বিষয়বস্তুতে চলুন

দুই শিষ্য/উপসংহার

উইকিসংকলন থেকে

উপসংহার।

 যখন থানায় ফিরিয়া আসিলাম, তখন বেলা প্রায় চারটা। সমস্ত দিন অনাহারে থাকিলেও কার্য্য সিদ্ধ হওয়ায় আমার মনে এক প্রকার আনন্দের উদয় হইল।

 থানায় আসিয়া কেদারনাথ আর কোন উচ্চবাচ্য করিলেন না। যে জন্য তাঁহার সহিত বেহারীর বিবাদ হইয়াছিল, যে জন্য তিনি বেহারীর সর্ব্বনাশ সাধন করিতে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন, সকল কথাই একে একে প্রকাশ করিলেন। বেহারীর অপরাধ কিছুই ছিল না। মনোহর গিরি তাঁহাকেই ভাবী সেবায়েৎ করিবেন মনস্থ করায় কেদারনাথের হিংসানল প্রজ্জ্বলিত হইয়াছিল; এবং তিনি সেই অবধি তাহার সর্ব্বনাশ সাধন করিতে চেষ্টা করিতে ছিলেন। কিন্তু পাছে কেহ তাঁহার উপর সন্দেহ করেন, এই ভয়ে কেদারনাথ পুনরায় বেহারীর সহিত সদ্ভাব করিয়াছিলেন। গত কল্য প্রত্যুষে কেদারনাথ বেহারীকে মন্দির হইতে ডাকিয়া আনেন এবং কিছুক্ষণ নিজ বাড়ীতে তাহার সহিত ধর্ম্মচর্চ্চ করিয়া উভয়ে, সেই মাঠের দিকে গমন করেন। বেহারী অনেকবার মন্দিরে যাইবার জন্য ব্যস্ত হইয়াছিলেন কিন্তু কেদারনাথ কৌশলে যাইতে দেন নাই। বেলা একটার পর যখন উভয়ে সেই পথ দিয়া যাইতেছিলেন, তখন হৃষীকেশের সহিত সাক্ষাৎ হয়। কিন্তু কেদারনাথ হৃষীকেশকে দূর হইতে দেখিয়া স্বয়ং ইচ্ছা করিয়া বেহারীর নিকট হইতে কিছুদুর পিছাইয়া পড়েন। এইরূপে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত ঘুরিয়া যখন বেশ অন্ধকার হইয়া আসিল, তখন কেদারনাথ কৌশলে একটা প্রকাণ্ড গহ্বরের নিকট বেহারীকে লইয়া গিয়া সজোরে এমন এক ধাক্কা দিয়াছিলেন যে, বেহারী সেই পতনেই অজ্ঞান হইয়া পড়ে। আরও কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করিয়া কেদারনাথ যখন দেখিলেন, বেহারীর আর সাড়া শব্দ নাই, তখন সেখান হইতে প্রস্থান করিয়াছিলেন। তাহার পর সেদিন আমি সেই গহ্বরের নিকটে জনতা দেখিয়া বলদেবকে পাঠাইয়া দিয়াছিলাম, এ কথা পাঠক মহাশয়ের জানা আছে।

 কেদারনাথের কথায় তাঁহাকেই দোষী বলিয়া সাব্যস্ত করা হইল। বিচারে তাঁহার ফাঁসি হইয়া গেল। তাহার পুত্র সুরেন্দ্রনাথের কোন দোষ পাওয়া গেল না। সে কেবল পিতাকে রক্ষা করিবার জন্য কেদারনাথের প্ররোচনায় মিথ্যা বলিয়াছিল; সুতরাং অব্যাহতি পাইল।

 বেহারীর মৃত্যু সংবাদে মনোহরগিরি মর্ম্মাহত হইয়া পড়িলেন। মন্দিরের অনেক লোকই বেহারীর শোকে কিছুদিন ম্রিয়মান হইয়াছিলেন।

সমাপ্ত।

মাঘ মাসের সংখ্যা

“জ্ঞাতি-শত্রু”