ধম্মপদ/আত্ম বর্গ

উইকিসংকলন থেকে

দ্বাদশ সর্গ—আত্মবর্গ।

যদ্যপি আত্মাকে কর প্রিয় বলি জ্ঞান
তাহাকে উত্তমরূপে করিবে রক্ষণ;
ন্যূনকল্পে একযাম ত্রিযাম ভিতর
জাগরিত রহিবেন পণ্ডিত-প্রবর॥১॥১৫৭॥
আপনাকে কর্ত্তব্যেতে করিয়া নিবেশ
তৎপরে অপর লোকে দিবে উপদেশ;
সুধীগণ এইরূপ করি ব্যবহার
সংসারের ক্লেশ হ’তে পাইবে নিস্তার॥২॥
অন্যকে করিতে যাহা উপদেশ দাও,
আপনি করিয়া তাহা দৃষ্টান্ত দেখাও;
পরকে দমন কর সংযত হইয়া,
আত্মাকে জানিও অতি দুর্দ্দম বলিয়া॥৩॥
আত্মাই আত্মার নাথ, কেবা নাথ আর?[১]
হইয়াছে নিজ আত্মা সুসংযত যা’র

মিলিবে দুর্ল্লভ নাথ ভাগ্যেতে তাহার
জানিবে সংসারে সবে এই তত্ত্ব সার॥৪॥১৬০॥
যেমন প্রস্তরময় মণিকে সুন্দর
খণ্ড বিখণ্ডিত করে হীরক সুধার,
আত্মকৃত, আত্মজাত, আত্মসম্ভাবিত
পাপ তথা মূঢ়জনে করয়ে মথিত॥৫॥
শালতরু লতাজালে আচ্ছন্ন হইয়া
লতার বেষ্টন হ’তে উদ্ধার পাইয়া
আত্মরক্ষা করিবারে পারে না যেমন,
দুঃশীলতা সমাচ্ছন্ন সেরূপ সেজন—

পতন অবশ্যম্ভাবী জানিয়া তাহার
শত্রুর মানসে হয় আনন্দ অপার॥৬॥
অসাধু অহিতকার্য্য জানিবে সুকর
সাধু হিতকর কার্য্য অতীব দুষ্কর॥৭॥
যে নির্ব্বোধ পাপ পথ করিয়া শরণ,
না মানিয়া আর্য্য-সাধু-অর্হিত-শাসন,
কট‍্ঠকের ফল তুল্য এ ভব সংসারে,[২]
আপন নাশের পথ আপনি সে করে॥৮॥
নিজে পাপ করে লোক নিজে কষ্ট পায়,
নিজে পাপ না করিলে পবিত্র সে রয়
শুদ্ধি বা অশুদ্ধি ন্যস্ত নিজের উপরে
একজন অন্যে শুদ্ধ করিতে না পারে॥৯॥
পরকীয় কর্ত্তব্যের করিতে সাধন
নিজ হিতকর কার্য্য ক'রোনা বর্জ্জন;

আপনার হিতকার্য্য জানিয়া বিশেষ
তাহাতে আপন মতি করিবে নিবেশ॥১০॥


    হিন্দু দেবতাদিগের নামও বহুস্থলে উল্লেখ করিয়াছেন; যখন তাঁহার নূতন ধর্ম্মমত প্রচার করেন, তখন এদেশে যে সকল দেবমূর্ত্তি পূজিত হইতেন, তিনি তর্কবলে তাহাদের অস্তিত্ব উড়াইয়া দিবার চেষ্টা করেন নাই। ধম্মপদ গ্রন্থে বহু স্থলে ইন্দ্র, অগ্নি, যম প্রভৃতি দেবতার উল্লেখ আছে। বুদ্ধ বলেন লোক ধর্ম্মপথে থাকিয়া সৎকর্ম্ম করিলে মরণান্তে দেবলোক প্রাপ্ত হয় এবং পাপাচারী হইলে প্রেতাসুরনিষেবিত নরকে গমন করে। ৪র্থ―১, ৫ম―১৩, ৭ম―৫, ও ৯ম―১১ শ্লোক দ্রষ্টব্য।

  1. বুদ্ধের নিরীশ্বর বাদ অস্বীকার করিবার উপায় নাই; এই সকল শ্লোক হইতে তাহার সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়। তবে
  2. এ স্থলে কট‍্ঠাক্ বা কাষ্টক বলিতে, যাহাদের ফল পাকিলে গাছ মরিয়া যায়, এরূপ ওষধি বৃক্ষ মাত্রকেই বুঝাইতেছে।