টম্‌ খুড়ো/হারিকে লইয়া ইলাইজার পলায়ন

উইকিসংকলন থেকে
হারিকে লইয়া ইলাইজার পলায়ন।

 তৎকালে রজনী অতীব ঘোরা এবং কুজ্ঝটিকা ও তুযারে পথ ঘাট প্রচ্ছন্ন, নভোমণ্ডলে তারাগণের আলো ব্যতীত আর কোন আলোর সম্ভাবনা ছিল না, এমত সময়ে ইলাইজা আপন সন্তানের গাত্রে বসনাবৃত করত বক্ষঃস্থলে ধারণ পূর্ব্বক দ্বার উদ্ঘাটন করিয়া নিঃশব্দ পদসঞ্চারে বাটীর বাহির হইলেন, এবং দ্রুত গমনে পাছে কোন ব্যাঘাত জন্মে তন্নিমিত্তে ঐ বস্ত্রখানি আপন গলদেশে দৃঢ়রূপে বন্ধন করিলেন, পরে কিয়দ্দূর গমন পর্য্যন্ত হারি শঙ্কা প্রযুক্ত জাগরিত ছিল, অবশেষে নিদ্রা সমাগত দেখিয়া আপন মাতাকে কহিলেন, মাত! নিদ্রার প্রভাবে আমার কলেবর অবসন্ন হইতেছে, আপনি অনুমতি করিলে ক্ষণেককালের নিমিত্তে নিদ্রা যাই। তাহাতে তদীয় মাতা বলিলেন, যদ্যপি নিদ্রায় কাতর হইয়া থাক, তবে স্বচ্ছন্দে নিদ্রা যাও, তচ্ছ্রবণে সজল নয়নে বালকটি বলিলেন, আমি নিদ্রা যাইব বটে, কিন্তু দেখ যেন আমার সুষুপ্তাবস্থায় সেই কাল সম দাস ব্যবসায়ি আসিয়া ধৃত করিয়া লইয়া না যায়, তনয়ের এই কথা শ্রবণ করিয়া ইলাইজার কপোলদেশ নয়ননীরে ভাসমান হইল, এবং গদ্গদ বচনে বলিলেন, হে বৎস! নানাশার্দ্দূলে পরিবেষ্টিত অরণ্য মধ্যে নবপ্রসুত হরিণ শাবককে এবং ফণীময় সরসীতে ভেক নীচয়কে যিনি রক্ষা করিতেছেন, সেই সর্ব্বকারুণিক জগদীশ্বর তোমাকেও রক্ষা করিবেন চিন্তা কি, তুমি অনায়াসে নিদ্রা যাও, আমার প্রাণ থাকিতে তোমাকে ছাড়িব না। পরে মাতার স্কন্ধদেশে মস্তকটি রাখিয়া বালকটি সুখে নিদ্রা গেল, ক্ষণেককাল পরে রজনী প্রভাতা হইল দিবাকরের আগমনে পূর্ব্বদিগ আরক্তিমা বর্ণ দ্বিজকুল নিজ নিজ কুলায় পরিহার করত শাবকদিগের জন্য আহার অন্বেষণার্থে গমন করিতেছে, এমত সময়ে অনাথ বালক নিদ্রা হইতে গাত্রোত্থান করত বুভক্ষু হইয়া আপন মাতাকে কহিলেন, মাত! আমার অতিশয় ক্ষুধা হইয়াছে, আমাকে কিঞ্চিৎ আহার প্রদান করুন, তাহাতে তাহার মাতা ভূধরের অন্তরালে অধ্যাসীন হইয়া বস্ত্র হইতে কিছু খাদ্য বাহির করত তনয়কে প্রদান করিলেন, তিনিও হস্ত পাতিয়া গ্রহণ করত ভক্ষণ করিতে আরম্ভ করিলেন কিন্তু মাতাকে কিছু ভোজন করিতে না দেখিয়া সাতিশয় কাতর হইলেন, এবং স্বীয় কর দ্বয় দ্বারা মাতার গলদেশ ধারণ করিয়া বলিতে লাগিলেন, মাত! আপনি কিঞ্চিৎ আহার করুন, এই কথা বারম্বার বলাতে মাতা কহিলেন, বাছা! আমার আহারের জন্য কেন উদ্বিগ্ন হই তেছ, যে অবধি নৃশংস দাসব্যবসায়ির হস্ত হইতে ত্রাণ না পাও তদবধি আমি জল গ্রহণ করিব না। যাহাহউক এক্ষণে চল দ্রুত গতি হইয়া নদীতীরে গমন করি, এই বলিয়া রাজবর্ত্ম দিয়া অতিমাত্র বেগে নদ্যাভিমুখে গমন করিলেন।