দুই শিষ্য/সপ্তম পরিচ্ছেদ

উইকিসংকলন থেকে

সপ্তম পরিচ্ছেদ।

 কেদারনাথের বাড়ী হইতে প্রায় একশত গজ দূরে এক প্রকাণ্ড বটবৃক্ষ ছিল। সেই বৃক্ষের তলায় ভদ্রলোকের বসিবার উপযোগী দুই তিনখানি বেঞ্চও ছিল। নিকটস্থ ভদ্রমণ্ডলী প্রায় প্রত্যহই সায়ংকালে সেইস্থানে উপবেশন করিয়া গল্প গুজব করিয়া থাকেন।

 কোচমানকে সেইস্থানে গাড়ী রাখিতে আদেশ করিয়া স্বয়ং অবতরণ করিলাম এবং বলদেবকে গাড়ীতে অপেক্ষা করিতে অনুরোধ করিয়া অতি ধীরে ধীরে কেদারনাথের বাড়ীর দিকে যাইতে লাগিলাম।

 যখন কেদারনাথের কুটীরের দরজায় উপস্থিত হইলাম, তখন অনেক বেলা হইয়াছিল। স্নানাহার না করিয়া প্রাতঃকাল হইতেই এই কার্য্যে নিযুক্ত ছিলাম। বেলা অধিক হওয়ায় ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর হইয়া পড়িলাম। কিন্তু কি করিব, যে কার্য্যে আসিয়াছি তাহা শেষ না করিয়া যাইতে পারি না। অগত্যা সেইকুটীর দ্বারে গিয়া চীৎকার করিয়া বলিলাম, “ভিক্ মিলে গা ময়ী? একমুষ্টি আটা মিলে গা মায়ী?”

 আমার চীৎকারে একজন বাহিরে আসিলেন। তাহাকে দেখিয়াই আমার কেমন সন্দেহ হইল। বোধ হইল, তিনিই সেই বালকের পিতা। সুরেন্দ্রনাথের সহিত সেই ব্যক্তির মুখের বেশ সাদৃশ্য আছে। তিনি নিকটে আসিয়া অতি কর্কশস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, কি চাও বাপু?”

 আমি বলিলাম, “একমুষ্টি আটা।”

 তিনি হাসিয়া বলিলেন, “আমিই খাইতে পাই না, তা ভিক্ষা দিব কি? যাও —এখানে কিছু হবে না।”

 আমি হিন্দি ভাষায় জিজ্ঞাসা করিলাম, “নিকটে কোন দেবালয় আছে কি না?” তিনি কালভৈরবের মন্দির নির্দ্দেশ করিলেন। বলিলেন, সেখানে গমন করিলে অনায়াসে আহার সংগ্রহ করিতে পারিবে।

 আমিও সুবিধা পাইলাম। ঈষৎ হাসিয়া বলিলাম, “যদি তাঁহার সহিত মন্দির-স্বামীর আলাপ থাকে, তাহা হইলে আমার নাম দিয়া একখানি পত্র দিলে ভাল হয়।” পত্রের কথায় তিনি যেন বিরক্ত হইলেন। আমিও আর সে কথা তুলিলাম না।

 কিছুক্ষণ পরে আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “শুনিয়াছি, আমার পরম বন্ধু বেহারী নামে কোন সন্ন্যাসী নিকটস্থ কোন দেবালয়ে বাস করেন। আপনি জানেন কি, তিনি কোথায় থাকেন? তাঁহার ন্যায় সাধু ব্যক্তির সহিত আপনার সম্ভাব আছে কি?”

 আমার কথায় তিনি যেন কি সন্দেহ করিলেন। কোন উত্তর করিলেন না,—আমার আপাদ মস্তক ভাল করিয়া নিরীক্ষণ করিলেন। শেষে অতি কর্কশভাবে বলিয়া উঠিলেন, “কে তোমার বেহারী? আমি কোন বেহারীকে জানি না।”

 কথাগুলি এরূপে উচ্চারণ করিলেন যে, আমি স্পষ্টই বুঝিতে পারিলাম, তিনি মিথ্যা বলিতেছেন; তিনি যে রাগান্বিত হইয়াছেন, তাহাও বুঝতে পারিলাম। তত্রাপি বলিলাম, “আপনি একবার ভাল করিয়া স্মরণ করুন। বেহারী নিশ্চয় একজন প্রসিদ্ধ লোক। তাঁহার ন্যায় লোককে আপনি জানেন না, একথা অসম্ভব বলিয়া বোধ হইতেছে। আমি একজন সন্ন্যাসী, আপনি গৃহী ও পুত্রবান হইয়া আমার নিকট মিথ্যা বলিবেন না। ইহাতে পাপ আছে জানিবেন।”

 আমার কথায় তিনি যেন চমকিত হইলেন। কিন্তু তখনই আত্ম সংবরণ করিয়া অতি মিষ্ট কথায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমি পুত্রবান কেমন করিয়া জানিলেন?”

 আমি হাসিয়া বলিলাম, “আপনার অদৃষ্টের ফলরেখা স্পষ্টই দেখা যাইতেছে। আপনি যে পুত্রের পিতা সে বিষয়ে সূক্ষ্মদর্শী মাত্রেই জানিতে পারেন। আমারও যৎসামান্য জ্যোতিষ শাস্ত্র জানা আছে, সেই জন্যই আমি সহজেই আপনাকে পুত্রবান বলিয়া। জানিতে পারিয়াছি।”

 এইরূপ কথাবার্ত্তা হইতেছে, এমন সময়ে বলদেব পদব্রজে সহসা তথায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন এবং তাঁহাকে দেখিবামাত্র বলিয়া উঠিলেন, “এই যে কেদারনাথ বাড়ীতেই আছেন দেখিতেছি; অথচ কিছুক্ষণ পূর্ব্বে এক বালকের মুখে শুনিলাম, ইনি বাড়ীতে নাই।”

 বলদেবকে দেখিয়া আমি স্তম্ভিত হইলাম। কিন্তু কোন কথা বলিলাম না। বলদেবও একজন চতুর ব্যক্তি। তিনি যে আমার সহিত পূর্ব্বে সেখানে আসিয়াছিলেন, সে কথার উল্লেখ করিলেন না; কিম্বা এমন কোন কথাও বলিলেন না যাহাতে কেদারনাথ আমাকে পুলিশ কর্ম্মচারী বলিয়া সন্দেহ করিতে পারেন। বলদেব এমন ভাবে তথায় অপেক্ষা করিতে লাগিলেন, যেন তিনি আমার সম্পূর্ণ অপরিচিত।

 সে যাহা হউক, বলদেব আমাকে বেহারাগিরির কোন কথা জিজ্ঞাসা করিতে না শুনিয়া তিনি স্বয়ং কেদারনাথের দিকে চাহিয়া অতি কর্কশস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেদারনাথ! আমাদের বেহারীগিরি কোথায় গেলেন বলিতে পারেন?”

 বলদেবের কথায় কেদারনাথ যেন আকাশ হইতে পড়িলেন। তিনি রাগতস্বরে চীৎকার করিয়া বলিলেন, “আমি কেমন করিয়া জানিব? আপনাদের বেহারীর সহিত আমার সম্ভাব নাই; আপনি সে কথা বেশ জানেন।”

 কেদারনাথের কথায় বলদেব রাগান্বিত হইলেন। তিনি ক্রোধে অগ্নিশর্ম্মা হইয়া উত্তর করিলেন, “কাল বেলা একটার পর আপনার সঙ্গে বেহারীগিরি কোথায় যাইতেছিলেন? তাহার পর তিনি আর মন্দিরে ফিরিয়া যান নাই।”

 কে। কে বলিল আমার সহিত বেহারীর কাল দেখা হইয়াছিল? বেহারীর সহিত বহুদিন হইতেই আমার বাক্যালাপ নাই।

 ব। আবার ত সদ্ভাব হইয়াছে। কিছুদিন আপনাদিগের মনান্তর হইয়াছিল বটে কিন্তু সে ত আর এখন নাই। আপনাকে আরও কয়েকবার বেহারীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে দেখিয়াছি।

 কেদারনাথ আরও রাগিয়া গেলেন। তিনি ভয়ানক চীৎকার করিয়া বলিলেন, “আপনার মিথ্যা কথা। আমার সহিত বেহারীর আলপ নাই।”

 বলদেবও ভয়ানক রাগান্বিত হইলেন। তিনি ক্রোধে অন্ধ হইয়া অত্যন্ত চীৎকার করিয়া বলিলেন, “তবে আর আমাদের অপরাধ লইবেন না। আমরা পুলিসে সংবাদ দিয়া এখনই আপনাকে গ্রেপ্তার করাইয়া দিব।”

 পুলিসের নাম শুনিয়া কেদারনাথ যেন ভীত হইলেন; তাঁহার কণ্ঠস্বর ক্রমশঃ মৃদু হইয়া আসিল। তিনি কোমলকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন আপনি আমার উপর অন্যায় দোষারোপ করিতেছেন? বহুদিন হইল, আমার সহিত বেহারীর সাক্ষাৎ হয় নাই।

 কেদারনাথের সহসা পরিবর্ত্তনে বলদেব হাসিয়া উঠিলেন। হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “আমরা সন্ন্যাসী মানুষ, মিথ্যা কথা বা অন্যায় আচরণ আমাদের দ্বারা সম্ভব নহে। আপনি যে কার্য্য করিয়াছেন, তাহাতে আপনার উপরই ভয়ানক সন্দেহ হয়, এবং সেই জন্যই আমরা পূর্ব্বেই পুলিসের আশ্রয় গ্রহণ করি। আপনার সম্মুখে এই যে সন্ন্যাসী দেখিতেছেন, ইহাকে সামান্য লোক মনে করবেন না। ইনি প্রকৃত সন্ন্যাসী নহেন।

 বলদেবের কথা শেষ হতে না হইতে কেদারনাথ এক বার চারিদিক অবলোকন করিলেন এবং কাহাকেও কোন কথা না বলিয়া সহসা বলদেবকে এমন এক ধাক্কা দিলেন যে, বলদেব তখনই পড়িয়া গেলেন। কেদারনাথ সেই সুযোগে সেখান হইতে পলায়ন করিতে চেষ্টা করিলেন।

 আমি প্রস্তুত ছিলাম, তখনই কেদারনাথকে ধরিয়া ফেলিলাম। কেদারনাথ বাস্তবিকই একজন বলিষ্ঠ লোক। আমি একা তাঁহাকে সহজে ধরিয়া রাখিতে পারিলাম না। বলদেব তখনও উঠিতে পারেন নাই যে, আমায় সাহায্য করিবেন। তাহার পর এই সকল গোলমাল শুনিয়া সেই বালক বাড়ীর ভিতর হইতে দৌড়িয়া আসিল এবং পিতাকে মুক্ত করিবার জন্য চেষ্টা করিতে লাগিল। আমি প্রাণপণে কেদারনাথকে ধরিয়া রহিলাম। বলদেব তখনই গাত্রোথান করিলেন।

 সৌভাগ্যক্রমে সেই সময়ে একজন কনষ্টেবল সেইদিকে আসিতেছিল। সে দূর হইতে গোলযোগ দেখিয়া দৌড়িয়া নিকটে আসিল এবং আমার অনুরোধে কেদারনাথকে ধরিয়া ফেলিল। ইত্যবসরে বলদেব আসিয়া সেই বালককে গ্রেপ্তার করিলেন।

 আমি তখন সেই কনষ্টেবলের নিকট গিয়া আমার পরিচয় দিলাম। তখনই এক সুদীর্ঘ সেলাম ঠুকিয়া কনষ্টেবল আমার আদেশ অপেক্ষা করিতে লাগিল।

 আমি প্রথমতঃ বলদেবকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “আপনি সহসা এখানে আসিলেন কেন?”

 বলদেব লজ্জিত হইয়া বলিলেন, “আপনার বিলম্ব দেখিয়া আমার সন্দেহ হইল, ভাবিলাম, হয়ত কোন বিপদ ঘটিয়াছে, সেই, কারণে কোচমানকে সেই বটবৃক্ষতলে অপেক্ষা করিতে বলিয়া, স্বয়ং ধীরে ধীরে এই দিকে আসিতে লাগিলাম। দূর হইতে কেদারনগকে দেখিয়া আমার মনে বড়ই আনন্দ হইল, আমি দ্রুতগতি নিকটে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। কিন্তু পাছে প্রথমে আপনার পরিচয় দিলে আপনি রাগান্বিত হন, এই ভয়ে আপনার কোন কথা বলি নাই। অবশেষে যখন বুঝলাম যে, কেদারনাথ বড় সহজ লোক নহেন, পুলিসের উৎপীড়ন ভিন্ন কোন কথা স্বীকার করবে না, তখন অগত্যা সকল কথা প্রকাশ করিলাম।”

 বলদেবের কথায় আমি সন্তুষ্ট হইলাম। পরে কেদারনাথকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “আপনি কি এখনও অস্বীকার করিতেছেন?”

 কেদারনাথ চমকিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কিসে?

 আ। কাল আপনার সহিত বেহারীগিরির সাক্ষাৎ হইয়াছিল। কি না?

 কেদারনাথ কিছুক্ষণ ভাবিয়া উত্তর করিলেন, “আজ্ঞে— হইয়াছিল।”

 আ। কখন?

 কে। ঠিক স্মরণ নাই—বোধ হয় দ্বিপ্রহরের পরে।

 আ। কোথায়?

 কে। এখান হইতে কিছু দূরে একটা প্রকাণ্ড মাঠ আছে, সেই মাঠের নিকট দিয়া এক সরকারী পথ উত্তরাভিমুখে চলিয়া গিয়াছে; বেহারীর সহিত সেই পথেই দেখা হইয়াছিল।

 আ। আপনার সহিত সম্প্রতি তাহার সদ্ভাব আছে?

 কে। আজ্ঞে না-পূর্ব্বে ছিল। বিশেষ কোন কারণে আমাদের মনান্তর হয়।

 আমি হাসিয়া বলিলাম, “সে সকল কারণ আমার জানা আছে। কিন্তু আপনাদের ত পুনরায় সদ্ভাব হইয়াছিল?”

 কে। সদ্ভাব নাই, তবে সামান্য আলাপ আছে মাত্র।

 আ। কাল যখন দেখা হইয়াছিল, তখন কোনরূপ কথাবার্ত্তা হইয়াছিল?

 কেদারনাথ কিছুক্ষণ চিন্তা করিয়া বলিলেন, “আজ্ঞে না—কোন কথা হয় নাই। দেখা হইলে আমরা উভয়েই ঈষৎ হাসিয়া সম্ভাষণ করিয়াছিলাম, বাক্যালাপ করি নাই।”

 আ। বেহারী এখন কোথায় বলিতে পারেন।

 কে। নিশ্চয়ই মন্দিরে আছেন।

 আ। না—তিনি কাল প্রাতঃকাল হইতে মন্দিরে ফিরিয়া যান নাই।

 কেদারনাথ আশ্চর্যান্বিত হইলেন। তিনি ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, “ধর্ম্মের ভাণ করিয়া যেহারী যে সকল কার্য্য করেন, তাহাতে তাঁহাকে অতি নীচ প্রকৃতির লোক বলিয়া বোধ হয়। হয় ত তিনি কোন স্ত্রীলোকের প্রেমে মুগ্ধ হইয়াছেন।”

 বলদেব এতক্ষণ কোন কথা কহেন নাই। কিন্তু কেদারনাথের শেষ কথা শুনিয়া তিনি আর স্থির থাকিতে পারিলেন না। চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিলেন, “আপনার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”

 আমারও সেইরূপ বোধ হইল। আমি অতি কর্কশ স্বরে বলিয়া উঠিলাম, “যদি আপনি বেহারীর কোন সন্ধান বলিতে না পারেন, তাহা হইলে আপনাকে এখনই থানায় চালান দিব। আপনার পুত্রকেও ছাড়িয়া দিব না। আপনি পিতা হইয়া এই অল্পবয়স্ক বালককে যে প্রকার মিথ্যা কথা শিখাইয়াছিলেন, তাহাতে আপনাকেই প্রকৃত অপরাধী বলিয়া বোধ হইতেছে। হয় আপনি বেহারীর সন্ধান বলিয়া দিন, না হয় থানায় চলুন।”

 আমার কথায় কেদারনাথের ভয় হইল। তিনি অতি বিনীত ভাবে বলিলেন, “বেহারী কোথায় কেমন করিয়া বলিব?

 আ। কখন আপনার সহিত তাঁহার শেষ দেখা হয়?

 কে। বোধ হয় তখন বেলা পাঁচটা।

 আ। এই বলিলেন, দ্বিপ্রহরের পর আপনাদের দেখা হয়। তবে কি আপনারা চারিঘণ্টাকাল একত্রে ছিলেন?

 কে। আজ্ঞে না। দুইবার দেখা হইয়াছিল। শেষবার বেলা পাঁচটার সময়।

 আ। তাহার পর বেহারী কোথায় যান?

 কে। জানি না।

 আ। আপনি জিজ্ঞাসা করেন নাই?

 কে। না।

 আ। কোথায় শেষবার দেখা হইয়াছিল?

 কে। সেই পথে।

 আ। আপনিই বা ততক্ষণ সেখানে ছিলেন কেন?

 কে। বিশেষ কারণ ছিল। কোন লোকের জন্য আমি সেখানে অপেক্ষা করিতেছিলাম।

 আমি আর কোন কথা জিজ্ঞাসা না করিয়া বলদেব ও কেদারনাথকে লইয়া শকটে আরোহণ করিলাম, পরে কনষ্টেবলের হস্তে সেই বালকের ভার অর্পণ করিয়া কেদারনাথের কথামত কোচমানকে শকট চালনা করিতে আদেশ করিলাম।

 অর্ধঘণ্টার পরই আমরা মাঠের ধারে সেই পথে উপস্থিত হইলাম। গাড়ী হইতে অবতরণ করিতেছি, এমন সময়ে কতকগুলি, লোককে একস্থানে দাঁড়াইয়া গোলযোগ করিতে দেখিতে পাইলাম। একবার মনে হইল, শকট হইতে অবতরণ করিয়া ব্যাপার কি দেখি। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবিলাম, তাহা হইলে হয়ত কেদারনাথ পলায়ন করিবে।

 এই সাব্যস্ত করিয়া আমি বলদেবকে সেই জনতার নিকট পাঠাইয়া দিলাম। বলদেব তখনই আমার অনুরোধ রক্ষা করিলেন এবং তখনই সেই জনতার নিকট গমন করিলেন। কিন্তু অবিলম্বে দৌড়িতে দৌড়িতে আমার নিকট ফিরিয়া আসি। চীৎকার করিয়া বালকের মত রোদন করিতে লাগিলেন।

 আমি বলদেবের ব্যবহারে স্তম্ভিত হইলাম। কিন্তু তখন কোন কথা জিজ্ঞাসা করিলাম না। কিছুক্ষণ পরে তিনি কিয়ৎ পরিমাণে শান্ত হইয়া আমার দিকে চাহিয়া বলিলেন, “সর্ব্বনাশ হইযাছে দারোগা বাবু! যেখানে ঐ জনতা দেখিতে পাইতেছেন, তাহারই নিকটে বেহারীর লাস পড়িয়া রহিয়াছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কেদারনাথই উহাকে খুন করিয়া মাঠে ফেলিয়া দিয়াছে।”

 আর কোন কথা জিজ্ঞাসা না করিয়া আমি আমার উত্তরীয় দ্বারা তাহাকে উত্তমরূপে বন্ধন করিলাম। পরে কোচমান ও বলদেবকে তাহার প্রহরী স্বরূপ রাখিয়া আমি সেই মৃতদেহের নিকট গমন করিলাম এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই উহাকে যথাস্থানে প্রেরণ করিলাম।

 তাহার পর শকটের নিকট আগমন করিয়া কেদারনাথের দিকে ফিরিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “এখনও কি অস্বীকার করেন?”

 কেদারনাথ কোন উত্তর করিলেন না। আমি তখন শকটে আরোহণ করিয়া কোচমানকে থানার দিকে যাইতে আদেশ করিলাম।