বিষয়বস্তুতে চলুন

নাগপাশ (হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ)/দ্বিতীয় খণ্ড/তৃতীয় পরিচ্ছেদ

উইকিসংকলন থেকে

তৃতীয় পরিচ্ছেদ।

যুবতী।

পরীক্ষা দিয়া কয় দিন পরেই প্রভাত গৃহে গেল।

 শোভার শ্বশুরালয় হইতে তাহাকে লইয়া যাইবার প্রস্তাব হইল। কৃষ্ণনাথের পত্নী স্বামীকে বলিলেন, “পাঠাইতে হইবে।” কিন্তু শোভা এবারও পূর্ব্ববারের মত ক্রন্দন বাহির করিল। যৌবনের অতৃপ্ত কামনা যে তাহাকে স্বামীর প্রতি আকৃষ্ট করিতেছিল না, এমন নহে। কিন্তু বিবাহের পর এই এক বৎসর সে পরিচিত পিতৃগৃহেই স্বামীকে পাইয়াছে; স্বামিলাভের জন্য পরিচিত জীবনের সঙ্গে আপনার বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ করিবার আবশ্যক হয় নাই। ভ্রাতৃবধূদিগের মধ্যে চপলার সহিত তাহার অধিক সৌহার্দ্য। চপলা অনেক সময় পিতৃগৃহে কাটাইত। তাহার কারণ পূর্ব্বে বলিয়াছি। শোভা ভাবিত, চপলাই সুখী। এবার শোভাকে শ্বশুরালয়ে লইয়া যাইবার প্রস্তাব হইয়াছে শুনিয়াই চপলা তাহার নিকট আসিল। শোভা আলুলায়িতকুন্তলে বাতায়নে দাঁড়াইয়া কি দেখিতেছিল। চপলা পশ্চাৎ হইতে তাহার চুল ধরিয়া টানিল। “উহু—হু—” করিয়া শোভা ফিরিল। বয়স্যাদিগের সহিত ব্যবহারে চপলার চাঞ্চল্য অনেক সময় এইরূপ শারীরিক পীড়নে আত্মপ্রকাশ করিত। তাহার চিমটি, ঘাড়ে পড়া, চুল ধরিয়া টানা—এই সকল ভালবাসার অত্যাচারে সমবয়সী শোভা অভ্যস্ত হইয়া উঠিয়াছিল। চপলা জিজ্ঞাসা করিল, “কি, ঠাকুরঝি, এবার নাকি শ্বশুরবাড়ী ঘর করিতে যাইতেছ?”

 শোভার চক্ষু ছল ছল করিতে লাগিল। সে হর্ম্ম্যতলে বসিল। চপলা তাহার পার্শ্বে উপবেশন করিল। চপলা বলিল, “স্বামীর জন্য শ্বশুরবাড়ী যাওয়া। ঠাকুরজামাই ত এই দুই দিন গিয়াছেন। আবার ত শীঘ্রই আসিবেন। তবে সে দেশে যাওয়া কেন? সে দেশের কথা তোমার কাছে যাহা শুনিয়াছি, তাহাতে আমার সে দেশে যাইবার কথা বলিলে গায়ে কাঁটা দিয়া উঠে।”

 শোভা বলিল, “কিন্তু কি করিব?”

 “কোন রকম করিয়া বৎসর দুই কাটাইতে পারিলেই হইল। তাহার পর ঠাকুরজামাই ত এখানেই কার্য করিবেন।”

 “কিন্তু এখন কি করি? মা কিছুতেই শুনিবেন না।”

 “বাবা শুনিবেন। তুমি দেখিও। আর যদি নিতান্তই যাইতে হয়, দশ পনের দিনের মধ্যে ফিরিবার ব্যবস্থা করিয়া যাইও। সেখানে যাইয়া যেন স্থির হইয়া থাকিও না!”

 শোভা এই পরামর্শমত কায করিল। তাহার ক্রন্দনে কৃষ্ণনাথ বিচলিত হইলেন; গৃহিণীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি করা যায়?”

 কৃষ্ণনাথের পত্নী বলিলেন, “পাঠাইতেই হইবে। চিরকাল সব মেয়েই স্বামীর ঘর করিতে যায়। তোমার অতিরিক্ত আদরেই মেয়ের সব বিষয়ে বাড়াবাড়ি। কেন, ঘরজামাই করিবে নাকি?”

 “কিন্তু বড় যে কাঁদাকাটি করিতেছে!”

 “করুক। বাড়াবাড়ি ভাল নহে।”

 গৃহিণীর নিকট সহানুভূতি না পাইয়া কৃষ্ণনাথ বন্ধু শ্যামা প্রসন্নের শরণ লইলেন। শ্যামা প্রসন্ন বলিলেন, “সে কি কথা? তাহারা যথেষ্ট ভদ্রতা করিয়াছে। লেবু অধিক কচলাইলে তিত হইয়া উঠিবে। আমি সেই সময়ই বলিয়াছিলাম, পল্লীগ্রামে বিবাহ দিবে, ভাল করিয়া ভাবিয়া দেখিও। এখন মেয়ে শ্বশুরবাড়ী যাইবে না, এও কি হয়? শেষে তাহারা বিরক্ত হইবে:”

 কৃষ্ণনাথ কোথাও সহানুভূতি পাইলেন না। তিনি কাহাকেও কিছু না বলিয়া স্বয়ং শিবচন্দ্রকে পত্র লিখিলেন,—তাঁহার কনিষ্ঠ পুৎত্রের পীড়া বিশেষ আশঙ্কার কারণ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। প্রথমবার কন্যাকে পাঠাইতে কিছু আয়োজন আবশ্যক - তাহা সময়সাধ্য। কিন্তু এখন এ অবস্থায় পাঠাইতে হইলে তাঁহাকে কিছু বিব্রত হইতে হয়।—ইত্যাদি।

 পত্র পাইয়া শিবচন্দ্র একটু বিরক্ত হইলেন। কিন্তু এবার বিরক্তি বৈবাহিকের উপর, পুত্ত্রের উপর নহে; কাযেই তাহাতে অভিমানলেশ ছিল না। বিশেষ পুত্ত্র নিকটে।

 কৃষ্ণনাথের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইল। শোভাকে এবারও শ্বশুরালয়ে যাইতে হইল না। সংসারজ্ঞানানভিজ্ঞা শোভা ভাবিল,—ভালই হইল।

 যথাকালে পরীক্ষার ফল বাহির হইল। প্রভাত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইতে পারিল না। শিবচন্দ্র দুঃখিত হইলেন। নবীনচন্দ্র প্রভাতকে সান্ত্বনা দিলেন। প্রভাত পুনরায় কলিকাতায় পড়িতে গেল। নবীনচন্দ্রের যাহা বুঝাইয়া বলিবার কথা ছিল, তাহা আর বলা হইল না। প্রভাত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইতে না পারিয়া দুঃখিত হইয়াছে—এ সময় সে কথা বলিতে নবীনচন্দ্রের মন সরিল না, পাছে সে ব্যথা পায়।

 আশ্বিন মাসে পুনরায় বধূকে আনিবার কথা উঠিল। শিবচন্দ্র ভ্রাতাকে বলিলেন, “নবীন, লোকে নিন্দা করিবে; বড়মানুষের সঙ্গে কুটুম্বিতা করিয়া এত দিনে একবার বধূকে আনিতে পারিলাম না।” নবীনচন্দ্র সেই দিনই প্রভাতকে পত্র লিখিলেন,—“এই আশ্বিনমাসেই বধূমাতাকে আনিবার ব্যবস্থা করিতেছি। তুমি সঙ্গে আনিবে। যাহাতে আসা হয়, তাহার ব্যবস্থা করিয়া লিখিও। আর না আসা ভাল দেখায় না।”

 প্রভাত শোভাকে বলিল, “শোভা, পূজার ছুটীতে আমি বাড়ী যাইব। তোমাকে এবার যাইতে হইবে।”

 শোভা উত্তর দিল না। প্রভাত দেখিল, তাহার মুখ গম্ভীর হইল। সে আদর করিয়া তাহার ভরা গণ্ডে অঙ্গুলিস্পর্শ করিল; বলিল, “মুখ আঁধার কেন?”

 শোভা তবু উত্তর দিল না দেখিয়া প্রভাত বলিল, “আমি একা যাইব? তুমি যাইবে না?”

 না যাইবার যে বিশেষ সঙ্গত কারণ ছিল না, শোভা আপনি তাহা জানিত। সে বলিল, “তুমি যাইতে বল, যাইব।”

 প্রভাত আনন্দে অধীর হইল; সাগ্রহে পত্নীর মুখ চুম্বন করিল। কিন্তু অবিশ্রান্ত বর্ষণ সত্ত্বেও যেমন বর্ষার আকাশে মেঘ লাগিয়া থাকে, তেমনই শোভার আননে একটু আঁধার রহিয়া গেল—ঘুচিল না। প্রভাত আপনার অঙ্গুলিতে শোভার এক গুচ্ছ চুল জড়াইতে জড়াইতে বলিল, “দেখিবে, নূতন স্থান বেশ লাগিবে।” শোভা কিছু বলিল না।

 আশ্বিন মাসে শোভা শ্বশুরালয়ে গেল।

 বধূকে গৃহকর্ম্মে সুশিক্ষিত করেন, শোভার শাশুড়ীর এই ইচ্ছা ছিল। কিন্তু শোভার তাহাতে আদৌ আগ্রহ ছিল না। পিসীমা সহজে তাহাকে কোনও কার্য করিতে দিতেন না। ভ্রাতৃজায়া কিছু বলিলে তিনি বলিতেন, “ছেলেমানুষ। শিখিবার সময় হউক; সবই শিখিবে।” নবীনচন্দ্র অবশ্যই পিসীমার সমর্থক ছিলেন। পান সাজিলে মা’র হস্ত কর্কশ হইবে; পাকশালার তাপ তাহার সহিবে না; অন্য গৃহকর্ম্মে সে শ্রান্ত হইবে– ইত্যাদি।; শোভা আসিলে কমল পিত্রালয়ে আসিয়াছিল; সেও ভ্রাতৃজায়াকে অজস্র যত্নে কর্ম্ম হইতে দূরে রাখিত। এমন কি, শিবচন্দ্রের পত্নী এবার স্বামীর সম্পূর্ণ সহানুভূতিও পাইলেন না। শিবচন্দ্র ও বলিলেন, “ব্যস্ত কেন? সময়ে সবই শিখিবে। যদি শিখাইয়া লইতে না পার, সে তোমাদের দোষ।” তাঁহারও বধূকে আদর করিবার ত্রুটী ছিল না।

 এত আদর যত্ন যে শোভার হৃদয় স্পর্শ করিত না, এমন নহে। কিন্তু সে এই সংসারে স্থায়ী হইয়া—ইহারই অঙ্গীভূত হইবার কল্পনা করে নাই। করিলে সে যে সংসারে সকলের হৃদয় অধিকার করিয়াছিল—সকলের স্নেহভাজন হইয়াছিল— সামান্য চেষ্টায়—সহজে সেই সংসারের হইয়া যাইত। সে চেষ্টাও আপনি আসিত। বিশেষ নবীনচন্দ্রের ও পিসীমা’র উচ্ছ্বসিত স্নেহ তাহার হৃদয়কে কোমল করিয়াছিল - এ সময় পরিবর্ত্তন সহজেই সংঘটিত হইত। কিন্তু তাহা হইল না।

 আশ্বিনের শেষে একদিন অপরাহ্নে শোভা দ্বিতলে আপনার শয়নকক্ষের বাতায়নে দাঁড়াইয়াছিল। আকাশে কয়খানি শুভ্র অভ্র আকার পরিবর্ত্তন করিতে করিতে ভাসিয়া যাইতেছিল। শোভা সম্মুখে বর্ষাবারিপাতে প্রচুরপল্লবশ্যাম বৃক্ষলতা দেখিতেছিল। প্রভাত কক্ষদ্বারে উপনীত হইয়া দেখিল, দ্বারে পাদুকা ত্যাগ করিয়া নিঃশব্দ পদসঞ্চারে যাইয়া পশ্চাৎ হইতে শোভার কর্ণাভরণে আদর করিয়া টোকা মারিল। কর্ণমূলে সামান্য বেদনা লাগিল; কিন্তু সে বেদনা সুখের। শোভা ফিরিয়া দেখিল,—প্রভাত।

 প্রভাত দেখিল, শোভার মুখখানি প্রফুল্ল। কিন্তু তাহার নয়নে দৃষ্টিতে অতৃপ্তিদীপ্তি - সে দৃষ্টি কোমলতাসিক্ত নহে।

 প্রভাত বলিল, “শোভা, নূতন দেশ কেমন লাগিতেছে?”

 শোভা বলিল, “কেন?”

 “থাকিতে পারিবে ত?”

 শোভা মৃদু হাসি হাসিয়া বলিল, “কেন, আমি কি থাকিতেছি না?”

 প্রভাত আদর করিয়া পত্নীর মুখচুম্বন করিল। শোভা সে সোহাগের প্রতিদান দিল। প্রভাত বলিল, “আমার কলেজ খুলিতে আর এক সপ্তাহ বিলম্ব আছে। আমি কলিকাতায় যাইব।”

 বৈশাখের অপরাহ্নে যেমন মেঘান্ধকার দেখিতে দেখিতে দিবসের আলোক অপসৃত করিয়া দেয়,— তেমনই দেখিতে দেখিতে শোভার মুখের সে প্রফুল্লভাব দূর হইয়া গেল। সে বলিল, “আমাকে লইয়া যাইবে না?”

 প্রভাত বলিল, “তুমি অগ্রহায়ণ মাসে যাইবে।

 “তুমি আমাকে লইয়া চল।”

 প্রভাতকে নিরুত্তর দেখিয়া শোভা পুনরায় বলিল, “তুমি চলিয়া যাইলে আমি থাকিতে পারিব না।”

 শোভার কথায় প্রভাত যেমন বিপদে পড়িল, তেমনই আনন্দিত হইল। শোভা তাহাকে ছাড়িয়া থাকিতে পারিবে না! সে পুনরায় শোভার মুখচুম্বন করিল; তাহার পর প্রস্থানের উদ্যোগ করিল। শোভা পুনরায় বলিল, “আমাকে কিন্তু লইয়া যাইতে হইবে।”

 প্রভাত চলিয়া গেল। শোভা বাক্স হইতে কাগজ, কলম, দোয়াত বাহির করিয়া পিতাকে পত্র লিখিল।

 এ দিকে পত্নীর অবিরল অশ্রুধারায় প্রভাতের চিত্ত আর্দ্র হইয়া উঠিল। সে মনে করিতে লাগিল, এবার না হয় এই মাসেই শোভা ফিরিয়া যাউক;—পরবার আসিয়া অধিক দিন থাকিবে।

 পত্নীর অশ্রুবিপ্লুত মুখখানির কথা ভাবিতে ভাবিতে প্রভাত কলিকাতায় গেল।

 এ দিকে কন্যার পত্র পাইয়া কৃষ্ণনাথ ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। তিনি গৃহিণীকে বলিলেন, “শোভাকে আনাই।”

 গৃহিণী বলিলেন, “দিন কতক যাউক না কেন?” কিন্তু গৃহিণী মুখে যাহাই বলুন, তাঁহারও চিত্ত সেই প্রবাসিনী কন্যার জন্য ব্যস্ত হইয়াছিল। সে তাঁহার, একমাত্র কন্যা;—বড় আদরের। তাই কৃষ্ণনাথ দুই চারিবার বলিতেই গৃহিণী বলিলেন, “আচ্ছা, লিখিয়া দাও। পত্র লিখিলে সেই দিনই ত আর তাহারা পাঠাইবে না।”

 কৃষ্ণনাথ শিবচন্দ্রকে লিখিলেন, “বাড়ীতে সব অসুখ যাইতেছে। এ সময় শোভাকে পাঠাইলে বিশেষ অনুগৃহীত হইব। সকলেই তাহাকে দেখিবার জন্য ব্যস্ত। আপনার অনুমতি হইলে আনিবার ব্যবস্থা করিব।”

 প্রভাত যে দিন গৃহ হইতে গেল, তাহার পর দিন এই পত্র শিবচন্দ্রের হস্তগত হইল। শিবচন্দ্র ভ্রাতাকে ডাকিয়া পত্র দিলেন। পাঠ করিয়া নবীনচন্দ্র বলিলেন, “বাড়ীতে সব অসুখ করিয়াছে?”

 শিবচন্দ্র একটু হাসিলেন; বলিলেন, “গত পরশ্বও পত্র পাইয়াছি; তাহাতে কাহারও অসুখের কথা ছিল না।” তখন নবীনচন্দ্রেরও মনে পড়িল,— পূর্ব্বদিন শোভা পিত্রালয় হইতে পত্র পাইয়াছে। তিনি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, “মা, সব ভাল?” উত্তরে শোভা বলিয়াছিল, “ভাল।” তিনি ভ্রাতাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তবে আজ এরূপ লিখিবার কারণ?

 শিবচন্দ্র বলিলেন, “প্রভাত বাড়ী হইতে গিয়াছে। তাঁহারা আর এখানে কন্যা রাখিতে ইচ্ছুক নহেন।”

 শুনিয়া সরলহৃদয় নবীনচন্দ্রের নয়নদ্বয় বিস্ময়বিস্ফারিত হইল। তিনি বলিলেন, “আমি প্রভাতকে পত্র লিখিয়া দিতেছি।”

 “তাহাকে পত্র লিখিয়া কি হইবে? সে ইহার কিছু জানে না। তাহাকে লিখিলে সে মন খারাপ করিবে। সে চঞ্চলপ্রকৃতি; হয় ত বধূমাতার প্রতি বিরক্ত হইবে।”

 “তবে কি লিখিবেন?”

 “তাঁহারা যখন পীড়ার কথা বলিয়া কন্যাকে লইয়া যাইতে চাহিতেছেন, তখন আমি পাঠাইব; অভদ্রতা করিব না। তাঁহাদের বিবেচনা তাঁহাদের কাছে। আমার কর্তব্য আমি করিব।”

 জ্যেষ্ঠের কথা শুনিয়া নবীনচন্দ্রের হৃদয় উচ্ছ্বসিত শ্রদ্ধায় পূর্ণ হইয়া উঠিল।

 শিবচন্দ্র বলিলেন, “কিন্তু আর আনাইবার কথা আমাকে বলিতে পারিবে না। তোমরা যাহা হয় করিও।”

 নবীনচন্দ্র ভাবিলেন, সে জন্য চিন্তা করি না। এ রাগ থাকিবে না।

 এক দিকে জ্যেষ্ঠ, অপর দিকে প্রভাত, আর এক দিকে কুটুম্ব—তিন দিকের আকর্ষণে নবীনচন্দ্র ব্যতিব্যস্ত থাকিতেন। তিনি সকলকে সুখী করিতে ও সুখী দেখিতে ইচ্ছা করিতেন।

 শিবচন্দ্র বৈবাহিককে লিখিলেন, “আপনি গৃহে অসুস্থতা নিবন্ধন শ্রীমতী বধূমাতাকে লইয়া যাইতে চাহিয়াছেন। ইহাতে আপত্তি করিতে পারি না। আপনি ভাল দিন দেখিয়া লইয়া যাইবার ব্যবস্থা করিবেন।”

 শোভা পিত্রালয়ে ফিরিয়া গেল।

 প্রভাত জানিতে পারিল ন। পিতা অসন্তুষ্ট হইয়াছেন। রবিকরোজ্জ্বল নীলাম্বরের এক প্রান্তে যে বাষ্পরাশি ধীরে ধীরে বর্দ্ধিত হইয়া বিদ্যুৎকেতন অন্ধকার মেঘে পরিণত হইতেছিল, তাহা তাহার দৃষ্টিতে পড়িল না। সে সম্ভাবনার কথা তাহার মনে পড়িল না,—তাই সে সে দিকে চাহিয়া দেখিল না।

 ইহার পর শোভার সন্তান-সম্ভাবনা হইল। সুতরাং, তখন আর তাহাকে লইয়া যাইবার প্রস্তাব উঠিল ন॥