ত্রিপুরার স্মৃতি/রাজরাজেশ্বরী কালী

উইকিসংকলন থেকে

লুয়া ত্রুটি মডিউল:Header_template এর 348 নং লাইনে: bad argument #1 to 'next' (table expected, got nil)।



রাজরাজেশ্বরী কালী

 উক্ত নামে সুপ্রসিদ্ধ যে একটী প্রস্তরনির্ম্মিত কালীমূর্ত্তি কুমিল্লা নগরীতে সংস্থাপিত, উহা পূর্ব্ববর্ণিত “সপ্তদশ রত্ন” নামক সুবিখ্যাত মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন কর্ত্তা ত্রিপুরাধিপতি দ্বিতীয় রত্ন মাণিক্য-কর্ত্তৃক বারাণসী হইতে আনীত হইয়া এই জনপদে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। ইহার সম্বন্ধে ত্রিপুরেশগণের জীবন চরিত “ত্রিপুরবংশাবলী” নামে প্রসিদ্ধ বঙ্গভাষায লিখিত গ্রন্থে এইরূপ উল্লেখ আছে—

“মহারাজা রতন মাণিক্য বাহাদুর।
কাশীধাম হৈতে কালী আনিল সত্বর।
সেই কালী কুমিল্লা নগরে স্থাপিল।
রাজরাজেশ্বরী বলি নামকরণ দিল॥”

 উল্লিখিত বিষয়ে সর্ব্বসাধারণ সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞ; এমন কি—দেবীটীর সেবাপুজার ব্যয় নির্ব্বাহের জন্য যে দেবোত্তর সম্পত্তি ত্রিপুবরাজ্য হইতে প্রদত্ত হইয়াছে তাহার তত্ত্বাবধায়ক পর্য্যন্ত ইহা অবগত নহে।

 রাজরাজেশ্বরী নামে প্রসিদ্ধ উক্ত কালীমূর্ত্তি পূর্ব্বে সংসার ত্যাগী গিরি সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসিগণ-কর্ত্তৃক পূজিত হইত। কিন্তু ইহার পূজকদিগের সর্বশেষ সন্ন্যাসী দার পরিগ্রহণ পূর্ব্বক সংসারী হওয়ার পর অবধি উক্ত দেবী মূর্ত্তি সাধারণ ব্রাহ্মণগণ-কর্ত্তৃক পূজিত হইতেছে।

 বর্ণিত কালীর সম্বন্ধে যে এক অদ্ভুত প্রবাদের বিষয, উক্ত দেবীর জন্য ত্রিপুররাজ্য হইতে নিৰ্দ্ধারিত বৃত্তির বর্ত্তমান তত্ত্বাবধাযক-কর্ত্তৃক কথিত হয, তাহা পাঠকগণের কৌতুহল নিবৃত্তির জন্য নিম্নে বিবৃত হইল।

 উল্লিখিত রাজরাজেশ্বরী কালী অধুনা যে স্থানে সংস্থাপিত, পূর্ব্বে সেই স্থান ঘোর অরণ্যাকীর্ণ ছিল; তন্মধ্যে জনৈক সন্ন্যাসী ইহার পূজা অর্চ্চনা করিত। একদা প্রদোষ কালে ত্রিপুরা জিলার তদানীন্তন জজ-ম্যাজিষ্ট্রেট ইলিয়েট সাহেব অশ্বারোহণ পূর্ব্বক সেই স্থানের নিকট দিয়া গমন করিতেছিলেন। এমন সময় উক্ত কালীর আরতির শঙ্খ-ঘণ্টারবে তদীয় অশ্ব উচ্ছৃঙ্খল হইয়া শাসন-বহির্ভূত হয়। তজ্জন্য সাহেব ক্রোধান্বিত হইয়া মূর্ত্তিটী তৎক্ষণাৎ দূরে নিক্ষেপ করিতে আদেশ প্রদান করেন। কিন্তু পরিশেষে সন্ন্যাসীর অনুনয় বিনয়ে বাধ্য হইয়া সাহেব কেবল এক রাত্রের জন্য মাত্র মূর্ত্তিটী রাখিতে সম্মত হন।

 সেই রজনীতে নিদ্রিতাবস্থায় ইলিয়েট সাহেব গোঁ গোঁ শব্দ করিতে থাকিলে তদীয় পত্নী জাগরিত হইয়া দেখিতে পান যে, মৃতপ্রায় তাঁহার স্বামীর মুখ হইতে রক্ত নিঃসৃত হইতেছে। তদবস্থ সাহেব তদীয় স্ত্রী-কর্ত্তৃক অনেক যত্ন ও শুশ্রূষার পর সংজ্ঞা লাভ করিলেও স্তব্ধীভূত হইয়া শূন্য দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকেন। তাঁহার এই প্রকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করিয়া তদীয় পত্নী নানা প্রকার সান্ত্বনা প্রদান করিলে পর সাহেব অতি কষ্টে ধীরে ধীরে কহেন—ঘুম ঘোরে তাঁহার এইরূপ অনুভূত হইয়াছিল, কোন ব্যক্তি যেন তাঁহাকে সবলে চাপিয়া কহিতেছে—রাজরাজেশ্বরী মূর্ত্তি যদি নিক্ষেপ কর তবে তোমার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।

 এই ঘটনার পর ইলিয়েট সাহেব সুস্থ হইয়া রাজরাজেশ্বরী কালীর বর্ত্তমান মন্দিরটী নিজ ব্যয়ে নির্ম্মাণ করাইয়া দেন, এবং তাঁহার কুমিল্লাতে অবস্থান কাল পর্যন্ত বর্ণিত দেবীর সেবা-পূজাব ব্যয় নির্ব্বাহার্থে প্রত্যহ এক টাকা প্রদান করিতেন। বর্ণিত রাজরাজেশ্বরী কালী, একটী জাগ্রত দেবী বলিয়া সর্ব্বসাধারণের বিশ্বাস এবং এই প্রত্যয় মূলে সকলেই ইহাকে ভক্তিভরে পূজাঅর্চনা করিয়া থাকে।