নেতাজী সুভাষ চন্দ্র/কর্ম্ম-জীবন/জন-নায়ক

উইকিসংকলন থেকে

জন-নায়ক

সাইমন-কমিশন বয়কট—মহাত্মার সহিত মতভেদ—কংগ্রেসের কলিকাতা-অধিবেশন—লাহাের-অধিবেশন—নানা সংশ্রবে সুভাষচন্দ্র—রাজনীতিক লাঞ্ছিতগণের দিবসে শােভাযাত্রা—নয়মাস কারাদণ্ড— ষ্টুডেণ্টস কনফারেন্স—স্বদেশী লীগ।

রোগশয্যা পরিত্যাগের পরই সুভাষচন্দ্র পুনরায় দুর্ভিক্ষপীড়িত জনপদে সাহায্য-প্রদানের চেষ্টায় অগ্রণী হইলেন। পুনরায় নির্ব্বাচন-প্রতিদ্বন্দিতা চালাইয়া দেশবন্ধুর আরব্ধ কার্য্য পূর্ণ করিবার জন্যও সুভাষচন্দ্র বদ্ধপরিকর হইলেন এবং দেশের সর্ব্বত্র স্বাধীনতার বাণী ঘােষণা করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন।

 এই সময় সাইমন-কমিশন ভারতের সর্ব্বত্র পরিভ্রমণে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। এই কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল যে, তাঁহারা ভারতের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা বিশরূপে পর্য্যালোচনা করিবেন এবং স্থির করিবেন যে ভারতবর্ষকে কতটা শাসন-ভার দেওয়া যাইতে পারে, তাহা নির্ণয় করিবেন।

 কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তখন সুভাষচন্দ্র ও পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু। কমিশনের ঐ উদ্দেশ্য—অর্থাৎ ভারতবর্ষকে কতটুকু দেওয়া যাইতে পারে এই সঙ্কীর্ণ নীতি তাঁহাদের মনঃপূত হইল না; তাহার ফলে কংগ্রেস স্থির করিলেন, সাইমন-কমিশন বয়কট করা হইবে।

 ১৯২৮ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারী সাইমন-কমিশন বোম্বাইয়ে পদার্পণ করিতেই, সহস্র কণ্ঠে “সাইমন, ফিরিয়া যাও,” জনমতের এই সুস্পষ্ট দাবী সমস্বরে ঘোষিত হইল এবং শত-শত কৃষ্ণ পতাকা সঞ্চালিত হইয়া কমিশনকে অবাঞ্ছিত বলিয়া প্রচার করিল। বাংলাদেশে সাইমন-কমিশন বয়কটকে তীব্র করিয়া তুলিলেন সুভাষচন্দ্র স্বয়ং!

 সুভাষচন্দ্র ভাবিয়াছিলেন, এই সাইমন-কমিশনকে কেন্দ্র করিয়াই তিনি এমন এক বিরাট আন্দোলনের সৃষ্টি করিবেন, যাহাতে অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ জনমতের নিকট ব্রিটিশ-প্রভুত্ব চিরদিনের জন্য অবনত হইয়া যায়! সেইজন্য মে মাসে তিনি সবরমতী আশ্রমে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া, তাঁহাকে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব করিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু মহাত্মা গান্ধী কোনদিনই এমন চরমপন্থী ছিলেন না। তিনি চাহিয়াছিলেন, আবেদন-নিবেদন ও আপোষ করিয়া যতটা আদায় করিয়া লওয়া যায় তাহাতেই পরিতৃপ্ত থাকিতে। সুতরাং সুভাষচন্দ্রের উগ্রপন্থা তিনি অনুমোদন করিতে পারিলেন না। তিনি বিশেষ চিন্তা করিয়া সুভাষচন্দ্রকে জানাইয়া দিলেন, “আমি এ কাজে ভগবানের কোন নির্দ্দেশ পাইতেছি না।”

 অবশ্য ইহাতে মহাত্মা গান্ধীকে কোন দোষ দেওয়া চলে না; কারণ, ইহার পূর্ব্বে পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে “নেহেরু-কমিটি” নামে একটি কমিটি গঠিত হইয়াছিল। ভারতবর্ষের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ স্বাধীনতা হইলে, সে পথ নিতান্তই বিপজ্জনক; সম্ভবতঃ ইহা ধারণা করিয়াই সেই কমিটি পূর্ণ স্বাধীনতা না মানিয়া, ঔপনিবেশিক স্বায়ত্বশাসনকেই তাঁহাদের ঈপ্সিত বস্তু বলিয়া মানিয়া লইয়াছিলেন। মহাত্মা গান্ধীও এই মতের অনুকূলেই ছিলেন।

 ১৯২৮ খৃষ্টাব্দে লক্ষ্মৌয়ে সর্ব্বদলের এক সম্মেলন হয়। তাহাতেও নেহেরু-কমিটির স্বায়ত্বশাসন-প্রস্তাবকেই ভারতের লক্ষ্য বলিয়া গৃহীত হইল। ইহাতে সুভাষচন্দ্র ও পণ্ডিত জওহরলাল ক্ষুব্ধ হইয়া ‘স্বাধীনতা-সঙ্ঘ’ নামে একটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান গঠন করিয়াছিলেন।

 সাইমন-কমিশনকে কেন্দ্র করিয়া জন-আন্দোলনের নেতৃত্ব ভার মহাত্মা গান্ধী গ্রহণ না করায় সুভাষচন্দ্র ব্যথিত হইয়া ফিরিয়া আসিলেন, কিন্তু মহাত্মার এই নিস্ক্রিয়তা একেবারেই সহ্য করিতে পারিলেন না। সেই বৎসরই মে মাসে পুণায় যে মহারাষ্ট্র প্রাদেশিক কন্‌ফারেন্স হয়, তিনি তাহাতে সভাপতিত্ব করিবার কালে মহাত্মার এই নিষ্ক্রিয়তার তীব্র সমালোচনা করেন। মহাত্মার চিন্তাধারা ও কার্য্যপদ্ধতির সহিত তিনি যে একমত হইতে পারিতেছেন না, প্রকাশ্য জনসভায় সম্ভবতঃ এই তাঁহার প্রথম অভিব্যক্তি!

 সেই বৎসরই ডিসেম্বর মাসে কলিকাতায় ভারতীয় জাতীয় মহা-সমিতির ত্রিচত্বারিংশৎ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় সুভাষচন্দ্র পুনরায় স্বেচ্ছাসেবক-বাহিনী সংগঠনে আত্মনিয়োেগ করিলেন এবং স্বয়ং স্বেচ্ছাসেবক-বাহিনীর জেনারেল-অফিসার-কম্যাণ্ডিং-রূপে জাতীয় মহাসমিতির নির্ব্বাচিত সভাপতি পরলোকগত পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুকে বিরাট শোভাযাত্রায় সম্বর্দ্ধনা করেন।

 কংগ্রেসের এই অধিবেশনে মহাত্মার মতবাদের সহিত সুভাষচন্দ্রের পুনরায় প্রকাশ্য বিরোধিতা হইল। কারণ, মহাত্মা গান্ধীর প্রস্তাব ছিল আপোষ-মীমাংসার প্রস্তাব; কিন্তু দেশপ্রেমের মূর্ত্ত আগ্নেয়গিরি সুভাষচন্দ্রের পক্ষে ব্রিটিশ রাজের অধীনে স্বায়ত্বশাসনের অধিকার লইয়া তৃপ্ত ভাবে অবস্থান করা, একেবারেই ছিল অসম্ভব। স্বাধীনতা—পূর্ণ স্বাধীনতাই ছিল তাঁহার লক্ষ্য; কংগ্রেসকে তিনি সেই ভাবেই অনুপ্রাণিত দেখিতে আশা করিয়াছিলেন; কিন্তু তাহাতে হতাশ হইয়া তিনি মহাত্মা গান্ধীর আপোষ-মীমাংসা প্রস্তাবের জ্বলন্ত ভাষায় প্রতিবাদ করেন।

 তিনি বলিলেন,—

 “সুদূর ভবিষ্যতে স্বাধীনতার প্রার্থী আমরা নহি। ইহা আমাদের অবিলম্বে প্রাপ্য বস্তু।[১]

 তিনি আরও বলেন,—

 “আপনারা সকলেই জানেন, দেশে জাতীয় আন্দোলনের উষাকাল হইতে বাংলাদেশ স্বাধীনতা বলিতে সম্পূর্ণ স্বাধীনতাই বুঝিয়াছে— ডােমিনিয়ান্ ষ্টেটাস কে কখনও স্বাধীনতা বলিয়া ব্যাখ্যাকরে নাই।”[২]

 তাঁহার অভিমত এই যে, ব্রিটিশের সহিত সম্পর্ক সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্ব্বে কখনও প্রকৃত স্বাধীনতলাভ হইতে পারে না।[৩]

 সুভাষচন্দ্রের ইচ্ছা ছিল, পূর্ণ-স্বাধীনতাই কংগ্রেসের কাম্য, ইহা ঘােষণা করিয়া তখন হইতেই সরকারের বিরুদ্ধে আপােষবিহীন সংগ্রাম শুরু করা। কিন্তু মহাত্মা গান্ধী বলিলেন, “ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্ট যদি ১৯২৯ সালের মধ্যে নেহেরু-কমিটির রিপাের্ট মানিয়া লইয়া স্বায়ত্বশাসন মঞ্জুর করেন, তাহা হইলে ভারতবর্ষ তাহা গ্রহণ করিবে। যদি তাহা না করে, কংগ্রেস তাহা হইলে অহিংস অসহযোগ-আন্দোলন আরম্ভ করিবে।”

 সুতরাং সুভাষচন্দ্রের পূর্ণ স্বাধীনতা ও মহাত্মার তথাকথিত স্বাধীনতা, এই দুই বিষয়ে ভোট গ্রহণ করা হইল। কিন্তু জনমত তখনও এত তীব্র হইয়া উঠে নাই যে প্রতিষ্ঠিত শ্রদ্ধা ও সঙ্কোচের গণ্ডী এড়াইয়া তরুণের বিপদসঙ্কুল পথ বাছিয়া লইবে! কাজেই সুভাষচন্দ্রের পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গৃহীত হইল না—তিনি পরাজিত হইলেন।

 সুভাষচন্দ্র পরাজিত হইলেন বটে, কিন্তু মহাত্মা গান্ধীকে সম্ভবতঃ চিন্তিত হইতে হইল! তিনি লক্ষ্য করিলেন, সুভাষচন্দ্র ও জওহরলাল প্রভৃতি চরমপন্থী তরুণের দল ক্রমশঃই নরমপন্থী জননেতা কংগ্রেসের সতর্ক চিন্তাধারাকে যেন অতিক্রম করিয়া যাইতেছে! সুতরাং লাহোরে কংগ্রেসের যে পরবর্ত্তী অধিবেশন হইবে, তাহার সভাপতি নির্ব্বাচনে খুব সাবধানতার প্রয়োজন অনুভব করিলেন।

 চিন্তা অনুযায়ী কার্য্য হইল। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু লাহোর-কংগ্রেসের প্রেসিডেণ্ট নির্ব্বাচিত হইলেন। তাঁহাকে এই মর্য্যাদা-দানের ফলে পণ্ডিতজী চরমপন্থী দল হইতে মহাত্মা গান্ধীর নরমদলে আকৃষ্ট হইয়া পড়িলেন, এবং মহাত্মা গান্ধীর অভিমতকেই নিজের মত বলিয়া মানিয়া লইলেন।

 কিন্তু মহাত্মা গান্ধী সম্ভবতঃ ইতোমধ্যে নিজের ভুল বুঝিতে পারিয়াছিলেন। কংগ্রেসের কলিকাতা-অধিবেশনে তিনি সুভাষচন্দ্রের যে পূর্ণ স্বাধীনতা-প্রস্তাবের বিরোধী ছিলেন, লাহাের-অধিবেশনে তিনি নিজেই সেই পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব আনয়ন করিলেন।

 সুভাষচন্দ্রের চিন্তাধারা সর্ব্বদাই কিছু অগ্রবর্ত্তী; তিনি প্রস্তাব করিলেন, ব্রিটিশ গভর্নমেণ্টকে পূর্ণভাবে বয়কট করা হউক, আইন-অমান্য আন্দোলন করা হউক এবং পাশাপাশি জাতীয় গভর্ণমেণ্ট প্রতিষ্ঠা করা হউক। কিন্তু সুভাষচন্দ্রের এই প্রস্তাব গৃহীত হইল না।

 লাহোর অধিবেশনের পূর্ব্বে বড়লাট লর্ড আরউইন ভারতবর্ষকে ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসনের প্রলােভন দেখাইয়াছিলেন এবং লণ্ডনে ‘রাউণ্ড টেবিল কন্‌ফারেন্স’ নামে এক সর্ব্বদলসম্মেলন হইবে ইহা ঘােষণা করিয়াছিলেন।

 অনেকেই ছিলেন এই কন্‌ফারেন্সে যোগদানের পক্ষে। কিন্তু সুভাষচন্দ্র ও কিচ্‌লু প্রভৃতি কয়েকজন মাত্র ইহার বিরােধিতা করিলেন। তিনি রাজপুরুষদের কাহারও কাছে কোন ভিক্ষার প্রার্থনা বা কাহারও সহিত কোন আপােষমুলক আলােচনা চালাইবার সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন। অনমনীয় সুভাষচন্দ্রের ইহাই ছিল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

 অক্লান্তকর্ম্মী সুভাষচন্দ্র দেশের প্রায় প্রত্যেক কাজের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট ছিলেন।

 ১৯২৮ খৃষ্টাব্দের ২৮শে ডিসেম্বর তারিখে কলিকাতার হিন্দুস্থান সেবাদল-কন্‌ফারেন্সের যে অধিবেশন হয়, সেই অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র সভাপতির আসন গ্রহণ করেন এবং সমগ্র দেশকে সামরিক শৃঙ্খলায় উদ্বুদ্ধ করিবার জন্য স্বেচ্ছাসেবক-বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তার বিষয় বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন—

 “বর্ত্তমান কালে দেশে যুবক-আন্দোলন ও শরীর-চর্চ্চার আন্দোলনের দ্রুত প্রসার একটি বিশেষ আশার বিষয়। এই দুইটি আন্দোলনের মধ্যে সংযোগ-সাধন একান্ত দরকার।

 যুবকগণকে ব্যায়ামের দ্বারা সুগঠিত, শিক্ষিত ও সংষত স্বেচ্ছাসেবকে রূপান্তরিত করিতে হইবে; তবেই আমরা নূতন এমন একটি পুরুষের আবির্ভাবের আশা করিতে পারিব, যাহারা ভারতের স্বাধীনতা অর্জ্জন করিয়া উহা রক্ষা করিতে পারিবে।”[৪]

 ১৯২৭ খৃষ্টাব্দ হইতে ১৯২৯ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস-কমিটির সভাপতি এবং নিখিল-ভারত কংগ্রেস-কমিটির সাধারণ সম্পাদকরূপে কার্য্য করেন। ১৯২৯ খৃষ্টাব্দে তিনি নিখিল-ভারত ট্রেড-ইউনিয়ান কংগ্রেসের সভাপতি নির্ব্বাচিত হন। এই পদে তিনি ১৯৩১ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত কার্য্য করেন।

 ১৯২৯ খৃষ্টাব্দের জুন মাসে সুভাষচন্দ্র বঙ্গীয় কাউন্সিল নির্ব্বাচনে কংগ্রেস-কর্ম্মিগণকে পরিচালিত করেন। ১৯২৯ খৃষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে কাউন্সিল ভঙ্গ হয় এবং অধিকাংশ কংগ্রেস-কর্ম্মী অতিজন-ভোট কিংবা বিনা বাধায় কাউন্সিলের সদস্য নির্ব্বাচিত হন।

 ১৯২৯ খৃষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে সুভাষচন্দ্র দক্ষিণ কলিকাতায় একটি শোভাযাত্রা পরিচালনা করেন। এই শোভাযাত্রার উদ্দেশ্য ছিল—নিখিল-ভারতীয় রাজনীতিক লাঞ্ছিতগণের দিবস উপলক্ষে রাজনীতিক কারণে লাঞ্ছনাপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণের প্রতি সহানুভূতি-জ্ঞাপন। এই শোভাযাত্রা পরিচালনার জন্য ১৯৩০ খৃষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে তিনি অভিযুক্ত হন এবং বিচারে ২৩শে জানুয়ারী তারিখে তাঁহার প্রতি নয় মাস সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ হয়।

 ১৯২৯ খৃষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে লাহোর-ষড়ষন্ত্র মামলার আসামী যতীন্দ্রনাথ দাস লাহোর সেণ্ট্রাল জেলে অনশনব্রত গ্রহণ করেন এবং ৬৩ দিন উপবাসের পর ইচ্ছামৃত্যু যতীন দাসের অমর আত্মা নশ্বর দেহ ত্যাগ করিয়া স্বর্ণরথে অমরলোকে প্রস্থান করে। যতীন দাসের শবদেহ কলিকাতায় আনা হইল, সুভাষচন্দ্র শবানুগমনের বিরাট্ শোভাযাত্রা পরিচালনা করিয়া মৃত্যুঞ্জয়ী বীরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিলেন।

 উক্ত সেপ্টেম্বর মাসেই তিনি হাওড়া পলিটিক্যাল কন্‌ফারেন্সে সভাপতির আসন গ্রহণ করেন।

 ১৯২৯ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে পাঞ্জাব স্টুডেণ্টস্ কন্‌ফারেন্সের মাহোর-অধিবেশনে সভাপতিরূপে তিনি যে অভিভাষণ প্রদান করেন, তাহাতে তিনি দেশের যুবকগণের সম্মুখে স্বাধীনতার আদর্শ মুর্ত্তি উপস্থাপিত করিয়া, সেই আদর্শ অনুসরণের ভার যুবকগণের হস্তে সমর্পণ করেন।

 ১৯২৯ খৃষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে তিনি মধ্যপ্রদেশ ও বেরারের স্টুডেণ্টস্ কন্‌ফারেন্সের অমরাবতী-অধিবেশনে সভাপতির আসন গ্রহণ করিয়াছিলেন।

 ভারতের স্বাধীনতার স্বরূপ সম্বন্ধে মহাত্মা গান্ধী ও তাঁহার অনুবর্ত্তিগণের সহিত কিছুকাল হইতেই তাঁহার অনৈক্য হইতেছিল। সুতরাং অবশেষে তিনি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য-পদ পরিহার করেন। তিনি পুনরায় মহাত্মা গান্ধীর প্রস্তাবের সংশোধনের চেষ্টা করিয়া কলিকাতা-অধিবেশনের মতই অকৃতকার্য্য হইলেন।

 ১৯৩০ খৃষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে সুভাষচন্দ্র “দি বেঙ্গল স্বদেশী লীগ” গঠন করেন। তিনি নিজে এই লীগের সভাপতি ছিলেন। শ্রীযুক্ত ললিতমোহন দাস, ভাইস-প্রেসিডেণ্ট; শ্রীযুক্ত কিরণশঙ্কর রায়, জেনারেল সেক্রেটারী এবং শ্রীযুক্ত আনন্দজি হরিদাস কোষাধ্যক্ষ হইলেন। কলেজ স্ট্রীট মার্কেটে এই লীগের কার্য্যালয় অবস্থিত ছিল।

 বেঙ্গল স্বদেশী লীগের গবেষণা-শাখায় ডক্টর প্রমথনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীযুক্ত নলিনীরঞ্জন সরকার, শ্রীযুক্ত জিতেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, ডক্টর নলিনাক্ষ সান্যাল ও ডক্টর সুহৃদকুমার মিত্র সদস্য এবং ডক্টর হরিশচন্দ্র সিংহ সম্পাদক ছিলেন।

 লীগের উদ্দেশ্য ছিল—ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, অর্থনীতিক ও জাতীয় কর্ম্মিদলের কার্য্যাবলীর সম্মেলনে বাংলাদেশে স্বদেশীর প্রসার-বৃদ্ধি।

 ১৯৩১ খৃষ্টাব্দে বেঙ্গল স্বদেশী লীগের গবেষণা-শাখা হইতে সুভাষচন্দ্রের সম্পাদনায় “স্বদেশী এণ্ড বয়কট” নামক ইংরেজী বুলেটিন প্রকাশিত হয়। বঙ্গদেশ, মাদ্রাজ, বোম্বাই, ব্রহ্মদেশ ও সিন্ধু প্রদেশে এবং সমগ্র ভারতে বিদেশী দ্রব্যের— বিশেষতঃ ব্রিটিশজাত দ্রব্যের আমদানি লইয়া ইহাতে আলোচনা চালান হইয়াছে। তাহাতে দেখা যায় যে, ব্রিটিশজাত দ্রব্যের আমদানী দিন-দিন হ্রাস প্রাপ্ত হইতেছে— সুতরাং বয়কট বেশ সাফল্যমণ্ডিত হইয়াছে।

  1. “We stand for independence not in the distant future but as our immediate objective.”
    The Calcutta Innicoal Gazette, Vol. XLII, No. 16. P. 6442(c).}}
  2. “So far as Bengal is concerned, you are aware that since the dawn of the National movement in this century, we have always interpreted freedom as complete and full wide pendence. We have never interpreted it in terms of Dominion Status.”
    Ibid, P. 440(c).
  3. {{smaller|“He was of opinion that there could be no true freedom till British Connection was severed.”
    Ibid, P. 442(c).
  4. “One of the hopeful features of the times is the rapid expansion of the youth movement and the physical culture movement all over the country. There must be a co-ordination between these two movements. Youths must be drillied, trained and disciplined as Volunteers. Then alone can we hope to rear up a new generation of men who will win freedom for India and have strength to retain it.”
    Ibid, P. 442(d).