টল্স্টয়ের গল্প/উপাসনা
উপাসনা
একজন বিশপ জাহাজে চড়িয়া দূরে সন্ন্যাসীদের এক মঠে যাইতেছিলেন। জাহাজে শত শত যাত্রী। সমুদ্র খুব স্থির, ঝড়-বৃষ্টি কিছুই নাই, আকাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন; হাওয়া খুব ভাল। যাত্রীরা অনেকেই ডেকের উপর বসিয়া—কেহ খাইতেছে; কেহ বা গল্পগুজব করিয়া সময় কাটাইতেছে। বিশপও ডেকের উপর আসিলেন; কিছুক্ষণ পায়চারী করিতে করিতে দেখিলেন যে, কয়েকজন লোক জাহাজের সাম্নের দিকে জড় হইয়া একজন জেলের কথা শুনিতেছে। জেলে সমুদ্রের দিকে আঙ্গুল দিয়া কি যেন বলিতেছিল। বিশপ থামিলেন; জেলে যে দিক্টা আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া দিয়াছিল সেই দিকে তাকাইলেন; কিন্তু দেখিলেন, কেবল সমুদ্র সূর্য্যের আলোকে চক্চক্ করিতেছে। তিনি আরও নিকটে গেলেন; তাঁকে দেখিয়া সকলে চুপ করিল এবং নমস্কার করিল।
বিশপ বলিলেন—“আমি তোমাদের বিরক্ত কর্ব না। এই লোকটি কি বল্ছিল তাই শুন্তে এসেছিলুম।”
সেখানে একজন ব্যবসাদার ছিল, সে বলিল—“এই জেলে আমাদের সন্ন্যাসীদের কথা বল্ছিল।”
বিশপ আর একটু সামনে গিয়া বাক্সর উপর বসিয়া একটু আশ্চর্যাভাবে বলিলেন—“কোন্ সন্ন্যাসী? আমার শুন্তে ভারি ইচ্ছে হচ্ছে। তুমি আঙ্গুল দিয়ে কি দেখাচ্ছিলে?”
জেলে ডান দিকে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া বলিল—“কেন, ঐ যে দূরে খুব ছোট্ট দ্বীপটা দেখা যাচ্ছে! ওখানেই মুক্তির জন্য সন্ন্যাসীরা বাস কর্ছেন।”
বিশপ বলিলেন—“কোথায় দ্বীপ? কই? না। আমি ত কিছুই দেখ্তে পাচ্ছিনে।”
জেলে বলিল—“ঐ যে খুব দূরে। আমার হাতের সোজা চেয়ে দেখুন। ঐ ছোট্ট মেঘখানা দেখ্তে পাচ্ছেন? ওর নীচে একটু বাঁ-দিকে যে একটা রেখার মত দেখা যাচ্ছে, ঐ হচ্ছে সেই দ্বীপ।”
বিশপ খুব নজর করিয়া দেখিলেন, কেবল চক্চকে সমুদ্রের ঢেউ দেখিলেন, বলিলেন—“কিছুই দেখ্তে পাওয়া যাচ্ছে না। সন্ন্যাসীরা কারা?”
জেলে বলিল—“তাঁরা খুব সাধু লোক। আমি তাঁদের কথা অনেক শুনেছি, কিন্তু পূর্ব্বে আর দেখতে পাই নি, কেবল গেলবারের আগের বার মাছ ধর্তে এসে হঠাৎ আমার নৌকো তাঁদের চড়ায় আট্কে গেল ভোরবেলা চল্তে চল্তে দেখ্লুম একটা মেটে বাড়ী, কাছে একজন বুড়ো মানুষ দাঁড়িয়ে। একটু পরেই ঘর থেকে আরও দুইজন লোক বেরিয়ে এলো। আমাকে তাঁরা খাওয়ালেন, নৌকো মেরামত ক’রে দিলেন। ”
বিশপ জিজ্ঞাসা করিলেন—“তাঁরা কি রকম?”
—“একজন খুব বেঁটে, তাঁর পিঠটা কুঁজো। তিনি খুব বুড়ো। পুরুষের মত পোষাক পরা, তাঁর বয়েস একশো হবে। কিন্তু মুখখানি সব সময়েই হাসি-মাখানো, আর এত চক্চকে মনে হয় যেন দেবদূত। আর একজন একটু লম্বা; তিনিও খুব বুড়ো, তাঁর ছেঁড়া খোঁড়া কৃষকের জামা পরা, তাঁর খুব জোর আছে, তিনি দয়ালু ও সদানন্দ। তৃতীয়জন খুব ঢেঙা; তাঁর বরফের মত সাদা দাড়ি হাঁটু অবধি ঝুলে প’ড়েছে। তাঁর আর কোন পোষাক নেই, একটা মাদুর কোমরে জড়িয়ে রাখেন। তবে তিনি একটু কড়া, তাঁর ভ্রূদুটো কুঁচ্কেই থাকে।”
বিশপ জিজ্ঞাসা করিলেন—“তাঁরা তোমায় কি বল্লেন?”
—“অধিকাংশ সময়েই তাঁরা চুপ করে ছিলেন। এমন কি নিজেদের ভেতরেও খুব কম কথা কয়েছেন। সব কাজই তাঁরা চুপে চুপে করেন। একজন একটু ইসারা কর্লেই আর একজন সেটা বুঝ্তে পারেন। সব চাইতে যিনি ঢেঙা, সেখানে তাঁরা কেন রয়েছেন তাঁকে তাই জিজ্ঞেস কর্তেই তিনি আমার দিকে কট্মটিয়ে চাইলেন, মনে মনে কি যেন বিড়্ বিড়্ ক’রে বল্লেন। আমার মনে হ’ল তিনি রাগ কর্লেন। সকলের চেয়ে যিনি বৃদ্ধ তিনি এসে তাঁর হাত ধ’রে হেসে হেসে বললেন ‘দয়া কর’। তিনি তখন ঠাণ্ডা হ’লেন।”
কথাবার্ত্তা বলিতে বলিতেই জাহাজ দ্বীপের আরও নিকটে আসিল।
সেই ব্যবসাদার হাত দিয়া দেখাইয়া বলিল—“ঐ দেখুন না, এবার বেশ পরিষ্কার দেখ্তে পাওয়া যাচ্ছে।”
দূরে কাল রেখার মত সেই দ্বীপটি এবার বিশপ দেখিতে পাইলেন; খানিকক্ষণ চাহিয়া থাকিয়া তিনি নাবিকের কাছে ছুটিয়া গিয়া বলিলেন—“ওটা কোন্ দ্বীপ!”
—“এর কোন নাম নেই। ও রকম দ্বীপ ঢের আছে।”
—“এটা কি সত্যি কথা যে, ওখানে অনেক সন্ন্যাসী বাস করেন?”
—“সত্যি কি না জানিনে, তবে শুনতে পাই, জেলেরাও নাকি তাঁদের দেখেছে।”
—“আমার সেখানে গিয়ে তাঁদের দেখ্তে ইচ্ছা হচ্ছে, কিন্তু কি ক’রে যাব?”
—“ও দ্বীপে জাহাজ লাগে না, তবে নৌকো ক’রে আপনাকে নামিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কাপ্তেনকেই এটা জিজ্ঞেস করা ভাল।”
কাপ্তেনকে ডাকিয়া পাঠান হইল, তিনি আসিলেন।
বিশপ বলিলেন—“আমাকে ঐ দ্বীপে নৌকো ক’রে নামিয়ে দিতে পার্বে কি? ওখানকার সন্ন্যাসীদের আমি দেখ্ব।”
কাপ্তেন বলিলেন—“নিশ্চয় আপনাকে নেওয়া যেতে পার্ত, কিন্তু আমাদের ঢের সময় যাবে। যদি রাগ না করেন, তা’ হ’লে বল্তে পারি যে, সেখানে গিয়ে আপনার মেহনত পোষাবে না। শুনেছি তাহারা নিতান্ত বোকা, কোন কথাও কয় না, কিছু বোঝেও না।”
বিশপ বলিলেন—“তাঁদের দেখ্তে ইচ্ছে হচ্ছে। তোমার যে সময় নষ্ট হবে আর কষ্ট হবে তার জন্যে তোমায় টাকা দেবো।”
কাপ্তেন কাজে কাজেই আদেশ দিলেন এবং নাবিক সেই দ্বীপের দিকে জাহাজ চালাইল। সামনে একটা চেয়ার দেওয়া হইল, বিশপ বসিয়া সেই দিকেই চাহিয়া রহিলেন। যাত্রীরাও জড় হইয়া সেইদিকেই তাকাইল, যাহাদের খুব ভাল চোখ তারা পরিষ্কার দেখিতে পাইল ‘মাটির ঘর’। কিছুক্ষণ পরেই একজন সন্ন্যাসীকে দেখিতে পাইল। কাপ্তেন প্রথম একটা দূরবীণ আনিয়া নিজে দেখিল, তারপর বিশপকে দিয়া বলিলেন—“ঐ যে একটা বড় পাহাড়, তার একটু বাঁ-দিকে তিনজন সমুদ্দুরের ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে।”
বিশপ দূরবীণটি লইয়া চাহিয়া দেখিলেন—একজন ঢেঙা, আর একজন তার চেয়ে একটু বেঁটে, আর তৃতীয় জন অত্যন্ত বেঁটে ও কুঁজো। তারা হাত ধরাধরি করিয়া সমুদ্রের ধারে দাঁড়াইয়া আছে।
কাপ্তেন বিশপের দিকে ফিরিয়া বলিলেন—“এর চেয়ে বেশী কাছে আর জাহাজ যেতে পার্বে না। এখানে নোঙ্গর ফেল্ব, আপনি নৌকোয় উঠুন।”
পাল নামাইয়া দেওয়া হইল, জাহাজ থামিল! বিশপ নৌকায় উঠিলেন। সাঁ সাঁ করিয়া নৌকা চলিল। বিশপ তীরের কাছে গেলেন। মাঝিরা নৌকা ধরিয়া রাখিল; তিনি নামিলেন।
সন্ন্যাসীরা তাঁকে নমস্কার করিলেন; বিশপও আশীর্ব্বাদ করিলেন, তারপর বলিতে লাগিলেন—“আমি শুনেছি যে, আত্মার মুক্তির জন্যে ও অন্যান্য মানবের জন্যে তোমরা যীশুর কাছে প্রার্থনা করছ। আমি যীশুর অধম সেবক, তাঁরই সেবকদের রক্ষা করা এবং শিক্ষা দেওয়া আমার কাজ। তোমাদের কি শিক্ষা দিতে পারি তার জন্যে তোমাদের দেখ্তে আমার ইচ্ছে হয়েছিল।”
সন্ন্যাসীরা একটু হাসিলেন, কিন্তু কথা কহিলেন না।
বিশপ বলিলেন—“তোমরা আত্মার মুক্তির জন্য কি কর্ছ আমায় বল! কি ক’রে এই দ্বীপে তোমরা ভগবানের সেবা কর্ছ?”
দ্বিতীয় সন্ন্যাসীটি দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়িয়া বৃদ্ধের দিকে চাহিলেন বৃদ্ধ একটু হাসিয়া বলিলেন— “ভগবানের সেবা কি ক’রে কর্তে হয় তা জানি না। আমরা শুধু নিজেদের সেবা ও পালন কর্ছি।”—“কিন্তু কি ক’রে তোমরা প্রার্থনা কর?”
—“আমরা এইরকম ভাবে প্রার্থনা করি,—
‘আমরা তিনজন,
আমরা তিনজন,
দয়া কর মোদের’।”—
বিশপ একটু হাসিলেন, বলিলেন—“দেখ্তে পাওয়া যাচ্ছে তোমাদের প্রার্থনা ঠিক হচ্ছে না। তোমাদের প্রতি আমার একটা স্নেহ জন্মেছে। তোমরা ভগবান্কে সন্তুষ্ট কর্তে চাও বটে, কিন্তু কি ক’রে তাঁর সেবা কর্তে হয় তা জান না। ও রকম ক’রে প্রার্থনা করে না। যে রকম ক’রে ভগবান্ সকলকে প্রার্থনা কর্তে শিখিয়েছেন, তাই তোমাদের শেখাব।”
ভগবান্ কি করিয়া সকলের কাছে নিজেকে প্রকাশ করিয়াছিলেন, তাই সন্ন্যাসীদের বুঝাইয়া দিয়া বলিলেন—“তিনি এই পৃথিবীতে এসেছিলেন মানুষের মুক্তির জন্যে। তিনি যে-রকম ভাবে প্রার্থনা কর্তে শিখিয়েছেন, তা এইবার শোন এবং বারে বারে আমার সঙ্গে বল, ‘পিতঃ’।”
প্রথম সন্ন্যাসী আবৃত্তি করিলেন—“পিতঃ;” দ্বিতীয় বলিলেন—“পিতঃ”; তৃতীয় সন্ন্যাসী বলিলেন—“পিতঃ।”
বিশপ বলিলেন—“তুমি স্বর্গে রহিয়াছ।”
প্রথম সন্ন্যাসী বলিলেন—“তুমি স্বর্গে রহিয়াছ।”
কিন্তু দ্বিতীয় সন্ন্যাসী ঠিক বলিতে পারিলেন না। ঢেঙা সন্ন্যাসীটির দাঁত পড়িয়া যাওয়ায় ফ্যাস্ ফ্যাস্ করিয়া বলিলেন।
বিশপ আবার বলিলেন, সন্ন্যাসীরাও তাঁর সঙ্গে আবার উচ্চারণ করিলেন। বিশপ তাঁদের সামনে একটা পাথরের উপর বসিয়া ক্রমাগত বলিতে লাগিলেন। সমস্ত দিন তিনি বলিতে লাগিলেন; এক একটা কথা বিশ, ত্রিশ, একশত বার বলিলেন, সন্ন্যাসীরাও বলিতে লাগিলেন।
যতক্ষণ পর্য্যন্ত না সমস্ত প্রার্থনা তাঁরা শিখিতে পারিলেন ততক্ষণ বিশপ সেইখানে রহিলেন। বারে বারে বলাইয়া তাঁদের স্পষ্ট মুখস্থ করাইলেন। তাঁরা নিজেরাই এখন বেশ বলিতে লাগিলেন।
তখন সন্ধ্যা হইয়া আসিতেছিল। চাঁদ উঠিতেছিল। বিশপ উঠিলেন। সন্ন্যাসীরা একেবারে মাটিতে মাথা ঠেকাইয়া তাঁকে নমস্কার করিলেন। তিনি তাঁদের প্রত্যেককে চুম্বন করিলেন। তিনি যেরূপ শিক্ষা দিয়াছেন তেমন ভাবে প্রার্থনা করিতে বলিয়া নৌকায় উঠিলেন।
নৌকায় বসিয়া তিনি কতক্ষণ তাঁদের প্রার্থনা শুনিতে পাইলেন। যতই দূরে যাইতে লাগিলেন ততই অস্পষ্ট হইতে লাগিল। যখন জাহাজের কাছে পৌঁছিলেন তখন আর সে স্বর শুনিতে পাইলেন না; কিন্তু চাঁদের আলোয় তাঁদের বেশ দেখিতে পাইলেন, তখনও তেমনি ভাবে তাঁরা সমুদ্রের ধারে দাঁড়াইয়া।
বিশপ যেমনি আসিলেন, অমনি পাল তুলিয়া নোঙ্গর তুলিয়া জাহাজ ছাড়িয়া দেওয়া হইল। তিনি জাহাজে বসিয়া দ্বীপের দিকে চাহিয়া রহিলেন, তখনও সন্ন্যাসীদের দেখিতে পাওয়া গেল। কিছু পরে সন্ন্যাসীরা অদৃশ্য হইলেন, তার একটু পরে দ্বীপও অদৃশ্য হইয়া গেল; চারিদিকে কেবল সমুদ্রের ঢেউ চাঁদের আলোতে চক্চক্ করিয়া জ্বলিতেছিল।
যাত্রীরা সকলেই শুইয়া ঘুমাইতেছিল। সব চুপ্চাপ। বিশপ কেবল পেছনদিকে বসিয়া সমুদ্র দেখিতেছিলেন, আর সেই সন্ন্যাসীদের কথা ভাবিতেছিলেন। তিনি ভাবিলেন, তারা প্রার্থনা শিখিয়া কতই সুখী হইয়াছে। ভগবান্কে ধন্যবাদ দিলেন যে, তিনি ঐ সব লোককে শিক্ষা দিবার জন্য তাঁকে পাঠাইয়াছেন।
চাঁদের আলোয় সমুদ্রের উপর যেন একটা চক্চকে পথ তৈয়ারী হইয়াছে; সেই পথেই একবার এখানে একবার ওখানে কি যেন কাঁপিয়া উঠিতেছে। হঠাৎ তিনি দেখিতে পাইলেন, কি যেন সাদা ও চক্চকে। এটা কি সমুদ্রের চিল, না কোন ছোট নৌকার পাল? বিস্মিত হইয়া চাহিয়া ভাবিলেন, ‘এ নিশ্চয়ই কোন নৌকো আমাদের পেছনে আস্ছে; কিন্তু বড্ড জোরে আস্ছে যে। এক মিনিট পূর্ব্বে কোথায় কত দূরে ছিল, এখন অনেক এগিয়েছে। না, নৌকো নয়, পাল নেই ত। যাই হোক্ আমাদের ধরবার জন্যে পেছনে পেছনে আস্ছে।’
বিশপ বুঝিতে পারিলেন না এটা কি। নৌকা নয়, পাখী নয়, মাছও নয়। এযে মানুষের মত বড়, কিন্তু মানুষ সমুদ্রের উপর ও-রকম ভাবে আসিতে পারে না। বিশপ উঠিয়া গিয়া নাবিককে বলিলেন—“ভাই, দেখ ত ওটা কি?” কিন্তু এখন তিনি স্পষ্ট দেখিতে পাইলেন যে, সেই সন্ন্যাসীরাই জলের উপর দিয়া ছুটিয়া আসিতেছেন! সব আলোয় চক্চক্ করিতেছে। তাঁরা দ্রুতবেগে আসিতেছেন যে, জাহাজের যেন কোন গতিই নাই।
নাবিক দেখিল, ভয়ে হাল ছাড়িয়া দিয়া বলিল—“ও বাবা! সন্ন্যাসীরাই যে আমাদের পেছনে ছুটে আস্ছে এই জলের উপর দিয়ে যেন এটা শুকনো মাটি।”
যাত্রীরা ইহা শুনিয়া লাফাইয়া উঠিল এবং সেখানে গিয়া জড় হইল; তারা দেখিল যে, হাতে হাতে ধরিয়া সেই সন্ন্যাসীরা আসিতেছেন এবং জাহাজ থামিবার পূর্ব্বেই তাঁরা আসিয়া পড়িলেন। আসিয়াই তিনজন এক সঙ্গে বিশপকে বলিয়া উঠিলেন—“প্রার্থনা আমরা ভুলে গেছি। যতক্ষণ বল্ছিলুম ততক্ষণ বেশ মনে ছিল, একবার যেই থেমেছি, অমনি সব ভুলেছি; কিছু মনে নেই, আমাদের আবার শেখাও।”
বিশপ জাহাজের পাশে ঝুঁকিয়া বলিলেন—“তোমাদের শেখাতে হবে না; তোমাদের নিজের প্রার্থনা—প্রাণের কথা ভগবানের কানে পৌঁছাবে। আমরা পাপী, আমাদের জন্যে প্রার্থনা ক’রো!”
বিশপ মাথা হেঁট করিয়া তাঁহাদিগকে নমস্কার করিলেন; তাঁরা চলিয়া গেলেন।