বিষয়বস্তুতে চলুন

ডমরু-চরিত/চতুর্থ গল্প/অষ্টম পরিচ্ছেদ

উইকিসংকলন থেকে

অষ্টম পরিচ্ছেদ।

অমৃত কুণ্ডের জল।

  চমকিত হইয়া আমি উঠিয়া বসিলাম। চক্ষু মুছিতে মুছিতে দেখিলাম যে,—স্বয়ং মা দুর্গা একখানি চৌকির উপর আমার সম্মুখে বসিয়া আছেন। এ তোমার দশ হেতে হরিতাল রঙে গর্জ্জন তৈলে ব্যাড়বেড়ে রাঙতা পরা দুর্গা নয়! এ কৈলাস পর্ব্বতের আসল মা দুর্গা; সুন্দর পরিচ্ছদে ও বহুমূল্য রত্ন-আভরণে ভূষিত করিয়া কুবের ইহাকে আমার নিকট পাঠাইয়াছেন।

 যোড় হাতে মায়ের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আমি স্তব স্তুতি করিতে লাগিলাম। মা বলিলেন,—“ডমরুধর! তুমি বড় অপরাধ করিয়াছ। যে মন্ত্র তোমাকে আমি শিক্ষা দিয়াছিলাম তাহা ভুলিয়া ও কি উদ্ভট কথা সব বলিয়াছিলে? ‘জিলেট জিলেকি সিলেমেল্ কিলেকিট কিলেকিশ' কি বাছা? এরূপ মন্ত্র বেদে কোরাণে বাইবেলে কোন স্থানে আমি দেখি নাই। পিডিং ফিডিং দুম বলিলেও একদিন কথা থাকিত। সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ তোমার এত দুর্গতি হইয়াছে। যাহা হউক, তোমাকে আমি ক্ষমা করিয়াছি। এক্ষণে হাঁ কর।”

 আমি হাঁ করিলাম! দেবী আমার মুখে একটু অমৃত কুণ্ডের জল ঢালিয়া দিলেন। তাহাতে আমার সর্ব্ব শরীরের ব্যথা দূর হইল। যেন নূতন জীবন নূতন শরীর আমি প্রাপ্ত হইলাম। তাহার পর মা আমাকে আশ্বাস প্রদান করিয়া বলিলেন,— “যাও বাছা। এখন ঘরে যাও। এলোকেশী আর তোমাকে কিছু বলিবে না।”

 এই কথা বলিয়া মা অন্তর্দ্ধান হইলেন। আমি বাড়ী আসিলাম। মায়ের বরে এলোকেশীর প্রসন্ন বদন দেখিয়া পরম সন্তোষ লাভ করিলাম।

 ডমরুধরের গল্প শুনিয়া সকলেই চমৎকৃত হইলেন। পুরোহিত বলি- লেন,—“ধন্য ডমরুধর! তুমি ধন্য।”

 গণপতি ভড় বলিলেন,— “ডমরু কি বিপদেই না পড়িয়াছিলেন।”

 পুঁটিরাম চাকি বলিলেন,—“কেবল পুণ্য বলে ডমরুধর রক্ষা পাইয়াছেন।”

 আধকড়ি ঢাক বলিলেন,—“চমৎকার গল্প।”

 লম্বোদর বলিলেন,— “অতি চমৎকার! বন্ধুদিগের পুস্তক সমালোচনা করিবার সময় কোন কোন লেখক যেরূপ প্রেমে মজিয়া রসে ভিজিয়া ভাবে গেঁজিয়া বলেন,— মরি মরি! আহা মরি! এও সেই আহা মরি।”

 রূক্ষ কটাক্ষে ডমরুধর একবার লম্বোদরের দিকে চাহিয়া দেখিলেন। কিন্তু কোন উত্তর করিলেন না।

 অবশেষে ডমরুধর বলিলেন,— “পীর গোরাচাঁদের ব্যাঘ্রের উদরে যখন ছিলাম, তখন মনে মনে সংকল্প করিয়াছিলাম যে, এ বিপদ হইতে মা যদি আমাকে পরিত্রাণ করেন, তাহা হইলে মাকে আমি ব্যাঘ্রবাহিনীরূপে পূজা করিব। আমার আদেশে সেই জন্য কারিগর সিংহ স্থানে ব্যাঘ্র গড়িয়াছে।”

 লম্বোদর জিজ্ঞাসা করিলেন,— “তুমি যে গল্পটা করিলে, কি করিয়া জানিব যে, তাহা সত্য?”

 ডমরুধর উত্তর করিলেন,— “এই আমার পায়ে এখনও রাহুর কামড়ের দাগ রহিয়াছে।” সত্য সত্যই ডমরুধরের পায়ে একটা দাগ আছে। তা দেখিয়া সকলে অবাক্।

 তখন লম্বোদর বলিলেন, —

জিলেট জিলেকি সিলেমেল্ কিলেকিট কিলেকিশ।