নটীর পূজা/দ্বিতীয় অঙ্ক

উইকিসংকলন থেকে

দ্বিতীয় অঙ্ক

রাজোদ্যান

লোকেশ্বরী ও মল্লিকা

মল্লিকা

 পুত্রের সঙ্গে তো দেখা হল মহারানী। তবে এখনো কেন—

লোকেশ্বরী

 পুত্রের সঙ্গে? পুত্র কোথায়। এ যে মৃত্যুর চেয়ে বেশি। আগে বুঝতে পারিনি।

মল্লিকা

 এমন কথা কেন বলছেন।

লোকেশ্বরী

 পুত্র যখন অপুত্র হয়ে মার কাছে আসে তার মতো দুঃখ আর নেই। কী রকম করে সে চাইলে আমার দিকে। তার মা একেবারে লুপ্ত হয়ে গেছে— কোথাও কোনো তার চিহ্নও নেই। নিজের এতবড়ো নিঃশেষে সর্বনাশ কল্পনাও করতে পারতুম না।

মল্লিকা

 রক্তমাংসের জন্মকে সম্পূর্ণ ঘুচিয়ে ফেলে এঁরা যে নির্মল নূতন জন্ম লাভ করেন।

লোকেশ্বরী

 হায় রে রক্তমাংস। হায় রে অসহ্য ক্ষুধা, অসহ্য বেদনা। রক্তমাংসের তপস্যা এদের এই শূন্যের তপস্যার চেয়ে কি কিছুমাত্র কম।

মল্লিকা

 কিন্তু যাই বল দেবী, তাঁকে দেখলেম, সে কী রূপ। আলো দিয়ে ধোওয়া যেন দেবমূর্তিখানি।

লোকেশ্বরী

 ওই রূপ নিয়ে তার মাকে সে লজ্জা দিয়ে গেল। যে মায়ের প্রাণ আমার নাড়ীতে, যে মায়ের স্নেহ আমার হৃদয়ে, তাকে ওই রূপ ধিক‍্কার দিলে। যে-জন্ম তাকে দিয়েছি আমি, সে-জন্মের সঙ্গে তার এ-জন্মের কেবল যে বিচ্ছেদ তা নয়, বিরোধ। দেখ্ মল্লিকা আজ খুব স্পষ্ট করে বুঝতে পারলেম এ ধর্ম পুরুষের তৈরি। এ ধর্মে মা ছেলের পক্ষে অনাবশ্যক; স্ত্রীকে স্বামীর প্রয়োজন নেই। যারা না পুত্র না স্বামী না ভাই সেই সব ঘরছাড়াদের একটুখানি ভিক্ষা দেবার জন্যে সমস্ত প্রাণকে শুকিয়ে ফেলে আমরা শূন্য ঘরে পড়ে থাকব! মল্লিকা, এই পুরুষের ধর্ম আমাদের মেরেছে, আমরাও একে মারব।

মল্লিকা

 কিন্তু দেবী, দেখনি, মেয়েরাই যে দলে দলে চলেছে বুদ্ধকে পূজা দেবার জন্যে।

লোকেশ্বরী

 মূঢ় ওরা, ভক্তি করবার ক্ষুধার ওদের অন্ত নেই। যা ওদের সবচেয়ে মারে তাকেই ওরা সবচেয়ে বেশি করে দেয়। এই মোহকে আমি প্রশ্রয় দিইনে।

মল্লিকা

 মুখে বলছ, মহারানী। নিশ্চয় জানি, তোমার ওই পুত্র আজ তোমার সেবাকক্ষের দ্বার দিয়ে বেরিয়ে এসে তোমার পূজাকক্ষের দ্বার দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছে। তোমার মানব-পুত্র কোল থেকে নেমে আজ দেবতা-পুত্র হয়ে তোমার হৃদয়ের পূজাবেদিতে চড়ে বসেছে।

লোকেশ্বরী

 চুপ চুপ। বলিসনে। আমি হাত জোড় করে তাকে অনুরোধ করলেম, বললেম, “একরাত্রির জন্যে তোমার মাতার ঘরে থেকে যাও।” সে বললে, “আমার মাতার ঘরের উপরে ছাদ নেই— আছে আকাশ।” মল্লিকা, যদি মা হতিস তো বুঝতিস কতবড়ো কঠিন কথা। বজ্র দেবতার হাতের কিন্তু সে তো বজ্র। বুক বিদীর্ণ হয়ে যায়নি। সেই বিদীর্ণ বুকের ছিদ্রের ভিতর দিয়ে ওই যে রাস্তার শ্রমণদের গর্জন আমার পাঁজরগুলোর ভিতরে প্রতিধ্বনিত হয়ে বেড়াচ্ছে—বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি, ধম্মং সরণং গচ্ছামি, সংঘং সরণং গচ্ছামি।

মল্লিকা

 একি মহারানী, মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আজো আপনি যে নমস্কার করেন।

লোকেশ্বরী

 ওই তো বিপদ। মল্লিকা, দুর্বলের ধর্ম মানুষকে দুর্বল করে। দুর্বল করাই এই ধর্মের উদ্দেশ্য। ষত উঁচু মাথাকে সব হেঁট করে দেবে। ব্রাহ্মণকে বলবে সেবা করো, ক্ষত্রিয়কে বলবে ভিক্ষা করো। এই ধর্মের বিষ অনেকদিন স্বেচ্ছায় নিজের রক্তের মধ্যে পালন করেছি। সেইজন্যে আজ আমিই একে সবচেয়ে ভয় করি। ওই কে আসছে?

মল্লিকা

 রাজকুমারী বাসবী। পূজাস্থলে যাবার জন্যে প্রস্তুত হয়ে এসেছেন।

বাসবীর প্রবেশ

লোকেশ্বরী

 পূজায় চলেছ?

বাসবী

 হাঁ।

লোকেশ্বরী

 তোমাদের তো বয়স হয়েছে।

বাসবী

 আমাদের ব্যবহারে তার কি কোনো বৈলক্ষণ দেখছেন।

লোকেশ্বরী

 শিশু! তোমরা নাকি বলে বেড়োচ্ছ, অহিংসা পরমো ধর্মঃ।

বাসবী

 আমাদের চেয়ে যাঁদের বয়স অনেক বেশি তাঁরাই বলে বেড়াচ্ছেন, আমরা তো কেবল মুখে আবৃত্তি করি মাত্র।

লোকেশ্বরী

 নির্বোধকে কেমন করে বোঝাব অহিংসা ইতরের ধর্ম। হিংসা ক্ষত্রিয়ের বিশাল বাহুতে মাণিক্যের অঙ্গদ, নিষ্ঠুর তেজে দীপ্যমান।

বাসবী

 শক্তির কি কোমল রূপ নেই।

লোকেশ্বরী

 আছে, যখন সে ডোবায়। যখন সে দৃঢ় করে বাঁধে তখন না। পর্বতকে সৃষ্টিকর্তা নির্দয় পাথর দিয়ে গড়েছেন, পাঁক দিয়ে নয়। তোমাদের গুরুর কৃপায় উপর থেকে নিচে পর্যন্ত সবই কি হবে পাঁক। রাজবাড়িতে মানুষ হয়েও এই কথাটা মানতে ঘৃণা হয় না? চুপ করে রইলে যে?

বাসবী

 ভেবে দেখছি, মহারানী।

লোকেশ্বরী

 ভাববার কী আছে। চোখের সামনে দেখলে তো, রাজপুত্র একমুহূর্তে রাজা হতে ভুলে গেল। বলে গেল চরাচরকে দয়া করবার সাধনা করব। শোননি, বাসবী?

বাসবী

 শুনেছি।

লোকেশ্বরী

 তাহলে নির্দয়তা করবার গুরুতর কাজ গ্রহণ করবে কে। কেউ যদি না করে তবে বীরভোগ্যা বসুন্ধরার কী গতি। যত সব মাথা-হেঁট-কর। উপবাসজীর্ণ ক্ষীণকণ্ঠ মন্দাগ্নিম্লান নির্জীবের হাতে তার দুর্গতির কি সীমা থাকবে। তোরা ক্ষত্রিয়ের মেয়ে, কথাটা তোদের কাছে এত নতুন ঠেকছে কেন বাসবী।

বাসবী

 এই পুরোনো কথাটা হঠাৎ আজ যেন একদিনে ঢাকা পড়ে গেছে—বসন্তে নিষ্পত্র কিংশুকের শাখা যেমন করে ফুলে ঢেকে যায়।

লোকেশ্বরী

 কখনো কখনো বুদ্ধিভ্রংশ হয়ে পুরুষ আপন পৌরুষধর্ম ভুলে যায় কিন্তু নারীরা যদি তাকে সেটা ভুলতে দেয় তাহলে মরণ যে সেই নারীর। মহালতার জন্যে কি মহাবৃক্ষের দরকার নেই। সব গাছই গুল্ম হয়ে গেলে কি তার পক্ষে ভালো। বল্ না। মুখে যে উত্তর নেই।

বাসবী

 মহাবৃক্ষ চাই বই কি।

লোকেশ্বরী

 কিন্তু বনস্পতি নির্মূল করবার জন্যেই এসেছেন তোমাদের গুরু। তাও যে পরশুরামের মতো কুঠার হাতে করবেন এমন শক্তি নেই। কোমল শাস্ত্রবাক্যের পোকা তলার তলায় লাগিয়ে দিয়ে মনুষ্যত্বের মজ্জাকে জীর্ণ করবেন, বিনা যুদ্ধে পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রিয় করে দেবেন। তাঁদেরও কাজ সারা হবে আর তোমরা রাজার মেয়েরা মাথা মুড়িয়ে ভিক্ষাপাত্র হাতে পথে পথে ফিরবে। তার আগেই যেন মরো আমার এই আশীর্বাদ। কী ভাবছ? কথাটা মনে লাগছে না?

বাসবী

 ভালো করে ভেবে দেখি।

লোকেশ্বরী

 ভেবে দেখবার দরকার নেই, প্রমাণ দেখো। আর্যপুত্র বিম্বিসার, ক্ষত্রিয় রাজা, রাজত্ব তো তাঁর ভোগের জিনিস নয়, তাতেই তাঁর ধর্ম সাধনা। কিন্তু কোন্ মরুর ধর্ম কানে মন্ত্র দিল অমনি কত সহজেই রাজত্ব থেকে তিনি খসে পড়লেন—অস্ত্র হাতে না, রণক্ষেত্রে না, মৃত্যুর মুখে না। বাসবী, একদিন তুমিও রাজার মহিষী হবে এ আশা কি ত্যাগ করেছ।

বাসবী

 কেন ত্যাগ করব।

লোকেশ্বরী

 তাহলে জিজ্ঞাসা করি দয়া-মন্ত্রের হাওয়ায় যে-রাজা সিংহাসনের উপর কেবল টলমল করে, রাজদও যার হাতে শিথিল, জয়তিলক যার ললাটে ম্লান তাকে শ্রদ্ধা করে বরণ করতে পারবে?

বাসবী

 না।

লোকেশ্বরী

 আমার কথাটা বলি। মহারাজ বিম্বিসার সংবাদ পাঠিয়েছেন তিনি আজ আসবেন। তাঁর ইচ্ছা আমি প্রস্তুত থাকি। তোমরা ভাবছ ওঁর জন্যে সাজব! যে-মানুষ রাজাও নয় ভিক্ষুও নয়, যে-মানুষ ভোগেও নেই ত্যাগেও নেই তাকে অভ্যর্থনা! কখনো না। বাসবী, তোমাকে বারবার বলছি, এই পৌরুষহীন আত্মাবমাননার ধর্মকে কিছুতে স্বীকার কোরো না!

মল্লিকা

 রাজকুমারী, কোথায় চলেছ?

বাসবী

 ঘরে।

মল্লিকা

 এদিকে নটী যে প্রস্তুত হয়ে এল।

বাসবী

 থাক্ থাক্।

প্রস্থান

মল্লিকা

 মহারানী, শুনতে পাচ্ছ?

লোকেশ্বরী

 শুনছি বই কি। বিষম কোলাহল।

মল্লিকা

 নিশ্চয় এঁরা এসে পড়েছেন।

লোকেশ্বরী

 কিন্তু ওই যে এখনো শুনছি, নমো—

মল্লিকা

 সুর বদলেছে। ‘নমো বুদ্ধায়’ গর্জন আরো প্রবল হয়ে উঠেছে আঘাত পেয়েই। সঙ্গে সঙ্গে ওই শোনো— ‘নমঃ পিনাকহস্তায়'। আর ভয় নেই।

লোকেশ্বরী

 ভাঙল রে ভাঙল। যখন সব ধুলো হয়ে যাবে তখন কে জানবে ওর মধ্যে আমার প্রাণ কতখানি দিয়েছিলেম। হায় রে, কত ভক্তি। মল্লিকা, ভাঙার কাজটা শীঘ্র হয়ে গেলে বাঁচি—ওর ভিতটা যে আমার বুকের মধ্যে।

রত্নাবলীর প্রবেশ

 রত্না, তুমিও চলেছ পূজায়?

রত্নাবলী

 ভ্রমক্রমে পূজ্যকে পূজা না করতে পারি কিন্তু অপূজ্যকে পূজা করার অপরাধ আমার দ্বারা ঘটে না।

লোকেশ্বরী

 তবে কোথায় যাচ্ছ।

রত্নাবলী

 মহারানীর কাছেই এখানে এসেছি। আবেদন আছে।

লোকেশ্বরী

 কী, বলো।

রত্নাবলী

 ওই নটী যদি এখানে পূজার অধিকার পায় তাহলে এই অশুচি রাজবাড়িতে বাস করতে পারব না।

লোকেশ্বরী

 আশ্বাস দিচ্ছি আজ এ পূজা ঘটবে না।

রত্নাবলী

 আজ না হোক কাল ঘটবে।

লোকেশ্বরী

 ভয় নেই, কন্যা, পূজাকে সমূলে উচ্ছেদ করব।

রত্নাবলী

 যে অপমান সহ্য করেছি তাতেও তার প্রতিকার হবে না।

লোকেশ্বরী

 তুমি রাজার কাছে অভিযোগ করলে নটীর নির্বাসন, এমন কি, প্রাণদণ্ডও হোতে পারে।

রত্নাবলী

 তাতে ওর গৌরব বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

লোকেশ্বরী

 তবে তোমার কী ইচ্ছা।

রত্নাবলী

 ও যেখানে পূজারিনী হয়ে পূজা করতে যাচ্ছিল সেখানেই ওকে নটী হয়ে নাচতে হবে। মল্লিকা, চুপ করে রইলে যে। তুমি কী বল?,

মল্লিকা

 প্রস্তাবটা কৌতুকজনক।

লোকেশ্বরী

 আমার মন সায় দিচ্ছে না রত্না।

রত্নাবলী

 ওই নটীর ’পরে মহারানীর এখনো দয়া আছে দেখছি।

লোকেশ্বরী

 দয়া! কুকুর দিয়ে ওর মাংস ছিঁড়ে খাওয়াতে পারি। আমার দয়া! অনেকদিন ওখানে নিজের হাতে পূজা দিয়েছি। পূজার বেদি ভেঙে পড়বে সেও সইতে পারি। কিন্তু রাজরানীর পূজার আসনে আজ নটীর চরণাঘাত!

রত্নাবলী

 প্রগলভতা মাপ করবেন। ওইটুকু ব্যথাকে যদি প্রশ্রয় দেন তবে ওই ব্যথার উপরেই ভাঙা পূজার বেদি বারেবারে গড়ে উঠবে।

লোকেশ্বরী

 সে-ভয় মনে একেবারে নেই তা নয়।

রত্নাবলী

 মোহে পড়ে যে-মিথ্যাকে মান দিয়েছিলেন তাকে দূরে সরিয়ে দিলেই মোহ কাটে না। সেই মিথ্যাকে অপমান করুন তবে মুক্তি পাবেন।

লোকেশ্বরী

 মল্লিকা, ওই শোনো। উদ্যানের উত্তরদিক থেকে শব্দ আসছে। ভেঙে ফেললে, সব ভেঙে ফেললে। ওঁ নমো—যাক যাক ভেঙে যাক।

রত্নাবলী

 চলো না, মহারানী, দেখে আসি গে।

লোকেশ্বরী

 যাব যাব, কিন্তু এখনো না।

রত্নাবলী

 আমি দেখে আসি গে।

প্রস্থান

লোকেশ্বরী

 মল্লিকা, বাঁধন ছিঁড়তে বড়ো বাজে।

মল্লিকা

 তোমার চোখ দিয়ে যে জল পড়ছে।

লোকেশ্বরী

 ওই শোনো না, ‘জয় কালী করালী’—অন্য ধ্বনিটা ক্ষীণ হয়ে এল, এ আমি সইতে পারছিনে।

মল্লিকা

 বুদ্ধের ধর্মকে নির্বাসিত করলে আবার ফিরে আসবে —অন্য ধর্ম দিয়ে চাপা না দিলে শান্তি নেই। দেবদত্তের কাছে যখন নূতন মন্ত্র নেবে তখনি সান্ত্বনা পাবে।

লোকেশ্বরী

 ছি ছি, বোলো না, বোলো না, মুখে এনো না। দেবদত্ত ক্রূর সর্প, নরকের কীট। যখন অহিংসাব্রত নিয়েছিলেম তখনো মনে মনে তাকে প্রতিদিন দগ্ধ করেছি, বিদ্ধ করেছি। আর আজ! যে-আসনে আমার সেই পরমনির্মল জ্যোতির্ভাসিত মহাগুরুকে নিজে এনে বসিয়েছি তাঁর সেই আসনেই দেবদত্তকে ডেকে আনব!

জানু পাতিয়া

ক্ষমা করো প্রভু, ক্ষমা করো। দ্বারত্রয়েণ কৃতং সবং অপরাধং ক্ষমতু মে প্রভো।

উঠিয়া

ভয় নেই, মল্লিকা, ভিতরে উপাসিকা আছে সে ভিতরেই থাক্, বাইরে আছে নিষ্ঠুরা, আছে রাজকুলবধূ, তাকে কেউ পরাস্ত করতে পারবে না। মল্লিকা, আমার নির্জন ঘরে গিয়ে বসি গে, যখন ধুলার সমুদ্রে আমার এতকালের আরাধনার তরণী একেবারে ডুবে যাবে তখন আমাকে ডেকো।

উভয়ের প্রস্থান। ধূপ দীপ গন্ধমাল্য মঙ্গলঘট প্রভৃতি

পুজোপকরণ লইয়া রাজবাটীর একদল নারীর প্রবেশ।

পুষ্পপাত্রকে ঘিরিয়া সকলে

 বণ্ন-গন্ধ-গুণোপেতং এতং কুসুমসন্ততিং

 পূজয়ামি মুনিন্দস সিরি-পাদ-সরোরুহে।৷

প্রণাম ও শঙ্খধ্বনি। ধূপপাত্রকে ঘিরিয়া

গন্ধ-সম্ভার-যুত্তেন ধূপেনাহং সুগন্ধিন
পূজয়ে পূজনেয্যন্ত্যং পূজাভাজনমুত্তমং॥

শঙ্খধ্বনি ও প্রণাম

শ্রীমতী

প্রদীপের থালা ঘিরিয়া

ঘনসারপ্পদিত্তেন দীপেন তমধংসিনা।
তিলোকদীপং সম্বুদ্ধং পূজয়ামি তমোসুদং।৷

শঙ্খধ্বনি ও প্রণাম। আহার্য নৈবেদ্য ঘিরিয়া

অধিবাসেতু নো ভন্তে ভোজনং পরিকল্পিতং
অনুকম্পং উপাদায় পতিগণহাতুমুত্তমং।

শঙ্খধ্বনি ও প্রণাম। জানু পাতিয়া

যো সন্নিসিন্নো বরোবোধিমূলে
মারং সসেনং মহতিং বিজেত্বা
সম্বোধিমাগঞ্ছি অনন্তঞাণো
লোকুত্তমো তং পণমামি বুদ্ধং।

বনের প্রবেশপথে পূজ। সমাধা হল। এবার চলো স্তূপমূলে।

মালতী

 কিন্তু শ্রীমতীদিদি, ওই দেখো, এদিকের পথ বেড়া দিয়ে বন্ধ।

শ্রীমতী

 বেড়া ডিঙিয়ে যেতে পারব, চলো।

নন্দা

 বোধ হচ্ছে রাজার নিষেধ।

শ্রীমতী

 কিন্তু প্রভুর আদেশ আছে।

নন্দা

 কী ভয়ংকর গর্জন। একি রাষ্ট্রবিপ্লব।

শ্রীমতী

 গান ধরো।

গান

বাঁধন-ছোঁড়ার সাধন হবে।
ছেড়ে যাব তীর মাভৈঃ রবে।
যাঁহার হাতের বিজয়মালা
রুদ্রদাহের বহ্নিজ্বালা,
নমি নমি নমি সে ভৈরবে।
কাল-সমুদ্রে আলোর যাত্রী
শূন্যে যে ধায় দিবসরাত্রি।
ডাক এল তার তরঙ্গেরি,
বাজুক বক্ষে বজ্রভেরি
অকূল প্রাণের সে উৎসবে।৷

একদল অস্তঃপুররক্ষিণীর প্রবেশ

রক্ষিণী

 ফেরো তোমরা এখান থেকে।

শ্রীমতী

 আমরা প্রভুর পূজায় চলেছি।

রক্ষিণী

 পুজা বন্ধ।

মালতী

 আজ প্রভুর জন্মোৎসব।

রক্ষিণী

 পুজা বন্ধ।

শ্রীমতী

 এও কি সম্ভব।

রক্ষিণী

 পূজা বন্ধ। আমি আর কিছু জানিনে। দাও। তোমাদের অর্ঘ্য।

পূজার থালা প্রভৃতি ছিনাইয়া লইল

শ্রীমতী

এ কী পরীক্ষা আমার। অপরাধ কি ঘটেছে কিছু।

 উত্তমঙ্গেন বন্দেহং পাদপংসু বরুত্তমং

 বুদ্ধে যো খলিতো দোসো বুদ্ধো খমতু তং মম।

রক্ষিণী

 বন্ধ করো স্তব।

শ্রীমতী

 দ্বারের কাছেই অবরোধ! প্রবেশ আমার ঘটল না ঘটল না।

মালতী

 কাঁঁদ কেন শ্রীমতীদিদি। বিন! অর্ঘ্যে বিনা মন্ত্রে কি পূজা হয় না। ভগবান তো আমাদের মনের ভিতরেও জন্মলাভ করেছেন।

শ্রীমতী

 শুধু তাই নয় মালতী, তাঁর জন্মে আমরা সবাই জন্মেছি। আজ সবারই জন্মোৎসব।

নন্দা

 শ্রীমতী, হঠাৎ একমুহূর্তে আজ এমন দুর্দিন ঘনিয়ে এল কেন।

শ্রীমতী

 দুর্দিনই যে সুদিন হয়ে ওঠবার দিন আজ। যা ভেঙেছে তা জোড়া লাগবে, যা পড়েছে তা উঠবে আবার।

অজিত।

 দেখো শ্রীমতী, এখন আমার মনে হচ্ছে তোমাকে যে পুজার ভার দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে নিশ্চয় ভুল আছে। সব তাই নষ্ট হল। গোড়াতেই আমাদের বোঝা উচিত ছিল।

শ্রীমতী

 আমি ভয় করিনে। জানি প্রথম থেকেই কেউ মন্দিরে দ্বার খোলা পায় না। ক্রমে যায় আগল খুলে। তবু আমার বলতে কোনো সংকোচ নেই যে, প্রভু আহ্বান করেছেন আমাকে। বাধা যাবে কেটে। আজই যাবে।

ভদ্রা

 রাজার বাধাও সরাতে পারবে?

শ্রীমতী

 সেখানে রাজার রাজদণ্ড পৌঁছয় না।

রত্নাবলীর প্রবেশ

রত্নাবলী

 কী বলছিলে, শুনেছি শুনেছি। তুমি রাজার বাধাও মান না এতবড়ো তোমার সাহস!

শ্রীমতী

 পূজাতে রাজার বাধাই নেই।

রত্নাবলী

 নেই রাজার বাধা? সত্যি নাকি। যেয়ো তুমি পূজা করতে, আমি দেখব দুই চোখের আশ মিটিয়ে।

শ্রীমতী

 যিনি অন্তর্যামী তিনিই দেখবেন। বাহির থেকে সব সরিয়ে দিলেন, তাতে আড়াল পড়ে। এখন

বচসা মনসা চেব বন্দামেতে তথাগতে
সয়নে আসনে ঠানে গমনে চাপি সর্ব্বদা।

রত্নাবলী

 তোমার দিন এবার হয়ে এসেছে, অহংকার ঘুচবে।

শ্রীমতী

 তা ঘুচবে। কিছুই বাকি থাকবে না, কিছুই না।

রত্নাবলী

 এখন আমার পালা, আমি প্রস্তুত হয়ে আসছি।

প্রস্থান

ভদ্রা

 কিছুই ভালো লাগছে না। বাসবী বুদ্ধিমতী, সে আগেই কোথায় সরে পড়েছে।

অজিতা

 আমার কেমন ভয় করছে।

উৎপলপর্ণার প্রবেশ

নন্দা

 ভগবতী, কোথায় চলেছেন?

উৎপলপর্ণা

 উপদ্রব এসেছে নগরে, ধর্ম পীড়িত, শ্রমণেরা শঙ্কিত, আমি পৌরপথে রক্ষামন্ত্র পড়তে চলেছি।

শ্রীমতী

 ভগবতী, আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে না?

উৎপলপর্ণা

 কেমন করে নিয়ে যাই? তোমার উপরে যে পুজার আদেশ আছে।

শ্রীমতী

 পূজার আদেশ এখনো আছে দেবী?

উৎপলপর্ণা

 সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সে আদেশের তো অবসান নেই।

মালতী

 মাত, কিন্তু রাজার বাধা আছে যে।

উৎপলপর্ণা

 ভয় নেই, ধৈর্য ধরো। সে বাধা আপনিই পথ করে দেবে।

প্রস্থান

ভদ্রা

 শুনছ অজিতা, রাস্তায় ও কি ক্রন্দন, না গর্জন।

নন্দা

 আমার তো মনে হচ্ছে উদ্যানের ভিতরেই কারা প্রবেশ করে ভাঙচুর করছে। শ্রীমতী শীঘ্র চলো রাজমহিষী মাতার ঘরের মধ্যে আশ্রয় নিইগে।

প্রস্থান

ভদ্রা

 এসো অজিতা, সমস্তই যেন একটা দুঃস্বপ্ন বলে বোধ হচ্ছে।

রাজকুমারী প্রভৃতির প্রস্থান

মালতী

 দিদি, বাইরে ওই যেন মরণের কান্না শুনতে পাচ্ছি। আকাশে দেখছ ওই শিখা! নগরে আগুন লাগল বুঝি। জন্মোৎসবে এই মৃত্যুর তাণ্ডব কেন।

শ্রীমতী

 মৃত্যুর সিংহদ্বার দিয়েই জন্মের জয়যাত্রা।

মালতী

 মনে ভয় আসছে বলে বড়ো লজ্জা পাচ্ছি দিদি। পূজা করতে যাব ভয় নিয়ে যাব এ আমার সহ হচ্ছে না।

শ্রীমতী

 তোর ভয় কিসের বোন।

মালতী

 বিপদের ভয় না। কিছুই যে বুঝতে পারছিনে, অন্ধকার ঠেকছে, তাই ভয়।

শ্রীমতী

 আপনাকে এই বাইরে দেখিসনে। আজ যাঁর অক্ষয় জন্ম তাঁর মধ্যে আপনাকে দেখ, তোর ভয় ঘুচে যাবে

মালতী

 তুমি গান করে। দিদি, আমার ভয় যাবে।

শ্রীমতী

গান

আর রেখো না আঁধারে আমায়
দেখতে দাও।
তোমার মাঝে আমার আপনারে
আমায় দেখতে দাও।

কাঁদাও যদি কাঁদাও এবার,
সুখের গ্লানি সয় না যে আর,
যাক না ধুয়ে নয়ন আমার
অশ্রুধারে,
আমায় দেখতে দাও।
জানি না তো কোন্ কালো এই ছায়া,
আপন ব’লে ভুলায় যখন
ঘনায় বিষম মায়া।
স্বপ্নভারে জমল বোঝা,
চিরজীবন শূন্য খোঁজা,
যে মোর আলো লুকিয়ে আছে
রাতের পারে
আমায় দেখতে দাও।৷

একজন অন্তঃপুররক্ষিণীর প্রবেশ

রক্ষিণী

 শোনো, শোনো, শ্রীমতী।

মালতী

 কেন নিষ্ঠুর হচ্ছ তোমরা। আর আমাদের যেতে বোলো না। আমরা দুটি মেয়ে এই উদ্যানের কাছে মাটির ’পরে বসে থাকি না— তাতে তোমাদের কী ক্ষতি হবে।

রক্ষিণী

 তোমাদেরই বা কী তাতে প্রয়োজন।

মালতী

 ভগবান বুদ্ধ যে-উদ্যানে একদিন প্রবেশ করেছিলেন তার শেষপ্রান্তেও তাঁর পদধুলা আছে। তোমরা যদি ভিতরে না যেতে দাও তাহলে আমরা এইখানে সেই ধুলায় বসে মনের মধ্যে তাঁর জন্মোৎসব গ্রহণ করি—মন্ত্রও বলব না, অর্ঘ্যও দেব না।

রক্ষিণী

 কেন বলবে না মন্ত্র। বলো, বলো। শুনতেও পাব না এত কী পাপ করেছি। অন্য রক্ষিণীরা দূরে আছে, এইবেলা আজ পুণ্যদিনে শ্রীমতী তোমার মধুর কণ্ঠ থেকে প্রভুর স্তব শুনে নিই। তুমি জেনো আমি তাঁর দাসী। যেদিন তিনি এসেছিলেন অশোকছায়ায় সেদিন আমি যে তাঁকে এই পাপচোখে দেখেছি তার পর থেকে আমার অন্তরে তিনি আছেন।

শ্রীমতী

নমো নমো বুদ্ধ দিবাকরায়,
নমো নমো গৌতম-চন্দিমায়,
নমো নমো নস্তগুণন্নবায়,
নমো নমো সাকিয়নন্দনায়॥

রক্ষিণী, তুমিও আমার সঙ্গে সঙ্গে বলো।

রক্ষিণী

 আমার মুখে কি পুণ্যমন্ত্র বের হবে।

শ্রীমতী

 ভক্তি আছে হৃদয়ে, যা বলবে তাই পুণ্য হবে। বলো

নমো নমো বুদ্ধ দিবাকরায়

ক্রমে ক্রমে আবৃত্তি করাইয়া লইল

রক্ষিণী

 আমার বুকের বোঝা নেমে গেল শ্রীমতী, আজকের দিন আমার সার্থক হল। যে-কথা বলতে এসেছিলেম এবার বলে নিই। তুমি এখান থেকে পালাও, আমি তোমাকে পথ করে দিচ্ছি।

শ্রীমতী

 কেন।

রক্ষিণী

 মহারাজ অজাতশত্রু দেবদত্তের কাছে দীক্ষা নিয়েছেন। তিনি অশোকতলে প্রভুর আসন ভেঙে দিয়েছেন।

মালতী

 হায় হায় দিদি, হায় হায়, আমার দেখা হল না। আমার ভাগ্য মন্দ, ভেঙে গেল সব।

শ্রীমতী

 কী বলিস মালতী। তাঁর আসন অক্ষয়। মহারাজ বিম্বিসার যা গড়েছিলেন তাই ভেঙেছে। প্রভুর আসনকে কি পাথর দিয়ে পাকা করতে হবে। ভগবানের নিজের মহিমাই তাকে রক্ষা করে।

রক্ষিণী

 রাজা প্রচার করেছেন সেখানে যে-কেউ আরতি করবে, স্তবমন্ত্র পড়বে, তার প্রাণদণ্ড হবে। শ্রীমতী তাহলে তুমি আর কী করবে এখানে।

শ্রীমতী

 অপেক্ষা করে থাকব।

রক্ষিণী

 কতদিন।

শ্রীমতী

 যতদিন না পূজার ডাক আসে। যতদিন বেঁচে আছি ততদিনই।

রক্ষিণী

 পূর্ব হতে আজ তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি শ্রীমতী।

শ্রীমতী

 কিসের ক্ষমা।

রক্ষিণী

 হয়তো রাজার আদেশে তোমাকেও আঘাত করতে হবে।

শ্রীমতী

 কোরো আঘাত।

রক্ষিণী

 সে আঘাত হয়তো রাজবাড়ির নটীর উপরে পড়বে, কিন্তু প্রভুর ভক্ত সেবিকাকে আজও আমার প্রণাম, সেদিনও আমার প্রণাম, আমাকে ক্ষমা করো।

শ্রীমতী

 আমার প্রভু আমাকে সকল আঘাত ক্ষমা করবার বর দিন। বুদ্ধো খমতু, বুদ্ধো খমতু।

অন্য রক্ষিণীর প্রবেশ

২ রক্ষিণী

 রোদিনী।

১ রক্ষিণী

 কী পাটলী।

পাটলী

 ভগবতী উৎপলপর্ণাকে এরা মেরে ফেলেছে।

রোদিনী

 কী সর্বনাশ।

শ্রীমতী

 কে মারলে।

পাটলী

 দেবদত্তের শিষ্যেরা।

রোদিনী

 রক্তপাত তবে শুরু হল। তাই যদি হলই তাহলে আমাদের হাতেও অস্ত্র আছে। এ পাপ সইব না। এ যে প্রভুর সংঘকে মারলে। শ্রীমতী ক্ষমা চলবে না, অস্ত্র ধরো।

শ্রীমতী

 লোভ দেখিয়ো না রোদিনী। আমি নটী, তোমার ওই তলোয়ার দেখে আমার এই নাচের হাতও চঞ্চল হয়ে উঠল।

পাটলী

 তাহলে এই নাও।

তরবারি দান

শ্রীমতী

শিহরিয়া হাত হইতে তলোয়ার পড়িয়া গেল

 না, না। প্রভুর কাছ থেকে অস্ত্র পেয়েছি। চলছে আমার যুদ্ধ, মার পরাস্ত হোক, প্রভুর জয় হোক।

পাটলী

 চল্ রোদিনী, ভগবতীর দেহ বহন করে নিয়ে যেতে হবে শ্মশানে।

উভয়ের প্রস্থান। কয়েকজন রক্ষিণী সহ রত্নাবলীর প্রবেশ

রত্নাবলী

 এই যে এখানেই আছে। ওকে রাজাদেশ শুনিয়ে দাও।

রক্ষিণী

 মহারাজের আদেশ এই যে, তুমি নটী তোমাকে অশোকবনে নাচতে যেতে হবে।

শ্রীমতী

 নাচ! আজ!

মালতী

 তোমরা এ কী কথা বলছ গো। মহারাজের ভয় হল না এমন আদেশ করতে?

রত্নাবলী

 ভয় হবারই তো কথা। সেই দিনই তো এসেছে। তাঁর নটীদাসীকেও ভয় করবেন রাজেশ্বর! গ্রাম্য বর্বর।

শ্রীমতী

 কখন্‌ নাচ হবে?

রত্নাবলী

 আজ আরতির বেলায়।

শ্রীমতী

 প্রভুর আসনবেদির সামনে?

রত্নাবলী

 হাঁ।

শ্রীমতী

 তবে তাই হোক।

সকলের প্রস্থান

ভিক্ষুদের প্রবেশ ও গান

হিংসায় উম্মত্ত পৃথ্বি, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব
ঘোর কুটিল পন্থ তার লোভজটিল বন্ধ।
নূতন তব জন্ম লাগি কাতর সব প্রাণী
কর ত্রাণ মহাপ্রাণ, আন অমৃতবাণী,
বিকশিত কর প্রেমপদ্ম চির-মধুনিষ্যন্দ।
শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্তপুণ্য,
করুণাঘন, ধরণীতল কর কলঙ্কশূন্য।


এস দানবীর দাও ত্যাগকঠিন দীক্ষা,
মহাভিক্ষু লও সবার অহংকার ভিক্ষা।
লোক লোক ভুলুক শোক খণ্ডন কর মোহ,
উজ্জ্বল হোক জ্ঞান-সূর্য উদয়-সমারোহ,
প্রাণ লভুক সকল ভুবন নয়ন লভুক অন্ধ।
শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্তপুণ্য,
করুণাঘন, ধরণীতল কর কলঙ্কশূন্য।

ক্রন্দনময় নিখিল হৃদয় তাপদহনদীপ্ত,
বিষয়বিষ-বিকারজীর্ণ দীর্ণ অপরিতৃপ্ত।
দেশ দেশ পরিল তিলক রক্ত কলুষ গ্লানি,
তব মঙ্গলশঙ্খ আন তব দক্ষিণপাণি,
তব শুভসংগীতরাগ তব সুন্দর ছন্দ।
শাস্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্তপুণ্য,
করুণাঘন, ধরণীতল কর কলঙ্কশূন্য।৷