ নামক গ্রন্থের রচয়িতা একজন কবি। গোরক্ষনাথের মাহাত্ম্য প্রচার জন্যই উক্ত গ্রন্থ রচিত হয়। গোরক্ষনাথ দেখ।
কবীর—মধ্যযুগে মুসলমান রাজত্বের সময়ে ভারতে অনেক ধর্ম্ম-সংস্কারক জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তাঁহাদের মধ্যে রামনন্দের শিষ্য কবীর একজন প্রধান। তাঁহার পরবর্ত্তী ধর্ম্ম সংস্কারকদের উপরও তাঁহার প্রভাব বহুল পরিমাণে বিস্তার লাভ করিয়াছিল। কবীর ১৩৯৮ খ্রীঃ অব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫১৮ সালে (মতান্তরে ১৪৫০) পরলোক গমন করেন। তিনি মুসলমানজাতীয় জোলার (তাঁতির) ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতার নাম নীরু ও মাতার নাম নীমা ছিল। মুসলমান আমলে অনেক হিন্দু তাঁতি মুসলমান হইয়া