জেবুন্নিসা বেগম/প্রথম পরিচ্ছেদ

উইকিসংকলন থেকে

জেবুন্নিসা বেগমের জন্ম এবং কুরান অভ্যাস

 ১০৪৮ হিজরী, ১৬৩৬ খৃষ্টাব্দ ১০ই শওয়ালের প্রাতে জেবুন্নিসা বেগম জন্মগ্রহণ করেন। মুগল সম্রাট শাহানশাহ মহীউদ্দীন ঔরঙ্গজেব আলম্‌গীরের পত্নী, শাহনৌআজ খাঁর দুহিতা দিল্‌রস্‌বানু বেগম তাঁহার জননী।

 প্রসবের পর মুগল বাদশাহগণের বেগমেরা সন্তান প্রতিপালন করিতেন না—কোন ধাত্রী স্তনদুগ্ধ পান করাইয়া সেই শিশুকে লালন পালন করিত। জেবুন্নিসা বেগমের জন্ম হইলে পর, মুগল রাজপরিবার-মধ্যে চিরপ্রচলিত উক্ত প্রথা অনুসারে “মিয়াবাই” নামে একজন মহিলার উপর তাঁহার প্রতিপালনের ভার অর্পিত হয়।

 উক্ত ধাত্রী নিষ্ঠাচারিণী ছিল। সে রোজা, নমাজ ইত্যাদি মুসলমান ধর্ম্মানুযায়ী সমস্ত নিয়ম রক্ষা করিয়া চলিত। প্রত্যহ প্রাতে সে যখন কুরান পাঠ করিত, অল্পবয়স হইলেও জেবুন্নিসা বেগম সে সময়ে তাহার নিকট বসিয়া একাগ্রচিত্তে কুরান পাঠ শুনিতেন।

 ঔরঙ্গজেব বাদশাহ তাঁহার দুহিতার এইরূপ কুরান শুনিবার আগ্রহ ধাত্রীর নিকট হইতে জানিতে পারিয়া, জেবুন্নিসা বেগম পঞ্চম বর্ষে পদার্পণ করিলে তাঁহাকে কুরান পাঠ করাইবার জন্য “মরিয়ম” নামক একজন স্ত্রী হাফেজকে নিযুক্ত করেন। এই অল্পবয়সেই তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করিয়া দুই বৎসর তিন মাসের মধ্যে সমস্ত কুরান কণ্ঠস্থ করিতে সক্ষম হন।

 এইরূপে জেবুন্নিসা বেগম বালিকা বয়সেই আদি হইতে অন্ত পর্য্যন্ত কুরান মুখস্থ করিয়া “হাফেজ” উপাধি লাভ করাতে ঔরঙ্গজেব বাদশাহ অতিশয় সন্তুষ্ট হন; এবং তাঁহার কন্যার এই কৃতিত্বের জন্য সসমারোহে এক উৎসবের অনুষ্ঠান করেন। সেই উপলক্ষে অনেক গরীব দুঃখীকে দীন, খয়রাত এবং সর্ব্বসাধারণকে ভোজ ও পারিভোষিক ইত্যাদি বিতরণ করা হইয়াছিল। তাহা ছাড়া জেবুন্নিসা বেগমের কুরান শিক্ষয়ত্রী হাফেজ মরিয়মও প্রচুররূপে পুরস্কৃত হইতে ত্রুটী হয় নাই।