পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে

সত্যেন্দ্রচন্দ্র মিত্রকে লিখিত

১৩৪
কেলসল লজ
শিলং
৭ই আগষ্ট, ১৯২৭

প্রিয়বরেষু সত্যেনবাবু,

 এস. এস. ইলিউজা হইতে লিখিত আপনার ২রা আগষ্টের পত্রখানি পাইয়া যে কি আনন্দ লাভ করিলাম তাহা বর্ণনা করা দুঃসাধ্য। ম্যাণ্ডেলে হইতে আপনার যাত্রার খুঁটিনাটি বিবরণ লাভের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করিতেছি। তথাকার বন্ধুদের বিবরণাদিও জানিতে প্রবল ইচ্ছা পোষণ করি। “ফরওয়ার্ড”-এর ৬ই তারিখের মফঃস্বল সংস্করণে বর্মায় অবস্থিত বাঙালী রাজবন্দীদের বিষয় একটি বিজ্ঞপ্তি দেখিলাম।

 ম্যাণ্ডেলে ত্যাগের পূর্ব্বে আমার ২৫শে জুলাই তারিখের পত্রটি আপনি পাইয়াছেন কি? ম্যাণ্ডেলের কারাগার হইতে আমাকে লিখিত আপনার পত্রটি আমার নিকট আসিল খণ্ডিত অবস্থায়। ···পৃষ্ঠার নিম্নভাগ এবং তৃতীয় পৃষ্ঠার ঊর্দ্ধভাগ দেখিলাম অদৃশ্য।

 রাজবন্দীদের জন্য প্রতিনিধিস্বরূপ এ্যাসেম্বলির অধিবেশনগুলিতে আপনি যোগদান করুন ইহা আমার বিশেষ ইচ্ছা। আমরা ঐ অধিবেশনে এক বেগবান বিতর্কের প্রত্যাশা করিতেছিলাম, এখন আপনার মুক্তি পুঞ্জীভূত গভীর ক্রোধের কঞ্চিৎ উপশম করিবে বলিয়াও কিঞ্চিৎ আশা হয়। সেখানে আপনার উপস্থিতি জনগণের দাবীকে আরও দৃঢ় করিয়া তোলা এবং বিরোধী পক্ষকে আরও সমৃদ্ধ ও পুষ্ট করিয়া তোলা উচিত। আপনি যদি ঐ অধিবেশনে যোগ দেন তাহা হইলে সেখানে আপনার ভাষণ দান অবশ্য বিবেচ্য। সেই প্রসঙ্গে আপনার ভাষণটি যতদূর সম্ভব মূল্যবান, সারগর্ভ ও বক্তব্যবহুল হওয়া সবিশেষ বাঞ্ছনীয়। যদি মৌখিক ভাষণ দানে অসুবিধা থাকে তাহা হইলে লিখিত ভাষণ পাঠ করারও কোন অসুবিধা নাই।

 রাজবন্দীদের সংক্রান্ত প্রশ্নগুলি মোটের উপর, এ্যাসেম্বলিতে উত্থাপিত হইবেই। অন্ততঃ দুটি মাস আপনার অশেষ ব্যস্ততার মধ্যে অতিবাহিত হইবে। ঐ সময়ে দর্শনার্থীদের নিরবচ্ছিন্ন স্রোত প্রবাহিত হইবে। আমার আশঙ্কা হয় তাহার মধ্যে আমাদের গোয়েন্দা বিভাগীয় বন্ধুগণও ছদ্মবেশে থাকিতে পারেন। তাহারই মধ্যে অনুগ্রহপূর্ব্বক সময় করিয়া লইয়া চিন্তা করিয়া ভাষণটি রচনা করিবেন। যত সময় এবং যত্ন আপনি ব্যয় করিবেন ফল তত ভাল হইবে জানিবেন।

 আমি এখন এখানে থাকার জন্য অধিবেশনের পূর্ব্বে আপনার সহিত সাক্ষাৎ হইবে কি না জানি না, তবে, আপনি যদি কোন প্রকারে সময় করিয়া একবার শিলঙে আসিতে পারেন তাহা হইলে, বলা বাহুল্য এক বিপুল সমাদর আপনার অন্য অপেক্ষা করিবে।

 সময়মত আপনার ভবিষ্যৎ কর্ম্মপন্থা ও গতিবিধি জানাইবেন। আমাদের শান্তি সংস্থাপনের কার্য্য করিতে হইবে। যত বৈষম্য, বাধা, পার্থক্য যথাসাধ্য দূরীভূত করিতে হইবে।

 আশা করি কুশলে আছেন। আমি ক্রমশঃই আরোগ্যের পথে অগ্রসর হইতেছি।

আপনার স্নেহধন্য 
সুভাষ 

পুনশ্চ:

 ডাকঘরের কর্ত্তৃপক্ষ যে সচরাচর আমার চিঠিগুলির প্রতি অন্যায় হস্তক্ষেপ করিয়া থাকেন, আমাকে লেখার সময় অনুগ্রহপূর্ব্বক সেই কথাটি ভুলিবেন না। ফরওয়ার্ডের দেশবন্ধু সংখ্যাটি—যাহা আপনাকে আমি ম্যাণ্ডেলে পাঠাইয়াছি। তাহা পাইয়াছেন কি?  এস সি বি

(ইংরাজী হইতে অনূদিত)