টম্‌ খুড়ো/টমের বিক্রয় শুনিয়া অন্বেষণার্থে জর্জ্জ শিলবাইয়ের গমন

উইকিসংকলন থেকে

টমের বিক্রয় শুনিয়া অন্বেষণার্থে জর্জ্জ শিলবাইয়ের গমন।

 টমের বিক্রীত হইবার সময়ে জর্জ্জ শিলবাই আবাসে না থাকাতে এ সমস্ত বিষয় কিছুই অবগত ছিলেন না, পরে যে দিন ক্রীতদাস ব্যবসায়ি টমকে লইয়া যায়, সেই দিবসে বাটীতে প্রত্যাগমন করত সকল বিবরণ অবগত হইলেন। এবং তৎক্ষণাৎ অশ্বারোহণ করিয়া তাহার অন্বেষণার্থে যাত্রা করিলেন, পরে কিয়দ্দূর গমন করিয়া টম যে শকটারোহণ করিয়া যাইতেছিল, সেই শকট নিকটবর্ত্তী হইলে তদুপরি লম্ফ প্রদান করত তাহার গলদেশ ধরিয়া বিস্তর বিলাপ করিয়া বলিতে লাগিল। হায়! মানব হইয়া মানব জাতিকে বিক্রয় করা কি লজ্জাকর, যে যাহাই বলুক, এ বিষয়টি অতিশয় ঘৃণাকর বলিতে হইবে, তাহাতে টম কহিলেন, হে প্রিয় জর্জ্জ! দাসেরা মানব বলিয়া পরিগণিত হয় না, ইহারা পশু অপেক্ষাও অধম, তন্নিবন্ধন এরূপ করিয়াছে, যাহাহইক এক্ষণে তোমার সহিত সাক্ষাৎ হওয়াতে পরম আহ্লাদিত হইলাম, যে হেতুক তোমার সহিত সাক্ষাৎ না করিয়া যাওয়াতে আমার বক্ষঃস্থল বিদীর্ণ হইতেছিল, অধুনা বিপুল সন্তোষ লাভ করিলাম। পরে টম একবার পদ সঞ্চালন করাতে জর্জ্জ শিলবাই দেখিলেন, যে তাহার পাদদ্বয় নিগড়ে আবদ্ধ রহিয়াছে, তদ্দর্শনে অতিশয় দুঃখিত হইয়া বলিলেন, হায়! এ কি লজ্জার বিষয়, অনকেল টমের পাদদ্বয় নিগড়ে বদ্ধ করিয়াছে, ইহা প্রাণে সহ্য হয়, অতএব আমি ঐ নৃশংস বৃদ্ধ বণিককে প্রহার করিব। তাহাতে টম কহিলেন, প্রিয় জর্জ্জ! তুমি এরূপ উচ্চৈঃস্বরে কথা কহিও না, এবং বণিককেও প্রহার করিও না। কি জানি ইহা শ্রবণ করিয়া বণিক ক্রোধ পরবশ হইয়া আমাকে অধিক পীড়ন করিলে করিতে পারে, তন্নিমিত্তে নিষেধ করি, আপনি এরূপ করিবেন না, এবং এরূপ করাতেও আমার কোন বিশেষ সাহায্য করা হইবে না, এতচ্ছ্রবণে জর্জ্জ কহিলেন, ভাল, তুমি যাহা বলিলে তাহাইকেরিব, কিন্তু তোমার যে এ বিষয় ঘটিয়াছে, তাহা আবাসবাসীগণ কেহই আমাকে অগ্রে বলে নাই। কেবল টম লিনকন কর্ত্তৃক সকল বৃত্তান্ত অবগত হইয়াছি, অতএব তাহাদিগকে অবশ্য প্রহার করিব, তাহা না হইলে আমার মনের দুঃখ নিবারণ হইবে না। তাহাতে টম পুনরায় কহিলেন, আপনি ইহার কিছুই করিবেন না, ইহা করাতে আমার পক্ষে কোন উপকার দর্শিবে না, পরে জর্জ্জ শিলবাই কতকগুলিন ডালর বাহির করিয়া টমকে কহিলেন, আমি তোমার নিমিত্তে এই সকল ডালর আনিয়াছি, ইহা রজ্জুতে গ্রন্থিত করিয়া তোমার গলদেশে প্রদান করিতে অণ্টলূ, আদেশ করিয়াছেন। অতএব আমি সেইরূপ করিব, কিন্তু তুমি অতি প্রযত্ন সহকারে ব স্ত্রাচ্ছাদিত করত গোপন রাখিবে, যেন দুষ্ট বণিক তোমার নিকট হইতে কাড়িয়া না লইতে পারে, এবং ইহার প্রতি যখন দৃষ্টিপাত করিবে তখন আমি যে অর্থ সংগ্রহ করিয়া তোমাকে পুনরায় ক্রয় করিয়া লইয়া যাইব, এই বিষয়টি তোমার স্মৃতিপথে জাগরুক থাকিবে, যৎকালে অণ্টলূ আমাকে এই সকল কথা বলেন, তখন আমি তাঁহাকে বিস্তর প্রবোধ দিয়াছি, যে যদ্যপি আমার পিতা পুনরায় ক্রয় করিয়া না লইয়া যায়, তাহা হইলে এ বিষয় জন্য তাহাকে অতিশয় বিরক্ত করিব, এবং যাহাতে ইহা করেন বিলক্ষণরূপে তাহার উদ্যোগ পাইব। এই বলিয়া গ্রন্থিকৃত ডালর সকল টমের গলদেশে প্রদান করিলেন, তখন টম কহিলেন প্রিয় জর্জ্জ! তোমার পিতার বিষয়ে এরূপ কথা বার্ত্তা কহিও না, পিতা মাতার নিকট সর্ব্বক্ষণ উপস্থিত থাকিয়া প্রযত্ন সহকারে সেবা করিবে, এবং সাধ্যানুসারে তাহাদিগের আজ্ঞা পালনে যত্নবান হইবে। পিতামাতার তুল্য গুরু জগতীতলে আর কেহই নাই। বিশেষ মাতা সম স্নেহকারিণী কোথায় পাইবে? যে হেতুক নীতি শাস্ত্রে কথিত আছে যে মাতা যাহার গৃহে নাই তাহার গৃহ শূন্য অরণ্য স্বরূপ, আর দেখুন, পরমেশ্বর জগতে অনেক বস্তু দুই তিনবার প্রদান করিয়া থাকেন, পরন্তু মাতা একবার ব্যতীত আর প্রদান করেন না, সন্তানের বয়ঃক্রম শত বৎসর হইলেও মাতা তাহাকে বালকভাবে স্নেহ করিয়া থাকেন, এমন মাতাকে যে ব্যক্তি প্রতিপালন না করেন, তাহার মতন কুসন্তান আর দেখা যায় না। তাই বলি যা হাতে তাঁহারা সন্তোষ থাকেন, এমত কার্য্য সর্ব্বদাই করিবে, এবং তাঁহাদিগের সম খৃষ্টধর্ম্মপরায়ণ হইয়া কালযাপন করিবে, এই বলিয়া তাহার প্রতি স্নেহ ভাবে দৃষ্টিপাত করিয়া কহিলেন, এক্ষণে আমি বিদায় হইলাম, আপনিও গৃহে প্রত্যাগমন করুন, জর্জ্জ তখন পুনরায় অশ্বারোহণ করিয়া আবাসাভিমুখে যাত্রা করিলেন। টম যে পর্য্যন্ত ঘোটকের পদের শব্দ শুনিতে পাইলেন, সে পর্য্যন্ত সেই দিকে নেত্রপাত করিয়া রহিলেন।