টুনটুনির বই/বোকা কুমিরের কথা
কুমির আর শিয়াল মিলে চাষ করতে গেল। কিসের চাষ করবে? আলুর চাষ। আলু হয় মাটির নিচে। তার গাছ থাকে মাটির উপরে, তা দিয়ে কোনো কাজ হয় না। বোকা কুমির সে কথা জানত না। সে ভাবলে বুঝি আলু তার গাছের ফল।
তাই সে শিয়ালকে ঠকাবার জন্যে বললে, ‘গাছের আগার দিক কিন্তু আমার, আর গোড়ার দিক তোমার।’
শুনে শিয়াল হেসে বললে, ‘আচ্ছা, তাই হবে।’
তারপর যখন আলু হল, কুমির তখন সব গাছের আগা কেটে তার বাড়িতে নিয়ে এল। এনে দেখে তাতে একটাও আলু নেই। তখন সে মাঠে গিয়ে দেখল, শিয়াল মাটি খুঁড়ে সব আলু তুলে নিয়ে গেছে। কুমির ভাবলে, ‘তাই তো। এবার বড্ড ঠকে গিয়েছি। আচ্ছা আসছে বার দেখব!’
কুমির মাটি খুঁড়ে দেখে সেখানে কিছুই নেই।
তার পরের বার হল ধানের চাষ। এবারে কুমির মনে ভেবেছে, আর কিছুতেই ঠকতে যাবে না। তাই সে আগে থাকতেই শিয়ালকে বললে, ‘ভাই, এবারে কিন্তু আমি আগার দিক নেব না, এবার আমাকে গোড়ার দিক দিতে হবে।
শুনে শিয়াল হেসে বললে, ‘আচ্ছা, তাই হবে।’
তারপর যখন ধান হল, শিয়াল সে ধানসুদ্ধ গাছের আগা কেটে নিয়ে গেল।
কুমির তো এবারে ভারী খুশী হয়ে আছে। ভেবেছে, মাটি খুড়ে সব ধান তুলে নেবে। ও কপাল! মাটি খুঁড়ে দেখে সেখানে কিছুই নেই। লাভের মধ্যে খড়গুলো গেল।
তখন কুমির তো বড্ড চটেছে, আর বলছে, ‘দাঁড়াও শিয়ালের বাছা, তোমাকে দেখাচ্ছি। এবারে আর আমি তোমাকে আগা নিতে দেব না। সব আগা আমি নিয়ে আসব!’
সেবার হল আখের চাষ।
কুমির তো আগেই বলেছে, এবার আর সে আগা না নিয়ে ছাড়বে না। কাজেই শিয়াল তাকে আগাগুলো দিয়ে, নিজে আখগুলো নিয়ে ঘরে বসে মজা করে খেতে লাগল।
কুমির আখের আগা ঘরে এনে চিবিয়ে দেখলে, খালি নোন্তা, তাতে একটুও মিষ্টি নেই। তখন সে রাগ করে আগাগুলো সব ফেলে দিয়ে শিয়ালকে বললে, ‘না ভাই, তোমার সঙ্গে আর আমি চাষ করতে যাব না, তুমি বড্ড ঠকাও!’