নেপালে বঙ্গনারী
নেপালে বঙ্গনারী।
শ্রীমতী হেমলতা দেবী।
নেপালে বঙ্গনারী।
শ্রীমতী হেমলতা দেবী প্রণীত।
প্রকাশক,
শ্রীগুরুদাস চট্টোপাধ্যায়।
২০১ নং কর্ণওয়ালিস্ ষ্ট্রীট,—কলিকাতা।
১৩১৮।
২১১নং কর্ণওয়ালিস্ ষ্ট্রীট, কলিকাতা, ব্রাহ্মমিশন প্রেসে,
শ্রীঅবিনাশচন্দ্র সরকার দ্বারা মুদ্রিত।
ভূমিকা।
হিমালয় যে পয়োধি-বেষ্টিত বিপুল দেশের শিরোভূষণ তাহা জগতে হিন্দুস্থান বলিয়া বিখ্যাত। এই হিন্দুস্থানবাসী হিন্দুদিগের সহিত পৃথিবীর আর কোন জাতিরই সাদৃশ্য কিম্বা জ্ঞাতিবন্ধন নাই। দুর্ভেদ্য নৈসর্গিক পরিখা ও প্রাকারে বেষ্টিত করিয়া বিধাতা যেন ইহাকে পৃথিবীর মধ্যে সর্ব্ববিষয়ে স্বতন্ত্র এবং চিহ্নিত করিয়া রাখিয়াছেন। এই জাতির প্রাচীন ইতিহাস এবং মহত্ত্ব জগতে সর্বজনবিদিত, এস্থলে তাহার পুনরুক্তি নিষ্প্রয়োজন। সেই আদিম সুসভ্য পরাক্রান্ত স্বাধীন হিন্দু জাতি আজ পরপদানত ও হীনবীর্য বলিয়া বর্তমান সুসভ্য জাতি সকলের কৃপাপাত্র হইয়াছে। কেবল দুইটা মাত্র রাজ্য এখনও পর্যন্ত স্বাধীনতার গৌরবময় উজ্জ্বল টীকা ললাটে ধারণ করিতেছে। তন্মধ্যে নেপাল প্রধান। ইহা হিমালয়ের ক্রোড়স্থ বিস্তীর্ণ প্রদেশ, প্রকৃতির রম্য কানন, বিবিধ নৈসর্গিক শোভা এবং সম্পদে সৌভাগ্যবান। ইহার উত্তরে চির-তুষারাবৃত হিমালয়ের শিখরমালা, তাহার চরণে গভীর শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্যানী। হিমাচল নরের অগম্য, পুরাণে ইহা দেবের আবাসস্থান বলিয়া পরিকীর্ত্তিত হইয়াছে। বিধাতা নেপাল রাজ্যকে দুর্ভেদ্য প্রাচীরে বেষ্টিত করিয়াছেন, তাই ইহা আজও স্বাধীন। জগতবাসীর কথা দূরে থাকুক, এদেশ ভারতবাসীরও অজ্ঞাত। এ রাজ্য অতি বিচিত্র, ইহার প্রাচীন ইতিহাস অপূর্ব্ব উপন্যাসের ন্যায়। এই লুক্কায়িত স্থানে অনেক প্রাচীন কথা গুপ্ত আছে। সুদূর চীন হইতে কোন্ যুগে কোন্ বোধিসত্ত্ব মহাত্মা আসিয়া কোন্ বিপুল হ্রদকে রমণীয় উপত্যকায় পরিণত করিয়াছিলেন, কোথায় সেই হ্রদের মধ্যে শতদল শোভা পাইল, শতদলের নিয়ে পবিত্র বারি উৎসারিত হইল, সেখানে স্বয়ম্ভু ভগবান দিব্য কিরণে প্রকাশিত হইলেন, অদ্যাবধি নেপালবাসী ও নানা স্থান হইতে ভক্তবৃন্দ আসিয়া তথায় পশুপতিনাথকে দর্শন করেন। কোথায় কোন দেবতার হস্তম্পর্শে দৈব বারিধারা উৎসারিত হইয়া নিঝরিণী সৃষ্টি করিয়াছে—কি অপূর্ব্ব কথা সে সকল! যুগে যুগে কত মহাপ্রাণ হিন্দু, মুসলমানদিগের ভয়ে ভীত ও সংক্ষুব্ধ হইয়া এই দুর্ভেদ্য দুর্গে আশ্রয় লইয়াছিলেন, হিন্দুস্থান হইতে হিন্দু ধর্ম্ম উৎপীড়িত হইয়া এখানে আসিয়া আশ্রয় লাভ করিয়াছেন। ভারত বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্ম্মের জন্মস্থান, এই উভয় ধর্ম্মই নেপালে আশ্রয় লাভ করিয়াছে। এক্ষণে এই উভয় ধর্ম্মই নেপালের জনসাধারণের ধর্ম্ম। ভারতের সর্ব্বত্রই রেলপথ বিস্তৃত হওয়াতে কোন প্রদেশই আর ভ্রমণকারীর অজ্ঞাত নাই। কিন্তু নেপাল রাজ্য সকলের নিকটেই অদৃষ্টপূর্ব দেশ হইয়া রহিয়াছে। নেপালে। অবস্থান কালে আমি নেপাল সম্বন্ধে “প্রবাসীতে” কয়েকটী প্রবন্ধ প্রকাশ করিয়াছিলাম। তাহাতে অনেকেই কৌতূহলী হইয়া আমাকে নেপাল সম্বন্ধে অনেক প্রশ্ন করিতেন। সেই হেতু আমার এই পুস্তকখানির জন্ম। আমি ডাক্তার ওলডফিলড, (Oldfield) রাইট, হাউট, হডসন, প্রভৃতির পুস্তকে নেপালের বৃত্তান্ত পাঠ করিয়াছি। নেপালের ইতিহাস তাঁহাদিগের পুস্তক হইতেই সংগৃহীত হইয়াছে। পাঠকপাঠিকাগণ এই পুস্তক পাঠ করিয়া বিশেষ কিছু লাভ করিবেন বলিয়া আমি আশা দিতে পারিতেছি না। যদি কেহ কিছু লাভ করেন, তবে আমার আর আনন্দের সীমা থাকিবে না।
৯ই মার্চ্চ, ১৯১২
গ্রন্থকর্ত্রী।
সূচী পত্র।
চিত্রের সূচী।
১। নেপালের প্রধান রাজমন্ত্রী মহারাজ সার চন্দ্র শমসের জঙ্গ রাণা বাহাদুর।
২। মহারাজ দেব শামসের ও দেবী কর্ম্মকুমারী।
৩। হনুমানঢোকা ও কাটমণ্ডু সহর।
৪। সিংহ দরবার।
৫। বীর হাঁসপাতাল।
৬। পশুপতিনাথের মন্দির।
৭। সিম্ভু অর্থাৎ স্বয়ম্ভুনাথের মন্দির।
৮। বৌদ্ধস্তূপ—বৌধ।
৯। ভাটগাঁও।
১০। পাটন সহর।
১১। জঙ্গ বাহাদুর।
১২। বীর শামসের জঙ্গ রাণা বাহাদুর।
১৩। রাজকুমারী ও রাজমাতা শ্রীপাঁচমহারাণী, রণদীপ সিংহ ও তাঁহার পত্নী।
১৪। নেপালরাজ মহারাজাধিরাজ বিক্রমশাহ ও তৎপুত্র বর্ত্তমান নরপতি মহারাজাধিরাজ ত্রিভুবন বিক্রমশাহ।

এই লেখাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাবলিক ডোমেইনে অন্তর্গত কারণ এটি ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারির পূর্বে প্রকাশিত।
লেখক ১৯৪৩ সালে মারা গেছেন, তাই এই লেখাটি সেই সমস্ত দেশে পাবলিক ডোমেইনে অন্তর্গত যেখানে কপিরাইট লেখকের মৃত্যুর ৭৫ বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকে। এই রচনাটি সেই সমস্ত দেশেও পাবলিক ডোমেইনে অন্তর্গত হতে পারে যেখানে নিজ দেশে প্রকাশনার ক্ষেত্রে প্রলম্বিত কপিরাইট থাকলেও বিদেশী রচনার জন্য স্বল্প সময়ের নিয়ম প্রযোজ্য হয়।