ত্রিপুরার স্মৃতি/সূচনা

উইকিসংকলন থেকে

লুয়া ত্রুটি মডিউল:Header_template এর 348 নং লাইনে: bad argument #1 to 'next' (table expected, got nil)।

সূচনা

 পুরাকালের কীর্ত্তিমাল-পূর্ণ বিলুপ্ত গৌরব সুপ্রাচীন যে সমুদয় জনপদ বঙ্গভূমিতে অবস্থিত, তন্মধ্যে “ত্রিপুরা” নামে প্রসিদ্ধ দেশটী অন্যতম। এই প্রদেশের প্রাচীন ইতিহাস প্রত্নতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতগণ কর্ত্তৃক বিশেষরূপে আলোচিত হইয়াছে কিনা অবগত নহি; কিন্তু ইহা বলিলে অত্যুক্তি হইবে না—বঙ্গদেশস্থ অন্যান্য পুরাতন অঞ্চলেব তুলনায় এতৎপ্রদেশ কোন অংশেই হীন-গৌরবের হইবে না, বরং অধিক গৌরবান্বিত হওয়াই সম্ভব।

 “ত্রিপুরা” নামক উক্ত সুবিস্তীর্ণ প্রদেশেব প্রায অধিকাংশই অধুনা চন্দ্রবংশসম্ভূত বর্ত্তমান ত্রিপুরেশগণের অধিকাব-ভুক্ত। কিন্তু সুপ্রাচীনকালে তাঁহাদিগের পূর্ব্বপুরুষগণ যে সময়ে এতৎপ্রদেশের উত্তর পূর্ব্বাংশে রাজত্ব করিতেন, তৎকালে তাহার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তবর্ত্তী জনপদনিচয় যে পালবংশীয় নৃপতিগণের শাসনাধীন ছিল, তাহার নিদর্শন এই প্রদেশে প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। এতদ্ব্যতীত এই অঞ্চল যে একদা অপরাপর বংশসম্ভূত নৃপালগণেরও অধিকারভুক্ত ছিল তাহা এতৎপ্রদেশস্থ কতিপয় প্রাচীন নিদর্শন প্রতিপন্ন করে।

 ন্যূনাতিবেক বিংশ বর্ষ পূর্ব্বে ত্রিপুরা জিলার অন্তঃপাতী “নুরনগর” পরগণার অন্তর্ভূত “বাঘাউরা” নামক প্রাচীন গ্রামস্থ একটী পুষ্করিণী হইতে যে চতুর্ভূজ নারায়ণ মূর্ত্তি উদ্ধৃত হইয়াছিল, তৎপাদপীঠে উৎকীর্ণ লিপি হইতে এইরূপ অবগত হওয়া যায়—“সমতট” দেশ খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর পালবংশীয গৌড়াধিপতি প্রথম মহীপালের শাসনাধীন ছিল। প্রাচীন ইতিহাসে লিখিত “সমতট” নামে সুপ্রসিদ্ধ দেশ—বর্ত্তমান বরিশাল, ফরিদপুর, ঢাকার পূর্ব্ব-দক্ষিণ ও ত্রিপুরার দক্ষিণাংশ বলিয়া খ্যাতনামা ইতিহাসকার “ভিনসেণ্ট স্মিথ্‌” বিরচিত ভারতবর্ষের ইতিহাসে উল্লেখ আছে।

 প্রাগুক্ত প্রস্তর-নির্ম্মিত চতুর্ভূজ বিষ্ণু-মূর্ত্তি উচ্চে প্রায় দুই হস্ত হইবে, এবং সুচারুরূপে নির্ম্মিত। মূর্ত্তিটীর পাদদেশের নিম্নভাগে যে লিপি উৎকীর্ণ আছে তাহা এই:—

'

“ওঁসম্বৎ ৩ মাঘ দিনে ২১ শ্রীমহীপালদেব রাজ্যে
কীর্ত্তিরিয়ং নারায়ণ ভট্টারকাখ্য সমতটে বিলকীন্ন
কীয় পরম বৈষ্ণবস্য বণিক লোকদত্তস্য বসুদত্ত সুত
স্য মাতা পিত্রোরাত্মনশ্চ পুণ্যযশোভিবৃদ্ধয়ে”

 উক্ত শিলালিপি হইতে অবগত হওয়া যায় যে, নৃপতি মহীপালের রাজত্বের তৃতীয় বর্ষে সমতট দেশের অন্তর্গত “বিলকীন্ন” নিবাসী লোকদত্ত নামক জনৈক বৈষ্ণধর্ম্মাবলম্বী বণিককর্ত্তৃক মূর্ত্তিটী প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। ত্রিপুরার পশ্চিম দক্ষিণাংশ যে একদা নৃপতি মহীপালের অধিকারভুক্ত ছিল, ইহা উল্লিখিত শিলালিপি হইতে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়।

 বাঘাউরা গ্রামের উত্তরদিকে ন্যূনাতিরেক ৬ মাইল দূরস্থ বর্ত্তমান “বিলকেন্দু-আই” গ্রামটীই শিলালিপিতে উৎকীর্ণ “বিলকীন্ন” বলিয়া অনুমিত হয়। এই স্থান হইতে উল্লিখিত বিষ্ণু-মূর্ত্তি কি প্রকারে বাঘাউরায় অপসারিত হইয়াছে তাহা অবগত হওয়া যায় না।

 প্রাগুক্ত গ্রামের পার্শ্ববর্ত্তী অপরাপর কতিপয় গ্রাম মধ্যে পুষ্করিণী প্রভূতি খনন করিবার কালে প্রায়শঃ ধাতু ও প্রস্তর নির্ম্মিত নানাবিধ মূর্ত্তি এবং ইষ্টক নির্ম্মিত ভবনাদির বিধ্বস্ত অংশ প্রাপ্ত হওয়া যায়। ইহাতে সম্ভাবিত হয়—অত্রস্থ গ্রামনিচয় এক কালে কোন সমৃদ্ধিশালী জনপদের অন্তর্ভূত ছিল।

 ত্রিপুরার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রদেশে যে সমুদয় নৃপাল রাজত্ব করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে কেহ কেহ বৌদ্ধধর্ম্মাবলম্বী ছিলেন বলিযা জ্ঞাত হওয়া যায়। কিন্তু কোন কোন মহীপ যে হিন্দুধর্ম্মাবলম্বী না ছিলেন এমন নহে। কারণ তাঁহাদিগের দ্বারা সংস্থাপিত কতিপয় হিন্দু দেব দেবীর প্রতিমূর্ত্তিও উদ্ধৃত হইয়াছে। অধুনা সেই নৃপতিগণের বংশ এতৎপ্রদেশ হইতে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হইয়াছে। জনশ্রুতি ব্যতিরেকে তাহাদিগের সম্বন্ধে কোন প্রকার প্রকৃত ইতিহাস প্রাপ্ত হওয়া যায় না।

 খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে “সেংথুম্‌ফা” উপাধিধারী সুপ্রসিদ্ধ ত্রিপুরাধিপতি “কীর্ত্তিধর” বাহুবলে মেঘনানদী পর্য্যন্ত রাজ্য বিস্তার করেন। সেই সময়ে তিনি ত্রিপুরার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তবর্ত্তী প্রদেশের তদানীন্তন মহীপকে যুদ্ধে পরাজিত করিয়া তদীয় রাজ্য অধিকার করিয়াছিলেন—এবংবিধ কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। কিন্তু উক্ত বিজিত নৃপাল কোন্‌ বংশ-সম্ভূত এবং তাঁহার নাম-ই বা কি তাহ অবগত হওয়া যায় না।

 যে প্রবল পরাক্রান্ত “সেংথুম্‌ফা” বাহুবলে নানাদেশ বিজয়পূর্ব্বক রাজ্য বিস্তার করিয়া যশস্বী হইয়াছিলেন, কালের কুটিলচক্রে হেন জনের কীর্ত্তিময় চরিত্রেও দুর্ব্বলতা-রূপ পঙ্ক বিলেপিত হইয়া তদীয় অর্জ্জিত যশোরাশি ক্ষুণ্ণ করিয়াছিল— ইহা তাঁহার ভাগ্য-দোষ ব্যতীত আর কি বলা যাইতে পারে।

 উক্ত ঘটনাটি এইস্থানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হইলেও কৌতুহলী পাঠকের চিত্তবিনোদনের জন্য নিম্নে বিবৃত হইল।

 ত্রিপুরেশ “কীর্ত্তিধর” বা “সেংথুম্‌ফার” রাজত্বকালে ত্রিপুররাজ্য-নিবাসী হীরাবন্ত খাঁ নামক জনৈক ভূম্যধিকারী বঙ্গদেশের তদানীন্তন যবনাধিপতির অধীনে কার্য্য করিত। তদীয় কার্য্যতৎপরতা দৃষ্টে গৌড়েশ্বর তাহাকে বিশেষ অনুগ্রহ প্রদর্শন করিতেন। এই জন্য হীরাবন্ত খাঁ গর্ব্বমদে মত্ত হইয়া সেংথুম্‌ফাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। তদীয় রাজা নিবাসী জনৈক ক্ষুদ্র ভূস্বামীর উদ্ধত আচরণে সেংথুম্‌ফা ক্রোধাম্বিত হইয়া হীরাবন্ত খাঁকে ধৃত করিবার নিমিত্ত সৈন্য প্রেরণ করেন। হীরাবন্ত খাঁ পরম্পরায় এইসংবাদ অবগত হইলে ভীত হইয়া গৌড়াধিপতির শরণাপন্ন হয়।

 তৎকালে যবনেরা মগধ ও বঙ্গদেশ অধিকার করিয়া বিজয়-গর্ব্বে গর্ব্বিত এবং রাজ্য-বিস্তার লালসায় উন্মত্ত হইযাছিল। সেই সময়ে একটী সুপ্রাচীন হিন্দুরাজ্য আয়ত্তে আনয়েন করিবার সুযোগ দৃষ্টে গৌড়াধিপতি যবনরাজ রণসজ্জায় সুসজ্জিত বিরাট বাহিনীসহ ত্রিপুররাজ্য আক্রমণ করেন।

 উত্তমরূপে সুসজ্জিত এবং বহুসংখ্যক যবন সেনার বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইলে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী বিবেচনায় সেংথুম্‌ফা গৌড়াধিপতির সহিত সন্ধি স্থাপন করিতে উদ্যত হন। এই সংবাদ “ত্রিপুরাসুন্দরী” নাম্নী সেংথুম্‌ফার মহিষীর কর্ণগোচর হইলে তিনি স্বামীকে কহেন—রাজ্য রক্ষা করা যখন তোমার সাধ্যাতীত, তখন আমি-ই আজ জন্মভূমির গৌরবরক্ষার্থ যবনগণের সহিত যুদ্ধ করিব। মাতৃভূমিরক্ষার জন্য যুদ্ধ করিয়া সমর প্রাঙ্গণে জীবন বিসর্জ্জন করিলে আমার স্বর্গলাভ হইবে।

 ত্রিপুরেশগণের জীবন চরিত “রাজমালা” নামক বঙ্গভাষায় লিখিত গ্রন্থে এই বিষয়ের নিম্নলিপিত রূপ উল্লেখ আছে।



“অখ্যাতি রাখিতে চাহ আমা বংশে তুমি।
বলে, আসি দেখ রঙ্গ যুদ্ধ করি আমি ”

রাজমালা—সেংথুম্‌ফা খণ্ড
 এইরূপে তিনি তদীয় পতি ত্রিপুরেশকে ধিক্কার প্রদানপূর্ব্বক রণ-ডঙ্কা নিনাদ করিতে আদেশ প্রদান করিলেন। 

“এ বলিয়া ঢোলে বাড়ি দিতে আজ্ঞা কৈল।
যত সৈন্য সেনাপতি সব সাজি আইল॥
মহাদেবী জিজ্ঞাসিল বিনয় করিয়া।
কি করিব পুত্র সব কহ বিবেচিয়া।
গৌড় সৈন্য আসিয়াছে যেন যম কাল।
তোমার নৃপতি হৈল বনের শৃগাল॥
যুদ্ধ করিবারে আমি যাইব আপনে।
যেই জন বীর হও চল আমা সনে।
রাণীবাক্য শুনি সবে বীবদর্পে বলে।
প্রতিজ্ঞা করিল যুদ্ধে যাইব সকলে।”

রাজমালা—সেংথুম্‌ফা খণ্ড

 ত্রিপুরসৈনিকগণের উৎসাহ বাক্যে রাণী সন্তুষ্ট হইয়া তাহাদিগকে সেই রজনীতে তৃপ্তির সহিত পান-ভোজন করাইয়া তাহাদিগের উৎসাহ দ্বিগুণ বর্দ্ধন করিলেন।

 পরদিবস প্রত্যুষে ত্রিপুররাজমহিষী “ত্রিপুরাসুন্দরী দেবী” রণবেশে সুসজ্জিত হইয়া শূল হস্তে মত্তমাতঙ্গোপরি আরোহণপূর্ব্বক রণভূমিতে প্রবিষ্ট হন; এবং “চতুর্দ্দশ দেবতা” নামে প্রসিদ্ধ ত্রিপুররাজ-কুলদেবতার নাম উচ্চারণপূর্ব্বক বীরোচিত বাক্যের দ্বারা ত্রিপুর-সেনাগণকে উৎসাহিত করিয়া সমস্ত দিবস যবনগণের সহিত ঘোর সংগ্রামে নিযুক্ত থাকেন। রাণী সমর-প্রাঙ্গণে আবির্ভূত হইলে ত্রিপুরেশ কীর্ত্তিধরও তথায় গমনপূর্ব্বক মহিষীর সহিত যবনসেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করেন।

 মহিষমর্দ্দিনী চণ্ডিকাসাদৃশ সেই রণরঙ্গিণীর ভীষণ সমরে অবিচলিত থাকা যবনগণের সাধ্যবহির্ভূত হইয়া পড়িল। পরিশেষে রবি অস্তাচলগামী হইবার প্রাক্কালে তৎকর্ত্তৃক যুদ্ধক্ষেত্রে তৃণবৎ বিমর্দ্দিত হইয়া অবশিষ্ট যবনসেনা নতশিরে গৌড়াভিমুখে প্রত্যাবর্ত্তন করে।

 এইরূপে স্বনামধন্যা বীরাঙ্গনা “ত্রিপুরাসুন্দরী দেবী” নাম্নী ত্রিপুরাধিপতি কীর্ত্তিধর বা সেংথুমফাব মহিষী যবনগণকে সমবপ্রাঙ্গণে বিধ্বস্ত করিয়া জয়মাল্য ধারণ পূর্ব্বক ত্রিপুররাজ্যেব মুখ উজ্জ্বল কবেন।

 সংস্কৃত ভাষায় লিখিত রাজমালা বা রাজরত্নাকর গ্রন্থ এবং শ্রীহট্টের ইতিহাস প্রভৃতি অপর কতিপয় পুস্তক অবলম্বন পূর্ব্বক হীরাবন্তখাঁর বিষয় লিখিত হইয়াছে। তৎসম্বন্ধে বাঙ্গলা রাজমালায় যেরূপ লিপিবদ্ধ আছে, তাঁহার সহিত এই স্থানে বর্ণিত হীরাবন্তখাঁর বিষয়ের কিঞ্চিৎ পার্থক্য পরিলিক্ষিত হইবে; কিন্তু মূলতঃ বিষয় একই।

 মেজর চার্লস ষ্টুআর্ট কর্ত্তৃক বিরচিত বঙ্গদেশের সুপ্রসিদ্ধ ইতিহাসে এইরূপ উল্লেখ আছে—১২৪৩ খৃষ্টাব্দে জাজিনগরের (ত্রিপুরা) অধিপতির সহিত গৌড়ের শাসনকর্ত্তা তুগান খাঁর কোন বিষয়ে মনোমালিন্য সংঘটিত হওয়াতে তৎকর্ত্তৃক উক্ত প্রদেশ আক্রান্ত হয়। কিন্তু তিনি সেই প্রদেশস্থ নৃপালের দ্বারা যুদ্ধে পরাজিত হইয়া গৌড়ে প্রত্যাবর্ত্তন করেন।

 “জাজিনগর” কোন স্থানে অবস্থিত ছিল এবং উহা কোন্‌ প্রদেশ ইহা নির্দ্ধারণ করা এক জটিল সমস্যার বিষয। উক্ত মেজব ষ্টুআর্ট কর্ত্তৃক লিখিত বাঙ্গালার ইতিহাসের দুই এক স্থানে “জাজিনগর”, “ত্রিপুরা” বলিযা উল্লেখ থাকিলেও উহা ত্রিপুরা অথবা উড়িষ্যার অন্তর্গত বর্ত্তমান “জাজপুর”—এই বিষয়ে তিনি স্থির সিদ্ধান্তে উপস্থিত হইতে সক্ষম হন নাই। তবে তাঁহার বিরচিত ইতিহাস হইতে ইহাও জ্ঞাত হওয়া যায় যে, জাজিনগর ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব্বদিকে অবস্থিত। তাহা হইলে উক্ত জনপদ কোন মতেই উড়িষ্যার অন্তর্ভূত হইতে পাবে না।

 ত্রিপুরা জিলার অন্তর্গত “নুরনগর” পরগণাব মধ্যে অধুনা “কস্‌বা” নামে খ্যাত জনপদেব সান্নিধ্যে “জাজিসাব” নামক যে গ্রাম আছে, সুপ্রাচীনকালে তাহাই “জাজিনগর” নামে প্রসিদ্ধ একটী সমৃদ্ধশালী নগরী হওয়া অতি সম্ভব। এই অঞ্চল অধুনা ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার সঙ্গমস্থলেব সমসূত্রে পূর্ব্ব-দক্ষিণ কোণে ন্যূনাতিরেক ২০ মাইল দূরে অবস্থিত। সম্ভবতঃ সেই সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদ এতদঞ্চলের সন্নিকটে প্রবাহিত হইত; কালক্রমে উহার গতি পরিবর্ত্তন হইয়া দূরে সরিয়া গিয়াছে। নদীর গতি সর্ব্বদাই পরিবর্ত্তনশীল।

 এই সমস্ত বিষয় পর্য্যালোচনা করিলে ইহা স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, তুগান খাঁ অধুনা “জাজিসাব” নামে পরিচিত গ্রামটীই আক্রমণ করিযাছিলেন, এবং সেই যুদ্ধে যে তিনি খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর “কীর্ত্তিধব” বা “সেংথুম্‌ফা” নামে খ্যাত ত্রিপুবাধিপতিব মহিষী “ত্রিপুরাসুন্দরীদেবী” কর্ত্তৃক পবাজিত হইয়া ছিলেন—তৎসম্বন্ধে কোন সন্দেহ থাকিতে পারে না।