নেতাজীর জীবনী ও বাণী/অন্তর্দ্ধানের গুপ্ত তথ্য

উইকিসংকলন থেকে

অন্তর্দ্ধনের গুপ্ততথ্য

 ১৯৪০ খৃষ্টব্দে ফরাসীর আত্মসমর্পণের সময় রুশ সরকার কংগ্রেসের নিকট ভারতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য সমরোপকরণ ও অর্থ সরবরাহ করিবার সম্মতি জানাইয়া প্রস্তাব পাঠায়। রুশ গভর্ণমেণ্ট আরও জানায় যে ভারতব্যাপী বিদ্রোহ সম্যক বিস্তৃতি লাভ করিলে কংগ্রেসের আবেদনে রুশ ইংরাজকে ভারত হইতে বিতাড়নে সামরিক সাহায্য করিবে এইরূপ প্রস্তাবও করে। কংগ্রেস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কিন্তু সুভাষচন্দ্র ইহার সুযোগ গ্রহণে কৃতসংকল্প হইলেন। সুভাষচন্দ্র ১৯৩৯ খৃষ্টাব্দে অন্তর্দ্ধানের চেষ্টা করিয়া ব্যর্থকাম হন। সাংবাদিক নিরঞ্জন সিংহের চেষ্টায় কমুনিষ্ট নেতা সর্দার ইচ্ছর সিংহের সহিত সুভাষচন্দ্র সাক্ষাৎ করেন এবং গোপণে রাশিয়ায় যাওয়ার সাব্যস্ত হয়। পাঞ্জাব কমুনিষ্টদল বসুর সহিত সাক্ষাৎ আলোচনায় তাঁহার নিরাপদে পলায়নের ব্যবস্থা করিতে সম্মত হন। তাঁহার অসুস্থতার জন্য ১৯৪১ খৃষ্টাব্দে ২৬শে জানুয়ারীতে অন্যতম মন্ত্রীর সাহায্যে কলিকাতা হইতে মোটর যোগে বর্ধমান যাইয়া পাঞ্জাব মেল ধরেন। তাঁহার পূর্ব্বাহ্নেই এই গাড়ীর দ্বিতীয় শ্রেণীর এক কামরা রিজার্ভ করা ছিল। ঐ সময় তাঁহার বড় বড় গোঁফ, চুল ও শ্মশ্রু ছিল। এইভাবে তিনি পাঞ্জাবে পৌঁছিয়া তথা হইতে পেশোয়ারে যান, তথায় আব্বাস খাঁয়ের অতিথিরূপে তিন দিন কাটান। তারপর ব্যবস্থা মত নেতাজী একজন দেহরক্ষী সহ একখানি পেশোয়ারী টোঙ্গায় করিয়া পেশোয়র হইতে পাঁচ মাইল পথ যাইবার পর পদব্রজে কাবুল যান। কিন্তু কাবুলে অবস্থান কালে কমুনিষ্টগণ তাঁহার প্রতি অসদাচরণ করে। নেতাজী রোগে আক্রান্ত অবস্থায় জনৈক গোয়েন্দার নজরে পড়েন তবে একখানা দশ টাকার নোট ও একটি ফাউনপেন দিয়া উদ্ধার পান। কিন্তু এই সময় তাঁহার এক নূতন বিপদ উপস্থিত হইল। এই সময় সোভিয়েট-জার্ম্মান চুক্তি ভঙ্গ হয় এবং ইঙ্গ-রুশ চুক্তি সম্পাদিত হওয়ায় রুশ সরকার তাঁহাকে রুশিয়ায় স্থান দিতে অস্বীকার করে। তথাকার একজন জার্ম্মান নেতাজীকে বিমান যোগে রুশিয়ার পথে বার্লিনে পাঠান।